এক গুচ্ছ ভ্রমণ কাব্য

অ+ অ-

 

১ || নতুন নদীর জন্ম

পৃথিবীতে কোনো কী নতুন নদী জন্ম নেবে আর ?
গিরিসঙ্কটে সর্পিল পাকদণ্ডি বেয়ে যেতে যেতে মনে হয়
হয়তো কোথাও এখনো লুকিয়ে আছে 
ইউমথাংয়ের মতো সন্তানসম্ভবা কোনো করুণ পর্বত।
পাথুরে শরীর থেকে বরফের মতো অভিমান ঝেড়ে ফেলে দিলে
একদিন কান্নার মতো কল্লোলিত হবে শিশুধারা ।
অথবা ডোংখোর পাশে সো-লোমো হ্রদের ধারে
তিস্তার নবীন সহোদরা আবির্ভূত হবে কি কখনো?

আরো এক বুনো নদী পাবো কি এমন?

শত শত ঝরনার স্তন্যে পুষ্ট
অরণ্যের আদরে আদরে
পাথরে পাথরে অলীক মুদ্রায় পাগলিনী নেচে নেচে কাটাবে শৈশব
তিস্তার অনুজা
হয়তো সারদা হবে তার নাম।

মানচিত্রহীন এক নদী,
ভূগোলের রাজনীতি থেকে দূরে
বাঁধ-ভাঙা স্রোতে নিজের প্রবাহ রেখে
জলবণ্টনের কূটনীতি বামে রেখে বহু বহু সীমান্ত ডিঙিয়ে
বাংলা গানের মতো বয়ে যেতে যেতে
একদিন বিবাহযোগ্যা হবে সমুদ্রের সাথে। 

 

২ || মেঘের মায়ায়

লাচুংয়ের ধারার পাশে অন্ধকার ভেদ করে
সালুন ফুলের মতো ফুটে ওঠে প্রেম।

কিছুটা কম্পিত
ঠান্ডা বাতাসের আদরে
অবিন্যস্ত সারদার চুলের স্বভাবে।

বরফের প্রাচীর টপকে সূর্য উঁকি দিলে
অলৌকিক অতিকায় একটা রক্তময়ূর
ঝিলমিল পাখা দিয়ে কিছু একটা ঢেকে রাখতে চায়।

কি একটা রহস্য যেন খেলা করে
নিতান্ত গোপনে ফুলের উপত্যকায়
পাপড়ির সৌরভে
অবিরাম প্রপাতের ধ্বনিতে।

মানুষের ঘুমের পাশে তীক্ষ্ণ শীষ দিয়ে
নীল বাঁশিওয়ালা পাখি উড়ে যায় মেঘের মায়ায়।

 

৩ || মানুষ যেভাবে সুন্দর

ইয়ামথামের খাঁজে রডোডেনড্রনের পাশে
দুঃখ ফোটে বেগুনি রঙের
পাহাড়ী মানুষ তার ঘ্রাণের ভেতর
মেঘের রহস্য বুকে প্রতিদিন ঝরনায় যায়।   
দুঃখ অতিক্রান্তকালে প্রতিটি মানুষ
বরফে সূর্যোদয়ের মতো সুন্দর হয়ে ওঠে।

 

৪ || লাচুংয়ের রাত

জল পতনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়
লাচুংয়ের রাতে

জমে থাকা বরফ কুচি সরিয়ে দিলে
মনে হয় ছোট ছোট তৃণফুল গুলো
হেসে হেসে বেঁচে থাকবে শতবর্ষ কাল।

সেরকম সন্ধ্যার কথা কাটাকাটি
ঠান্ডা স্নানের টবে ছুঁড়ে ফেলে
মানুষ নিকটে আসে।

বন্ধ দেয়াল ভেদ করে শৈলপ্রপাতের ধ্বনি
গান হয়ে ভাসে লাচুংয়ের রাতে

 

৫ || যাত্রাপথের দুঃখ

দূরের যাত্রায়
মায়াভর্তি লাগেজ নিয়ে সহজ সুন্দর সহযাত্রী
সিঁদুরের আবীর ছড়িয়ে অচেনা স্টেশনে
হুট করে নেমে গেলে
পরবর্তী যাত্রাপথ বিভ্রমের মতো লাগে।
যে রকম জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে যেতে
বরফের প্রলেফ দেওয়া উপত্যকায়
শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অক্সিজেন স্বল্পতায়।

 

৬ || ফুলের উপত্যকায়

বরফ পেছনে রেখে
রঙধনু রঙে ফুটে আছে রডোডেনড্রন।
টাইগার হিলে মেঘের ভেতরে  
হাসির রং  ছড়িয়ে দেওয়া
চা ওয়ালী নেপালী মেয়েটির  মতো
পৃথিবীর ঘ্রাণ ভালো লাগে ফুলের উপত্যকায়।