চর্ব্য চোষ্য [সপ্তদশ পর্ব]
পড়ুন ► চর্ব্য চোষ্য [ষষ্টদশ পর্ব]
চর্ব্য চোষ্য [সপ্তদশ পর্ব]
মিটিং থেকে বের হয়ে আমিররা রাস্তার পাশে বটতলায় গিয়ে দাঁড়াল। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে অনেক কারখানা থেকে শ্রমিকরা বের হয়ে পড়বে—যে ধারা কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। বের হলেই আমিররা যোগ দেবে।
মাহের বলল, ‘জামবাড়ি কারা কারা আসবে শুনলাম—যাবি নাকি?’
‘কারা কারা মানে কী?’ আমির জানে। তার আসলে ভক্তি নেই।
মাহের বলল, ‘আরে ওই যে ওই—দরদি সামবাদী দল না কী যেন। কাল বললাম না?’
‘সামবাদী না বাঞ্চত। সাম্যবাদী।’
‘ওই হল আর কী। আরো কী কী যেন আছে না? সমাজতান্ত্রিক দল। ওয়ার্কার্স পার্টি—।’
‘হ। আছে ত। সবাই আসবে নাকি?’
‘সবাই আসবে কেন?’
‘সবাই আসবে না ত তুই সবাইকে নিয়ে টানাটানি করিস কেন?’
‘সবাই একসাথে আসবে কিভাবে? সবাই আলাদা না?’
‘না। তা হবে কেন? সবাই জোট বেঁধেছে না?’
‘জোট বাঁধলেও আলাদা আছে।’
‘জোট বাঁধলে আবার আলাদা হয় কিভাবে?’
‘কি জানি বাল কী হয়। প্যাঁচাল পাড়িস নে। যাস ত চল।’
মাহেরের প্যাঁচাল পাড়ার ইচ্ছা নেই। সে সিগারেট ধরাল।
আমির বলল, ‘তারা ছিল বামপন্থী। ডানপন্থীদের সাথে জোট গড়ে হয়েছে মন্ত্রী-এমপি। ওরা আসলে শ্রমিকদের লোক নাকি মালিকদের লোক? এখন আবার শ্রমিকদের নিয়ে ওরা কী মিটিং-সিটিং করছে?’
মাহের অত কিছু ভাবেনি। সাম্যবাদী দলের স্থানীয় এক নেতা দাওয়াত দিয়েছে। ব্যস।
আমির গাজীপুরের দিকে থুতনি উঁচু করে বলল, ‘একটু ওই দিকে যাওয়া দরকার। ওখানে একটু খোঁজখবর নেওয়া উচিত। কাদের কী ভাবসাব বোঝা উচিত।’
থুতনি উঁচু করার ভঙ্গিতে সবাই বুঝল। গাজীপুরেও আন্দোলন চলছে। আশুলিয়ার মত অত জোরালো না বটে।
‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা এই মুহূর্তে ওখানে একটু বাতাস দিতে পারত। কিন্তু তারা—।’
‘তা আর বলতে।’
সবাই রাজি হয়। কিন্তু আমির সাইকেল নিয়ে বিপদে পড়ে। অন্য কারুর সঙ্গে সাইকেল নেই। এখন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাইকেলটা ঠেলে নিতে হবে।
সবাই এক চপ্পল হাহা হোহো করল।
বাসস্ট্যান্ডে এক শিঙ্গাড়ার দোকানে সাইকেল রাখল আমির। আর দোকানিকে বলে রাখল, ‘এটা বিক্রি হবে। একদাম দাম এক হাজার একশ টাকা।’
আবার এক চপ্পল হাহা হোহো।
আমির বলল, ‘হাহা করবি না। তোরাও সবাই সাইকেল কিনবি।’
এখনও ঠিক হয়নি তারা কোন এলাকায় যাবে। আমির বলল, ‘চল টঙ্গী যাই।’
টঙ্গীর পথে বেশি যানজট হয়। মাহের বলল, ‘এখন জ্যাম ঠেঙ্গানোর ইচ্ছা নেই। তার চাইতে বরং চল কাশিমপুর যাই।’
কাশিমপুর আর টঙ্গী—দুই দিকেই দশ-পনের কিলোমিটার জুড়ে ঘিঞ্জি বাড়িঘর আর নানা রকম কারখানা। পথে পথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তাদের বন্ধুরা। আছে আশপাশের কালিয়াকৈর, চন্দ্রাসহ আরো অনেক এলাকায়। আমির মাঝে মাঝেই যায় সেসব এলাকায়। কয়দিন হল মাহেরও যাচ্ছে।
পথে মালুবাড়ি পার হবার সময় আগুন-ধোঁয়ার ঢেউ এসে রাস্তায় পড়ল। কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠল আকাশে। রাস্তার সাথে মেশা টিনের ঘর থেকে।
‘কিসে আগুন ধরল?’
‘ঝুটের গুদাম হবে। আর কী হবে?’
ঝুট মানে পোশাক কারখানার উচ্ছিষ্ট।
বাড়িঘরের ফাঁকে ফাঁকে ঝুটের গুদাম আর ঝুটের তুলার কারখানা রয়েছে এসব এলাকার মোড়ে মোড়ে। আগুন-ধোঁয়ার কুণ্ডলি নিত্যদৃশ্য। মাসে অন্তত চল্লিশ দিন লাগবেই লাগবে আর কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে অন্তত আশিটা খুন।
গাড়িঘোড়া সব দাঁড়িয়ে পড়ল আগুনের দুই পাশে।
আমিরের কাশিমপুর যাবার ইচ্ছা মাঠে মারা পড়ে। তবে সে অন্য একটা কাজ পেয়ে যায়।
উচ্ছিষ্টগুলো এলাকার সর্বভুক পেশিঅলারা কাড়াকাড়ি করে খায়। আর আমির তাদের নাম-ধাম মুখস্থ করে রাখে। কার পেশি কতটা শক্ত তাও জেনে নেয়। তাদের শায়েস্তা করার ইচ্ছাও আছে তার।
► আসছে অষ্টাদশ পর্ব
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন