পতাকা লাগবে না ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

পতাকা লাগবে না

যার যার বাড়ির সামনেটা, চারপাশ
ঝাঁট দিন,
আবর্জনা জঞ্জাল দূর হোক
সাফ-সুতরো থাক চারপাশ। তা না,
আপনাদের একজন নেতাজী চাই
যে রক্ত চাইবে।

চুপ না-থেকে কথাটা বলুন, আপনার কথা
মুখ বুজে শুনে যাওয়াও সমর্থন, তা না
একজন মুখপাত্র চাই
যে কীনা সোচ্চারে জানাবে আপনার কথা।

পতাকা লাগবে না, পথে নেমে দাঁড়ান
দেখবেন, সামনে আপনিই
                         পথ দেখাচ্ছেন—
পেছনে অনুগামীর হাতে হাতে থাকবে
দাবিপত্র—পতাকা।

 

আয়নায় বিম্বিত মুখ

আয়নায় বিম্বিত মুখ কাছে দূরে দুই আঙ্গিকে
নিজেকেই চিনতে পারি না
দুই গালে চার আঙুল, দুই গালে দেখি 
                                কালশিটে—
কে মারলো, কখন, কেন, নাকি আমি নিজে! 
মনে তো পড়ে না। দাগ
ধ্রুব হয়ে আছে দুই গালে।

বেল্লিক আরশি থেকে দূরে সরে দেখি
কালশিটে সে-দাগ কোথায়!
মুখ দেখি ব্রণচিহ্নহীন অমল মসৃণ।
অজান্তেই গালে ওঠে হাত—
আয়নার একী পরিহাস !

প্রকল্প ছকে ফেলি, 
আয়না বদলাতে হবে যত দ্রুত পারি তো
                                        এখুনি।

 

চীর্ণা

|| উপলব্ধি

অনেকটা পথ হেঁটে সায়াহ্নের মুখে দেখা গেল
পথটি এগিয়ে গেছে আমাকেই পথে ফেলে রেখে।

|| সংসার

সুখি-মুখ দেখবো বলে, সুখি থাকবো বলে
কত কী-ই না করেছি সঞ্চয়—
তারা আজ আমাকে দেখে হাসে উপহাসে।

|| আত্মপ্রতিকৃতি

মানাতে, মানিয়ে নিতে নিতে
ভুলে গেছি আমারই আদল—
দেখি রোজ অচেনা আমাকে। 

 

নির্বোধ দর্শক এক

কি হয় কি হয় একটা টানটান চলেছে 
                                   থ্রিলার।
খানিক সময় দাও, ধীরেসুস্থে নেমে যাবে 
                                           জল।
জেগে উঠবে ঘরবাড়ি, ডুবে-থাকা ভাঙা.
                                      পথঘাট,
ব্যবসাপাতি রমরমা হবে ফের নতুন আবাদ।

রাজধর্মে ন্যায়ধর্মের জামা, জানো, ঠিক 
                                  ঠিক আঁটে না,
পরীক্ষার সাজেশান একশভাগ মেলেনি 
                                    এগজামে।
সবেরই হিসেব আছে ডাঁয়ে বাঁয়ে টানলেই
                                    হলো না—
কাপড়ের মাপ বুঝে ঢেকে-ঢুকে কিছু 
                               আলগা বাখা।

জীবনের চলচ্চিত্রে সোজাসাপ্টা নিদর্শ 
                                      অমিল।
গেল গেল শুনতে শুনতে তীরে ওঠে ডুবন্ত 
                                           মানুষ।
জামায় কালির ছিটে কোন মন্ত্রে হয় চিত্রময়
কোথায় অদৃশ্য হাত কাকে দেয় কোন 
                                    বরাভয়।

আদালত চলছে, শুনছি, হাতুড়ি কেমন 
                                     শব্দময়।

 

কোন অভিমুখে দাঁড়িয়ে

জীবনের অভিমুখ যাদের আছে, তাদের
নিজের জীবন নেই।
আমার যেমন পক্ষীজীবন
উদয়াস্ত দানা খুঁটে যাই।

আনন্দই জীবন যার, আনন্দ সে দিয়ে যায়
                                              শুধু।
আনন্দে থাকে নাকি?
আমি তো জানি না, শুধু অংশভাক—
অংশক হইনি কখনও তো!

দুঃখের ভিতরে যার প্রিয় ঘর-বাড়ি
দুঃখব্রতী হয়ে খোঁজে সারাৎসার
দূর থেকে হিমালয় শীর্ষ দেখতে পারি—
তার কাছে কী অস্তিত্ব আমার!