সংলাপ ও অন্যান্য কবিতা
পায়ের ছাপ
মানুষ একাকী হাঁটে,
তার সে পায়ের ছাপ একদিন মুছে যায়, কিন্তু
সময়ের স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়।
যে-পথে যাইনি কোনদিন
যে-পথে আর কখনও যাওয়াই হবে না,
তবু সেই পথগুলি অপেক্ষা করবে
পথের নিয়মে।
অসংখ্য পায়ের ছাপ মিশে গেছে,
অন্যের পায়ের ছাপে!
যারা ভিন্ন পথে গিয়েছিল,
তাদেরও পায়ের ছাপ মুছে গেছে
অন্য কারোর পায়ের ছাপে।
প্রতিটি পায়ের ছাপে আছে
আলাদা আলাদা গল্প।
সেই গল্পগুলি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
একদিন থেমে যায়।
প্রতিটি পায়ের ছাপ তাই
দাঁড়ি-কমা হয়ে রয়ে যায়
অসম্পূর্ণ গল্পে...।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো
একটি প্রিজম, বহুকোণ
যেদিক দিয়েই দেখ সে ছিল অনন্য;
কী অদ্ভুত এক ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে হল
তাঁর সহৃদয়ে! সহৃদয়ে?
রবীন্দ্রনাথকে দেবতা ভাবতেন তিনি।
বাড়ালেন শুশ্রুষার হাত;
আরাম কেদারা তুলে দিলেন জাহাজে,
ছবির প্রদর্শনী হলো প্যারিসের দামি গ্যালারিতে।
অন্যদিকে, মন খুলে লেখা আবেগ আপ্লুত চিঠিতে
মন ভরে না ওর্তেগার!
সে চায় শরীর।
গাধাটা বোঝেনি চিঠিগুলো নয় অর্গাজম।
অতদূর থেকে প্যারিসে আসাটা ছিলো
প্রাণখুলে কথা বলা, দেহ বিলোবার জন্য নয়।
শৈশবের সেই চাবুক খাওয়া রুগ্ন ঘোড়াটির স্মৃতি
তাঁকে আজীবন তাড়া করে,
পুরুষের পৃথিবীতে।
আহা চিরকাল একটি স্বাধীন জীবনের জন্য
ঘর থেকে পথে নেমে
পথেই কাটলো তাঁর সমস্ত জীবন...।
গোল্ডফিস
শরীরের কারাগারে ভুলগুলি ভেসে
বেড়ায় নিঃশব্দে।
তারপর একদিন জারে
ভাসতে থাকা মৃত গোল্ডফিস হয়ে যায়
তারা আর কোনদিন সাঁতার কাটে না;
তারা হয়ে যায় সাঁতারবিহীন এক
পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি।
যতদিন প্রাণ ছিল, জারে নয়,
শরীরের কারাগারে বন্দি ছিল তারা,
মৃত্যুতে ঘটেছে পূর্ণমুক্তি।
আবার নতুন কিছু গোল্ডফিস এসে
নতুন করে ভাসতে থাকে সেই একই জারে
নতুন শরীর কারাগারে।
সংলাপ
যখন তোমাকে দেখি, মনে হয় স্ক্রিপ্ট
নিজেই পড়তে থাকে তার সংলাপ!
বার বার দুঃখী সেজে কি পাও? সহানুভূতি?
নাকি ভালোবাসা?
সহানুভূতির সাথে ভালোবাসা গুলিয়ে ফেল না
নিজেই নিজের সাফল্যের পিঠে ছুরি চালিও না।
অন্তত নিজের জন্যে এটুকু তো করো!
সম্পূর্ণতা
সবকিছুর ভিতরে একটা
স্বাভাবিক মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে যায়।
তার আগে ঠিক কোমা নয়,
একটা ঘোর এসে ভর করে।
সবার ভেতরে।
এক সময়,
অনেক গান শুনেছি যে ক্যাসেটগুলি থেকে,
পড়ে থেকে থেকে তার ফিতে হয়ে যেত অচল;
তখন তা রৌদ্রে শুকোতে হতো
না হয় ফেলে দিতে হতো।
যতবার চাঁদ উঠেছে, ততবারই
চাঁদ থেকে ছলকে পড়া জ্যোৎস্নাটুকু
রয়ে গেছে, স্মৃতি হয়ে।
ক্যাসেট কিংবা জ্যোৎস্না যেন
মৃত্যুর ওপার থেকে ঘুরে এসে
অস্তিত্বের অভিপ্সায়
পুরো একটা বাক্য সম্পন্ন করে যায়।
অপূর্ব! খুব ভালো লাগলো কবিতাগুলো। ‘..প্রতিটি পায়ের ছাপে আছে আলাদা আলাদা গল্প।..’ এখানের প্রকাশিত প্রতিটি কবিতায় আছে একান্ত স্বকীয় গল্প, যা আলোড়িত করে হৃদয়ের গভীরে, নতুন করে মেলে ধরে জীবনের এক অন্যরকম কাব্যিক প্রতিচ্ছবি।
কাজী মাজেদ নওয়াজ
জুলাই ০৫, ২০২৩ ২০:৩৩
খুব সু্ন্দর কবিতা গুলো। ভাল লেগেছে।
মোস্তফা কামাল
মার্চ ০৩, ২০২৩ ১৯:৪৪