আয়নায় বিষণ্ণ একা মুখ: আলেহান্দ্রা পিজারনিক

অ+ অ-

 

|| আলেহান্দ্রা পিজারনিক ||

পুরো নাম ফ্লোরা আলেহান্দ্রা পিজারনিক। জন্ম বুয়েনস আয়ার্সে, ১৯৩৬ সালের ১৬ এপ্রিল, রাশিয়া থেকে আগত অভিবাসী এক ইহুদি পরিবারে। আর্জেন্টাইন শিল্পী জুয়ান ব্যাটল প্ল্যানাসের পরামর্শে পিজারনিক পেইন্টিং এবং নিজের কবিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে দেন। তবে এর আগে তিনি বুয়েনস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও সাহিত্যে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৯৬০ সালে, পিজারনিক প্যারিসে চলে যান। সেখানে অক্টাভিও পাজ, হুলিও কোর্তাজাার এবং সিলভিনা ওকাম্পোর মতো লেখকদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে শক্তিশালী ও আবেগঘন গীতি কবিদের একজন হয়ে ওঠেন পিজারনিক। জার্মান কবি হোল্ডারলিন তাকে বেশ প্রভাবিত করেন।

১৯৬৫ সালে পিজারনিক লিখেছিলেন দ্য ইনকার্নেট ওয়ার্ড নামে প্রবন্ধ। এতে বোদলেয়ারের কষ্ট, নের্ভালের আত্মহত্যা, র‌্যাবোর অকাল নীরবতা, লত্রেমোর রহস্যময় ও ক্ষণস্থায়ী উপস্থিতি, এবং আর্তোর শারীরিক ও নৈতিক কষ্টের অতুলনীয় তীব্রতার কথা বলেন তিনি। পিজারনিকের কবিতায় ঘুরেফিরে নিষ্ঠুরতা, শৈশব, বিচ্ছিন্নতা এবং নীরবতার পাশাপাশি মৃত্যুর ছায়াপাত ঘটেছে। সমালোচক এমিলি কুকের মতে, ‘তিনি তার মাধ্যমটির প্রতি বহুবছর ধরে অবিশ্বাসী ছিলেন, কখনও কখনও ভাষার চেয়ে নীরবতায় বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতেন বলে মনে হয়। তিনি যে কাব্যিক শৈলীটি গড়ে তুলেছিলেন তা ছিল তুচ্ছ এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অসুন্দর।

১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পিজারনিক আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে তার কবিতা ক্রমাগত নতুন পাঠকদের আকর্ষণ করতে থাকে। তা আজও বজায় রয়েছে। পিজারনিকের একটি বইয়ের ভূমিকায় নোবেলজয়ী লাতিন কবি অক্টাভিও পাজ লিখেছিলেন, এসব কবিতায় উদ্বেল ইনসমনিয়া আর দুপুরের স্বচ্ছতার অদ্ভুত মিশেল ঘটেছে। ক্রমে তার কবিতা আয়তনে ক্ষুদ্র এবং আগেই বলেছি, চেতনায় মৃত্যু-তাড়িত হয়ে উঠে। পিজারনিক এ প্রসঙ্গে বলেন, যারা এই অদ্ভুত অচেনা পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে, তাদের জন্য আমার কবিতা কিছু ছোট্ট দীপশিখা।

পিজারনিক জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশ করেন। কবিতা এবং চিত্রকলার শৈল্পিক একতা খোঁজার জন্য, তিনি ১৯৫৫ সালে ফ্লোরা আলেজান্দ্রা পিজারনিক নামে তার প্রথম কবিতার বই, লা টাইরা মাস আজেনা তৈরি করেন, পরে আলেজান্দ্রা পিজারনিক নামে সংক্ষিপ্ত করা হয়। তিনি বেঁচে থাকতেই লা উলটিমা ইনোসেনসিয়া [১৯৫৬], লাস অ্যাভেনচুরাস পারডিডাস [১৯৫৭], আরবোল দে ডায়ানা [১৯৬০], এক্সট্রাসিওন দে লা পিড্রা দে লোকুরা [১৯৬৮] , এবং এল ইনফিরনো মিউজিক্যাল [১৯৭১] প্রকাশিত হয়। তিনি লা কনডেসা সাংগ্রিয়েন্টা [১৯৭১] গদ্য প্রবন্ধটিও প্রকাশ করেছিলেন, যাতে ১৬ শতকের হাঙ্গেরিয়ান কাউন্টেসের উপর একটি লেখা রয়েছে যে ছয়শরও বেশি মেয়েকে নির্যাতন ও হত্যার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলেক্টেড পোয়েমস [২০১০] ও এক্সট্রাক্টিং দ্য স্টোন অব ম্যাডনেস [২০১৬] নামের দুই সংকলনে পিজারনিকের কবিতা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

ভাষান্তর ও ভূমিকা: রথো রাফি

 

 

|| যৌনতা, রাত ||

আবারও, কেউ তাদের প্রথম পতনের মধ্যে পতিত হয়—দুটি দেহের পতন, দুটি চোখ, চারটি সবুজ চোখ বা আটটি সবুজ চোখ যদি আমরা আয়নায় জন্মানোদের গণনা করি [মধ্যরাতে, বিশুদ্ধ ভয়ের মধ্যে, ক্ষতির মধ্যে], তুমি তোমার একঘেয়ে নীরবতার কণ্ঠস্বরকে চিনতে পারোনি, পার্থিব বার্তাগুলো দেখতে একটি উন্মাদ অবস্থার মাঝখানে হামাগুড়ি দিয়ে চলা, যখন শরীর এক আয়না এবং আমরা নিজেদের থেকে এবং অন্যের কাছ থেকে এক ধরনের অসম্ভব জল পান করি আমরা।
বাসনা তো অকারণে আমার ওপর অভিশপ্ত সোমরস ছিটিয়ে দেয়। আমার তৃষ্ণার্ত তৃষ্ণার জন্য, কি করতে পারে চোখের প্রতিশ্রুতি? আমি এমন কিছুর কথা বলি যা এই পৃথিবীতে নেই। আমি এমন একজনের কথা বলছি যার লক্ষ্য আসলে অন্যকোথাও।
আর আমি সাদা রাতের স্মৃতিতে নগ্ন হয়েছিলাম। মাতাল এবং আমি সারা রাত সঙ্গম করেছি, অবিকল একটি অসুস্থ কুকুরের মতোই।
কখনও কখনও আমরা এক রাতের জায়গাতেই খুব বেশি বাস্তবতা ভোগ করি। আমরা খুলে ফেলি পোশাক, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি আমরা। আমরা জানি আয়নাটি ঘড়ির মতো শব্দ করে, বেরিয়ে আসবে যে আয়না থেকে তোমার কান্না, তোমার ক্ষত।
রাত একবারই খোলে। এই যথেষ্ট। তুমি দেখো। তুমি দেখেছো। আয়নায় দুজন হওয়ার ভয়, এবং হঠাৎ আমরা চারজন। আমরা কেঁদে উঠি, আমরা হাহাকার করি, আমার ভয়, আমার আনন্দ আমার ভয়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর, আমার অযৌক্তিক শব্দ, আমার শব্দগুলো এমন চাবি যা তোমার সাথে আমাকে আয়নায় তালাবদ্ধ করেই রাখে, অথচ সবসময় একা। আর আমি ভালো করেই জানি রাত কী দিয়ে তৈরি। আমরা এতটাই চোয়ালের মাঝে পড়ে গিয়ে আটকে গেছি যে এই আত্মত্যাগের আশা করিনি, এই নিন্দা আমার চোখের, যে দেখেছে। আমি একটি আবিষ্কারের কথা বলি: যৌনতার মধ্যে আমাকে অনুভব করি, আমার মাঝে যৌনতা। বিশুদ্ধতম ক্ষতি। কিন্তু কে বলবে: তুমি আর রাতে কাঁদো না? কারণ পাগলামিও মিথ্যা। রাতের মতো। মৃত্যুর মতো।

 

|| প্রেমিক ||

বেঁচে থাকার জন্য এই বিষণ্ণ উন্মাদনা
বেঁচে থাকার এই দুর্বোধ্য মেজাজ
আলেহান্দ্রা তোমাকে জোরে কাছে টানে, অস্বীকার করো না।

আজ তুমি আয়নায় তাকিয়েছো
এবং এ দুঃখিত তুমি একা ছিলে
আলো গর্জে ওঠে বাতাস গান গায়
তবু ফিরে আসেনি তোমার প্রিয়জন 

তুমি বার্তা পাঠাবে তুমি হাসবে
তুমি তোমার হাত নাড়াবে তাই এটি ফিরে আসবে
তোমার প্রিয়জন বড়ো প্রিয়

তুমি শুনবে পাগল সাইরেন যে তা চুরি করেছে 
ফেনার দাড়িঅলা জাহাজ
যেখানে হাসিটা মরে গেছে
মনে আছো শেষ আলিঙ্গন?
ওহ কোন চিন্তা নয়
রুমালে হেসে ওঠো জোরে চেঁচাও
কিন্তু তোমার মুখের দরজাগুলো বন্ধ করো
যেনো তারা পরে না বলে
ভালোবাসার সেই নারী ছিলে তুমি

দিনভর অনুশোচনা করো তুমি
রাতগুলো তোমাকে দোষে শুধু
জীবন কষ্ট দেয় খুব
মরিয়া হয়ে কোথায় ছুটছো তুমি?
মরিয়া হওয়ার আর কিছুই নেই

 

|| তীর্থযাত্রা ||

এলিজাবেথ আজকোনা ক্র্যানওয়েলকে

আমি ডাকলাম, ডাকলাম সুখী
পাপাসক্তের মতো
সবুজ ঢেউকে
যারা আসল নাম জানে
মৃত্যুর।

আমি ডেকেছি বাতাসকে
বিশ্বাস করেছি হয়ে উঠবে আমার বাসনা।

কিন্তু মৃত এক পাখি
হতাশার ভেতরে উড়ে যায়
সঙ্গীতের মাঝখানে
যখন ডাইনি এবং ফুল
তারা কুয়াশার হাত কেটে ফেলেছে।
এক মৃত পাখি ডাকলো নীল।

ডানার একাকীত্ব নয়,
বন্দীর নীরবতা
পাখি এবং বাতাসের নীরবতা,
আমার হাসিতে পৃথিবী রাগ করেছে
অথবা জাহান্নামের অভিভাবকেরা
ছিঁড়ে ফেলছে আমার কার্ড।

ডেকেছি, ডেকেছি আমি।
আমি কখনও ডাকিনি।

 

|| বিরুদ্ধে ||

আমি বৃষ্টি বা কান্নার কথা স্মরণের চেষ্টা করি। নিরপরাধ হতাশার পথে নামতে চায় না এমন জিনিসগুলোই বাধা। আজ রাতে আমি হতে চাই পানি দিয়ে গড়া, তোমাকেও চাই হও জল-নির্মিত, চাই ধোঁয়ার মতো পিছলে হারিয়ে যাক জিনিসগুলো, চাই একে অনুকরণ করে, চূড়ান্ত লক্ষণগুলো দেখিয়ে দিতে— ধূসর, শীতল। শব্দগুলোতো আমার গলায়। সিলমোহরগুলো যাদের গেলাই যায় না। শব্দগুলো বাতাসের জন্য পানীয় নয়, এ তো মিথ্যা কথাই যা তারা বলে, বলে যে শব্দগুলো ধূলিকণা—তারা যদি তা-ই হতো—তবে এখন হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া, অভিবাসন, অদৃশ্যতার স্বপ্ন দেখা কোনও পাগল হতে চলা নারীর প্রার্থনা আমাকে হয়তো উচ্চারণ করতে হতো না। শব্দের স্বাদ, সেই পুরানো বীর্যের স্বাদ, পুরাতন গর্ভের, হারানো হাড়ের, কালো নোংরা জলে সিক্ত সেই প্রাণীর [ভালোবাসা আমাকে আয়নার সামনে সবচেয়ে ঘৃণ্য মুখগুলো গড়তে বাধ্য করে]। আমি কষ্ট পাই না, কেবল কোমল ভাষার প্রতি, রক্তবর্ণ গাঁথুনি আর জলো রক্তের প্রতি আমার জঘন্য বিরক্তি প্রকাশ করছি। কোনোকিছুই কিচ্ছু গোপন করে না, বস্তু কেবলি বস্তু, এবং যদি কেউ এখন আমার কাছে আসে আর একটি কোদালকে কোদাল বলতে বলে, বিশ্বের প্রতিটি বধির, হতচ্ছারা দেওয়ালে আমি মাথা ঠুকতে শুরু করব। স্পষ্ট পৃথিবী, বেশ্যাকৃত মেশিন, শোষিত ব্যবহৃত এক বিশ্ব। এবং কুকুরগুলো তাদের কোমল পশম দিয়ে আমাকে অপমান করতে করতে, আস্তে আস্তে চেটে চলে আর গাছগুলোতে ছড়িয়ে দেয় তাদের লালা, যা আমাকে পাগল করে তোলে।

 

|| পানির কান্নার আওয়াজ শুনি সারারাত ||

সারারাত পানির কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই আমি। আমার মধ্যে রাত্রি বানাই সারারাত, আমার জন্য যে দিনটি শুরু হয় সেই দিনটিকে বানাই আমি, যে কাঁদে কারণ রাতের মধ্যে দিয়ে পানির মতোই ঝরে দিন।
সারারাত শুনতে পাই কেউ আমাকে খুঁজছে। সারারাত তুমি আমাকে ধীরে ধীরে পরিত্যাগ করে চলো পানির মতো যা কাঁদে ধীরে ধীরে ঝরে। সারারাত লিখি ঝলমলে বার্তা, বৃষ্টির বার্তা, সারারাত কেউ আমার হয়ে যাচাই করে চলে এবং যাচাই করে যাই আমি কারো হয়ে।
এই বদরাগী আলোর কাছাকাছি বৃত্তের মাঝে পদক্ষেপের শব্দ জন্ম নিলো আমার অনিদ্রা থেকে। এমন একজনের পদক্ষেপ যে আর কষ্ট পায় না, যে আর লেখে না। সারারাত কেউ চেপে ধরে, তারপর তিক্ত আলোর বৃত্ত অতিক্রম করে।
সারারাত তোমার চোখে ডুবে থাকি যা আমার চোখ হয়ে যায়। সারারাত আমি আমার নীরবতার বৃত্তে সেই বিচ্ছিন্নতার দিকে নিজেকে খোঁচা মেরে এগিয়ে নিই। সারারাত আমি দেখতে পাই আমার দিকেই ঝুঁকে আছে কিছু একটা, আর্দ্র কিছু একটা, নীরবতার মতলবে চালু হওয়া কারো কান্নার শব্দ।
অনুপস্থিতি ধূসরভাবে প্রবাহিত হয় আর ঘন হয়ে আসে রাত। রাত, মৃতদের চোখের পাতার ছায়া, সান্দ্র রাত্রি, কিছু কালো তেল নিঃশ্বাস ত্যাগ করে যা আমাকে সামনের দিকে উড়িয়ে দেয় এবং উষ্ণতা ছাড়াই, শীত ছাড়াই ফাঁকা একটি জায়গা অনুসন্ধান করতে প্ররোচিত করে আমাকে।
সারারাত আমি কারো কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াই। আমি দাবা খেলি, আমি ক্ষুদে এক সুর বাজাই। আমি শোকের গান গাই। কালো কাফনের উপর কালো পাখি। আমার মস্তিষ্ক কাঁদে। পাগলা বাতাস। টানটান হাত ছেড়ে দিই আমি, চিরকালের এই হাহাকার, এই রাতের কোলাহল, এই বিলম্ব, এই কুখ্যাতি, এই সাধনা, এই অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই জানতে চাই না আমি।
সারারাত দেখি ওই বিসর্জন আমি, ওই একমাত্র কান্নার কণ্ঠটিও আমি। লণ্ঠন দিয়ে অনুসন্ধান করতে পারি আমরা, অতিক্রম করতে পারি ছায়ার মিথ্যাকে। আমরা অনুভব করতে পারি উরুতে হৃদস্পন্দন আর পানি কমে আসে হৃদপিণ্ডের ওই বর্জিত স্থানে।
সারারাত তোমাকে জিজ্ঞেস করি কেন? সারারাত তুমি আমাকে বলো না।

 

|| ধারাবাহিকতা ||

বস্তুর নিজের নামে নাম না রাখা। বস্তুর গায়ে কাঁটাতার, মাতাল সবুজতা। কিন্তু চোখ ভরা এই ঘরে কে কথা বলছে? কে কাগজের তৈরি মুখ কুঁচকে চলেছে? নাম যেগুলো উঠে আসে, মুখোশের ছায়া। এই শূন্যতা থেকে নিরাময় করো আমাকে, বললাম আমি। [আমার এই অন্ধকারে আলো ভালোবাসত নিজেকে। আমি জানতাম যে অনুপস্থিতি ছিল, যখন আমি নিজেকে বলতে দেখলাম, এই হচ্ছে আমি।] আমাকে নিরাময় করো, বললাম আমি।

 

|| খাঁচা ||

বাইরে রোদ পড়েছে।
এ এক সূর্য মাত্র
কিন্তু পুরুষরা সেদিকে তাকায়
আর তারপর তারা গান গায়।

আমি সূর্য সম্পর্কে কিছু জানি না।
ফেরেশতার মধুর সুরের কথা জানি
এবং শেষ বাতাসের
জরুরি উপদেশ
জানি ভোর পর্যন্ত কিভাবে চিৎকার করতে হয় 
যখন মৃত্যু উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়
আমার ছায়ায়

আমি আমার নামের অধীনে কাঁদি।
আমি রুমাল দোলাই রাতের জন্যে
আর বাস্তবতার প্রতি তৃষ্ণার্ত জাহাজের জন্যে
তারা নাচে আমার সাথে 
আমি নখ লুকাই
আমার অসুস্থ স্বপ্নকে উপহাস করতে।

বাইরে রোদ পড়ছে।
ছাই দিয়ে আমি নিজেকে সাজাই।

 

|| জাগরণ ||

ঈশ্বর
খাঁচা তো পাখি হয়ে গেছে
এবং ডানা মেলে উড়ে গেছে
আর পাগল হয়ে গেছে আমার মন
কারণ এ তো মৃত্যুর মুখে চিৎকার করে
আর আমার প্রলাপে
হাসে বাতাসের আড়াল থেকে

এ ভয় দিয়ে আমি কী করব
এ ভয় দিয়ে কী করব আমি

আমার হাসিতে আলো আর নাচে না
কিংবা আমার ভাবনায় ঋতুরা দহন করে না আর ঘুঘুকে
আমার হাত নগ্ন হয়ে গেছে
আর গেছে যেখানে মৃত্যু
মৃতকে বাঁচতে শেখায়

ঈশ্বর
বাতাস আমার অস্তিত্বকেই শাস্তি দেয়
বাতাসের পিছনে আছে দানব
যে আমার রক্ত শুষে খায়

এ তো বিপর্যয়
এ তো শূন্যতার সময় শূন্য নয়
ঠোঁট বন্ধ করার এই তো সময়
শুনতে দোষীদের চিৎকার
আমার নামের প্রত্যেকের মনোযোগ কাড়তে
যারা শূন্যে শ্বাসরুদ্ধ ঝুলে আছে

ঈশ্বর
বিশ বছর বয়েসী আমি
আমার চোখও তাই
এবং তবুও তারা কিছু বলে না

ঈশ্বর
আমি মুহূর্তেই আমার জীবন গিলে খেয়েছি
ছিঁড়ে গেছে শেষ নিষ্পাপতা 
এখন তো কখনও না কিংবা আর কখনোই নয়
অথবা এটা ছিল মাত্র

আয়নার মুখোমুখি হয়ে কিভাবে নিজেকে না মেরে ফেলে পারি
এবং সমুদ্রে পুনরায় দৃশ্যমান হওয়ার জন্য অদৃশ্য না হয়ে
যেখানে বড় এক জাহাজ অপেক্ষা করছে
মিটমিটে আলো নিয়ে?

আমার শিরা উপড়ে না ফেলে
এবং তাদের দিয়ে একটি মই না বানিয়ে কী করে পারি আমি
রাতের অপর প্রান্তে পালিয়ে যেতে?

শুরুই জন্ম দিয়েছে শেষের
সবকিছু সেই একই থাকবে
জীর্ণ হাসি
কৌতুহলী কৌতুহল
পাথরকে নিয়ে পাথরের প্রশ্নগুলো
ইঙ্গিতগুলো যা প্রেমের অভিনয় করে
সবকিছু সেই একই থাকবে

কিন্তু আমার বাহু জগতকে আলিঙ্গনে জোর দিতে চায়
কারণ তাদের তো এখনও শেখানো হয়নি যে
ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে

ঈশ্বর
আমার রক্তের কফিনগুলো নিক্ষেপ করুন

আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে
যখন আমি এক বৃদ্ধা ছিলাম
আমার হাতে ফুল মরে যেতো
কারণ আনন্দের বন্য নাচ
তাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে

স্মরণ করি সূর্যের কালো সকালের কথা
যখন শিশু ছিলাম আমি
বলতে হয় তা তো ছিলো স্রেফ গতকাল
বলতে হয় তা তো ছিলো শতাব্দী আগের

ঈশ্বর
খাঁচা হয়ে গেছে পাখি
এবং আমার সব আশা গিলে খেয়েছে

ঈশ্বর
খাঁচা হয়ে গেছে পাখি
এই ভয় দিয়ে কী করবো আমি