ভেসে থাকার মন্ত্র ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

ভুল পথে বহুদূর 

ভুল পথে হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে এলাম
একবারও ভাবিনি পথ নিয়ে, পথের বিপদ নিয়ে 
সমস্যায় সংকটে বহুবার দীর্ণ হয়েছি,
তবু আমার পথ পথই।
কোনো আঘাত কোনো ক্ষয়ই আমাকে 
ভয় পাওয়াইনি, হাঁটার আনন্দে হেঁটেছি। 
ভুল পথে বহুদূর হাঁটবার পর
এখন দেখছি রাস্তা মসৃণ নয়,
অনেক গর্ত, অনেক খোঁদল 
আমাকে কেউ যেন জামা ধরে 
পিছনে টানছে : আর এগিও না
আর এগিও না। 
হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে এসেছি, এখন 
হিতৈষীর সাবধানবাণী, কী করব
বুঝতে বুঝতে পথের উপর সন্ধ্যা 
নেমে এলো। 

 

ভেসে থাকার মন্ত্র

সব দেখে শুনে দিনের পর দিন 
সংসারের ঘোলা জলে ভেসে আছ
হাত নড়ছে পা নড়ছে 
তবু মাথা ডোবাচ্ছ না 
জলের গভীরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই তোমার নেই 
যদি আবর্ত তোমাকে টানে, টেনে নিয়ে যায়, 
যদি আরও পাঁকে পা জড়িয়ে যায় 
তা হলে? 
তা হলে ভেসে থাকাই ভালো 
জলেও নামব কিন্তু বেণী ভিজবে না 
সংসারের আগুন তার লেলিহান তাপ
গায়ে লাগবে না
সেইজন্য এখন প্রতিদিনই ভেসে থাকার মন্ত্র জপ করছি, 
ফলও পাচ্ছি হাতে হাতে। 


একটি প্রেমের কবিতা 

অন্ধকারে সেদিন ভালো করে অবয়ব 
দেখতে পেলাম না। শুধু গুনগুন করে
 রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান গাইছিলে, তারই
সুর আর মদিরতা ছড়িয়ে রইল
সারা ঘর জুড়ে।
মুখ দেখতে পেলাম না, তবে তোমার মুখের আলোয় 
মনের অন্ধকার অনেকখানি কেটে গেল।
মুক্তমনে, খুব সহজভাবে একটি 
প্রেমের কবিতা লিখে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম।
চোখ থেকেও আমার সার্থকতা তুমি
দেখতে পেলে না।

 

মহাজাগতিক 

কতকাল থেকে শুনছি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে 
মানুষ থাকবে না 
গাছপালা থাকবে না 
জীবজন্তু থাকবে না 
পুকুর খালবিল নদী নালা সমুদ্র 
কিছুই থাকবে না, সব শুকিয়ে যাবে অথবা 
মহাপ্লাবনে পৃথিবী প্লাবিত হয়ে 
শেষপর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে 
মহাজাগতিক সংঘর্ষে সব কিছু 
ধ্বংস হয়ে যাবে, বিস্ফোরণের অভিঘাতে
আমরা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাব
কেউ আমরা জীবিত থাকব না।

আবার হয়তো এই ধ্বংসলীলার উপরে 
নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হবে 
মহাজাগতিক সেই খেয়ালখুশির জন্য 
আমরা অপেক্ষা করছি।