চীনা তিন কবির উইঘুর কবিতা

অ+ অ-

 

ভূমিকা  

উইঘুর সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে যুগ যুগ ধরে বিকশিত হচ্ছে কাব্যকলা। সম্প্রতি চীনের শিনচিয়াং প্রদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায় শিকার হয়েছে প্রবল রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের, যা মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে গণহত্যার শামিল বলেও বিবেচিত হচ্ছে। উল্লিখিত নিপীড়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চীনা কর্তৃপক্ষ ধ্বংস করেছে উইঘুরদের পবিত্র স্থাপনা। সেন্সর করা হচ্ছে তাদের ভাষায় প্রকাশিত বইপুস্তক এবং বিদ্যালয়সমূহে উইঘুর ছাত্রদের বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সুযোগ থেকে। একাধিক সূত্র মতে, কবি-লেখক-শিল্পীসহ ৩১২ জন উইঘুর বুদ্ধিজীবীকে কারাগারে অন্তরীণ করা হয়েছে। কয়েকজন উইঘুর কবি রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এড়িয়ে স্বদেশ ত্যাগ করে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের রচিত তিনটি কবিতা ভাষান্তরে উপস্থাপিত হচ্ছে।

কবিতাগুলো, ভূমিকাসংক্রান্ত তথ্য, কবিতার প্রেক্ষাপট ও কবিদের বায়ো-বিষয়ক উপাত্ত নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেটের একাধিক সূত্র থেকে। ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তরিত কবিতাগুলোতে ইংরেজি অনুবাদকের নাম মূল রচয়িতার নিচে উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া কারাবন্দী কবি, লেখক ও শিল্পীদের নাম দিয়ে সৃষ্ট একটি বৃত্তাকার স্পাইরাল চিত্র কবিতাগুলোর সঙ্গে উপস্থাপিত হচ্ছে। চিত্রটির সূত্র হচ্ছে উইঘুর আর্ট কালেকটিভ।

 

আগুনের কাছে ফিরে যাওয়া

মোয়েসের আব্দুলইহেদ [হেনডান]

ফিরে যাবো আমি তার কাছে
ফিরে যাবো তাদের সকলের সন্নিকটে!
ঘটনা যা-ই হোক—চোখ দুটি মুদতে পারি না আমি কিছুতেই,
আমার প্রতিটি সূর্যকরোজ্জ্বল সরণিতে ছায়া ফেলে নিশিরাত,
আঙুল গলে ঝরে যায় নিজস্ব নক্ষত্ররাজি,
তার পাশে বসে আমি একদিন মুদবো দুচোখ,
এবার আলোরিক্ত তলকুঠুরিকে ভরে উঠতে দাও দুঃস্বপ্নের বিভীষিকায়!
আর তাদের সান্নিধ্যে ঠা ঠা করে হেসে উঠতে দাও আমার সমুদয় স্বপ্নরাজিকেও,
না, কিছু মনে করার কোনো ব্যাপার না,
ঠিক আছে, বেঁধে ফেলো পিছমোড়া করে আমার দুহাত,
যতক্ষণ না আমার হৃৎপিণ্ড ফের পুড়ে খাক না হচ্ছে...
ততক্ষণ চাবকাও...মুখমণ্ডল কেটে ছিঁড়ে ফালা ফালা করে ফেলো,
যতক্ষণ না আমার শ্বাসরুদ্ধ আত্মা আর সহ্য করতে পারে না—ততক্ষণ
মনে হয় নাসিকা আমার তীব্র চাপে বিচূর্ণ হয়ে গেলো!
আমার মৃত্যুসংবাদ শুনে তুমি কেঁদো না তো।
মনে করো, কারাকুঠুরির তুমুল শৈত্য,ক্রমাগত অনাহার-উপবাস,
তীব্র তৃষ্ণাও আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছি আমি।

আমাকে নিয়ে আর ভেবো না,
বুকে না হয় বেঁধে ফেলো ভারী পাথর।
ছিঁচকাদুনে স্বভাবের প্রতি আমার ঘৃণা সাহায্য করবে আমাকে টিকিট কাটতে,
ক্রন্দনের প্রতি তীব্র অনীহা আমাকে সহায়তা দেবে মালপত্র গুছিয়ে নিতে,
আমার হৃদয়ের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে আলোকোজ্জ্বল প্রভাত,
ভোরের আলোকরশ্মিতে খুলে যাবে আমার শিরা ও ধমনীতে বেঁধেছে যে জট
এবং মুক্ত করবে আমাকে আতঙ্কের বিভীষিকা থেকে,
যখন কালো থলের ভেতর ঢোকানো হবে আমার মস্তক
আমি যেন চিৎকার করে বলতে পারি ‘উরুমচি’,
আমার শরীরে জড়ানো কাফন ছুটে যাচ্ছে আমার জননীর কবরের দিকে,
এর চেয়ে সহজ সমাপ্তি আর হতে পারে কি?
মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে নির্মমতার কাছে অনুমোদন পাচ্ছে আমার শেষ ইচ্ছা,
যখন তুমি শুনবে—তার মৃত্যু হয়েছে—এ রকম অদ্ভুত সংবাদ,
উচ্চরোলে বলো, ‘না, মৃত্যু হয়নি তার’,
আপন মাতৃভূমির মৃত্তিকায় কীভাবে কারও মৃত্যু হতে পারে?
যেখানে বসবাস করেছে সে বেশ কিছুকাল
সে ভূমির শুভ্র সমুজ্জ্বল মৃত্তিকা—সজোরে আঁকড়ে ধরে
তার একমাত্র দায়িত্ব এখন হাসিমুখে যাওয়া।


কবি পরিচিতি ও কবিতার প্রেক্ষাপট

হেনডেন ছদ্মনামে পরিচিত কবি মোয়েসের আব্দুল’ইহেদ-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিনচিয়াং প্রদেশের উইঘুর অটোনোমাসের অন্তর্গত গুলজা নামক একটি ছোট শহরে। তিনি বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অর্জন করেন ডিগ্রি। ২০১৩ সাল থেকে কবি তুরস্কে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। হেনডেন বর্তমানে ‍তুরস্কে শরণার্থী হওয়া উইঘুর শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষা দেন, তাদের জন্য একটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ করেন। কবিতা ছাড়া ‘খায়ের খোশ—কুয়েশ’ বা ‘বিদায় অভিবাদন—সূর্য’ শিরোনামে একটি উপন্যাসেরও রচয়িতা। উপন্যাসটি চীনদেশে উইঘুর সম্প্রদায়ের তথাকথিত রিএডুকেশন ক্যাম্প নামে বন্দিশিবিরে অন্তরীণাবস্থা বর্ণনার জন্য উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সাল থেকে স্বদেশ চীনে অন্তরীণ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কবি হেনডেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।এক আত্মীয় তাঁর সঙ্গে অন্তর্জালে যোগাযোগের অপরাধে কারারুদ্ধ হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
উইঘুর সম্প্রদায়ের দশ লক্ষাধিক মানুষের অন্তরীণ শিবিরে বন্দী হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে কবি একজন প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেন, তিনি যে স্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্তরীণ শিবিরে মেয়াদ কাটাচ্ছেন না, বরং বসবাস করছেন নির্বাসনে ভিন্ন দেশের নিরাপত্তায়, এর জন্য তিনি প্রতিনিয়ত ভোগেন তীব্র অপরাধবোধে। বিদেশের শরণার্থীশিবিরে তাঁর মতো আরও অনেক উইঘুর নাগরিকও ভুগছেন আত্ম-অনুশোচনার তুষানলে। গিল্ট ফিলিং বা অপরাধ ও গ্লানি হামেশা হানা দেয় তাঁদের দুঃস্বপ্নে। ক্রমাগত নিদ্রাহীন রাত কাটানোর ফলে নির্বাসিত জীবনের যৎসামান্য আনন্দও তাঁদের কাছে হয়ে উঠেছে বিষবৎ বিবমিষাময়।
বন্দী উইঘুর কবি-শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নিপীড়নে অসুস্থ হয়ে পড়া, এবং কারাগার থেকে সম্পূর্ণ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় কবি হেনডেন মন্তব্য করেন, ‘ইচ্ছা হয় ফিরে যাই স্বদেশে এবং স্বসম্প্রদায়ের কাতারে শামিল হয়ে অনুভব করি নিপীড়নের যন্ত্রণা।’ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় কবি আরও জানান, নিজ সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে না পারার কষ্ট পরবাসে নিরাপত্তাকে শুধু দুরূহই করে তোলে না, বরং করে তোলে অসহনীয়ও। তাঁর ভাষায়, ‘স্বদেশে মাতৃভূমিতে মৃত্যুবরণ করাও বিদেশের নিরাপত্তার চেয়েও অনেক বেশি কাম্য।’ কবি হেনডেন কারাবন্দী সকল আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ হারানোর কারণে শিকার হয়েছেন একাকিত্ব ও বিষণ্নতার—যা জগৎসংসারের অন্তঃসারহীনতা সম্পর্কে তাঁকে বিঘতভাবে সচেতন করে তুলেছে। যার প্রতিক্রিয়ায় কবি রচনা করেন ‘আগুনের কাছে ফিরে যাওয়া’ শিরোনামের কবিতাটি।

 

নিশিরাত

আবদুশুকুর মোহামেত
ইংরেজিতে অনুবাদ: সুবহি

রাত্রি যদি ছোট হতো—যে রকম ছোট করে ছাঁটা আমার চুল,
আর যদি হতো উজ্জ্বল—আমার হৃদয়ের মতো দীপ্যমান,
তাহলে আমি আমাদের সাথে জীবনের যে দূরত্ব—
তা অতিক্রম করতে পারতাম।
সুদীর্ঘ অশ্রুমালা—আমার চোখের জল ভিন্ন আর কিছু নয়,
জল ঝরে ঝরে চুইয়ে আমার অভ্যন্তরে জং ধরে গেছে।
তারপরও রাত্রি কিন্তু আমার চিন্তার মতো সুদীর্ঘ,
এবং আমার দুঃস্বপ্নের মতো ভয়ংকর,
এবং দূরত্ব আমার আকাঙ্ক্ষার মতো অশেষ সুদূর।
গিরিখাতের ওপাশে—যেখান থেকে এসেছি আমি
ওই দিকে সূর্যও মাতাল তীব্র সুরায়,
নিশিরাতের অন্ধকার আলিঙ্গনে আলোরিক্ত।

ধূসর হয়ে আসলো আমার কেশদাম,
তারপরও ফুটলো না আলো—রাত্রি থেকেই গেলো নিকষ অন্ধকার,
অর্ধেকের ওপর চুল পড়ে পড়ে চাঁদি হলো খালি,
তারপরও ফুরালো না নিশিরাতের অশেষ অন্ধকার।

 

কবি পরিচিতি ও কবিতার প্রেক্ষাপট

উইঘুর সাহিত্যের যশস্বী কবি আবদুশুকুর মোহামেত-এর জন্ম শিনচিয়াং প্রদেশের উইঘুর অটোনোমাস প্রদেশের অন্তর্গত কুচা শহরে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন কবি, কিন্তু উইঘুর ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে সাহিত্যচর্চার অপরাধে তিনি শিকার হতে থাকেন ক্রমাগত হয়রানির। চীনা প্রশাসন কর্তৃক নিপীড়ন প্রবল হতে হতে সহ্যসীমা অতিক্রম করে গেলে, কারারুদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে কবি সংগোপনে স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। আটটি গ্রন্থের প্রণেতা কবি মোহামেত বর্তমানে সুইডেনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, আমিনে বুগরা বা ইতিহাস ভুলে গেছে যে নারীর কাহিনি, ও ওমকা ইয়েনলারি বা নীরবতার উপাখ্যান। কবি ‘ওয়ার্ল্ডউইঘুর রাইটার্স ইউনিয়নের’ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে কর্মতৎপর।
২০১৭ সালে প্রবাসী কবি আবদুশুকুর মোহামেত জানতে পারেন, তাঁর ভাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রিএডুকেশন ক্যাম্প নামক অন্তরীণ শিবিরে। এ ট্র্যাজিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যদিও আমি এ মুহূর্তে বসবাস করছি সুইডেনে, কিন্তু আমার অশান্ত মন সর্বদা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার স্বদেশে। স্বসম্প্রদায়ের জন্য আমার দেহমনে হামেশা সৃষ্টি হয় হাহাকার, মনে হয় আমার সমগ্র শরীর যেন জ্বলেপুড়ে খাক হচ্ছে।’ যন্ত্রণাকে কবিতায় রূপান্তরকরা মোহামেতের কবিতার বৈশিষ্ট্য। কবি জানান, উইঘুর সম্প্রদায়ের দিনযাপনে কাব্যচর্চার ঐতিহ্য শুধু প্রাচীনই নয় বরং তা প্রাণবন্তও। রিএডুকেশন ক্যাম্প প্রবর্তিত হওয়ার সময় থেকেই চলছে কঠোর সেন্সরশিপ, ফলে উইঘুরদের মাতৃভাষায় কিছুই আর প্রকাশিত হতে পারছে না। স্বদেশের ক্রমশ খারাপ হওয়া পরিস্থিতি তাঁকে বিষণ্ন করে অহরহ।এ বিষণ্নতা বিবর্তিত হয় গাঢ় বিষাদে এবং এ বিষাদের প্রতিফলন ঘটে তাঁর কবিতায়।

 

হৃদয় আমার প্রতিশোধের বিলাসবহুল কাঁটায় পরিপূর্ণ

আবদুওয়েলি আইয়ুপ
ইংরেজিতে অনুবাদ: সুবহি

অহংকার, এমন নয় যে আমি তা ছেড়েছুড়ে পালিয়ে এসেছি,
যদিও আমি বসে আছি তোমার কাছাকাছি—
কিন্তু হাত বাড়িয়ে তোমাকে আলিঙ্গন করতে আমি অপারগ,
উপভোগ—না তোমার তালাশ আমি করিনি, পাইওনি তোমাকে,
মুহূর্তের জন্যও আমি তোমার উষ্ণ সান্নিধ্যে আচ্ছন্ন হইনি গাঢ় নিদ্রায়।

কষ্ট, তোমাকেও আমি সমাধিস্থ করিনি আমার পাঁজরের কবরগাহে,
হৃদয় আমার প্রতিশোধের বিলাসবহুল কাঁটায় পরিপূর্ণ।
প্রশ্নে প্রজ্বলিত হতে হতে আমি পুড়ে মরেছি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি জবাব।
অপমানের রক্তকে
চাইলেও নিজস্ব শোণিতস্নানে করা যায় না ক্লেদ ও কালিমা-মুক্ত।

 

কবি পরিচিতি ও কবিতার প্রেক্ষাপট

কবি আবদুওয়েলি আইয়ুপ-এর পেশাগত জীবনের সূত্রপাত হয় শিনচিয়াং প্রদেশের কাশগড় শহরে—মূলত উইঘুর ভাষা ও সংস্কৃতির শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীকালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অর্জন করেন ভাষাতত্ত্বে মাস্টার ডিগ্রি। কবি অতঃপর ফিরে আসেন কাশগড়ে, নিযুক্ত হন ফের শিক্ষকতা পেশায়, সংগ্রহ করেন নতুন একটি বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য তহবিল। ২০১৩ সালে স্কুল গড়ার কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হন। কারাগার তাঁকে মাতৃভাষায় উইঘুর সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদানের অভিযোগে দণ্ডিত করে। অন্তরীণাবস্থায় মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে, মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবাদের মুখে প্রশাসন তাঁকে মুক্তি দেয়। কবি আইয়ুপ বর্তমানে তুরস্কের আংকারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কর্মরত আছেন।
কবি আইয়ুপ শিশু বয়সে বেড়ে ওঠেন একাদশ শতাব্দীর খ্যাতনামা উইঘুর পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ মাহমুদ কাশগড়ীর মাজারসংলগ্ন একটি প্রত্যন্ত জনপদে। তাঁর গ্রামে ছিল কবিতাবৃত্তির সুন্দর একটি পরিবেশ; এবং গ্রামবাসীর সকলেই সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে কবিতা আওড়াতে পছন্দ করত। কবির ভাষ্যানুযায়ী—‘কবিতার সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের সংস্রব ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।’ শৈশবে তিনি শিখেছিলেন কবিতাবৃত্তির শিল্পকলা, এবং তাঁর মুখস্থ ছিল ১২ হাজার শব্দের পদাবলি গুচ্ছ। জীবনভর—যখনই দেখা দিয়েছে সামাজিক সংকট, তখনই কবি আশ্রয় নিয়েছেন কাব্যকলায়; এবং কবিতা তাঁকে দিয়েছে অনুভূতি প্রকাশের অগ্রসরমুখী মাধ্যম।

ভূমিকা ও অনুবাদ: মঈনুস সুলতান