অপেক্ষা-সুন্দর ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

যেহেতু আষাঢ়

যেহেতু আষাঢ় তাই
দুকূলের দূরত্ব বাড়ার বাস্তবতা
বেঠিক লাগে না।
অথচ
ঘরে ফিরে বুঝে ফেলি, ফিরি নাই
সুরভাসা নদীর ওপাড়ে
ফেলে এসেছি নিজেকে।

আধচেনা মেয়েদের মুখ
মুছে যায় যতটা সহজে
দৃশ্যত একটা ডাহুক তেমন সহজ  ডুবে
আলগোছে ডুবছে—ভাসছে।
আর যা দেখা যাচ্ছে না তা থেকে যাওয়া
স্পর্শ কিছু গুটানো হাতার ভাঁজে।


রৌরবের ধোঁয়া এত!
যা পোড়ে তা হৈমকাঠ
না কি এক তড়পানো হিয়া,
দূরত্বের ঢেউয়ে ভাসা
প্রেমিকের খালি খালি বুক!

 

উপচানো হাসি

তোমাদের হাততালির পাশে অযথা খরচ হতে থাকা এক বহুদামি নোট হয়ে ফুরিয়ে গেলাম।
সুরের পসরা থেকে কিনে আত্মার বাঁশিটি
প্রিয় সুরে বাজানো হলো না, হায়!
একটা জীবন
আমি জুয়া ভেবে খেলে খেলে ফুরিয়ে গেলাম।
জ্যোৎস্না পড়ে থাকা মর্মরিত বনে
ঝরে ঝরে পড়াদের হলুদ সভায় আসন্ন মৃত্যুও
দূর থেকে কী দারুণ!
এইভাবে দেখেছো আমায়।

ফুলহীন মান্দারের ঝোপে রোদ হয়ে
পড়ে থাকা কাঁটাবিদ্ধ আলো,
খাদ্যগুদামের পাশে
পড়ে থাকা তুচ্ছ বালু-স্তুপ,
এখন আমাকে এইসবে ব্যাখ্যা করা যায়।
অথচ তুমুল বিভ্রান্তির দিনেও গোলাপবনের মতো 
ফুটে থাকা প্রেম, তাকে কামনা করেছি।
চেয়েছি
উপচানো হাসির পাশে
মৃদু হাসির নদী হয়ে বয়ে যাওয়াটুকু।

এসো শুরু করি তবে
শেষ পৃষ্ঠা থেকে ক্রমাগত পূর্ববর্তী পৃষ্ঠার দিকে।
যেন সংকুচিত হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ড 
এখনকার প্রসারিত হওয়া শেষে৷
ফলে মৃত্যু থেকে ফিরছি জন্মের দিকে।
কবর থেকে উঠে আসছি দুনিয়ায়।

 

বুক-শেল্ফ

কী কাঠে বানানো এই পড়ার টেবিল?
আকাশমণির বনে ফিরে যেতে চায়!
নয়নতারার ঝোপে ফুটে আছে
অংক ভোলানো মুখ,
ফলে রাস্তাও ভুল হয়ে যায়।

কখনো কখনো প্রেম
পুরনো দালান ভেঙে পড়ার
আশংকার মতো হয়ে আসে।
অথচ
বুক-শেল্ফ ভরা পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা তুমি
নামিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

 

দৃশ্যপরাগী ফুল

এ দৃশ্যপরাগী ফুল জানে সেই তাকাবার মানে
ওটুকু আচ্ছন্নভাব লোকলাজে বাহানার ঢাল।
বিবিধ কুসুম আর তাদের ফোটাফুটির ঘ্রাণে
পতঙ্গও মুছে ফেলছে ব্যস্ততার হিসেবি আড়াল।
সব পাওয়ার ক্লান্তির মাপে
এঁটে যাচ্ছে দিন ক্লিশে!
থেমে জেনেছি,
শোকের কোনো আয়ু নাই,
শোক হল বুদবুদ, ফেনা

সময়ের যেকোনো বিন্দুতেই সে
উথলে উঠতে পারে,
শুধু চুপে বুকে বয়ে নিয়ে চলো।

চিনতে চাওনি বলে চেনা হয়নি এরকম চোখেরাই আকাঙ্ক্ষালতার ঝোপ ছেয়ে আছে।
তবু অপর্যাপ্ত
যেন লাগে এই প্রেম,
তোমাতে পৌঁছাবার ভাষাই
যেন জানা হলো না।
এ পৃথিবী এমন ছলপ্রাপ্ত!
যোগাযোগহীনতার ইরেজারে
ভাষা মুছে গেলো কত!
কখনো কথার তৃষ্ণা পেলে খুব, কথা ব'লো।

 

অপেক্ষা-সুন্দর

অপেক্ষা-সুন্দর হয়ে 
ফুটে আছে ফুল!
মগ্নচুমুর বাসনাবহুল এই  দিন
আসো নাই, ভাসে নাই ডাক
বধির বাতাসে গলে গলে যাক
লবণাক্ত মন।
এ দুপুর
পুরুষ কবির মত অনুভূতিপ্রবণ।

সম ভাবনা সব  মন পেতে মিলাবার পর
সব সম্ভাবনা হাত পেতে নিয়ে
অকস্মাৎ
আসো যদি
তবে রাত, ডাকাত ডাকাত!

তবে ভোর ঘুমহীন ঘোর।