কয়েকটি নৈরাজ্যবাদী কবিতা

অ+ অ-

 

টুকরো কথা

নৈরাজ্যবাদ একটি রাজনৈতিক দর্শন। এটি পুঁজিবাদীকাঠামো, বিদ্যমান কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবরদস্তির বিলুপ্ত চায়। ঐতিহাসিকভাবে নৈরাজ্যবাদকে দূরবর্তী বাম কিংবা উদারপন্থি স্বাধীনতাকামী সমাজতন্ত্র নামে আখ্যা দেওয়া হয়। প্রাচীন গ্রিক শহরে আনারখিয়া কিংবা শাসকবিহীন সমাজকে নৈরাজ্য বলে ধরা হতো। কিন্তু আধুনিক যুগে রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নেইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ আর স্পেনের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে নৈরাজ্যবাদ হাত ধরাধরি করে চলেছে। বস্তুত যে কোনো কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রকাঠামো নৈরাজ্যবাদকে সহ্য করে না। তথায় নৈরাজ্যবাদকে অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়। মূলত নৈরাজ্যবাদের সৃষ্টি হয় বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নির্যাতন ও অধিকারহীনতা থেকে। নৈরাজ্যবাদীরা চায়স্বৈরাচারহীন ব্যক্তি-মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার মানে রাষ্ট্রের বিপরীতে সমাজ।

প্রশ্ন হলোশিল্প-সাহিত্যে নৈরাজ্যবাদ কি বিরাজ করে? প্রতিধ্বনিতে আমরা হাল আমলের কিছু নৈরাজ্যবাদী কবিতা উপস্থাপন করছি। কবিতায় দেখা যাবেরাষ্ট্র নয়, ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণের ভার তার নিজের। কর্তৃত্ব কাঠামোর বিপরীতে শব্দরা যুদ্ধ করছে মুক্তির নেশায়। চার্লস বুকোবস্কির কবিতায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন কর্তৃত্ববাদী সমাজের অন্দর মহলের চিত্র। যেখানে একদল নারী লড়াই করছে মাতাল স্বামীদের বিরুদ্ধে। ল্যাংস্টোন হিউজেসের কবিতায় আছে স্বপ্ন মরে যাওয়ার চিত্র। আর নিজেকে নিঃশেষ করবার বিষাদভরা চুম্বন। মায়া অ্যাঞ্জেলার কবিতার সুর যেন এক ষন্ত্রণাকাতর কাঠামোর চিত্র। আর গোলডিলেন ব্রুকসের কবিতায় আছে লড়াই করবার মওকা। যেখানে অধিকারের এক অদিগন্ত শপথ। যেখানে মুক্তির প্রশ্নে মৃত্যুই শেষ কথা নয়। প্রিয় পাঠক, কবিতার এই স্রোতধারাকে বোঝার জন্য প্রতিধ্বনি কয়েকটি কবিতা উপস্থাপন করছে।   

 

চার্লস বুকোবস্কি

ও চাঁদ ও তারা ও পৃথিবী

রাতে দীর্ঘ হাঁটা—
এটাই আত্মার জন্য ভালো:
জানালায় উঁকি দাও 
দেখো ক্লান্ত বঁধুরা
লড়াই করছে তাদের 
বিয়ার-পাগল স্বামীদের সঙ্গে।   

 

ল্যাংস্টোন হিউজেস

সুইসাইড নোট

ধীর,
নদীর শান্ত মুখ
বলল আমাকে একটা চুমো দিতে।

 

স্বপ্নগুলো

স্বপ্নগুলো শক্ত করে ধরো
কেননা যদি স্বপ্ন মরে যায় 
জীবন এক ডানা-ভাঙা পাখি
যে উড়তে পারে না।
স্বপ্নগুলো শক্ত করে ধরো
যদি কখনো স্বপ্ন চলে যায়
জীবন এক বিরাণ ভূমি
বরফে জমাট বাঁধা।

 

মায়া অ্যাঞ্জেলো

ইনসোমেনিক

কিছু রাত আছে যেমন 
ঘুমে ঢেউ খেলে,
দূরে আর ঘৃণা ভরে।
আর সব ছলেবলে
যা আমি জয়ের জন্য ধরি
সেই পরিষেবা আমার জন্য 
প্রহত অভিমানের মতো নিরর্থ
আর অনেক বেশি যন্ত্রণার।  

 

গোনডিলেন ব্রুকস

আমরা আসলে শান্ত

পুল খেলোয়াড়।
সাতটি সোনালী শাড়ল।

আমরা আসলে শান্ত, আমরা
ছেড়েছি ইশ্কুল, আমরা

লুকিয়েছি দূরে, আমরা
সোজা ধর্মঘটে, আমরা

গাইছি পাপ, আমরা 
বিরল ফাঁদ, আমরা

জুনের জাজ, আমরা
মরব সহসাই।  

 

ভূমিকা ও অনুবাদ: সাখাওয়াত টিপু