লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [একাদশ পর্ব]
পড়ুন ► লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [দশম পর্ব]
লোকটাকে যেভাবে খুন করেছিলাম [একাদশ পর্ব]
লিনু শেষ পর্যন্ত আমার বাসায় এল। আমি জানতাম ও আসবে। কিন্তু এর আগে দুই একবার আসতে বলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখেছি। কোনো একটা পত্রিকার নিউজে পড়েছিলাম ঢাকায় নাকি রাস্তায় চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। অবশ্য পত্রিকায় পড়তে হয় না, এই যে হাজার হাজার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে মস্ত একটা ভিড় হয়ে, যার অংশ আমি নিজেও, সেখানো কারো মুখের দিকে তাকানোরই বা সময় কোথায়? কেউ কারো দিকে না তাকিয়ে যার যার কাজে ছুটছে। ফলে, এরকম একটা শহরে দূরের জেলা থেকে ঘুরতে আসা প্রায়-প্রগতিশীল যৌন সম্পর্কহীন একলা যুবতীর পক্ষে নিরিবিলি যৌনতা উপভোগ করার সুযোগ ছাড়া মুশকিল, যদি না যথেষ্ট নৈতিকতা তাকে কব্জা করে না রাখে।
মফস্বল জেলা শহরে একজন যুবতীর পক্ষে চাইলেই কারো সঙ্গে যৌন-সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া যতটা ঝুঁকিপূর্ণ, ঢাকায় ততটা নয়। এটা লিনুকে নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। মেয়েরা এমন কারো সঙ্গে বিষয়গুলোতে জড়িয়ে পড়তে চায় না, যারা অতি আগ্রহ দেখায়। আর আমার সঙ্গে তো তার প্রেম নেই। প্রেমমূলক কোনো কথা চালাচালি আমাদের হয় না। একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করি আমরা। এই ধরনের সম্পর্কে কোনো মেয়েকে বারবার বাসায় আসতে বলা আসলেই উচিত না। আমি দুইবার তাকে আসতে বলেছি খুব স্বাভাবিকভাবে, ভদ্রতা করে। তাতে কোনো ইঙ্গিত ছিল না। সে যা বুঝেছে সেটার দায় তার একার। তবে সেক্সের জন্য তাকে বারবার আসতে বললে সে সতর্ক হয়ে যেত, কিছুতেই আসত না। এখন এই স্মার্টফোনের যুগে যৌনতার প্রমাণ রাখা খুবই সহজ এবং এই প্রমাণ দেখিয়ে ব্লাকমেইল করার ঘটনা অহরহ খবরে আসে। সুতরাং একটু বিশ্বস্ত মনে না হলে কোনো ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক জড়িয়ে পড়া নারীদের জন্য বেশ কঠিনই বটে। লিনু সম্ভবত এতদিনে আমাকে বিশ্বাস করতে পেরেছে। আর আকৃষ্ট তো সে ছিলই আগে থেকে। আমি ধৈর্য ধরেছিলাম।
লিনুর ফিগার খুব ভালো লাগে আমার। লম্বা, হিন্দি ফিল্মের মেয়েদের মতো মেদহীন শরীর। শ্যামলবরণ মুখ আর কী সুন্দর ওর হাসি! যৌনতা এক স্বাভাবিক বিষয় আমি বলেছিলাম লিনুকে কথায় কথায় একদিন। সে সেদিন তেমন কোনো উত্তয় দেয়নি। কারো সঙ্গে এরকম সম্পর্কে যেহেতু দুনিয়ার আর কারো কিছু যায় আসে না, দুনিয়ার কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না, ফলে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না যে নৈতিকতার দোহাই দিয়ে শরীরকে আটকে রাখতে হবে, যেহেতু বিষয়টা কষ্টকর। লিনু হয়তো সেদিন আমার কথা কনভিন্স হয়েছিল, অথবা হয়নি, অথবা শুধু তার শরীরের চাহিদা থেকে এসেছে এখন। যে কারণেই আসুক, তার আসাটাই আমার কাছে প্রধান, আনন্দদায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ। সে যাতে বাসাটাকে নিজের ভাবতে পারে সেজন্যই ওকে সহজ হতে দিলাম। ওয়াশরুম দেখিয়ে ফ্রেশ হতে বললাম। আমি অন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। দুটো বাথরুম দেখেই আমি এই বাসাটা পছন্দ করেছিলাম। সচারচর দুই রুমে দুই বাথরুম এমন বাসা পাওয়া মুশকিল এই এলাকায়। আমি বেরিয়ে দেখি লিনু ফ্রিজ থেকে কোকের বোতল বের করেছে। বুঝলাম ও সহজ হতে শুরু করেছে। ও খুব কোকপ্রিয়। একটু পরপর কোক খায়। ভাত প্রায় খায় না বললেই চলে। সম্ভবত এ কারণে ফিগার মুটিয়ে যায়নি। আরেকটা হতে পারে রেগুলার সেক্সুয়াল লাইফ নেই বলে শরীরটা আটোসাটো হয়ে আছে। স্বাভাবিক যৌন-জীবন থাকলে মেয়েদের যে ধরনের সুন্দর লাগে, ওর মধ্যে কেবল ওইটুকু সৌন্দর্যের ঘাটতি আছে। লিনুকে বললাম, ‘লিনু, তুমি চা বানাতে পারো?’
লিনু বলল, ‘পারি, কিন্তু তুমি খেতে পারবে কিনা জানি না।’
আমার আসলে এখন চা খেতে খুব ইচ্ছে করছে এমন না। কিন্তু ওকে বলার কারণ হলো ও এই বাসায় যাতে আরো একটু সহজ হতে পারে। ওর যেন কোনরকম ইনসিকিউরড না লাগে। আরও একটা কারণ আছে, ও যেহেতু যৌনতার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হয়ে এসেছে এবং আমি চাইছি ওই বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপটা সে-ই নিক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নিজে থেকে আগ্রহী হয়েও মেয়েরা এ ঘটনার জন্য ছেলেটাকেই পরে দোষারোপ করে। আর যদি সে নিজে স্টেপ না নেয়, তাহলে আমাকেই উদ্যোগটা নিতে হবে, কিন্তু সেটার জন্য সে অধৈর্য হয়ে ওঠা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে চাই। মেয়েরা ছেলেদের নিয়ে নানারকম খুটিনাটি অক্ষতিকর খেলা খেলে সবসময়, ছেলেরা সাধারণত তা করে না। কিন্তু আমার এটুকু করতে ভালোই লাগে। আমাদের মেয়েরা এত লাজুক যে তাদের জন্য নানা ভনিতার আশ্রয় নিতে হয়। বিষয়টা আমার খারাপ লাগে না, তো নিজে এমন খেলা খেলতে ক্ষতি কী!
চা নিয়ে ও বিছানায় এসে বসল। আমাকে বলল, ‘এমন অগোছালো কেন তোমার বাসা?’
আমি বইপত্র আর কাগজ ছাড়া সবকিছুই ধরার অনুমতি দিলাম তাকে। সে নোংরা আন্ডারওয়ার আর মোজাগুলোর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল দেখে বললাম, ‘ওগুলো আমি বালতিতে দিয়ে দেব, তোমার ধরতে হবে না।’
বিছানার বইগুলো আমি সরিয়ে ইতিমধ্যে স্তুপ হয়ে থাকা টেবিলে কোনোরকমে জায়গা দিতে পারলাম। ওকে বললাম নতুন চাদর আছে দেখো পায়ের দিকটায় ভাজ করা। আমি খেয়াল করেছি মেয়েদের বেশ শূচিবায়ু থাকে বিছানার চাদর, বালিশের কভার নিয়ে। ব্যাচলর লাইফে আসলে বাসায় ফেরা হয় একদম ক্লান্ত হয়ে, ফলে চাদর নোংরা না পরিষ্কার সেটা ভাবার মতো যথেষ্ট অবকাশ পাওয়া যায় না। আর ঘুমেরও কোনো সমস্যা হয় না তাতে। ল্যাতিন আমেরিকার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হুয়ান রুলফো তাঁর পেদ্রো পারামো উপন্যাসে বলার আগেই আমি শরীর দিয়ে বুঝি, ‘ক্লান্তিই সবচেয়ে বড় জাজিম’। বাসায় খুব অল্প মদ আছে, ফ্রিজ খোলার সময় লিনুর সেটা দেখার কথা। দেখে থাকলে অফার না করাটা ভালো দেখায় না। আমি বললাম, ‘মদ খাবা লিনু?’
সে বলল, ‘আমি ওসব খাই না। তুমি খেলে খেতে পার।’
লিনুর বাড়ি যশোরে হওয়ায় ইন্ডিয়ান মদ আর বিয়ার সহজলভ্য। তার বয়ফ্রেন্ড বিয়ার খেত, সে লিনুকে একদিন খাইয়েছিল। তারপর নাকি লঙ্কাকাণ্ড। লিনু সেদিন শরীরে যতটা না অসুস্থ বোধ করেছে, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে। কারণ একটুখানি বিয়ার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে না। একা একা ওর সামনে খাওয়াটা শোভন দেখায় না। যদিও আমার খেতে ইচ্ছে করছিল। আমরা চা খেলাম, লিনু বলল, ‘দুপুরের মেনু কী?’
‘দুপুরে তো আমি রেগুলার না। সুতরাং বুয়া কিছু রান্না করে রেখে যায়নি। বাইরে গিয়ে খাব আমরা।’
‘ফ্রিজে কিছু নেই? আমি কিন্তু রান্না করতে পারি।’
‘ধুর, তা কী করে হয়? তুমি আমার গেস্ট না?’
‘আহা! গেস্টকে দিয়ে তো চা বানিয়ে নিলে।’
‘চা বানানোটা কি রান্নার মধ্যে পড়ে লিনু? তবে তুমি কিন্তু সুন্দর চা বানাও।’
‘যাক, অনেকক্ষণ পরে হলেও প্রশংসা পাওয়া গেল।’
‘এটা আমার স্বভাবদোষ লিনু। কিছুই আমি সময়মতো করতে পারি না।’
‘এখন থেকে পারবে।’
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না লিনুর কথা। এখন থেকে কী পরিবর্তন হবে যে আমি সময়মতো সবকিছু করতে পারব। সে কি আমাদের বিষয়টাকে প্রেম ভাবছে? কিন্তু আমি তো তাকে কখনও সেরকম ইঙ্গিত দেইনি। প্রেম ছাড়া শুধু শারীরিক আকর্ষণ থেকে দুজন মানুষ কি মিলিত হতে পারে না? সেই একই গৎবাঁধা চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে সবাই। আশ্চর্য! মাঝে মাঝে হতাশ লাগে। শরীরকে জাস্টিফাই করার জন্য এদের কেন সবসময় মনকে টেনে নিয়ে আসতে হয়! যাহোক, এসব বিষয় নিয়ে অত বেশি ভাবতে ভালো লাগে না। সিরিয়াস ভাবনার লোকও আমি না। আমি জানি দুনিয়ায় সবাই সব বিষয়ে সিরিয়াস হয় না। আর তাতে দুনিয়ার কিছু আসে যায় না। তাই এসব নিয়ে কোনো খেদও অনুভব করি না কখনও।
লিনু অনেকক্ষণ ধরে বাসাটা মোটামুটি ভদ্রস্থ অবস্থায় আনল। কিন্তু এখন ওর হাত-পায়ে ধুলোবালি লেগে আছে। আমি বললাম, ‘লিনু, গোসল করে নাও। তুমি ঘেমে গেছো।’
‘কিন্তু এক্সট্রা কিছু তো নিয়ে আসিনি।’
‘তুমি আমার একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে নাও। ওগুলো ধোয়া আছে।’
এখন লিনু বাসাটাতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ওর আড়ষ্টতা নেই একেবারে। মেয়েরা অবশ্য এই জায়গাগুলোতে ছেলেদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। নতুন কোনো জায়গায় সহজে মানিয়ে নিতে পারে। বাসাটা দেখে বরং আমারই কেমন অচেনা লাগছে।
গোসলের পর ভারি স্নিগ্ধ দেখায় লিনুকে। আমি অপলক ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও বলল, ‘কী দেখো অমন করে?’
‘তোমাকে দেখি লিনু। তুমি কত সুন্দর!’
ও হেঁটে এসে একদম আমার মুখোমুখি দাঁড়াল। ওর ঘন নিঃশ্বাস এখন আমার গায়ে লাগছে।
► আসছে দ্বাদশ পর্ব
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন