নাটকীয় এবং চমকপ্রদ এক আত্মচরিত

অ+ অ-

 

পথে নেমে পথ খোঁজা
মঞ্জু সরকার
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈঃশব্দ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মূল্য: ৭০০ টাকা 

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, কবিরে পাবে না তাহার জীবনচরিতে। প্রকৃতপক্ষে একজন সৃজনশীল মানুষকে তাঁর জীবনচরিতে খুঁজতে গেলে হয়তো কিছু ঘটনার পরম্পরা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে থেকে আসল মানুষটিকে, বিশেষ করে তাঁর মনোজগতের বাঁকে বাঁকে যে বিচিত্র অনুভূতি এবং উপলব্ধির জোয়ারভাঁটা সতত বহমান, তার হদিশ পাওয়া সহজ নয়। আর সেই জীবনচরিতের স্রষ্টা যদি তিনি স্বয়ং হন, তাহলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কারণ ব্যক্তিজীবনে একজন মানুষ যতই সৎ এবং অকপট হন না কেন, প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু ভ্রান্তি, চ্যুতি, লজ্জা, আনন্দ বা বিষাদের ঘটনা থাকে, যেগুলো আজীবন তিনি সযত্নে গোপন রাখতে চান। সম্পূর্ণ নৈব্যক্তিকভাবে নিজের সাফল্যের খতিয়ানের সঙ্গে ব্যর্থতার রোজনামচা, প্রাপ্ত সম্মাননার সঙ্গে উপেক্ষা এবং অসম্মানের খতিয়ান, আদর্শ ও বিবেকের জয়গানের পাশাপাশি আত্মস্খলন এবং অবিবেচনার কথা দ্বিধাহীনভাবে সকলের কাছে উন্মোচিত করার সৎসাহস খুব কম মানুষেরই থাকে।

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ পথে নেমে পথ খোঁজা পড়তে পড়তে মনে হল, তিনি সেই ব্যতিক্রমী মানুষদেরই একজন, যিনি আপন অতীতচারণে অকপট এবং নির্দ্বিধ হলেও সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক হতে পারেননি। মাঝে মাঝেই ঝলকে উঠেছে ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির বেদনা, ক্ষোভ এবং অসহায়তা। তবে যে সততার সঙ্গে তিনি নিজের প্রতিভা, সাফল্য, প্রজ্ঞা, মানবিক চেতনার সঙ্গে সমান্তরালভাবে ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রতা, ব্যর্থতা, দুর্বলতা, বিচ্যুতি অথবা হীনতার কথাও অকপটভাবে বলে গেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার্হ।

একজন সফল লেখক হবেন, এই আকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে জন্ম নিয়েছিল বালক বয়েসেই। বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মধ্যে এই বাসনা তীব্রতর হতে থাকে। তিনি বিশ্বাাস করতে শুরু করেন, একজন সফল কবি কিংবা কথাকার হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ কোনও প্রাকশর্ত হতে পারে না। কৈশোর থেকে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের জীবনীর একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে হাতের কাছেই পেয়ে যান তারাশঙ্কর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সমরেশ বসুর মতো প্রথিতযথা সাহিত্যিকদের, যাঁরা কখনও আলাদা করে কোনও পেশা অবলম্বনের ধার ধারেননি, সার্বক্ষণিক লেখক হিসেবেই জীবন কাটিয়ে গেছেন।

মাত্র সতেরো-আঠারো বছর বয়েসেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে এবং পিতার সামাজিক প্রতিপত্তি, পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদ জীবনের মোহ ত্যাগ করে সার্বক্ষণিক লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন। এরপর চরম দারিদ্র্য, অসীম ক্ষুধা, অনিশ্চিত বাসস্থান এবং অগণিত মানুষের উপেক্ষা সয়েও কখনও আপন সংকল্প থেকে বিচ্যুত হননি। এমনকি পিতার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবেননি কখনও।

যদি  কেউ প্রশ্ন করেন, মঞ্জু সরকারের এই আত্মচরিত তিনি কেন পড়বেন, তাহলে বলব, একজন মানুষ শুধু মাত্র একটা স্বপ্নকে আশ্রয়  করে একটা গোটা জীবন কীভাবে নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একক লড়াই করে এগিয়ে যেতে পারেন এবং অবশেষে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছন, এই আত্মকথন সেই উত্তরণের দলিল। আরও একটা কারণে এই আত্মচরিত অত্যন্ত মূল্যবান। একজন পরিশীলিত বুদ্ধিজীবীর চোখে ধরা পড়া ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর সে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেতনা, নৈতিকতা এবং সংস্কৃতিবোধের ক্রমবিবর্তন এই গ্রন্থের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এমনকি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় মৌলবাদ যে কথকের দৃষ্টি এড়ায় না, তা—‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও স্বাধীনতার পর দেশে টুপিওলা নামাজীর সংখ্যাও বেড়েছে যেন’—এই একটামাত্র বাক্যেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং  সেই অর্থে এই গ্রন্থ স্বাধীন বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক দলিল বললেও অত্যুক্তি হয় না।

তাঁর পিতা তাঁকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর পিতার এই চাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় বা অস্বাভাবিকতা ছিল না। আবার লেখক তাঁর নিজের মতো করে নিজের স্বপ্নে বড়ো হতে চেয়েছিলেন। এই চাওয়ার মধ্যেও কোনো আপাত-অস্বাভাবিকতা ছিল না। অথচ প্রকৃতিগতভাবে পিতা এবং পুত্রের বড়ো হওয়ার ধারণা এত পরস্পরবিরোধী যে সংঘর্ষ অনিবার্য ছিল। তবে এবিষয়ে লেখকের দায় অনেক বেশিতা তিনি অকপটে স্বীকার করে লিখেছেন, পিতা আমাকে শহরে রেখে পড়াচ্ছিলেন ভালো রেজাল্ট ও উপযুক্ত মানুষ করার আশায়। বখে গিয়ে ততদিনে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করিনি শুধু, বিস্তর পয়সার অপচয় করে বিরাগভাজন হয়েছিলাম তাঁর।

এই স্বীকারোক্তি হয়তো তাঁর প্রতি পিতার আস্থা এবং বিশ্বাসের অমর্যদাজনিত অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ। তবে কোনও অবস্থাতেই তিনি নিজের গৃহত্যাগের ঘটনাটিকে মহিমান্বিত করতে চাননি। একজন আত্মচরিতকার হিসেবে এটা তাঁর নৈর্ব্যক্তিতার প্রমাণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। আসলে তিনি আজীবন এক অদ্ভুত নির্মোহ দৃষ্টিতে দুনিয়াকে দেখার চেষ্টা করেছেন।

জীবনধারণের অত্যল্প রসদ এবং অগাধ আত্মবিশ্বাাস নিয়ে তিনি প্রথমে নিজের জেলাশহর রংপুরে এবং সেখান থেকে ঢাকায় আসেন। সম্বল বলতে কয়েকটি পত্রপত্রিকা, লেখার খাতা, কলম এবং সামান্য কয়েকটি টাকা। ভবঘুরের মতো তাঁর কমলাপুর রেলস্টেশনে, অথবা বায়তুল মোকারাম মসজিদে রাত্রিযাপন কিছুটা গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর। তবে যত প্রতিকুলতাই আসুক না কেন, সাহিত্যচর্চার ব্রত থেকে যে তিনি বিচ্যুত হওয়ার পাত্র নন, তার প্রমাণ মেলে রমনা পার্কের গাছতলায় কিংবা রেসকোর্সের নির্জন মাঠে বসে লেখালেখির মাধ্যমে। রেসকোর্সের ময়দানে বসে নরকে গোলাপ গন্ধ শীর্ষক ছোট গল্পটি যখন রচনা করেন, তখন ঢাকা শহরে তাঁর থাকার আস্তনাটুকুও জোটেনি। নাওয়াখাওয়ারও সংস্থান করে উঠতে পারেননি। তাঁর সময়কার অবস্থাটা একটিমাত্র ঘটনা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিতান্ত কপর্দকহীন অবস্থায় পথে ঘুরতে ঘুরতে কোনো একদিন ক্ষুধার তাড়না সহ্য করতে না পেরে একটা হোটেলে ঢুকে ডালরুটি খেয়ে নিতান্ত তস্করের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর লেখায় বেশ কয়েকবার নোবেলজয়ী মার্কিনী লেখক উইলিয়াম ফকনারের উল্লেখ আছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রুশ সাহিত্যিক তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, আন্তন চেকভের পাশাপাশি উইলিয়াম ফকনারের দ্বারাও যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

তবে এই সময়ে নানা বিচিত্র মানুষের সঙ্গে তাঁর কিছুটা সখ্য তৈরি হয়েছিল। এই মানুষগুলোর মধ্যে কেউ রিক্সাচালক, কেউ জুট মিলের কর্মী। আস্তানাহীন মানুষগুলোর সাহচর্য তাঁকে অভিজ্ঞতার যে অতুল বৈভব দিয়েছিল, পরবর্তীকতালে শুধু একজন সাহিত্যিক হিসেবে নয়, একজন প্রকৃত জীবনযোদ্ধা হয়ে ওঠার পথ সুগম করেছিল।

অপরিচিত ঢাকা শহরে আসবার পর টোকাই-শ্যাওলার মতো ভেসে বেড়াতে বেড়াতে গ্রন্থবিতান পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে পরিচয় এবং সখ্য তাঁর জীবনের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট বলা চলে। সেখানে তাঁরই সুপারিশে তিরিশ টাকা বেতনের সহকারী গ্রন্থাগারিকের চাকরি এবং সেই সুবাদে লাইব্রেরিতেই বসবাস এবং পড়ালেখা করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তাঁকে ঘর ছাড়বার পর কিছুটা নিশ্চিন্ত করেছিল। সর্বোপরি মোহাম্মদ আলীর উৎসাহে এবং পরামর্শে শর্টহ্যান্ড শেখাটা পরবর্তীকালে তাঁকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা দিয়েছিল, তা তাঁকে একজন কথাশিল্পী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। এমনকি অল্প দিনের মধ্যে সহকারী গ্রন্থাগারিকের চাকরি এবং একই সঙ্গে বসাস্থান হারানোর পর প্রাথমিকভাবে আশ্রয় এবং কাজ দিয়েছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির ফার্স্ট ক্লাস কন্ট্রাক্টর কুতুবুদ্দিন সাহেব। এই কুতুবুদ্দিনের অধীনে সাইট সুপারভাইজারের কাজ করতে করতে শরিফ মিয়ার ক্যানটিনে বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সাহচর্য পাওয়া শুরু হয়েছিল। নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা প্রমুখ বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় হয়েছিল। তবে এখানেও মুখচোরা স্বভাবের জন্যে তিনি সচেতনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।

এই সময়ে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সামনে পরিচিত কবি কায়সুল হকের সঙ্গে পরিচয় পর্বটি নিতান্ত কাকতালীয় হলে এর একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল তাঁর জীবনে। মূলত তাঁরই বদান্যতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক তথা প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীনের সঙ্গে আলাপ এবং সেখান থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে স্টেনো-টাইপিস্ট তথা পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারীর চাকরি প্রাপ্তি। নাটকের ভাষায় বলা যায়, এটা তাঁর জীবনের অন্যতম বড় মোড়।

এ্ চাকরি প্রাপ্তির পরে তাঁকে আর সেভাবে কখনও তীব্র আর্থিক সঙ্কট কিংবা বাসস্থানের অভাবজনিত কষ্টে ভুগতে হয়নি। তা ছাড়া এই চাকরির সুবাদেই তিনি সেই সময়কার বহু লেখক-কবিকে কাছে থেকে দেখার এবং পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করলে মানুষ মঞ্জু সরকারকে চিনতে সুবিধা  হবে। সেটা হলো তাঁর প্রবল আত্মাভিমান এবং আত্মসম্মানবোধ। স্বভাবতই টাইপিস্টের চাকরি নিয়ে কিছুটা হীনমন্ম্যতায় ভুগতেন। তিনি লিখেছেন, লেখক-কবিদের ঘরোয়া আড্ডা-আলোচনায় শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিলাম নিজে এবং আমার টেবিলের টাইপ রাইটারটি।

এই একটিমাত্র বাক্য থেকেই তাঁর পেশাগত হীনন্মনত্যতা প্রকাশ পায়। যদিও তাঁর এই চাকুরিসূত্রে সাহিত্যজগতের অনেক দিকপালের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এই সময়ে তিনি কিন্তু সেভাবে সাহিত্যের জগতে আাঁচড়টুকু কাটতে পারেননি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের একাংশের বদলে যাওয়াটা সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে চক্রবাক নামক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্যে শহরের অবাঙালিদের বাড়ি দখলের ঘটনার মাধ্যমে। এই সময়ে দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে সরকারি রিলিফ বিলি নিয়ে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পক্ষদলের বাবার কর্তব্যচ্যুতিও তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। এই আত্মচরিতে একইভাবে তিনি নিজের দুর্বলতা এবং স্খলনও বারংবার অসঙ্কোচে প্রকাশ্যে এনেছেন।

তাঁর বিয়ের বিষয়টিও যথেষ্ট নাটকীয় এবং চমকপ্রদ। চক্রবাক-এর সূত্রেই আলাপ এবং পছন্দ হওয়া যাকে তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, সব আয়োজন, এমনকি যে পিতার সঙ্গে তিনি প্রায় সম্পর্করহিত ছিলেন, তাঁরও সম্মতি আদায় পর্যন্ত করে ফেলার পরেও খুব নাটকীয়ভাবে বিয়েটা ভেঙে যায়। পরবর্তীকালে তিনি যাঁকে বিয়ে করেন, তাঁর সঙ্গে বনিবনার অভাব না হলেও তাঁর প্রথম প্রেমটিকে তিনি ভুলতে পারেননি। পরবর্তীকালে তাঁদের মধ্যে পত্রবন্ধুত্ব, বিবাহিত জীবনে সন্তান জন্মানোর পরে কাজের প্রয়োজনে সেই পছন্দের পাত্রীটিকে ঢাকায় নিজের অপরিসর ভাড়ার ঘরে আশ্রয় দেওয়াসবই হয়তো তাঁর সেই ব্যর্থ প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে তাঁর সহধর্মিনী সব জেনেও স্বামীর একদা-দয়িতাকে নিজের ঘরের মধ্যে মেনে নিয়েছিলেন, এটা দেখে তাঁর পত্নী ভাগ্যকে যে কোনোও পুরুষই ঈর্ষা করবেন।

এই আত্নজীবনীর বাকি অংশ জুড়ে তাঁর নিজস্ব জমি কিনে ঢাকার অদুরে নিজস্ব গৃহনির্মাণ, সেখানকার জীবন, বিভিন্ন লেখার প্রসঙ্গ, আমার দেশ এবং দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় চাকরির অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে বিনা নোটিশে বরখাস্ত হওয়া, ঘটনাবহুল জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা বৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি। সব মিমিয়ে এ যেন এক নিটোল উপন্যাস।

সাহিত্যিক জীবনে তিনি সমসাময়িক অসংখ্য লেখক, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের সংস্পর্শে এসেছেন। কারও কারও সঙ্গে নানা কারণে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে, কারও সঙ্গে-বা মধুর। তবে প্রতিটি সম্পর্ক পরম মমতায় লালন করেছেন তিনি। মানুষ হিসেবে এ তাঁর এক বিরল গুণ।

কায়েস আহমেদ থেকে শুরু করে আহমদ ছফা, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রমুখ প্রথিতযশা লেখকের সঙ্গে তাঁর আত্মার যোগ থাকলেও কড়া সম্পাদক আহমদ ছফার অভিভাবকসুলভ সমালোচনার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। বার বার উল্লিখিত হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আর্থিক দিক দিয়ে সফল হুমায়ূন আহমেদের নামও।

এই আত্মচরিতে তিনি অনেক ঘটনায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে নানা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বিতরণের নেপথ্যকাহিনী তিনি যেভাবে ব্যক্ত করেছেন, তাতে তাঁর সাহসিকতাও বাহবাযোগ্য। তবে এই রচনায় কিছু ঘটনা এবং চরিত্র একাধিকাবার উল্লিখিত হয়েছে, যা পরিহার করা সম্ভব হলে গ্রন্থটি আরো আকর্ষণীয় হতো। তবে সামগ্রিকভাবে এই আত্মচরিত নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী নিশ্চয়।