রেবেকা রবীন ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

সরাইখানা

ভ্রমণের পরে জেনেছি এই পথ ছিলো ভুল, তবু সরাইখানা দেখে থেমে গেছি কতোবার। বেলফুল ও বিকালের মাঝে আমার শুধু রঙধনু দেখা বাকি থাকে

দেখো ডাকছে মেঘ অতন্দ্রিলা, চোখে তোমার পড়ে আছে ছাই। বিষণ্ণ মেঘের বাড়ি ফুটে থাকে থোকা থোকা বাগানবিলাস

সই জানে আমি শুধু ছাই তুলে রাখি আর ভাবি কাউকে না পাওয়ার পরেও তাকে হারিয়ে ফেলার শঙ্কা থেকে কতোদূরে  ভেঙে যায় প্রবল ভাঁটায় তট ছেড়ে আসা সমুদ্রের ঢেউ

আমি তো দীঘির অথৈ জলে বৈচি ফুল তুলে আনি

আমাকে লুপ্ত করে রাখে জলশূন্য মেঘ। কোথাও হারিয়ে যেতে যেতে যে সাঁকো খুঁজে পাই তাকে সরাইখানা ভাবিভাবি এই বলিকাঠে মাথা পেতে দিতে কোথায় খুঁজে পাবো দীর্ঘ শিরস্ত্রাণ?   

 

রেবেকা রবীন

নিঃশর্তে বসন্ত কখনো আসে না, তোমাকে দিলাম পৌষের  দিন, রেবেকা রবীন!

ভাবি, জলে পা ডুবিয়ে দিলে তোমার পাশে বসে থাকতে ইচ্ছে করে কেন? কেন তবে অরণ্যের গভীরে কোনোদিন বাজে না পাতার বাঁশি

ধীরে নেমে যাই আরো জলে, দেখি ফুটে আছে ধুম্রফুল, পাতার সরণি

 

ডানা

তন্দ্রা-বালি জমা করে রাখি, আমার ঘুম থেকে রোদ উঠে যায়কোথায় সে অলীক স্বপ্ন চন্দ্রবোড়া সাপের গুহা খোলার চাবি

বিচ্ছিন্ন হবার আগে জোছনা তার গোপন অভিলাষ লিখে রাখে রথে

বরফ ছুঁতে গিয়ে আমি পাহাড়ের শীর্ষদেশ ছুঁয়ে ফেলি, তুষারের অরণ্যে মানুষের খুলি কুড়াই

নিসঙ্গ ঈগল, এখনো তার ডানা দিলো না...

 

চিনার বৃক্ষের দেশে

নিরাপদ কোন সরাইখানা নেই এই শহরে। চলে যাবো চিনার বৃক্ষের দেশে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়াবে পাথর আর তুষার আবৃত ঐ শৈলচূড়া ছুঁয়ে নেমে আসবে অবিরল জলের ধারা।

মেষপালকের স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসবে ভোর। মেরুন রঙের আপেলের ধীরে ধীরে নরম হওয়া নিয়ে বিভোর কাঠবিড়ালি ধূসর চুলের কোনো কাস্মীরী বালিকার নীল চোখে হারিয়ে যাবে অবলীলায়

ফিরবার পথে দেখে নিবো সেই চিনার গাছটিকে। সে কি জানে সবুজ থেকে হলুদ হতে হতে হলুদ থেকে লাল হতে হতে তার কতো পাতা ঝরে যায় সায়াহ্নের আগে!

 

জোনাকির নৈশকাল

আমাকে পড়ো এই রাত্রির দাবানল সৌরপথ মিল্কিওয়ে ব্ল্যাকহোল, অগ্নিস্রোতে ভাসমান ভলকানো এই ভিনগ্রহের বিপুল আশ্রয়এই সেই মায়ামী ভোর তুষারের পৃথিবীতে রোদের স্পর্শ পেয়ে পাখিদের গানে বুঁদ হয়ে থাকে

এখানে ঝর্নার স্রোতে কৃষ্ণচূড়ার গল্প জানা হয়ে যায়

বসন্ত চমকের মতো ফিরে আসে ভোর। রথ দেখাই মানুষের আসল অভিপ্রায়, সূর্য ডুবে গেলে সায়াহ্নের লালিমায় ফেলে আসা পথ কিছুক্ষণ রঙিন হয়ে থাকে। ঈষৎ অন্ধকারে উড়তে থাকা নিছক জোনাকি পোকা দেখে কখনো তাকে ঈশ্বরের আয়ু বলে ভ্রম হয়

এ জীবন এক আলো-উচ্ছল জোনাকির নৈশকাল!

চলে যাবার পরেও কিছু ধুম্রফুল পড়ে থাকে পথেঅন্ধ চোখে সব পথই লাচুঙ, শুধু  রোডোডেনড্রোনের তীব্র গন্ধ লেগে থাকে নাকে...