জন্মদিনের কবিতা 

অ+ অ-

 

 

জন্মদিনের কবিতা

মানুষও মাকড়সার মতো, চারিদিকে ছড়িয়ে রাখে 
ভালোবাসার জাল। যে শিশু জন্ম নিলো মাত্র, 
সে তার সাথে বহন করে এনেছে শিকড় বাকড়ের মতো
কিছু জাল। আর যতো সে বড় হতে থাকবে
ততো এ জালের বিস্তৃতি বাড়বে আর মজবুত হবে।
ভালোবাসা দুধের সরের মতো, উপরে কঠিন 
পদার্থের মতো জমে থাকলেও নিচে টলটলে তরল।
নিঃসঙ্গতার খাঁচায় গুটিসুটি মেরে বসে ভাবছো
বাইরে প্রবল বাঘের থাবা, কিন্তু বাইরে বাতাস 
একটা ঘুড়ি ওড়ানোর বিকালের। বাইরে বন্ধুরা
সাহস হাতে দাঁড়িয়ে। কান্না জমে যে বরফখণ্ড 
আহত করলো তোমার দিকে ছুঁড়ে কেউ, সে বরফখণ্ড
তুলে রোদে রেখে দাও, গলে যাবে, গাছ পাবে 
প্রভূত জল। আর তাই আমি বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের 
মধ‍্যরেখা বরাবর হেঁটে পার হয়ে যাই সাঁকো—
একটা না, দুইটা না, লক্ষ, কোটি, অজস্র। কারণ
মানুষের ভালোবাসা সেই মাকড়সার জাল দিয়ে 
সাঁকো বানিয়ে ছড়িয়ে রেখেছে সমুদ্রে, মহাশূন‍্যে,
জঙ্গলে, পাহাড়ে বা সমতলে। কোথাও তোমার 
পড়ে যাওয়ার ভয় নেই, বন্ধুর হাত ধরে ফেলবে তোমাকে—
তোমার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরারও আগে।

 


হাত ও ডানার বিসম্বাদ

সবচেয়ে বেশি যার সাথে থাকে মানুষ 
তার কথাই ভুলে যায় সবার আগে
ফুল ফোটার সময়।
নিঃসঙ্গতা হতে আরেক নিঃসঙ্গতার দোকান ঘুরে ঘুরে
করছো তুমি কি সদয়?
এ এমন বিষবৃক্ষ
গোড়া থেকে কাটলেও যে আবার জন্মায়...
নিঃসঙ্গতাকে বিক্রি করতে গিয়ে 
নিলামে তুলো না তোমার আত্মসম্মান।
পৃথিবী তার রোবট প্রেমিকের সাথে
প্রেমে ব‍্যস্ত আর তুমি নদীতে ভাসাও অভিমান।
নিঃসঙ্গতা সেই কালো বিড়াল ছানাটার মতো
চটের ব‍্যাগে ভরে যাকে দূরে সরাও
বারবার বনপথ চিনে সে ফিরে আসে দরজায়
আর তুমি আলগোছে কোলে নাও।
মেঘের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে কিছু সুতা
ওহে রচয়িতা!
গেঁথে নিও টলটলে শিশিরের মালা...
ডানা তো হাত নয়, যে তুমি তা ধরতে পারো।
যারা হাতের বদলে ডানা চায়
তাদের আর হাত ধরা হয় না কারো।

 


নিজেকে সামলাই

আমরা তো জলেই ভাসি, আঁতকা হাসি
যা ঘটে যায় যেমন করে
বইতে দিই শিরদাঁড়ার উপর যত্ন ভরে
সর্বংসহা বৃক্ষ যেমন

সর্বংসহা বৃক্ষ যেমন
রোদে শুকায়, ঝড়ে ভাঙে। উঠোনে দোয়েল পাখি
চিলতে বিকেল হাতে রাখি
জাহাজে নাবিক নাই

জাহাজে নাবিক নাই
স্রোতরেখা পথ দেখাবে
ধরবো না বৈঠা কোনো, যে চালানোর সেই চালাবে
শূন‍্যে উড়বে সময় 

শূন‍্যে উড়বে সময়
দেখবো এক মানবজনম
ঘুড়ির মতো পাক খেতে চায়, তারাদের ছন্দপতন
রশিগুলো কেটে দিলে

রশিগুলো কেটে দিলে
কাছেকে দূরে ঠেলে আয়নায় যে মুখ দেখি
সে মুখ কি বুদ্ধ নাকি
হয়তো লালন

হয়তো লালন
সব সমাধান প্রত‍্যাশার ফুল না কুড়াই
ঝাঁকে ঝাঁকে ঝরা তারা, সাগরতীরে তারা ওড়াই
পৃথিবীকে সামলাতে পারি না

পৃথিবীকে সামলাতে পারি না
রক্তাক্ত চাদর মুছে ঘাসে ঘাসে বিছানা পাতি
গহীন শীতনিদ্রায় বৃষ্টিকে মাথায় রাখি
পৃথিবীকে সামলাতে পারি না

আমি তাই, নিজেকে সামলাই...

 


হাছন রাজার গান

কিছু কিছু দিন হাছন রাজার গান শুনে
কাটিয়ে দেয়াই ভালো। অনেক আধুনিক মানুষের
ভিড়ে যেন এক বায়বীয় বৃদ্ধ গায়ক একতারা বাজিয়ে
গেয়ে চলে গান না, গভীর অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া
হরিণের মতো ধরে আনে মনের কথা।
পাশের বন্ধুটির শেকড়ে কুঠারের আঘাত হানার দিনে
সুর করে পড়ি বনায়নের মন্ত্র। যত কারচুপি
ফেলে দিয়ে ডাস্টবিনে কুড়িয়ে আনি ডানার পালক,
পিঠেরও অলঙ্কার দরকার বলে। চাঁদের দিকে বাড়িয়ে
দিই মই, চাঁদে যাব না—চাঁদকেই বলব মই বেয়ে
নেমে আসতে। সৌন্দর্যের ধারণা ছিল না বলে
অন্ধ কিশোরী সারা মুখে মেখেছিল জ‍্যোৎস্নার
ফেসপ্যাক। আর আমি বিরহ ভুলতে এক
প্রবীণ বায়বীয় গায়ককে হাত ধরে নিয়ে আসি
জোছনাগলা মেঠোপথ থেকে আমার অমাবস্যার ঘরে।
বলি, আজ সারা রাত আপনার গান শুনব।
‘ভাবতে ভাবতে হাছন রাজা হইল এমন আউলা’ শুনব।