অদ্ভুতুড়েদের যেদিন হামলা হল ও অন্যান্য কবিতা
রসকলি শুকিয়ে যাবার আগেই
যাদের জীবনকথা ফুরোতেই চায় না
তাদের জন্যে
অধোমুখে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
এতখানি বেঁচে থাকার কোন মানে হয়!
এত তান্ডব-কলহ কী করে যে
সহ্য করে তারা?
বছরের পর বছর হয়তো খরা-বৃষ্টি গেছে
চাষবাস হয়নি—
তার মধ্যে এতদিন ধরে বেঁচে থাকা!
একটা ঝোলা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখি আমি,
যেন নাক জোড়া রসকলি
শুকিয়ে যাবার আগেই
প্রস্তুত হয়ে নিতে পারি।
নিজেই জানি না
বিতর্কের মধ্যে যেতে চাইছি না কেন!
নিদারুণ আর লম্বা অভিজ্ঞতায়
এত যে ভেতরের গল্প
ভেতরের ভেতরের গল্প
জেনে ফেলেছি
সে সব বলে দিচ্ছি না কেন!
পাণ্ডুলিপি অবস্থায় ফেলে রেখে রেখে
সব কিছু জীর্ণ হয়ে যাচ্ছে—
আমি নিজে সেটা বুঝতে চাইছি না কেন!
ওদের কাছে আমি তো কিছু চাই না—
তবে কেন ওদের মুখগুলি
রেখে-ঢেকে সময়কে লম্বা করে দিচ্ছি!
পঞ্চাশ বছর পরে
ভাঁজ খুলে খুলে ক্লান্ত হয়ে যাই
একটি অদম্য শালের—
শেষ পর্যন্ত গায়ে দিয়ে রাস্তায় বেরোই।
ক্যামাক স্ট্রিট থেকে পার্ক স্ট্রিটে আসতে
কতবার কাঁধ থেকে রাস্তায় লুটোতে চায়
এই জেদি শাল!
এ শাল আমার নয়,
আমার বাবার।
পায়ে পায়ে হেঁটে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে
এসেছি কি আসিনি তখনও—
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাই।
ঘেমেনেয়ে ফের ক্লান্ত হই,
বুঝতে পারি, আমার বাবার মতো
হইনি এখনও।
আবার ফিরে আসতে হয়
নিজের আশ্রয়ে।
ফিরে ভাঁজে ভাঁজে মেলাতে চেষ্টা করি
সেই অদ্ভুত শাল।
এখন পঞ্চাশ বছরের পর
সেই শালে নিজেই আশ্রয় নিই নিশ্চিন্ত আবেগে।
অদ্ভুতুড়েদের যেদিন হামলা হল
আমাদের সংসারে হুড়োতাড়া নেই—
আসলে কারও কোন কাজ নেই,
যখন আমরা দল বেঁধে কাঁদি
তখনই যা একটু কাজকম্ম হয়।
আমাদের রাত্রিগুলো বিস্ফারিত হয়
শুধু গানে গানে।
আমাদের প্রিয় গান
'আর কেউ আসবে না...'
অদ্ভুতুড়েদের যেদিন হামলা হল
আমাদের ঘরে
সেদিনই যা ব্যস্ততা ছিল আমাদের
নানারকমের কাজ শিখেছিলাম আমরা।
হঠাৎ বদল ঘটে
শাল গাছের পাশে দাঁড়ালেই
নিজেকে ইঁদুর মনে হয়।
ইঁদুরই তো।
সর্বক্ষণ অন্যের অনিষ্ট করি
কেটে দিই অন্যদের ভাগ্যের সুতো
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে সর্বনাশ করি অন্যের ভিটের।
শালের পাশে দাঁড়াব ভাগ্যি কি আমার!
তবুও দাঁড়াই
হাত রাখি গম্ভীর কাণ্ডে
ভেতরে ভেতরে ত্যাগ করি ইঁদুর-জীবন।
এঁকাবেঁকা লেজ ছেড়ে সোজাসাপটা
গান গাই আমি।
হঠাৎ বদল ঘটে জীবনে আমার।
তাপস ওঝা তার কবিতার ভিতর দিয়েএক আশ্চর্য দুঃখবোধের জগতের সন্ধান করেন কিংবা আমাদেরও সেই বিমূর্ত জগতের দিকে তার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যেতে থাকেন যা আমাদের সামনে নতুন এক মূর্ত জগতের দিশা দেয় একই সাথে কবিও আমাদের মনেএক বিচি্ত্র সুখআর দু:খের সহমিলনের অনুরনন ঘটায়।অনেক কবির লেখায় যা আমাদের এক কষ্টকর গভীর দার্শনিক আর গানিতিক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেতে হয় এখানে কবি আমাদের সেরকম কষ্টের অভিজ্ঞতা না দিয়ে স্বাভাবিক অনুভুতিতে নাড়া দিয়েই সফলতা লাভ করেন।
মিজান খান
নভেম্বর ০৩, ২০২৩ ১৪:৪৬