চর্ব্য চোষ্য [অষ্টম পর্ব]

অ+ অ-

 

পড়ুন চর্ব্য চোষ্য [সপ্তম পর্ব]

 

চর্ব্য চোষ্য [অষ্টম পর্ব]

 

রাতে আমিরের ঘুম হয়নি। বিছানায় সারারাত এপাশ-ওপাশ করেছে। সকাল সকাল ভাওয়াল টাওয়ারের সামনে হাজির হয়ে গেল। সাথে তার সাগরেদ রাজ্জাক। দুইজনের কাঁধে দুইটা স্কুল ব্যাগ। ভেতরে প্লাস্টিক বোতলে পেট্রোল।

আমির ভাওয়াল টাওয়ারের এক দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলল, আমি আগে দারোয়ান ছিলাম। তোমরা আর দারোয়ান নিবা নাকি?

দারোয়ান শীতল চোখে তাকাল। আমিরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল, বস আসলে কথা বলে দেখ।

আমির জানে বসের সাথেই কথা বলতে হবে। তার আগে সে দারোয়ানদের সাথে একটু ভাব করতে চায়। না হলে তারা হয়ত সন্দেহভাজন ঘোরাফেরার অভিযোগে আটক করবে। আটক করলেই ধরা।

দারোয়ানের সাথে কথা বলার পর আশপাশে ঘুরঘুর শুরু করল তারা। ঘনঘন রাস্তার দিকে তাকাতে লাগল। যেখান দিয়ে নাশিতার গাড়ি আসবে।

এখনও অনেক সকাল। কর্মকর্তারা কেউ আসতে শুরু করেনি।

আমিররা রাস্তায় জ্যাম লাগার আগেই আসতে চেয়েছে। সেজন্য ভোরে আশুলিয়া স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠেছে। রাজ্জাক বলল, ফিঙ্গেবাড়ির চাইতে ভাল কিছু হবে এই টাওয়ারে কিছু একটা করতে পারলে।

ভাল করে চিন্তা কর সব দিক, আশপাশে তাকাতে তাকাতে বলল আমির। ব্যাগটা সাবধানে ধরে রাখল। রাজ্জাকের ব্যাগ ঠিক আছে কিনা দেখতে লাগল মাঝে মাঝে।

রাজ্জাকও ব্যাগের দিকে বিশেষ নজর রাখে। তাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে কিনা খেয়াল করে ঘন ঘন।

ভাওয়াল টাওয়ারে আমিরের এক পিয়নবন্ধু আছে। তার সাথে ভেতরে ঢোকার পরিকল্পনা তাদের। তার আগে গলির মুখে চায়ের দোকানের দিকে চোখ পড়তেই সে আর সব ভুলে যায়। আজ সকালে এখনও তার চা-বিড়ি খাওয়া হয়নি।

দোকানিকে চা দিতে বলে ওপরের দিকে নাক তুলে তাকাল আমির। বিরাটকায় দুই সারি ভবনের মাঝখান দিয়ে সরু একটা গলি। করাতের মত। নিজেকে তার মশার মত মনে হতে লাগল। সাথে সাথে আবার মনে হল মশার মত না। মশার ডিমের মত। নখে নখ খোঁটাখুঁটি বেড়ে যায় তার।

রাজ্জাক বলল, আমরা যেকোনো একজন আগে এই টাওয়ারে দারোয়ান হয়ে ঢুকতে পারলে!

কে ঢুকবে? তুই ঢুকবি না আমি ঢুকব?

উম্‌ম্এখানে আপনার যে পিয়নবন্ধু আছে তাকে দলে নেওয়া যায় না, লিডার?

সব দিক চিন্তা করে দেখতে হবে। চিন্তা কর।

অত চিন্তার দরকার নেই। আপনার বন্ধু আগে আসুক। ভেতরে একবার ঢুকতে পারলে হয়। দেব ঘটায়ে। তারপর যা আছে কপালে।

আমিরের বুকের ভেতর দুরুদুরু করছে ব্যাগটা ঘাড়ে তোলার পর থেকেই। আরো বেড়ে গেলে সে মতিঝিল থেকে দ্রুত ফিরে যাবার কথা ভাবতে শুরু করল। খানিকটা চলেও গেল। তারপর তার মনে পড়ল নাশিতাকে বলা উচিত, তারা ইতর প্রাণী না। একটু পরেই আবার মনে হল, বলার কী দরকার। যার যা ইচ্ছা মনে করুক। কী যায় আসে।

সে চা না খেয়েই পা বাড়ালে রাজ্জাক বিরক্ত হয়ে যায়। আমিরের মাথামুণ্ডু ঠিক আছে ত?

আমির বলল, ভয়ানক কিছুর প্রস্তুতি নিতে হবে।

আগুনই সহজ! এবং সেরা উপায়! রাজ্জাক বলল। আমিরের মুখের দিকে তাকাল সে। তার চোখে আগুন নেই। বরং সব সময় যেন মেঘ থমথম করে।

আমির দ্রুত হাঁটা দিল। তারপর ভাওয়াল টাওয়ারের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে নাশিতার বেগুনি কার দেখেই বুকের ভেতর ধড়ফড়।

নাশিতা ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমেছে। আমির দ্রুত হাঁটলেও নাশিতা তাকে দেখে ফেলল। তার স্মৃতিশক্তি ভাল। মিটিংয়ে আমির যেভাবে বসেছিল তা মনে পড়ছে। আমির যা বলেছিল তাও প্রায় হুবহু।

স্থির মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে নাশিতা। আমিরের চলে যাওয়া দেখে। তার মন বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই তার কাছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতা মানে দুশ্চিন্তা।

কিছুক্ষণ চিন্তার পর আমিরকে ফোন করল নাশিতা। কথা বললে অন্ধকার থেকে বের হবার পথ মিলতে পারে।

আপনি যে নম্বরে কল করেছেন তাতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না, মোবাইল ফোন অপারেটরের নারীকণ্ঠ।

আমির শাপলা চত্বর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় শক্ত করে মাটির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছে। সব অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করার মানে হয় না। কত দিনে কতটুকু আন্দোলন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। এই জীবনে তার ফল মিলবে কিনা তার ঠিক নেই। সেখানে দুই-তিনজন মিলে যা করা যায় তা হল

হাত মুঠ পাকিয়ে বিড়বিড় করে আমির। কিছু একটা সে আজই করবে যেন। আর রাজ্জাক তাকে প্রতিনিয়ত উত্তেজিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।

নাশিতা ল্যাপটপে শ্রমিকনেতাদের মোবাইল নম্বরের তালিকা খুলল। পাঠিয়েছে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এখানে কারুর ঠিকানা-পদবি নেই। কে কোথাকার নেতা তার ঠিক কী। ইচ্ছে করছে ফোন করে আচ্ছামত একটা ধমক দিতে।

কিছুক্ষণ দম বন্ধ করে রাখল নাশিতা। তারপর মেইলের উত্তর দিল, কিভাবে বুঝব কে কোথাকার নেতা? ইংরেজিতে। ভাওয়ালের সবকিছু ইংরেজিতে হয়। পিয়নদের দেড় পৃষ্ঠার নিয়োগপত্রের শর্তসহ।

আবার আমিরকে ফোন করল নাশিতা। এখনও বন্ধ রয়েছে।

পিয়ন বলল, কফি দেব, ম্যাম?

পরে।

আরো ঘণ্টা খানেক উসখুস করার পর উঠে পড়ে নাশিতা। মনে হচ্ছে এখনই বাসায় ফেরা উচিত। সিইওকে বলতে গিয়েও বলল না। অন্য কাউকেও কিছু বলল না। গাড়িতে বসে সাবইকে মেইল করে রাখবে।

লিফট দিয়ে নিচে নামতে নামতে আরো একধাপ চিন্তা করল নাশিতা। লম্বা-চওড়া রিসেপশন রুমের সোফায় বসে ল্যাপটপ খুলল। মিটিংয়ের ফুটেজ থেকে আমিরের ছবি নেবে। স্ক্রিন শট নিয়ে গ্রাফিক শাখায় মেইল করল। তারপর ফোন করে বলল, ছবিটা রেডি করে প্রিন্ট দেন। এখনই।

গ্রাফিক শাখা চারতালায়। নাশিতা লিফটের দিকে পা বাড়িয়েও থেমে গেল। একজন পিয়নকে পাঠাল ওপরে।

মিনিট দশেক পরে আমিরের একটা রঙিন ছবি নিয়ে আসে পিয়ন। ছবিটা প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে দিয়ে বলতে হবে। কী বলা যায় ভাবতে ভাবতে নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমের দিকে গেল নাশিতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রুমে ঢুকল না। অতিরিক্ত চিন্তা করা ভাল না। আমির হয়ত কোনো ব্যক্তিগত কাজে এসেছে। এখানে হয়ত তার কোনো বন্ধু আছে। ভাওয়াল টাওয়ারে ফিঙ্গেবাড়ি এলাকার অনেকে চাকরি করে।

নাশিতার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। খানিক চিন্তার পর আশপাশে ঢুঁ মারল সে। রাস্তাঘাট ইতিমধ্যেই লোকারণ্য হয়ে গেছে। সবাই প্রতিমুহূর্তে আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

মিনিট চারেক আশপাশে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার পর গাড়িতে গিয়ে বসল নাশিতা। বাসায় চলেন, বলল শান্ত স্বরে। চালক যেন তার অস্থিরতা ধরতে না পারে। বাসায় গিয়ে সব দারোয়ানকে ডেকে বলল, সব সময় চোখ-কান খোলা রাখবেন। বাড়ির আশপাশে সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আটক করবেন। আমাকে জানাবেন।

জি, ম্যাম!

আপনারা সবাই আছেন? কেউ ছুটিতে আছে নাকি?

সবাই আছি। কেউ ছুটিতে নেই।

রাতে কার ডিউটি? উনি জেগে থাকে না?

জি, ম্যাম!

আশপাশে ঘুরে ঘুরে পাচিলে চোখ বুলায় নাশিতা। পাচিলটা খুব নিচু। দুই ফুটের কম। তার ওপর লোহার বেড়া। বেড়ার মাথা ঢালু চালের মত গিয়ে দেয়ালে মিশেছে। বেশি আলো-বাতাস আসার জন্য এই ব্যবস্থা।

নাশিতা সব দেখল। শুধু লাইটের কথা ভুলে থাকল। বাড়ির পাশে লেকপারে হাঁটার পথ। পথের পাশে বাড়ির বাতিটা জ্বলছে না গতকাল থেকে। দারোয়ানরা হোল্ডার নেড়েচেড়ে দেখেছে। বাল্ব পাল্টে দেখেছে। ঘটনা ধরতে পারেনি। ওদিকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক গেছে ছুটিতে। দুই দিন আগে। বাতিটা বিশেষ আবশ্যক না মনে করে দারোয়ানরা কাউকে বলেনি। তত্ত্বাবধায়ক ফেরার অপেক্ষায় আছে।

জিডি করার কথা ভাবল নাশিতা। গুলশান থানা কাছেই। গুলশান নর্থ এভিনিউতে। গুলশানের যেকোনো জায়গা থেকে গাড়িতে তিন-চার মিনিটে যাওয়া যায়।

গাড়িতে উঠতে উঠতে তার হাসি পেয়ে গেল। কি সব আবোল-তাবোল চিন্তা করছে সে! কোনো দুর্ধর্ষ অপরাধী ছাড়া নাশিতার কাছে ঘেঁষা সম্ভব না। সেখানে আমির একজন খেটে খাওয়া মানুষ। তার এত সাহস থাকতে পারে না। সে একজন নেতা বটে। শ্রমিকনেতা। এ ধরনের নেতারা বড় কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

এই বিশ্লেষণের পর নাশিতার মন শান্ত হয়ে যায়। সামান্য ভুলে বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তা আর তার মনে পড়ে না। সে বরং এই সিদ্ধান্ত নিল যে, তুচ্ছ বিষয়ে বেশি ভাবনা মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ।

কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিল।

নাশিতা সুর করে বলল, আআম্মি! মা-মণিই!

উয়াউ! আজ তুমি এত সকালে চলে এসেছ?

ইসমি কোলাহল করে দৌড়ে আসল। সে খুব উচ্ছ্বসিত। আম্মি দুপুরে বাসায় আসা এক বিরাট উপহার। খুব প্রত্যাশিত উপহারের চাইতে সুখের। সন্ধ্যা পর্যন্ত দেরি করতে করতে সে প্রায়ই কাহিল হয়ে পড়ে।

নাশিতা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করল।

ইসমি বলল, আজ আর তোমার অফিস নেই?

নাহ্!

বিকালে মিটিং আছে?

নাহ্!

তাহলে বিকালে তুমি কী করবা?

তুমি বলো কী করব?

আমি যা বলব তাই করবা?

হুম!

ইসমি কিছু বলতে পারল না। আম্মিকে নিয়ে এই মুহূর্তে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। নাশিতাই বলল, বিকালে আমরা আইসক্রিম পার্লারে যেতে পারি, হুম? অথবা

ছয় নম্বর গাড়িতে এসে গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বরে নামল আমির আর তার দুই সঙ্গী। আশপাশে তাকাতেই তারা প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। চারপাশে সারি সারি সুউচ্চ ভবন যেন শক্তির প্রতীক। আমিরকে যেন অদৃশ্য হাতে চেপে মিশিয়ে দিল। মাটির সাথে।

চত্বরের পাশে পাকিস্তান আমলের ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট রোড। ডাকনাম ডিআইটি রোড। সেখানে এক পান-বিড়ির দোকানে গেল তারা। অনেকক্ষণ পরে অস্তিত্ব খানিকটা ফিয়ে পাওয়ার পর।

লেক সড়কটা কোন দিকে, ভাই?

দোকানি গুলশান এভিনিউ বরাবর থুতনি তুলল।

আমিররা গোল চত্বর থেকে দক্ষিণ দিকে পা বাড়ায়। সামনে যদ্দূর চোখ যায়, এভিনিউর দুই পাশে দুই সারি উঁচু ভবন। একটার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরেকটার সামনে চলে যায় তারা। চোখ সরিয়ে নিতেই আরেকটায় আটকে থাকে। একটা ভবন নীল কাচের চাদরে ঢাকা। আরেকটা সবুজাভ। আরো নানা রঙের কাচে, অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমে, ফাইবার নকশায় সাজানো একেকটা ভবন, যেখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর। করপোরেট অফিস। হোটেল, রেস্তোরাঁ। নানা রকম দামি জিনিস খুচরা বিক্রির দোকান। সামনে ফুটপাতে হাঁটাচলা করছে লোকজন। পরিচ্ছন্ন ফুটপাতের পাশ দিয়ে, মাঝ দিয়ে দুই সারি গাছপালা।

বছর পনের আগে আমির একবার গোল চত্বরে এসেছিল বটে। পোশাক শ্রমিক বন্ধুর কাছে। তখন এখানে অনেক কারখানা ছিল। ধূলিধূসর বড় একটা বাজারের মত ছিল এলাকাটা। আমির তখন গোল চত্বর থেকে দূরে কোথাও যায়নি।

খানিকটা যেতেই তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। এভিনিউয়ের দুই পাশে দুইটা মাঠ যেন। বস্তুত, একটা গুলশান কেন্দ্রীয় পার্ক। নামে পার্ক হলেও মাঠ হয়ে পড়ে আছে। আরেকটা গুলশান মসজিদ ঈদগাহ। গুলশানে এমন ফাঁকা জায়গা থাকতে পারে তা তাদের কল্পনায় ছিল না।

মসজিদ আর ঈদগাহ দেখে তারা বিশেষ মুগ্ধ হয়। ঈদগাহের চারপাশে গাছপালা। হালকা সবুজ বেষ্টনী যেন। পশ্চিম পাশে বড় তেতালা মসজিদটা কী সুন্দর! ভেতরে-বাইরে সব জায়গা ধবধবে সাদা। মসজিদের সামনে বড় উঠোনে যেন সবুজ গালিচা বিছানো। উঠোনের চারপাশে বারান্দা। দেয়ালবিহীন বারান্দায় খুঁটির বদলে সাদা সাদা কংক্রিট চাকা। কমনীয়। তার ওপর ভর দিয়েছে বারান্দার ছাদ। মসজিদের কাচের জানালার সামনেও কংক্রিট চাকার নকশা।

রাজ্জাক বলল, গুলশানের মানুষ নামাজ পড়ে, লিডার?

তাই ত দেখছি। মসজিদ যেহেতু আছে!

তারা জানত গুলশানের মানুষ দামি দামি লাল পানি খায়। ক্লাবে গিয়ে নাচানাচি করে। তাহলে তারা আবার নামাজ-কালাম পড়ে কী করে।

বস্তুত, গুলশানে আরো একটা মসজিদ আছে। গুলশান জামে মসজিদ। এবং আরেকটা বড় মসজিদ হতে যাচ্ছে। গুলশান সোসাইটি মসজিদ। সাততালা মসজিদটার একপাশে গুলশান বিনোদন পার্ক। একপাশে বনানী লেক। আরেক পাশে সুদৃশ্য বনানী কবরস্থান। পরিপাটি করে সাজানো কবরগুলো সাদা ইটে-পাথরে বাঁধানো। পাশ দিয়ে লাল-হলুদ ফুল ফুটে থাকে। গুলশান-বনানী-বারিধারার গতায়ু বাসিন্দাদের জন্য।

রাজ্জাক বলল, লিডার, দেখেন। কী সুন্দর পার্কটা ভেঙ্গে ফেলছে!

উমা! এ কি কাণ্ড! অবাক আমির আলি।

কেন্দ্রীয় পার্কের একাংশে গড়ে ওঠা ওয়ান্ডারল্যান্ডের দিকে হাঁ করে তাকাল তারা সবাই।

ব্যাপারটা আসলে এই, শিশু-কিশোরদের জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ড নামে আমোদকেন্দ্র তৈরি করেছিল এক ব্যবসায়ী। দেশের একজন ঈশ্বর সহযোগিতা করেছিল। আরেক ঈশ্বর বলল, ওই সহযোগিতা অবৈধ। সুতরাং বাগড়া দিতে শুরু করে প্রথম থেকেই। এখানে ভাল ব্যবসা হচ্ছিল। ফলে ব্যবসায়ীর কিছু শত্রু গজায়। তারা আরেক ঈশ্বরকে কানপড়া দিল। সবাই মিলে বাইশ বছর ধরে নাস্তানাবুদ। তারপর তারা ভাবল ওটা ভেঙে ফেলাই ভাল। এখন আরেক ইশ্বর বলছে ওখানে পাবলিক পার্ক হবে।

রাজ্জাক বলল, আবার হয়ত নতুন করে কিছু একটা করবে। হয়ত আরো ভাল কিছু বানাতে চায়।

তারা এভিনিউ থেকে আবাসিক এলাকায় ঢুকল। ঘণ্টা খানেক এ গলি সে গলি ঘুরে শেষে খুঁজে পায় নাশিতার বাসা। বাসার পেছনে চকিতে চোখ বুলিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। লেকপাড়ে গিয়ে বসল। নানা রকম বর্জ্যে ভরা পাড়। এখানে-ওখানে আরো অনেকে বসে আছে। কেউ উঠছে। কেউ এসে বসছে। আমিররা বসেই থাকল আর আলোচনা করতে লাগল। বিষয় নাশিতার বাসায় অভিযান।