রাষ্ট্রের আত্মা ও অন্যান্য কবিতা
|| ক্রোধ ||
যখন রোদ এসে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো
আঘাতে বারাবার জাগাতে চেয়েছিলো
বিরাগ হয়ে তাই পর্দা টেনে দেই
কেন সে গায়ে পড়ে রূপকে দেখাবেই
জড় ও জড়োয়া যে জমেছে দুই হাতে
হঠাৎ একদিন মরেছি অপঘাতে
আছে কি ভূত বলে কিছু এ পৃথিবীতে
তবু তো ভূত হয়ে এসেছি এই শীতে
যদি বা রোদ এসে বাড়ায় ক্রোধটাকে
তবে সে ভূত আমি মারবো নিজ হাতে
|| রাষ্ট্রের আত্মা ||
কালি শুকিয়ে যায়
রাষ্ট্রের আত্মাও
তেমন শুকিয়ে যায়
আমাদের কলিজা
দিনদিন ছোট হয়ে আসে
যতবার তুমি কলিজা
বড় ক’রে সামনে দাঁড়ালে
ততবার কলিজায়
গুলির দাগ রচিত হলো
রুমের মধ্যে আটকা পড়া
ফড়িঙ যেমন ছটফট করে
তোমার আমার কলিজা
তেমন ছটফট করে
কালি শুকিয়ে যায়
রাষ্ট্রের আত্মাও
তেমন শুকিয়ে যায়
|| মাছগুলোকে দেখি না ||
আর মাছ বাজারের
পাশ দিয়ে যাই
তবে মাছগুলোকে দেখি না
শুধু দূর থেকে শুনি
বরফ বরফ
কাছে গেলে পাই
পানি আর পানি
তবে বাজারের আশেপাশে
মাছ-পরায়ণ কাউকে দেখি না
খোয়াজ খিজির
এবেলা আপনার শরণ চাই
দিশা দেন কোথায় সেই
মানুষের সমান লম্বা মাছ
দাঁড়ি আছে যার
আছে একপাটি দাঁত
সে মাছ হাসতেও জানে
আমাদের বৈঠকখানায়
তেমন মাছকে
দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবো
কথা দিচ্ছি বটি আর ছাই
নিয়ে কেউ থাকবে না
সেই বাড়িতে নাই
কোনো চুলা
প্রেমের আগুনেই
সব রান্না হবে
আর মাছ বাজারের
পাশ দিয়ে যাই
তবে মাছগুলোকে দেখি না
|| হে উড্ডীন পাখি ||
আমি কি এবার টাকার পাহাড়ের
নিচে চাপা পড়ে যাবো
টাকার মই বেয়ে উঠছি আর
বেখেয়ালে ফসকে গেলো পা
স্বপ্ন যদি হয়: এ-যাত্রায় বেঁচে যাবো?
টাকার পিছে ঘুরে ঘুরে একটা
গোলক ধাঁধাঁর পথে হারিয়ে গেলাম
এতো সর্পিল দুনিয়ায় কিভাবে এসেছি
সওয়ার হয়েছি খসখসে টাকার পিঠে
শেষ নাই এই টাকার জাহান
একবার একটা পাখিকে চাল
দিয়েছিলাম, আর তখন সে
বলেছিলো: তুমি অর্থশালী হবে
এরপর ঘুমিয়ে গেলাম, দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম
হাতে কড়া লাগানো চোখ বাঁধা
এপথ ওপথ ঘুরে এসেছি
একটা মরীচিকাময় প্রান্তরে
যেভাবে সামনে পানি আছে
পানি আছে বলে হাতছানি দেয়
সেরকম টাকা আছে টাকা আছে
গমগম শব্দে ভরে গেলো প্রান্তর
হে উড্ডীন পাখি পতনশীল আমাকে
যদি পারো উঠিয়ে নাও
তোমার অসীম ডানায়
|| পৃথিবীকে ||
তোমার প্রতিটি কণায় হাঁটবো
ছুঁয়ে দেখবো সবকিছু
হাত প্রসারিত করে যেভাবে
দূর থেকে আমরা দৌড়ে আসি
সেই আকুতি আর মায়া নিয়ে
জাপটে ধরবো
তোমাকে হৃদপিণ্ডের ভাঁজে
ওম দিয়ে রাখবো
রক্তের কণায়
জাগিয়ে তুলবো
শক্ত মুষ্টিতে তোমার
বুকের উপরেই হাত তুলবো
জড়িয়ে ধরবো যা আছে
কাছে আর দূরে
জড়িয়ে ধরবো তোমাকে
কবি আহমেদ নকীবের কবিতায় বৈভব আছে, তৈরি করতে পারেন মানসচিত্র।দৃশ্যকে কোথায় নিয়ে যায়, কোথায় দাঁড় করিয়ে রাখে কোন বন্দরে কিংবা কৌলিনালয়ে- তা খুব সচেতন পাঠক না হলে টের পাওয়া দায়। কবির- ক্রোধ, রাষ্ট্রের আত্না, পৃথিবী, মাছগুলো কে দেখি না, কবিতা গুলো পাঠে মনে হলো নির্মল পুড়ে যাওয়া একটি আত্নচিৎকার ফুঁসে ফুঁসে ওঠেছে।পাঠে তৃপ্ত, অসম্ভব সুন্দর মোহিত হয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি। কবির জন্য শুভকামনা।
ওসসান গণি
অক্টোবর ০৮, ২০২৪ ১২:০২
রাষ্ট্রের আত্মা কবিতাটা ভালো লেগেছে।
Rotho Rafi
অক্টোবর ০৭, ২০২৪ ২৩:১১