আলো ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

|| আলো ||

কী-ই নিয়ে বসেছিস বল?

সওয়ারী তো কেউ নেই—ওরে কেউ আর ফিরবে না ঘরে!
কার লাগি আশরীর, তোর এ ভূমধ্য-শরীর নিয়ে বসেছিস সমুদ্রের পাড়ে?

অহমিকা ভেসে রয়েছে দেখ
দেখ তোর এলোচুলগুলি

কেউ যে ছোঁবে না তোর নাতিশীতোষ্ণ নাভিমূল
চুমু খেতে খেতে
যোনিপথ জঙ্ঘা খুলে ধরবে না আর কারো ঠোঁট!

জবাফুল নয় তুই
তবু
বসেই যে আছিস এই বেবুশ্যে ভরা বাজারে
সাদা মুগ্ধ নারীরা সব খুলে ছিঁড়ে নিচ্ছে দুনয়ন
বলছে সবাই হেসে— আর বাচ্চা বিয়োবি না তুই

কারণ
বিধবা তুই
তোর লালারস থাকতে নেই!

আমি কি বলেছি বলতো ফিরে আসা পথের রেখাকে?
বলেছি, আবার ঐ, আবার আবার ঐ বিধবাটি যেন প্রেমে পড়ে

 

|| বিজন ভট্টাচার্য ||

অনুশীলন করছে কে
একা একা ছায়ানুশীলন
তাকে ডাকো
সে দেখুক আমার দুঃখের বর্ণাঢ্য মিছিল

থার্ড উইং দিয়ে নয়—

আহঃ! কেন আমি রোজ ভুল করি?

কেন সুরক্ষাচক্রের হাসি আমাকে হাসায় না দানবীয় দারিদ্র্যে!

আমি সাধারণ
আমি ভালোবাসি
নিজের নিরিখে আমি দাঁড়িয়েছি শিরদাঁড়া টান

এসো
দেখো আমার কোনও ব্যথা নেই
পি.এফ. গ্র্যাচুইটিহীন থিয়েটারের একলব্য
আমার কান্না কেউ স্পনসর করেনি কোনোদিন!

 

|| সারদা: সাত ||

অক্ষয় হোক এই রাত্রি, বর্ণপরিচয়
গোধূলির কাল থেকে অশথগাছের ছায়া পড়ে আছে
গঙ্গার ছলাৎ ছলাৎ
ঢেউ উঠছে প্রাণময় সংসারে

আঁচল বিছিয়েছে কে
নিস্তব্ধ আলোয় ছলছল করছে নয়ন

আজ পুত্র চলে গেছে
দাহ শেষে ফিরেছে সন্ন্যাসী
অপলক চেয়ে আছে আগুনের অমিয় উৎসব

চোখ ভেসে যাচ্ছে কার, চোখ ভেসে যাচ্ছে ওগো কালী
কেন তুমি কেড়ে নিলে বহ্নিশিখার মতো ছেলে
মোটা ভাত, বিউলির ডাল, ঝিঙের তরকারি—
এ-ই তো আহুতি ছিল তার

কেড়ে নেওয়া খুব দরকার?

অক্ষয়রাত্রি আজ নীরব মায়ের কোলে শোয়
পীযূষের ধারা দিয়ে সারদা তার মুখাগ্নি করে

 

|| কালী: দুই ||

তাহলে তোমার কাছে কিছু সত্য নয় মাল্যবান?

যে নিবিড় তুলতুলে ঘাসের প্রান্তরে
হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলাম
সেই হাতে অশ্রু ছিল না?

ধানক্ষেত ধানক্ষেত বলো
তুমি যে সাক্ষী ছিলে নিরবধি আলো
আলো তার নয়নে লাগল, আমার আঁখিতে জল এল
ধানক্ষেত দুলে দুলে শিশু হয়ে পা জড়িয়ে ধরে

বলে—
“কেন চলে গেলে
 কেন মাগো, কেন ভেসে গেলে এই অনন্তর তীব্র লোকালয়ে!”

হোরিখেলা একা কালভার্ট পড়ে আছে
পড়ে আছে বিকেলের হাওয়া
তোমার যাওয়ার পথে নুয়ে আছে আমার আখর

শীতল শীতল গ্রামঘর
ফিরে যাচ্ছে কৃষক সমাপনে
ফিরে যায় ঘরের ছায়ায়
মাদুরে আকাশ পেতে বসে, মাদুরের খুব নীলপাড়
যন্ত্রণা দিয়ে বোনা মাদুরের অন্ধ অধিকার

মুড়ি খায় মানুষেরা বসে, বাতাসায় মুখ রাখে পথিক
জল গড়িয়ে দিল দেখো, দেখো এক বিনম্র মেয়ে
তার পানে চেয়ে স্মৃতির তূণীর থেকে তির ছুটে আসে
চোখে বেঁধে
রক্ত গড়ায়

ওরে আয় আয় আয় নৃমুণ্ডমালিনী আমার
ভাসা এ প্রবীণ শিহরণ
ভেঙে দিয়ে যা এই বেলোয়ার অমৃত জগৎ

তুই যে আধার মোর
তুই শিরা, তুই সূর্যোদয়

আমাকে ভোরের সাজে গড়ে তোল তোর মহিমায়