লাশেরও কিছু বলার আছে ও অন্যান্য কবিতা

|| লাশেরও কিছু বলার আছে ||
অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পড়ে থাকা লাশ শুধু লাশ নয়।
‘চাপ দিবেন না, হাঁড় নেই’ এমন মাথায়ও কথা থাকে!
সফরের হিম অগ্নিশিখা থেকে আসা নাবিক
বেকায়াদায় শুয়ে থাকা জীবনের আগুন—
এক ট্রিগারে খাঁ খাঁ করে নিরবচ্ছিন্ন বিরানভূমি।
জলে থেকেও শুকিয়ে যায় স্বপ্ন স্বজন সংসার।
চাঁদের আলোয় দেখি লাশ, পরিবার দেখে অন্ধকার!
বরফ জল ধীরে ধীরে চূর্ণ করে গোলক,
সীমার সঙ্গে মিলে যায় অসীম অহংকার।
শোকার্ত অন্তর হয় নীল। বিদ্যুৎ গতিতে সমুদ্র সবর্নাশ।
নিয়তি মানে না বারণ, জন্ম মৃত্যু নিয়তিই তেমন...
অসহায় দূর্বাঘাস, মাড়িয়ে যায় সকাল দুপুর—
দলিত গোলাপ চিৎকার করে নিদারুণ ব্যথায়।
হে স্বাধীনতা
আমি বনের পাখি—মনে কিছু বলার ছিল।
|| রক্তের উপর ফ্যাসিবাদ দীর্ঘ হয় না ||
সকালে গণতন্ত্র এসেছিল
আমার ঘুম ভাঙতে দেরি হওয়ায়
স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়ে কার্ফুঠোঁটে চলে যায়।
সে থেকে আমি আমরা—মনাগুনে পুড়ি।
মানুষের পাশাপাশি সবুজ গুল্মলতা—
পাখিদের প্রার্থনা, গোলাপের সভা-সেমিনার
মিলাদ মাহফিল—চলতে থাকে কৃষকধ্যান।
দলান্ধ প্রেসক্লাবে মানববন্ধন, কোর্টে বৈষম্যবিরোধী দুপুর।
হতাশ জীবনানন্দ—আশাহীন নজরুল
রক্তের উপর ক্ষমতা, মস্তকহীন মৃত পা,
দম্ভ মাড়াতে টানটান তারুণ্যের শিড়দাঁড়া—
সন্ধ্যার আগে বিকেল জানায়—
রক্তের উপর ফ্যাসিবাদ দীর্ঘ হয় না!
|| ‘দুনিয়া ছেড়ে’ গেছে ||
তুমি চলে যাবার পর
চেয়ে ছিলাম—যে পথে উজান সময়
খাঁ খাঁ প্রান্তর—স্কুলে ভেজা চোখ
শুকনো ঠোঁটের দোলাচল মন খারাপের ক্লাস।
সইতে পারি না বিরহ জ্বালা
অব্যক্ত ব্যথায় আসে না কথা
এতোটা নীরব করে গেলে—
মনে হয় ‘দুনিয়া ছেড়ে’ গেছে আমায়।
|| কতটা অন্ধকার হলে আলো হারায় ||
প্রাণহারা সবুজ দেশ। জবাবহীন শহরে বাস—
কেউ কাউকে প্রশ্ন করে না, হতাশ রাজ্যে ক্ষমা পায় না কবি।
সাইরেন বাজলেও নড়ে না, ভাবিয়ে তোলে না কৃতদাসের আঘাত।
পোষমানা কুকুরের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির অঙ্গার—পরিত্যক্ত শহর।
নাম হৃদয়—পাথরের গরিমায় বাতাসে আড়াল করে হাসি!
নরক ঘুমে হারায় নরম বিকেল। বাশির সুর—ছুটির ঘণ্টা—
পাখির ডাকে দেয় না শরীর সাড়া—জাগে না ঘরে শিহরণ,
এভাবে অনুভূতি অনুভোঁতা হতে হতে সন্ধ্যার কোলে ঢলে পড়ে দুপুর।
সাদা মেঘ—করোটিতে রোদ—নদী খাচ্ছে সরকার—
ঘন অন্ধকার হলে আলো হারায়—কতটা নিষ্ঠুরতায় রাষ্ট্র হয় ইসরাইল!
নোট: ইমরান মাহফুজের কবিতাগুলো নেওয়া হয়েছে প্রকাশিতব্য ‘আড়ালে পতনের উৎসব’ কাব্যগ্রন্থ থেকে। বইটি প্রকাশ করেছে ‘জ্ঞানকোষ প্রকাশনী’।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন