নাজওয়ান দারবিশের কবিতা

অ+ অ-

 

নাজওয়ান দারবিশ

সমকালীন আরব কবি নাজওয়ান দারবিশ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৮ সালে জেরুজালেমে। তিনি আরবি ভাষায় আটটি বই প্রকাশ করেছেন এবং তার কাজ বিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজি অনুবাদে তার সাম্প্রতিকতম বইটি হলো ক্রুশে ক্লান্ত’ [Exhausted on the Cross (NYRB Poets, 2021)]। নাজওয়ান দারবিশের কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন করিম জেমস আবু-জেইদ। তিনি আরব বিশ্বের লেখকদের মধ্যে অন্যতম অনুবাদক, যিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। প্রতিধ্বনিতে প্রকাশিত নাজওয়ান দারবিশের কবিতাগুলো Exhausted on the Cross বইয়ে অন্তর্ভুক্ত। কবিতাগুলো নেওয়া হলো ওয়ার্ল্ড লিটেরেচার টুডে থেকে।     

নাজওয়ান দারবিশ © ছবি: আরবলিট

 

আমি লিখি জমি

আমি লিখতে চাই জমি,
আমি শব্দগুলোকে চাই
যারা নিজেরাই জমি।
কিন্তু, আমি কেবলই রোমানদের খোদাই করা এক মূর্তি
আরবেরা যাকে ভুলেই গিয়েছে।
উপনিবেশকারীরা চুরি করেছে আমার কর্তিত হাত
আর টাঙিয়ে রেখেছে জাদুঘরে।
কিছুই যায় আসে না।
আমি এখনও লিখতে চাই—জমি।
আমার শব্দগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে,
আর নীরবতাই আমার গল্প।

 

গোলাগুলি থেমে গেছে

আগামীকাল তোমাকে চিনবে না কেউ।
গোলাগুলি থেমে গেছে
কেবল তোমার ভেতরটায় আবার শুরু হওয়ার জন্য।
দালান ভূপাতিত, দিগন্ত পুড়ে গেছে,
কেবল তোমার ভেতরে আগুনের শিখা জ্বালানোর জন্য,
যে শিখা এমনকি পাথরকেও গ্রাস করবে।

নিহতেরা ঘুমে ডুবে গেছে,
কিন্তু ঘুম কোনোদিন তোমাকে পাবে না খুঁজে।
জাগো চিরকালের জন্য—
জাগো যতক্ষণ না তারা বিচূর্ণ হচ্ছে, এসব বিশাল শিলা,
যাদের আমরা জানি ক্লান্ত দেবতার অশ্রুবিন্দু।

ক্ষমা ফুরিয়ে গেছে, এবং
দয়া রক্তাক্ত আজ সময়ের বহির্দেশে।
এখন তোমাকে চেনে না কেউই
এবং আগামীকালও চিনবে না কেউ।
তুমি—গাছের মতোই—
রোপিত হয়েছো সেখানে, যখন গোলা নিক্ষিপ্ত হচ্ছিল।

 

বিপন্ন নিঃশ্বাস

দুঃখ গড়িয়ে পড়ে রুমগুলো থেকে
যখন আমি ভুতের মতো তোমাদের পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর মধ্যে প্রবেশ করি,
আমার পরিণতিকে নিজ হাতে ধরে,
নিজ ধ্বংসের সাথে ঘুমাতে ঘুমাতে আর জেগে জেগে।
আমার নিজের জনশূন্যতার সাথে
এতদূর পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া,
এমন পরিবেশের সাথে পরিচিতি বড় হতাশাজনক।
এসব পরিত্যক্ত বাড়ি—এদের মূল্য অনেক,
এই পরিত্যাগ তোমার বাড়িকে ভরে রাখে।
আমি তাদের ফাঁপা হৃৎপিণ্ডে ঢুকে পড়ি
আর শ্বাস নিতে পারি বড় কষ্টে…

না আরব, না পার্সি, না বাইজেনটাইন—
এখন আমাকে কেউ করে না অনুভব।
আমার কি কোনোদিন ছিলো না ইতিহাস?
আর আমি পথ চলতে কিভাবে সেসব হারাই—
যে কবিতাগুলো একমুহূর্তে পৃথিবীকে ফুঁসে তুলেছিল?
আর কিভাবে তোমরা হারিয়ে গেলে, তোমরা সকলে?
আমার ক্ষতির অংশ তোমরা নিলে, আর
পেছনে ফেলে রেখে চলে গেলে
একটা পাঁজরবিহীন গ্রহ—
এটা তোমরা আমার জন্য ফেলে রেখে গেলে,
আমার ওপর বোঝাটা চাপানোর জন্য।

যদি বলতাম, আমি চলে যাচ্ছি,
তবুও এখানে কেউ থাকতো না,
কেবল বিসর্জন ছাড়া—তার কর্কষ কন্ঠের সাথে,
যা গিলে খাচ্ছে আমার নিজ কন্ঠস্বর।

অনুবাদ ও ভূমিকা  জিললুর রহমান