মার্কিন ধ্রুপদি উপন্যাস || দ্য গ্রেট গ্যাটসবি || এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড
দ্য গ্রেট গ্যাটসবি প্রসঙ্গে
আমেরিকান ক্লাসিক ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ একটি ট্র্যাজিক প্রেমের গল্প, যাকে ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর একটি হতাশাবাদী সমালোচনাও বলা যেতে পারে। ‘আমেরিকান ড্রিম’, যা জীবনের নতুন সুযোগের ইঙ্গিত দেয়, উপন্যাসের একটি অন্তর্নিহিত কেন্দ্রীয় বিষয়।
‘দি গ্রেট গ্যাটসবি’ প্রতীকবাদের জন্য স্মরণীয়, যা এই উপন্যাসের অন্যতম শক্ত ভিত্তি। কাব্যিক এবং কৌতুকময় কটাক্ষে লিখিত এই উপন্যাসে বর্ণিত প্রতিটি বক্তব্য, ‘সময়’ [ঘড়ি, গোধূলি-উষা, ঋতুচক্রের রহস্যময়তা], এমন কি ‘রং’ [সবুজ, হলুদ, সাদা, ধূসর…] এক একটি বিশেষ অর্থকে বহন করে এবং ব্যক্তিগত হতাশা, অর্জন, শ্রেণীভেদ এবং সামাজিক অবস্থানের প্রকৃতি অনুসন্ধান এবং প্রতিফলিত করে।
নিউ ইয়র্ক সিটির কাছে লং আইল্যান্ডে জ্যাজ যুগের পটভূমিতে রচিত উপন্যাসটি রহস্যময় মিলিয়নেয়ার জে গ্যাটসবির সঙ্গে কর্তৃবাচ্যের কথক নিক ক্যারাওয়ের মিথস্ক্রিয়া এবং তার প্রাক্তন প্রেমিকা ডেইজি ব্যুকাননের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার জন্য গ্যাটসবির প্রানান্তকর আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্ত করে। উপন্যাসটির বিশ্লেষণাত্মক প্রেক্ষাপটে, ব্যুকানান ডকের সবুজ আলো [গ্যাটসবির বাড়ি থেকে লং আইল্যান্ড সাউন্ড জুড়ে দৃশ্যমান] ডেইজিকে জয় করার গ্যাটসবির অবাস্তব লক্ষ্যকে চিত্রিত করে এবং আমেরিকান স্বপ্ন অর্জনের প্রতীক হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। তাঁর কালজয়ী ক্লাসিক ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ আমেরিকান তথা ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস হিসাবে বিবেচিত। প্রকাশের প্রায় শত বছর পরেও উপন্যাসটি আজও প্রাসঙ্গিক। আমেরিকান এবং বিশ্বজুড়ে পাঠকরা চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের খুঁজে পান, উপন্যাসের সর্বজনীন থিমগুলোর অর্থ এবং গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন। এই চরিত্রগুলো আমেরিকার স্বপ্ন, শ্রেণী সমাজ এবং প্রেমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
১৯২০-এর দশকে [‘রোরিং টোয়েন্টি’ যুগের] আমেরিকান সমাজ ও ফাঁপা সংস্কৃতি সম্পর্কে ফিটজেরাল্ডের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় এক শতাব্দী ধরে, সময়ের পরীক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। উপন্যাসটি আমেরিকার স্বপ্ন সম্পর্কে তার ধারণা, আমেরিকার সাংস্কৃতিক মতাদর্শকে উন্মোচিত করা, আমেরিকার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় চরিত্রের প্রশ্নে সাধারণ জনগণের অর্জন এবং ব্যর্থতাকে প্রতিফলিত করে। প্রকৃতপক্ষে উপন্যাসটি ‘হেডোনিস্টিক জ্যাজ’ যুগে আমেরিকার স্বপ্নের প্রতি ফিটজেরাল্ডের মোহভঙ্গের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এমন কি সেই যুগের নামকরণও ফিটজেরাল্ডের উদ্ভূত বলে দাবি করা হয়।
‘দি গ্রেট গ্যাটসবি’ ১০ এপ্রিল, ১৯২৫ সালে স্ক্রিবনার থেকে প্রকাশিত হয়। ভূয়সী প্রশংসা, ইতিবাচক পর্যালোচনা এবং সমালোচনার পরেও এর বিক্রি ছিল হতাশাজনক। ১৯২০ থেকে ১৯৩০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত উপন্যাসটির পাঠকসংখ্যা ছিল সীমিত। ১৯৪০ সাল নাগাদ, ফিটজেরাল্ডের মৃত্যুর বছর, এর বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪১ সালে স্ক্রিবনার পুনরায় ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ প্রকাশ করে এবং এ পর্যায়ে পণ্ডিত আর স্কলার পাঠক মহলে বিপুল সাড়া পড়ে। সম্ভবত বিংশ শতাব্দীতে একজন আমেরিকানের লেখা এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল পঠিত উপন্যাস।
ছবি © এফ. স্কট ফিটজেরাল্ডের ওয়েবসাইটের সৌজন্যে
ধ্রুপদি উপন্যাস || দ্য গ্রেট গ্যাটসবি || এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড
ভূমিকা ও অনুবাদ: লায়লা ফারজানা
অধ্যায় || ১
অল্পবয়সে আমার আরো বেশি নাজুক বছরগুলিতে বাবা কিছু উপদেশ দিয়েছিল—যেগুলো আমি আজও মেনে চলি।
“কারো সমালোচনা করার আগে একটা কথা মনে রেখো”—বাবা বলেছিল, “পৃথিবীতে সবাই তোমার মত সুবিধা পায়নি।”
এরচেয়ে বেশি কিছু বলেনি বাবা, কিন্তু পারস্পরিক সমঝোতার জোরে বুঝেছিলাম, এরচেয়েও বেশি কিছুর প্রতি ইঙ্গিত ছিল বাবার। সেই থেকে আজোবধি; কোন বিষয়ে মন্তব্য বা রায় দেয়া থেকে আমি নিজেকে সংযত রাখি; আমার এই নির্লিপ্ত আচরণ আমার কাছে অনেক গোপন দুয়ার যেমন খুলেছে, তেমনি আবার আমাকে প্রাজ্ঞকূলের ভ্রূকুটির কবলেও ফেলেছে। সাধারণ মানসিকতার যারা নয়; তারা গুণটি সহজেই সনাক্ত করে সাধারণদের এড়িয়ে আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে—সাধারণেরা আবার সেইসব অজ্ঞাত পুরুষদের ব্যক্তিগত সমস্যা এবং গোপন দুঃখ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সত্বেও গাম্ভীর্য বজায় রাখতাম বলে, বিনা যুক্তিতে রাজনীতিবিদ বলে কলেজে আমাকে বহুবার অভিযুক্ত করেছে। শুধুমাত্র ধারণার বশবর্তী হয়ে কারো সম্পর্কে তাদের বেশিরভাগ বক্তব্যই ছিল অমূলক, নিরেট বদ্ধমূল এবং অপ্রত্যাশিত। তাই এহেন একান্ত উন্মোচনের দূর্যোগময় আলামত টের পেলে, আমি প্রায়শই ঘুমের ভান, ভয়ানক ব্যস্ততা বা ঝামেলার ছুঁতোয় এড়িয়ে যেতাম। সেইসব তরুনদের নিয়ে তাদের মনগড়া আবিষ্কার ছিল ডাকাতির সামিল, এমন কি শোষণ বা অবদমনের চেয়েও কম ভয়ংকর কিছু নয়। যদিও আশাব্যাঞ্জক যে এ ধরনের প্রবৃত্তি থেকে আমি নিজেকে রক্ষা করেছি তবুও হারানোর ভয় কাজ করে, পাছে যদি ভুলে যাই—দাম্ভিক দাপটে বাবা যে পরামর্শ দিয়েছিল এবং ততোধিক দম্ভ ভরে আমিও যার পুনরাবৃত্তি করি যে, শালীনতার মৌলিক বোধ আর বনেদিয়ানা জন্মগতভাবে অসমভাবে বিভক্ত।
সহনশীল ক্ষমতার প্রাপ্ত ঐশ্বর্যে গর্বিত হলেও, আমি স্বীকার করি এরও একটা সীমা আছে। মানুষের আচরণ এবং আদব-কায়দার ভিত্তি কঠিন শিলা বা ভেজা জলাভূমিতে হতে পারে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের পরে তা কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত, আমাকে আর ভাবায় না।
গত বছর শরৎকালে, পুব থেকে ফিরে, আমি অনুভব করেছি প্রকৃতপক্ষে সমগ্র বিশ্বকে আমি নৈতিকতার এক অভিন্ন আলোকে দেখতে চাই; মানুষের হৃদয়ে সুবিধাভোগিদের আভাসযুক্ত আগ্রাসন আর নয়। শুধুমাত্র গ্যাটসবি, যে এই বইটিকে তার নাম দিয়েছে, আমার প্রতিক্রিয়া থেকে ছিল মুক্ত। গ্যাটসবি সেই সবকিছুর প্রতিনিধিত্ব করত যেগুলোর প্রতি আমার অবিচল অবজ্ঞা। তবে ব্যক্তিত্ব যদি কাঙ্ক্ষিত আচরণ এবং সফল অঙ্গভঙ্গির অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা হয়, গ্যাটসবির কিছু অসাধারণ কারিশমা ছিল, জীবনের প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রতি উচ্চতর সংবেদনশীলতা ছিল, সে যেন সেই জটিল যন্ত্রগুলোর একটি, যা ভূমিকম্পের দশ হাজার মাইল দূরে থেকেও ভূমিকম্প নিবন্ধন করতে পারে। যে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াশীলতার সঙ্গে “সৃজনশীল মেজাজ” নামে মর্যাদাপূর্ণ “ফ্ল্যাবি ইম্প্রেশনিবিলিটি” বা তুলুতুলু আদিখ্যেতার কোনো সংযোগ ছিল না—বরং ছিল অদ্ভুত আশাব্যাঞ্জক এক ইতিবাচক উপহার, এক রোমান্টিক প্রস্তুতি; যা অন্য কোনও ব্যক্তির মধ্যে আমি কখনো পাইনি; সম্ভবত পাবোও না।
না—গ্যাটসবি শেষ পর্যন্ত ঠিকই নিজেকে প্রমাণ করেছিল; হয়তো তার আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের অপেক্ষায় জমে থাকা উষ্মার ধুলো তাকে সাময়িকভাবে শিকারে পরিণত করেছিল, আর তাই পুরুষদের ব্যর্থ যন্ত্রণা এবং ক্ষণস্থায়ী আনন্দের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল সাময়িকভাবে রুদ্ধ।
* * *
আমার পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে মধ্য-পশ্চিমের শহরগুলোর বিশিষ্ট ধনী। আমরা “দি কারাওয়ে” গোষ্ঠীর ঐতিহ্য থেকে “ডিউক অফ বুকলেওচ”র বংশধর, আমাদের ধারার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমার দাদার ভাই, যিনি একান্ন সালে এখানে এসে গৃহযুদ্ধের একটি বিকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে পাইকারি হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করেন; যে ব্যবসাটি এখনও আমার বাবা ধরে রেখেছে।
আমার সেই মহান পিতামহকে আমি কখনও দেখিনি, যদিও সবাই বলে আমি নাকি অবিকল তারই মতো দেখতে—বিশেষত বাবার অফিসে ঝুলিয়ে রাখা তার চাঁচাছোলা পেইন্টিংটির সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করে। ১৯১৫ সালে, আমি নিউহ্যাভেন থেকে স্নাতক হই, আমার বাবার স্নাতক হওয়ার মাত্র কোয়ার্টার সেঞ্চুরি পরে, পরপরই আমি বিলম্বিত টিউটনিক অভিবাসনে অংশগ্রহণ করি যা গ্রেট ওয়ার নামে পরিচিত। বলতে পারেন সেই পাল্টা-আক্রমণ আমি এতটাই উপভোগ করেছিলাম যে অশান্ত-অধীর হয়ে ফিরে আসি। মধ্য-পশ্চিম তখন বিশ্বের আকাঙ্ক্ষিত উষ্ণ কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তে আমার কাছে মহাবিশ্বের বিচ্ছিন্ন এক প্রান্তের মতো মনে হয়—তাই সিদ্ধান্ত নিই পুবে গিয়ে বন্ড ব্যবসা শিখব। আমার পরিচিত সবাই বন্ড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, ভাবলাম আরও একজনকে সমর্থন করা তাই হয়ত এর পক্ষে কঠিন হবে না। কিন্তু আমার সব চাচা-ফুফুরা বিষয়টি নিয়ে এমন ধানাই-পানাই শুরু করল, যেন তারা আমার জন্য একটি প্রেপ-স্কুল খুঁজছে এবং অবশেষে গম্ভীর দ্বিধাগ্রস্ত মুখ তুলে বলল “কেন—ইয়ে—হ্যাঁ”। বাবা আমাকে এক বছরের খরচ দিতে রাজি হল এবং নানা কারণে দেরি হলেও বাইশের বসন্তে আমি স্থায়ীভাবে পূর্বাঞ্চলে চলে যাই।
শহরেই একটা থাকার জায়গা খুঁজে নেয়া ছিল সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ কিন্তু তখন গরমের মৌসুম, আর আমিও সবেমাত্র প্রশস্ত আঙিনা আর বন্ধুসুলভ গাছের সঙ্গে সহাবস্থানের দেশ ছেড়ে এসেছি, তাই অফিসের এক যুবক যখন পরামর্শ দিল, যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধাসহ শহরতলির কোনো এক জায়গায় আমরা একসঙ্গে একটি বাড়ি নিতে পারি, মনে হয়েছিল প্রস্তাবটি অসাধারণ । বাড়িটি সেই খুঁজে পেয়েছিল—একটি পুরোনো কাঠের বাংলো, মাত্র আশি টাকা মাস। শেষ মুহূর্তে কাজের জায়গা থেকে তাকে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে দিলে আমি একাই শহরতলির ঐ বাড়িতে এসে উঠি। আমার ছিল একটি কুকুর—কয়েক দিনের জন্য হলেও, অন্তত সে পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত—একটি পুরোনো ডজ এবং একজন ফিনিশ মহিলা, যে আমার বিছানা গুছাত, প্রাতঃরাশ তৈরি করত এবং বৈদ্যুতিক চুলার সামনে নিজেই নিজেকে ফিসফিস করে ফিনিশ ভাষায় জ্ঞান বিতরণ করত।
প্রথম প্রথম একা বোধ করতাম। কিন্তু একদিন সকালে এক পথিক আমাকে রাস্তায় থামাল, যে আমারও পরে এসেছে। অসহায়ভাবে জানতে চাইল, “আচ্ছা ওয়েস্ট এগ ভিলেজে কিভাবে যাব?” আমি তাকে পথ দেখালাম, তার সাথে চলতে চলতে উপলব্ধি করলাম, সেই মুহূর্ত থেকে আমি আর একা নই। আমি এখন একজন পথ-প্রদর্শক, পথ-অনুসন্ধানকারী, এবং একজন মূল বাসিন্দা। আমিও স্বাধীন এবং অকপটে আমার পাড়ায়, আমার এলাকায় ঘুরে বেড়াতে পারি।
তাই রোদে রোদে, গাছে গাছে পাতাদের বিস্ফোরণে—যেমন চলচ্চিত্রে বিষয়গুলো দ্রুত নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধিপায়—আমিও প্রত্যয় অর্জন করি যে, গ্রীষ্মের সঙ্গে আমার জীবন আবার নতুনভাবে শুরু হয়েছে।
সেখানে এক বিষয়েই পড়ার ছিল অনেক, নতুন বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে সুস্বাস্থ্যের অনেকটাই নিঙড়ে দেয়ার ছিল। আমি ব্যাংকিং, ঋণ এবং বিনিয়োগ বিষয়ক নিরাপত্তার উপর লেখা বারোটি খণ্ড কিনলাম, টাকশালের আনকোরা নতুন টাকার মতো তারা বুক-সেল্ফে লাল এবং সোনালী রঙে, সেই উজ্জ্বল রহস্য উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকত, যা কেবল মাইডাস, মরগান এবং মেসেনাস জানত। এগুলো ছাড়াও, আরও অনেক বিষয়ে পড়ার মহৎ অভিপ্রায় ছিল আমার। কলেজে আমি বরঞ্চ একজন সাহিত্যিকই ছিলাম—এক বছর আমি “ইয়েল নিউজ”-এর জন্য সংশয়াতীত গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয়গুলোর একটি ধারাবাহিক লিখেছিলাম—নতুন জীবনে সেই বিষয়গুলোকে আবারও ফিরিয়ে এনে আমি সেই সীমিত বিশেষজ্ঞদের একজন হয়ে উঠছিলাম যারা, “বহুমুখী প্রতিভার চৌকস মানুষ।” এ শুধু বলার জন্য বলা সরেস বক্তব্য নয়—মোটের ওপর, জীবনকে আসলেই উন্মুক্ত জানালা থেকে অনেক সফলভাবে দেখা যায়।
উত্তর আমেরিকার অন্যতম অদ্ভুত সমাজে আমার বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সুযোগটি ছিল দৈবিক—একেবারেই কাকতালীয়; দাঙ্গাপূর্ণ এক সরু দ্বীপ—নিউ ইয়র্কের পূর্বদিকে যে নিজেকে বিস্তার করেছে, সেখানে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিস্ময়ের পাশাপাশি দুটি অস্বাভাবিক ভূমি গঠন: শহর থেকে বিশ মাইল দূরে এক জোড়া বিশাল ডিম্বাকৃতি ভূ-খণ্ড; যাঁদের অভিন্ন আকৃতি “কার্টেসি বে” দিয়ে বিভক্ত, পশ্চিম গোলার্ধের ঘরোয়াতম নোনা জলের দেহে, “দি গ্রেট ওয়েট বার্নইয়ার্ড অফ লং আইল্যান্ড সাউন্ড।” তারা নিখুঁত ডিম্বাকৃতি নয়—কলম্বাসের গল্পের ডিমের মতো উভয়েই সংযোগস্থলের শেষে চূর্ণবিচূর্ণ সমতল—তবে তাদের শারীরিক সাদৃশ্য নিশ্চিতভাবে মাথার উপরে উড়ে যাওয়া সিগ্যালদের এক চিরস্থায়ী বিভ্রান্তির উৎস; আর ভূপৃষ্ঠে ডানাহীনদের কাছে ততোধিক চমক যে, আকার আকৃতির আমূল সাদৃশ্য সত্বেও অন্য সব ক্ষেত্রেই তাদের বৈষম্য আকাশচুম্বী।
আমি থাকতাম—‘ওয়েস্ট এগ’—পশ্চিমের ডিমে, যাকে দুটির মধ্যে কম পরিশীলিত বা কম ফ্যাশনেবল বলা যায়—যদিও উদ্ভট বিপজ্জনক বৈসাদৃশ্য প্রকাশের এটি একটি চরম ভাসাভাসা বিভ্রান্তিকর বর্ণনা। আমার বাড়িটি ছিল ডিমের একেবারে ডগায়, সাউন্ড থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে, দুটি বিশাল প্রতিপত্তির মাঝখানে চাপা পড়া, যেগুলোর ভাড়া এক মৌসুমে বারো বা পনের হাজার হবে। ডানদিকেরটি যে কোন মান অনুসারে ছিল বিশাল এবং ব্যাপক—নরম্যান্ডির “হোটেল ডি ভিলে”র চরম বাস্তব অনুকরণ, যার একপাশে একটি দূর্গ—কাঁচা আইভির সরু তীরের ফলার নিচে চকচকে নতুন, একটি মার্বেল পাথরের সুইমিং পুল এবং চল্লিশ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে মসৃন ঘাসের উন্মুক্ত প্রাঙ্গন আর বাগান—গ্যাটসবির প্রাসাদ। বরং আমি এভাবে বলি, যেহেতু আমি তখনও তাকে চিনতাম না, সেটি ছিল মি. গ্যাটসবি নামক এক ভদ্রলোকের সুবিশাল অট্টালিকা। যেখানে তিনি বাস করতেন। আমার বাসাটি ছিল চোখের বালি, নজর এড়িযে যাওয়ার মত ছোট্ট চোখের বালি, তাইতো সেই নয়নাভিরাম জলের প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রতিবেশীদের বিশাল আঙিনার আংশিক ঝলক এবং কোটিপতিদের সান্নিধ্যের সুখকর সান্ত্বনা—এই সব কিছুই আমার জন্য ছিল মাসে মাত্র আশি টাকায়।
জলের ওপর চিকচিক করত “কার্টেসি বে” জুড়ে পুবের ডিম—ফ্যাশনেবল ‘ইস্ট এগ’-এর চাকচিক্যময় সাদা প্রাসাদগুলো, আর সেই গ্রীষ্মের প্রকৃত ইতিহাস শুরু হয় যে সন্ধ্যায় আমি গাড়ি নিয়ে সেখানে যাই, ব্যুকানানদের সঙ্গে ডিনার করতে। ডেইজি, আমার সেকেন্ড কাজিন—প্রপিতামহের দিক থেকে দ্বিতীয় জ্ঞাতিবোন; আর টমকে আমি কলেজ থেকেই চিনি। এছাড়া যুদ্ধের ঠিক পর, শিকাগোতে, আমি তাদের সঙ্গে দু রাত কাটিয়েছি।
ডেইজির স্বামী টম, বিভিন্ন শারীরিক কসরতের কৃতিত্ব ছাড়াও, নিউ হ্যাভেনের নামজাদা শক্তিশালী ফুটবলারদের একজন—জাতীয় ব্যক্তিত্ব; সেইসব বিরল ব্যক্তিদের একজন, যারা একুশ না পেরুতেই খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছে যায় এবং পরবর্তীকালে যা ঘটে তা কেবলই তাদের অ্যান্টি-ক্লাই-ম্যাক্স। অবশ্য তাদের পরিবার বরাবরই প্রবল বিত্তশালী—এমনকি কলেজ জীবনে অর্থ অপচয়ের যে বিপুল স্বাধীনতা তার ছিল, নিন্দার বিষয় হলেও, শিকাগো ছেড়ে পুবে এসে, যেভাবে সে ঘাঁটি গেড়েছ, তা যে কারো শ্বাস কেড়ে নিতে যথেষ্ট; উদাহরণস্বরূপ লেক-ফরেস্ট থেকে সে এক ঝাঁক “পোলো-পনি” আনিয়েছে, আমার নিজেরই প্রজন্মের কেউ যে এত বিশাল প্রতিপত্তির মালিক হতে পারে, কল্পনা করাও কঠিন।
তারা কেন পুবে এসেছিল জানি না। তবে কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই, তারা ফ্রান্সে কাটিয়েছে এক বছর, তারপর এলোমেলো অস্থিরভাবে এখানে সেখানে—যেখানেই ধনী পোলো খেলার লোকের বসতি। ডেইজি টেলিফোনে বলেছিল এই দফায় এটি নাকি তাদের স্থায়ী পদক্ষেপ, আমি বিশ্বাস করিনি—মানসিকভাবে ডেইজিকে নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই, তবে উপলব্ধি করেছি, টম চিরকালের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে কিছু অপূরণীয় ফুটবল খেলার নাটকীয় উত্তেজনা বা অশান্তিকে খুঁজে বেড়ায়।
এভাবেই এক এলোমেলো বাতাসের উষ্ণ সন্ধ্যায়, আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, ইস্ট এগে, দুই পুরানো বন্ধুকে দেখতে, যাদেরকে আমি খুব কমই চিনতাম। তাদের বাড়িটি আমার কল্পনার চেয়েও ছিল বিশাল, উপসাগরমুখি সুখি সুখি প্রফুল্ল লাল সাদা জর্জিয়ান ঔপনিবেশিক প্রাসাদ। সৈকত থেকে শুরু হয়ে এক চতুর্থাংশ মাইল জুড়ে সদর দরজা পর্যন্ত বিস্তৃত এর প্রাঙ্গনটি; সূর্য-ঘড়ি আর ইট বিছানো পায়ে চলার পথ পাড়ি দিয়ে, জ্বলন্ত বাগানের উপর আছড়ে পড়ে—ছুটতে ছুটতে অবশেষে বাড়ির পাশের উজ্জ্বল দ্রাক্ষালতাগুলো অতিক্রম করে এসে দাঁড়ায়। বাড়ির সম্মুখভাগটি টানা ফরাসি জানালায় বিভক্ত, প্রতিফলিত সোনার রঙে প্রজ্বলিত হয়ে উষ্ণ বাতাসের বিকেলের জন্য প্রশস্ত খোলা—আর সেখানে টম ব্যুকানন, সামনের বারান্দায়, অশ্বারোহীর পোষাকে, পা খুলে দাঁড়িয়ে।
সে বদলে গেছে, নিউ হ্যাভেনের বছরগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সে একজন কঠোর, খড়-সোনালী চুলের ত্রিশের যুবক—ঠোঁট কাটা এবং উন্নাসিক। তার উজ্জ্বল, অহংকারী দুটি চোখ মুখের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সবসময় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার একটি চেহারা দিয়েছে। এমনকি অশ্বারোহী-পোষাকের, মেয়েলী আভিজাত্যও তার বিশাল শরীরের পুরুষালী বৈশিষ্ট্যকে আড়াল করতে পারেনি—চকচকে বুটের ফিতাগুলোকে উপর পর্যন্ত টেনে এনে বাঁধার সময়, তার সরে যাওয়া পাতলা কোটের নিচে, কাঁধটির সুঠাম পেশীগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল। তার সুগঠিত শরীর যেন যে কোনো কিছু করতে সক্ষম—এক নিষ্ঠুর শরীর!
কর্কশ ভঙ্গুর “টেনার” কণ্ঠস্বরে তার কথা বলার ভঙ্গি, তার খিটখিটে মেজাজে এক অন্য মাত্রা যোগ করে, যেখানে বিরাজমান এক পিতৃতান্ত্রিক অবজ্ঞার স্পর্শ, এমনকি তার পছন্দের লোকদের প্রতিও—এবং নিউ হ্যাভেনে কয়েকজন তাকে তার এই দুঃসাহসের জন্য ঘৃণাও করত।
“এই বিষয়ে, আবার আমার মতামতকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করো না,” সে বোধহয় বলেছিল, “শুধু এ কারণে যে, আমি তোমাদের চেয়ে বেশি শক্তিমান এবং বড় মাপের মানুষ।” আমরা একই সিনিয়র সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত হলেও, তার সঙ্গে আমার তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবুও সবসময় মনে হতো, সে যেন আমাকে তার অনুমোদন দিয়েছে, এবং চেয়েছে আমি তাকে তার মত করে পছন্দ করি, তারই নিজস্ব কঠোর, বিদ্বেষপূর্ণ ইচ্ছা অনুযায়ী।
রৌদ্রোজ্জ্বল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা কিছুক্ষণ কথা বললাম। “দেখো, এখানে আমি কত সুন্দর একটি জায়গা পেয়েছি!” তার অস্থির চোখগুলো জ্বলজ্বল করে ওঠে।
আমাকে এক বাহুতে ঘুরিয়ে, তার আরেক চওড়া সমতল হাত সামনের ভিস্তা বরাবর এগিয়ে দিল সে, সেখানে আধ-একর গভীর, ভূ-গর্ভস্থ এক ইতালীয় বাগান, গোলাপের তীব্র গন্ধে মৌ মৌ; আর উপকূলের তীরে, জোয়ারে আঘাত করছে একটি ছোট উঁচু নাক বিশিষ্ট মোটরবোট।
“এটা ডিমাইনের”—তেলের লোক।” সে আমাকে আবারও হঠাৎ আলতোভাবে ঘুরিয়ে দেয়। “আমরা এবার ভেতরে যাব।”
উঁচু হলওয়ে ধরে আমরা উজ্জ্বল গোলাপি একটি স্থান অতিক্রম করি, যা উভয় প্রান্তে ফরাসি জানালা দিয়ে মূল বাড়িটির সঙ্গে আলগাভাবে সংযুক্ত। আধখোলা এই লাগোয়া জানালাগুলো বাইরের তাজা ঘাসের বিপরীতে উজ্জ্বল সাদা, মনে হচ্ছিল যেন ঘাঁসগুলো ঘরের মধ্যে একটু একটু কর এগিয়ে আসছে। এক দমকা বাতাস হঠাৎ ঘরের মধ্যে বয়ে যায়, ফ্যাকাশে পর্দাগুলোকে পতাকার মতো এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে উড়িয়ে, ছাদের হিমায়িত বিবাহ-কেকের দিকে মোচড় নিয়ে—মদ-রঙা কার্পেটের উপর ঢেউ খেলিয়ে, একটি ছায়া ফেলে—যেমন বাতাস চলে সমুদ্রে।
এলোমেলো বাতাসে ঘরের মধ্যে স্থির কেবলমাত্র একটি বিশাল পালঙ্ক যার উপর দুজন তরুণী নোঙর করা বেলুনের মতো দুলছিল। দুজনের পরনেই সাদা পোশাক; চোখ ধাঁধানো সাদা পোশাকগুলো ফুসে উঠে এমনভাবে কাঁপছিল, যেন তারা বাড়ির চারপাশে একটি সংক্ষিপ্ত উড়ান দিয়ে এই মাত্র এখানে অবতরণ করেছে। সঙ্গত কারণেই পর্দার চাবুকাঘাত আর দেয়ালে একটি ছবির আর্তনাদে আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। তারপর এক গভীর গর্জন, টম ব্যুকানান পিছনের জানালাটি বন্ধ করতেই বাতাসটি থেমে যায়, ঘরের পর্দা, কার্পেট আর দুই তরুণী ধীরে ধীরে চোপসানো বেলুনের মত মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।
দু জনের মধ্যে ছোটটি আমার অপরিচিত। ডিভানের শেষ প্রান্তে সে পূর্ণদৈর্ঘ্য লম্বা হয়ে শুয়ে, সম্পূর্ণ গতিহীন,—চিবুকটি খানিকটা উঁচুতে স্থির, যেন সে থুতনির উপর কোনো কিছুর ভারসাম্য স্থাপনের চেষ্টা করছে—যার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তীব্র। যদি সে আমাকে আঁড় চোখে দেখেও থাকে, কোন ইঙ্গিত দেয়নি—প্রকৃতপক্ষে, ভিতরে এসে তাকে বিরক্ত করার জন্য আমি প্রায় ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়েও অবাক হয়ে থমকে গেলাম। অন্যটি, ডেইজি, একটু ওঠার চেষ্টা করল—বিবেকবান অভিব্যক্তিতে সামনে ঝুঁকল—তারপর একটু হাসল—অযৌক্তিক, মনোমুগ্ধকর হাসি, আমিও হেসে এগিয়ে গেলাম।
“আমি সুখের আতিশয্যে প—প—পঙ্গু হয়ে গেছি।” সে খিলখিল করে হেসে ওঠে, যেন খুব মজার কিছু বলেছে, তারপর মুহূর্তের জন্য আমার হাত ধরে, আমার মুখের দিকে চেয়ে, প্রতিশ্রুতির এমন এক দৃষ্টি তুলে ধরে যেন পৃথিবীতে আর কেউ নেই, যাকে সে এমন কাতরভাবে দেখতে চায়। সে ছিল এমনই। তারপর বিড়বিড় করে ভারসাম্য রক্ষাকারী মেয়েটির দিকে ইঙ্গিত করে জানায়, তার পদবি বেকার।
[আমি শুনেছি ডেইজির এই ফিসফিস করে কথা বলার কারণ শুধুমাত্র লোকেদের তার দিকে ঝুঁকিয়ে আনার অভিপ্রায়; যদিও এই অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা নিঃসন্দেহে তার আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমাতে পারেনি।]
যে কোন কারণেই হোক না কেন মিস বেকারের ঠোঁট কেঁপে উঠল। সে প্রায় তার অজ্ঞাতেই আমার দিকে মাথা নাড়ল এবং পরক্ষণেই খুব দ্রুত মাথাটা আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিল—স্পষ্টতই, বজায় রাখা ভারসাম্য কিছুটা ভেঙে পড়ায় সে আতঙ্কিত। আবারও আমার ঠোঁটের কোণে ক্ষমা প্রার্থনার লক্ষণ প্রকাশ পায়। শুধু তাই নয়, তার স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তিসত্তার প্রতি এক ধরনের নীরব শ্রদ্ধাবোধ আর আকর্ষণও জেগে ওঠে।
আমি আবারও বোনের দিকে ফিরে তাকাই, সে তার নিচু, রোমাঞ্চকর কণ্ঠে আমাকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করে। ব্যাপারটি এমন যে তার অদ্ভুত কণ্ঠস্বরকে উপলব্ধি করতে আমার কানকে ক্রমাগত উদারা-মুদারায় এমনভাবে অনুসরণ করতে হচ্ছিল যেন, তার প্রতিটি বক্তব্য স্বরের এক একটি বিন্যাস, যা দ্বিতীয়বার বাজানো হবে না। তার মুখটি ছিল উজ্জ্বল, উজ্জ্বল ছিল তার চোখ এবং উজ্জ্বল আবেগপূর্ণ মুখের সঙ্গে বিষণ্ণ এবং মনোরম—তার কণ্ঠের মাদকতাপূর্ণ উত্তেজনা, একবার যার তাকে মনে ধরেছে তার পক্ষে ভুলে যাওয়া ছিল অসম্ভব: তার সেই গান গাওয়ার অবাধ্য আকুলতা, তার ফিসফিসে কন্ঠের আর্জি “শোনো,” সেইসব অদ্ভুত প্রতিশ্রুতি, অদ্ভুত উত্তেজনাময় গতিবিধি, পরবর্তী পুরো সময়কে দখল করে রেখেছিল ৷
আমি তাকে জানাই, এখানে আসার আগে আমি শিকাগো হয়ে এসেছি, এবং ডজন খানেক পরিচিত মানুষ সেখান থেকে আমার মাধ্যমে তাকে ভালবাসা পাঠিয়েছে।
“তারা কি আমাকে চোখে হারায়?” আনন্দে কেঁদে উঠল সে।
“পুরো শহর খালি হয়ে গেছে! গাড়িগুলো সব বামদিকের পিছনের চাকা, শোক-স্মারক পুষ্পস্তবকের প্রতীক হিসাবে কালো রঙ করে, সারা নর্থ শোর জুড়ে, সারারাত অবিরাম হাহাকার করছে!”
“কী অদ্ভুত! চলো আমরা ফিরে যাই, টম! কালকেই!” তারপর সে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলে, “তুমি বাচ্চাটাকে দেখবে তো!”
“অবশ্যই দেখব।”
“সে ঘুমিয়ে আছে। দুবছর বয়স। তুমি কি আমাদের মেয়েটাকে কখনো দেখনি?”
“কখনই না।”
“আচ্ছা, তাহলে তো তোমার দেখতেই হবে। সে—”
টম ব্যুকানন অস্থিরভাবে ঘরে পায়চারী করছিল, হঠাৎ থেমে, কাছে এসে, আমার কাঁধে হাত রাখে।
“তুমি কি করছ, নিক?”
“আমি একজন বন্ড ম্যান।”
“কার সঙ্গে?”
আমি নাম বললাম।
“এদেরতো নামই কখনও শুনিনি!” তার সিদ্ধান্তমূলক ধৃষ্টতা। আমি বিরক্ত।
“তুমি শুনে থাকবে,” আমি বললাম। “তুমি যদি পুবেই থাকো, তাহলে নিশ্চয়ই একদিন না একদিন শুনবে।”
“ওহ! হ্যাঁ আমি পুবেই থাকব, তুমি চিন্তা করো না,” সে প্রথমে ডেইজি এবং তারপরে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকায়—যেন সে আরও কিছু নিয়ে সতর্ক। “অন্য কোথাও বসবাস করার মতো ঈশ্বরের অভিশপ্ত, অত বোকা আমি নই।”
তৎক্ষণাত মিস বেকার বলে ওঠে, “একদম!”
এতটাই আকস্মিকভাবে যে আমি শিউরে উঠি—আমার ঘরে প্রবেশের পর এটিই তার উচ্চারিত প্রথম শব্দ। স্পষ্টতই বিষয়টি তাকেও আমারই মতো অবাক করেছিল, কারণ সে হাই তোলে দ্রুত, নিপুণভাবে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়।
“আমি একদম জমে গেছি,” সে অভিযোগ করে, “আমি যতক্ষণ মনে করতে পারি এই সোফাতেই শুয়ে ছিলাম।”
“আমার দিকে এমনভাবে তাকিও না,” ডেইজি বলে। “সারা বিকেল আমি তোমাকে নিউইয়র্কে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
“না, ধন্যবাদ,” মিস বেকার প্যান্ট্রি থেকে এগিয়ে আসা চারটি ককটেলের উদ্দেশ্যে বলে, “আমি এখন পুরোপুরি প্রশিক্ষণে।”
আমন্ত্রয়ি তার অতিথির দিকে অবিশ্বাস্যভাবে তাকায়।
“তাই!” সে তার পানীয়টি এমনভাবে নামিয়ে রাখে যেন গ্লাসের তলায় অবশিষ্ট মাত্র আর এক ফোঁটা।
“তুমি আমাকে না জানিয়ে কীভাবে করতে পারলে!”
আমি মিস বেকারের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম সে “কী” করেছে! তাকে দেখাই ছিল এক নির্মল আনন্দ। তার পাতলা শরীর, ছোট স্তন, উর্ধমুখি গাড়ির মত ঋজু শরীর যা সে তরুণ ক্যাডেটের মতো কাঁধের পিছনে ফেলে আরো উচ্চকিত করে রাখে। তার ধূসর রৌদ্রোজ্জ্বল চোখ ভদ্রতাসুলভ পারস্পরিক কৌতূহল নিয়ে অসন্তুষ্ট মোহনীয়-ফ্যাকাশে মুখে আমার দিকে ফিরে তাকালো।
মনে হল এই মুখ, বা তার কোনো ছবি, আমি যেন আগে কোথাও দেখেছি।
“আপনি ওয়েস্ট এগে থাকেন,” অবজ্ঞার সঙ্গে মন্তব্য করে সে। “আমি সেখানে একজনকে চিনি।”
“আমি সেখানে একজনকেও চিনি না—”
“আপনি নিশ্চই গ্যাটসবিকে চিনেন।”
“গ্যাটসবি!” ডেইজির দাবিমূলক প্রশ্ন। “কী গ্যাটসবি?”
আমাকে উত্তর দেয়ার কোনো সুযোগ না দিয়ে, সে আমার প্রতিবেশি, বিষয়টি তাকে জানানোর আগেই; রাতের খাবারের ঘোষণা এলো; নিজের টানটান বাহুকে আমার বাহুর নিচে অস্থিরভাবে গুঁজে, টম ব্যুকানন আমাকে ঘর থেকে বের হতে এমনভাবে বাধ্য করল যেন সে শতরঞ্জের গুটি এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চালাচ্ছে।
দুই তরুণী তাদের স্নিগ্ধ স্থির হাত নিতম্বের উপর হালকাভাবে বসিয়ে আমাদের আগে আগে পথ দেখিয়ে সূর্যাস্তমুখি খোলা একটি গোলাপি বারান্দায় নিয়ে গেল, যেখানে মৃদু বাতাসে টেবিলের উপর প্রজ্বলিত চারটি মোমবাতি।
“মোমবাতি কেন?” ভ্রুকুটি করে আপত্তি জানাল ডেইজি। আঙুল দিয়ে মোমবাতিগুলো নিভিয়ে দিয়ে বলল, “দুই সপ্তাহের মধ্যে আজ বছরের দীর্ঘতম দিন।”
সে আমাদের সবার দিকে তাকাল। “তোমরা কি বছরের দীর্ঘতম দিনটিকে সবসময় মনে রাখ, তারপর ভুলে যাও? আমি সবসময় বছরের দীর্ঘতম দিনটিকে মনে রাখি, তারপর ভুলে যাই।”
“আমাদের কিছু পরিকল্পনা করা উচিত,” মিস বেকার হাঁচি দিয়ে বলে, এমনভাবে টেবিলে বসে যেন সে বিছানায় যাচ্ছে।
“ঠিক আছে,” ডেইজি সায় দেয়। “আমরা কী করব?” সে অসহায়ভাবে আমার দিকে তাকায়। “মানুষ কী পরিকল্পনা করে?”
আমি উত্তর দেবার আগেই বিস্ময় ভরা অভিব্যক্তিতে তার চোখ আটকে যায় নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে।
“দেখো!” অভিমানে কেঁদে ওঠে সে। “আমি ব্যথা পেয়েছি!”
আমরা সবাই দেখলাম—গাঁটটি কালো এবং নীল।
“তুমিই এর জন্য দায়ি, টম,” সে অভিযোগ জানায়। “আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে করোনি।
কিন্তু তুমিই এটা করেছ। একজন নৃশংস পুরুষকে বিয়ে করে আমি এই পেয়েছি, এক দানবিক শারীরিক নমুনা—”
“দানব শব্দটিকে আমি ঘৃণা করি,” টম আপত্তি করে, “এমনকি মজা করে বললেও”।
“দানবিক,” ডেইজি আরও জোর দিয়ে বলল।
কখনও কখনও সে আর মিস বেকার একসঙ্গে কথা বলছিল, নিঃশব্দ, আড়ম্বরপূর্ণ অসামঞ্জস্যের সঙ্গে যা কখনই বকবক বলে মনে হয়নি, বরং তাদের সাদা পোশাকের মতোই আকর্ষণীয় এবং সমস্ত অভিলাষের উর্ধে নৈর্ব্যক্তিক যেন তাদের চোখ।
তারা সেখানে ছিল—টম এবং আমাকে গ্রহণ করেছিল, আপ্যায়ন বা আপ্যায়িত হওয়ার সুখকর নম্র প্রচেষ্টায়। তারা জানত সন্ধ্যা নামবে, রাতের খাবার শেষ হবে, তারপর সন্ধ্যাও শেষ হবে, আর হঠাৎ করেই দূরে সরে যাবে সব। পশ্চিম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, সেখানে এক একটি সন্ধ্যা ক্রমাগত হতাশ প্রত্যাশায়, তীব্রবেগে এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে দৌঁড়ে শেষের দিকে ধাবিত হয়, কিংবা সময় নিজেই ভয়াতুর স্নায়বিক আতঙ্কে কুকড়ে থাকে।
“তোমাকে দেখে আমার নিজেকে গেঁয়ো আন-সিভিলাইজড মনে হয়, ডেইজি,” আমি আমার দ্বিতীয় গ্লাস কর্কি বরং আরো চিত্তাকর্ষক ক্ল্যারেটের সামনে স্বীকার করি, “তুমি কি ফসল, চাষবাস বা অন্য কিছু সম্পর্কে কথা বলতে পারো না?”
আমি এই মন্তব্য দিয়ে বিশেষ কিছু বোঝাতে চাইনি, তবে এর পরিণতি ছিল অপ্রত্যাশিত।
“সভ্যতা খান খান হয়ে যাচ্ছে,” হিংস্রভাবে গর্জে ওঠে টম। “আমি সবকিছু নিয়ে ভয়ঙ্কর হতাশ। তুমি কিগড-ডার্ডের লেখা ‘দ্য রাইজ অফ দ্য কালারড এম্পায়ার্স’ পড়েছ?”
“কেন না,” তার কথার ঢঙে অবাক হয়ে উত্তর দেই আমি।
“আচ্ছা, চমৎকার একটি বই, প্রত্যেকেরই পড়া উচিত। বিষয়টি হল আমরা যদি সতর্ক না হই শ্বেতাঙ্গ জাতি পুরোপুরি নিমজ্জিত হবে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।”
“টম গভীর প্রজ্ঞাশীল,” কিছু না ভেবেই দুঃখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ডেইজি। “সে গুরু গম্ভীর সব দীর্ঘ শব্দের বই পড়ে। সেই শব্দটা যেন কী ছিল আমরা—”
“ঠিক। তবে, বইগুলো সবই বৈজ্ঞানিক,” টম অধৈর্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। “লেখক পুরো ব্যাপারটি বইটিতে তুলে ধরেছে। উচ্চতম বর্ণ হিসাবে এটা আমাদের উপর নির্ভর করে যে আমরা কিভাবে তাদের নজরদারি করব, সতর্ক হতে হবে, তা না হলে অন্য বর্ণের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে।”
“আমাদের উচিত তাদের দাবিয়ে রাখা,” প্রখর সূর্যের দিকে তাকিয়ে, ফিসফিস করে, হিংস্র চোখ মেলে বলে ডেইজি।
“তোমার ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা উচিত—” শ্রীমতি বেকার শুরু করতে না করতেই টম তার চেয়ার প্রবলভাবে নাড়িয়ে চাড়িয়ে তাকে বাধা দেয়।
“ব্যাপারটা হল আমরা নর্ডিক। আমি, আর তুমি, আর তুমি আর—” সীমাহীন দ্বিধার পরে সে ডেইজিকেও অন্তর্গত করে মাথা নাড়ে এবং আবার আমার দিকে এক নজর তির্যক চোখ বুলায়, “—এবং সভ্যতার জন্য আমরা সবকিছু সৃষ্টি করেছি—বিজ্ঞান থেকে শিল্প এবং আর যা কিছু। তুমি কি দেখতে পাও?”
তার একাগ্রতার মধ্যে একধরনের দুঃখজনক ব্যাপার ছিল, তার আত্মতুষ্টি, আগের চেয়ে বহুগুণে প্রবল হওয়া সত্বেও বোধ হয় তার জন্য আর যথেষ্ট ছিল না। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, ভিতর থেকে ফোন বেজে উঠলে বাটলার বারান্দা থেকে বেরিয়ে যায়, ডেইজি ক্ষণিকের সেই বিরতিকে তত্ক্ষণাৎ লুফে নিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
“আমি তোমাকে একটা পারিবারিক গোপন তথ্য ফাঁস করছি,” উৎসাহী কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে সে। “বাটলারের নাক নিয়ে। তুমি কি বাটলারের নাকের কাহিনি শুনতে চাও?”
“আরে, আমিতো এ কারণেই আজ রাতে এসেছি।”
“আচ্ছা, সে কিন্তু সবসময় বাটলার ছিল না; সে নিউইয়র্কের কিছু লোকের জন্য সিলভার পলিশারের কাজ করত, তার দুইশ লোকের একটা সিলভার সার্ভিস ছিল। সকাল থেকে রাত অবধি তাকে পালিশ করতে হতো, শেষ পর্যন্ত এটি তার নাকে প্রভাব ফেলতে শুরু করে—”
“পরিস্থিতি চরম থেকে চরমতর খারাপের দিকে চলে যায়,” মিস বেকার জানায়।
“হ্যাঁ, পরিস্থিতি চরমতর খারাপ থেকে চরমতম জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছলে অবশেষে তাকে সেই পদ থেকে অব্যহতি নিতে হয়।”
ক্ষণিকের জন্য সূর্যের শেষ রোদ তার উজ্জ্বল মুখে রোমান্টিক আদরে ঝরে পড়েছিল।
তার সম্মোহনী কণ্ঠস্বরে আমি রুদ্ধশ্বাসে তার দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হই—
তারপর আলোগুলো ম্লান হতে থাকে, তাকে ছেড়ে যেতে যেতে প্রতিটি আলোক রশ্মি যেন এক দীর্ঘস্থায়ী অনুশোচনায় আক্রান্ত, যেমন সন্ধ্যার মনোরম রাস্তা ছেড়ে যেতে শিশুরা বিষাদাক্রান্ত হয়।
বাটলার ফিরে এসে টমের কানের কাছে কিছু একটা বলতেই টম ভ্রুকুঞ্চিত করে চেয়ার পেছনে ঠেলে, কোন কথা না বলেই ভিতরে চলে যায়। তার অনুপস্থিতি ডেইজির মধ্যেও যেন কিছু একটা উস্কে দেয়, সামনে ঝুঁকে, উচ্চকিত কণ্ঠস্বরে সে গান গাইতে শুরু করে।
“তোমাকে আমার টেবিলে দেখতে ভালোবাসি, নিক। তুমি আমাকে—একটি গোলাপের কথা মনে করিয়ে দাও, একটি নিখুঁত গোলাপ। তাই না?” নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে মিস বেকারের দিকে ফিরে তাকায়। “একটি নিখুঁত গোলাপ?”
চরম অসত্য! আমি কোনো দিক থেকে, কোনোভাবেই, কোনো গোলাপের ধারে কাছেও নই। সে কেবল বলার জন্যই বলছিল, স্বতস্ফূর্ত আবেগে তার মধ্য প্রবাহিত আলোড়নকারী উষ্ণতা যেন তার হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা শ্বাসরুদ্ধ, রোমাঞ্চকর শব্দগুলোকে বের করে আনার চেষ্টা করছিল। তারপর হঠাৎ করেই হাতের ন্যাপকিনটিকে টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে কি যেন এক অজুহাত দেখিয়ে সে ঘরে চলে যায়।
মিস বেকার এবং আমি সচেতনভাবে নিরর্থক সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি বিনিময় করি। সে সজাগ হয়ে উঠে বসতেই আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে সতর্ক কণ্ঠে বলে, “সস্স!”
ওপাশে ঘর থেকে একটি দমিত আবেগপ্রবণ গোঙানির শব্দ শোনা যায়, মিস বেকার সামনে ঝুঁকে, নির্লজ্জভাবে শোনার চেষ্টা করে। গুঞ্জনটি সুসংগতির সঙ্গে কেঁপে উঠে, খাঁদে নেমে, উত্তেজিতভাবে প্রোথিত হয়ে, পুরোপুরি থেমে যায়।
“আপনি যে মিস্টার গ্যাটসবির কথা বলেছেন সে আমার প্রতিবেশী—” আমি তাকে জানাই।
“কথা বলবেন না। আমি শুনতে চাই কি হচ্ছে।”
“কিছু হচ্ছে?” আমি নির্দোষভাবে জানতে চাই।
“আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি জানেন না?” সত্যিই অবাক হয় মিস বেকার। “আমিতো ভেবেছি সবাই জানে।”
“আমি বাদে।”
“কেন—” সে ইতস্তত করে বলে, “টমের নিউইয়র্কে এক প্রেমিকা আছে।”
“প্রেমিকা আছে?” আমি শূন্য কণ্ঠে তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করি।
মিস বেকার মাথা নাড়ে।
“অন্তত ডিনারের সময় তার টেলিফোন না করার শালীনতাটা বজায় রাখা উচিত। তাই নয় কি?”
কিছু বুঝে ওঠার আগেই পোষাকের খসখস, চামড়ার বুটের কচকচ শব্দ শোনা যায়, টম আর ডেইজি টেবিলে ফিরে আসে।
“আর কোনো উপায় নেই!” উত্তেজিতভাবে চিৎকার করে ডেইজি।
চেয়ারে বসতে বসতে, একবার মিস বেকারের দিকে তারপর আমার দিকে তাকায়, তারপর আবার বলতে শুরু করে: “আমি এক মুহূর্তের জন্য বাহির পানে তাকিয়েছি, কী যে রোমান্টিক! লনে একটি পাখি, অবশ্যই একটি নাইটিঙ্গেল হবে, মনে হয় কুনার্ড বা হোয়াইট স্টার লাইনের উপর দিয়ে এসেছে! সে গান গাইছে—” তার কণ্ঠে গাইছে “—কি রোমান্টিক, তাই না, টম?”
“খুবই রোমান্টিক,” টম উত্তর দেয়, তারপর করুণ স্বরে বলে, “যদি রাতের খাবারের পর আলো থাকে, আমি তোমাকে আস্তাবলে নিয়ে যেতে চাই।”
যেই মাত্র ডেইজি সম্মতিসূচকভাবে টমকে—মানে আস্তাবলের মালিককে, আসলে সমস্ত বিষয়ের মালিকের দিকে মাথা নাড়তে যায়, সবাইকে চমকে দিয়ে আবারও টেলিফোন বেজে ওঠে, আস্তাবলের বিষয়টি বাতাসে অদৃশ্য হয়ে মিলিয়ে যায়।
টেবিলে বসে থাকা শেষ সেই ভঙ্গুর পাঁচ মিনিটের কথা আমার যা মনে আছে তা হল মোমবাতিগুলোকে অর্থহীনভাবে আবারও জ্বালানো হয়েছিল, এবং আমি তড়িত-দৃষ্টিতে সচেতনভাবে, প্রত্যেকের চোখ এড়িয়ে প্রত্যেককে দেখতে চাইছিলাম। আমি জানিনা ডেইজি আর টমের মনে কী ছিলো, তবে আমি এখনও সন্দিহান, মিস বেকার, যে আপাতদৃষ্টিতে এক নির্দিষ্ট কঠিন সংশয়কে আয়ত্ত করেছে, সেও এই পঞ্চম অতিথির তীক্ষ্ণ ধাতব বিপদ সংকেতের জরুরি চিৎকারকে মন থেকে সরাতে পেরেছিল কিনা। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কারণে পরিস্থিতিটি কৌতূহলের উদ্রেক করলেও—আমার মন বলছিল পুলিশকে অবিলম্বে খবর দেয়া দরকার।
ঘোড়াগুলোকে, বলাই বাহুল্য, আর উল্লেখ করা হয়নি। টম এবং মিস বেকার, তাদের মাঝে কয়েক ফুট গোধূলির আলো নিয়ে লাইব্রেরিতে ফিরে যায়, নিখুঁত মূর্ত দেহের পাশে নজরদারির মতো; অন্যদিকে উচ্ছ্বসিত আগ্রহ দেখানোর ছলে, বধির আমি ডেইজিকে অনুসরণ করি—শিকলের মত সংযোগকারী কতগুলো বারান্দা পার হয়ে, সামনের দেউড়িতে। গভীর অন্ধকারে, সেখানে আমরা বেতের ছাউনিতে পাশাপাশি এসে বসি।
ডেইজি তার মুখটি হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, যেন প্রেমময়তায় তার সুঢৌল মুখের আকৃতি অনুভব করতে এবং তার দৃষ্টি ধীরে ধীরে বাইরের মখমলি সন্ধ্যার দিকে রওনা হয়েছিল। তার অশান্ত আবেগ আমার নজর এড়ায়নি, আমি তার ছোট্ট মেয়েটির কথা জানতে চাই, এই ভেবে, হয়তো তাকে শান্ত করবে।
“আমরা একে অপরকে এখনও খুব একটা চিনে উঠতে পারিনি, নিক,” সে হঠাৎ বলে। “কাজিন হলেও। তুমি আমার বিয়েতেও এলে না।”
“আমি তখনও যুদ্ধ থেকে ফিরিনি।”
“তা সত্যি।” সে ইতস্তত করে বলে। “ঠিক আছে, আমার খুব খারাপ সময় কেটেছে, নিক, এবং আমি সব ব্যাপারেই বেশ কঠিন।”
স্পষ্টতই তার কঠিন হওয়ার কারণ ছিল। আমি অপেক্ষা করলাম কিন্তু সে আর কিছু বলল না, কিছুক্ষণ পর আমি আবারও মৃদুভাবে তার মেয়ের প্রসঙ্গে ফিরে এলাম।
“আমার মনে হয় সে কথা বলে, তাই না? এবং—খায়, এবং আর সবকিছু।”
“ওহ, হ্যাঁ।” সে উদাসীনভাবে আমার দিকে তাকায়। “শোন, নিক; তার জন্মের সময় আমি কি বলেছিলাম, আমাকে বলতে দাও। তুমি শুনতে চাও?”
“খুব।”
“তাহলে তুমি বুঝবে আমি কী অনুভব করেছি—ব্যাপারগুলো নিয়ে। যাই হোক, তার বয়স তখন এক ঘণ্টারও কম অথচ টম কোথায় ছিল কেবল ঈশ্বর জানেন! এক পরিত্যক্ত অনুভব নিয়ে আমি ইথার থেকে জেগে উঠি, নার্সকে জিজ্ঞেস করি ছেলে না মেয়ে। সে বলে মেয়ে, আমি মাথা ঘুরিয়ে কেঁদে ফেলি। বলি, “আচ্ছা, ‘আমি খুশি’ যে সে একটি মেয়ে। এবং আমি আশা করি সে বোকা হবে—একটি মেয়ে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভাল যা হতে পারে, তা হল, ছোট্ট সুন্দর একটি বোকা মেয়ে।”
“দেখলে তো আমি সবকিছুকে জটিল ভাবি,” সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে “সবাই তাই ভাবে—সব আধুনিক মানুষ। এবং আমি জানি, আমি সব জায়গায় গিয়েছি, সবকিছু দেখেছি এবং সবকিছু করেছি।” তার চোখ তার চারপাশে বিদ্বেষপূর্ণভাবে জ্বলজ্বল করতে শুরু করে, বরঞ্চ বলা যায় টমের মতো, এবং রোমাঞ্চকর অবজ্ঞায় সে হেসে ওঠে, “আমি অত্যাধুনিক—ঈশ্বর, আমি পরিশীলিত অভিজাত!”
আমার বিশ্বাসকে অন্ধ করা, বাধ্যতামূলক ভাবে আমার মনোযোগ ছিনিয়ে নেয়া তার কণ্ঠস্বর থেমে যেতেই, আমি অনুভব করি, সে যা বলেছে তা মূলত কৃত্রিম। পরিস্থিতিটি আমার জন্য ছিল অস্বস্তিকর, যেন পুরো সন্ধ্যাটাই আমার অবদানমূলক আবেগ পরীক্ষার এক সুক্ষ্ম কৌশল। আমি অপেক্ষা করছিলাম, এবং আমাকে নিশ্চিত করে, মুহূর্তের মধ্যেই সে তার সুন্দর মুখের উপর আবারো নিখুঁত স্মিত হাসি ফিরিয়ে এনে আমার দিকে তাকায়; যেন সে একটি স্বতন্ত্র গোপন সমাজে তার সদস্যপদ নিশ্চিত করেছে—যে সমাজের অন্তর্গত সে নিজে আর টম।
অন্দরমহলে, লাল রঙের ঘরে আলো ফুটে উঠেছে। টম এবং মিস বেকার দীর্ঘ পালঙ্কের উভয় প্রান্তে বসে; মিস বেকার টমকে “স্যাটারডে ইভনিং পোস্ট” থেকে উচ্চস্বরে পড়ে শোনায়—শব্দ আর কথাগুলো অবিচ্ছিন্ন প্রশান্ত সুরে একসঙ্গে চলতে থাকে। আলো বাতি থেকে গড়িয়ে টমের বুটগুলোতে উজ্জ্বল আর মিস বেকারের শরতের পাতার মত চুলের হলুদে নিস্তেজ হয়ে কাগজ বরাবর প্রতিফলিত হয়, আর সে তার বাহুর সরু পেশীর আন্দোলনে এক একটি করে পৃষ্ঠা উল্টায়।
আমরা ভিতরে প্রবেশ করলে সে হাত তুলেই এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে।
“ক্রমশ ধারাবাহিকভাবে চলবে,” টেবিলে পত্রিকাটি ছুঁড়ে ফেলে বলে, “শীঘ্রই আমাদের পরবর্তী সংখ্যায়।”
হাঁটুর অস্থির নড়াচড়ায় তার শরীর নিজেকে জাহির করে এবং সে উঠে দাঁড়ায়।
“দশটা বাজে,” মন্তব্য করে, যেন সিলিংয়ে সময় দেখেছে। “এখন এই ভাল মেয়েটির বিছানায় যাওয়ার সময়।”
“জর্ডান আগামীকাল টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে,” ডেইজি ব্যাখ্যা করে, “ওয়েস্টচেস্টারে।”
“ওহ, আপনি জর্ডান বেকার!”
আমি বুঝতে পারি কেন তার মুখটি আমার কাছে এত পরিচিত মনে হয়েছিল—এই মুখটি তার উচ্ছ্বসিত অবমাননাকর অভিব্যক্তিতে, অ্যাশেভিল, হট স্প্রিংস এবং পাম বিচের ক্রীড়া জগতের অনেক মুদ্রিত পত্রিকার ছবি থেকে আমাকে অনেকবার দেখেছে। আমি তার অনেক গল্প শুনেছি, সমালোচনামূলক কিছু অপ্রীতিকর গল্প, কিন্তু সেগুলো কী ছিল মনে করতে পারছিলাম না; অনেক আগেই সেগুলো বিস্মৃতির অতলে ডুবে গেছে।
“শুভ রাত্রি,” মৃদুস্বরে বলে সে। “আমাকে আটটায় জাগিয়ে দিও, কি পারবে না?”
“যদি তুমি উঠো।”
“আমি উঠব, শুভ রাত্রি, মিস্টার ক্যারাওয়ে। দেখা হবে সত্বর।”
“অবশ্যই হবে,” নিশ্চিত করে ডেইজি। “আসলে আমিই যোগাযোগের ব্যবস্থা করব। ঘন ঘন এসো নিক, আমরা এক সঙ্গে ওকে ছুড়ে ফেলব। বোঝই তো—দুর্ঘটনাক্রমে লিনেনের আলমারিতে আটকে রাখব, নৌকায় তুলে সমুদ্রে ঠেলে দিব, এই সব আর কি—”
সিঁড়ি থেকে মিস বেকার বলে “গুডনাইট”। “আমি তোমাদের একটি কথাও শুনিনি।”
“ও একটা ভাল মেয়ে,” কিছুক্ষণ পরে টম বলে। “তাদের উচিত নয় তাকে এভাবে সারা দেশে ছুটতে দেওয়া।”
“কার উচিত নয়?” ডেইজি ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে।
“তার পরিবার।”
“তার পরিবার বলতে তো প্রায় এক হাজার বছর বয়সী এক খালা। তাছাড়া নিকই তো এখন থেকে তার দেখাশোনা করবে, তুমি করবে, তাই না, নিক? এই গ্রীষ্মেই সে এখানে তার অনেকগুলো সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে আসছে। আমি মনে করি আমাদের বাড়ির এই পারিবারিক পরিবেশ তার উপর খুব ভালো প্রভাব ফেলবে।”
ডেইজি এবং টম এক মুহূর্ত নীরবে একে অপরের দিকে তাকায়।
“সে কি নিউইয়র্ক থেকে?” আমি দ্রুত জিজ্ঞেস করি।
“লুইসভিল থেকে। আমাদের শ্বেতাঙ্গ বালিকা-বেলা একসঙ্গে কেটেছে সেখানে। আমাদের সুন্দর সাদা—”
“তুমি কি নিকের সঙ্গে বারান্দায় হৃদয়গ্রাহী আলাপ করেছ?” হঠাৎ টম দাবি করে।
“আমি কি তাই করেছি?” সে আমার দিকে তাকায়। “আমি মনে করতে পারছি না, তবে আমার মনে হয় আমরা নর্ডিক জাতি সম্পর্কে কথা বলেছি। হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত যে আমরা তাই করেছি। এটা একরকম আমাদের উপর সংক্রমিত হয়েছে এবং যেন শিরোধার্য, তুমি তো জানো—”
“যা শুনেছ তার সব বিশ্বাস করো না, নিক,” টম আমাকে পরামর্শ দেয়।
আমি মৃদু স্বরে জানাই আমি কিছুই শুনিনি এবং কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিই। তারা আমার সাথে সাথে দরজার কাছে এসে, আলোকিত প্রফুল্ল চত্বরে পাশাপাশি দাঁড়ায়।
আমি ইঞ্জিনে হাত দিতেই ডেইজি নিরবচ্ছিন্নভাবে বলে, “দাঁড়াও!”
“তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি। শুনেছি তুমি পশ্চিমের একটি মেয়ের সঙ্গে বাগদান করেছ।”
“সত্যি,” টম সদয়ভাবে সমর্থন করে। “আমরা শুনেছি তোমার বাগদান হয়েছে।”
“বানোয়াট। আমি নিছক দরিদ্র মানুষ।”
“কিন্তু আমরা শুনেছি,” প্রস্ফুটিত ফুলের মতো আবারও অবাক করে, জোর দিয়ে বলে ডেইজি। “তিনজনের কাছে শুনেছি, সুতরাং অবশ্যই সত্যি।”
তারা কী প্রসঙ্গে কথা বলছে সে আমি নিশ্চিত জানতাম, কিন্তু ঘুনাক্ষরেও আমার বাগদান হয়নি। প্রকৃতপক্ষে গুজব যে নিষেধাজ্ঞা ছড়িয়েছে সেটিও অন্যতম কারণ যে আমি পুবে এসেছি। গুজবের কারণে তুমি পুরানো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করতে পারো না, আবার অন্যদিকে বিয়ের গুজবের কারণ হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও আমার ছিল না।
তাদের এই আগ্রহ বরং আমাকে স্পর্শই করেছিল, আমার চোখে তাদেরকে অপেক্ষাকৃত কম অদূরস্পর্শি ধনী করে তুলেছিল—তবুও, ফিরে এসে আমি ছিলাম বিভ্রান্ত এবং কিছুটা বিরক্ত। মনে হয়েছিল, ডেইজির উচিত ছিল তক্ষুনি, কোলের শিশুটিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা—কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সে ধরনের কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না। টমের ক্ষেত্রে, তার “নিউ ইয়র্কে কোন প্রেমিকা আছে” তার চেয়েও আমাকে বিস্মিত করেছিল একটি বই-এর কারণে তার হতাশা। কিছু একটা তাকে প্রাচীনপন্থি বাসি ধারণার প্রান্ত খুঁটে চিবিয়ে চর্বণ করতে বাধ্য করছিল, যেন তার বলিষ্ঠ দৈহিক অহংবোধও আর তার প্রভু-সুলভ হৃদয়কে খাইয়ে পুষ্ট করতে পারেনি।
ইতিমধ্যেই দারুণ গ্রীষ্ম, রোড হাউসের ছাদে, পথের পাশে গ্যারেজগুলোর আঙিনায়, যেখানে নতুন লাল গ্যাস-পাম্পগুলো আলোর বন্যায় স্থাপিত, ওয়েস্ট এগ-এ, আমার এস্টেটে পৌঁছে গাড়িটি শেডের নিচে রেখে, আমি উঠানের পরিত্যক্ত ঘাসের রোলারটির উপর কিছুক্ষণ বসে থাকি ।
বাতাস থেমে গেছে, রেখে গেছে উজ্জ্বল রাতের ডানায় গাছেদের সংঘর্ষ আর পৃথিবীর পূর্ণ তলদেশ হতে উত্থিত প্রাণপূর্ণ ব্যাঙের গানে একনিষ্ঠ অরগানের ধ্বনি। চাঁদের আলোয় পাক খায় এক চলমান বিড়ালের আকৃতি, মাথা ঘুরিয়ে দেখি আমি একা নই—ফুট পঞ্চাশেক দূরে প্রতিবেশীর অট্টালিকার ছায়ায় জেগে উঠেছে আরো একটি শরীর, পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে—নক্ষত্রের রূপালি ঝাঁঝে। তার ধীর চলাফেরা, মসৃণ সবুজ আঙিনায় তার পায়ের সুরক্ষিত অবস্থান ইঙ্গিতবহ যে, সেই মি. গ্যাটসবি; নিজেই—আমাদের এই ধরাধামের স্বর্গে নেমে এসেছে, তার নিজের অধিকার বুঝে নিতে।
আমি তাকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শ্রীমতি বেকার নৈশভোজে তার নাম উল্লেখ করেছে, ভূমিকার জন্য সেটিই ছিল যথেষ্ঠ। কিন্তু পরে আর করিনি, কারণ আকস্মিকভাবে আমি উপলব্ধি করেছিলাম সেই বার্তা, যে সে একা থাকতেই ভালবাসে—কৌতুহল উদ্দীপক এক চাঞ্চল্যকর ভঙ্গিতে, সুদূর অন্ধকার জলের পানে, সে তার বাহু প্রসারিত করেছিল, এবং আমি যত দূরেই থাকি না কেন হলফ করে বলতে পারি সে ছিল আবেগে কম্পমান। অনিচ্ছাসত্বেও আমি সমুদ্রে, তার দৃষ্টিকে অনুসরণ করে সেদিকপানে তাকাই—সাময়িক এক সংক্ষিপ্ত সবুজ আলো ছাড়া সেখানে আমি আর কিছুই আলাদা করতে পারিনি, অতলস্পর্শী সময়ের অসম্ভাবী এক দূরত্বে সেই আলোটি যেন ঘাটের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। আমি আবার তার দিকে ফিরে তাকাতেই আবিষ্কার করি ততক্ষণে সে অদৃশ্য—কেবলমাত্র আমি—আবারও একা—সেই অশান্ত অদ্ভুত অন্ধকারে।
* * *
দৃষ্টি রাখুন ► আসছে দ্বিতীয় পর্ব
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন