বন মানুষের দেশে ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

হারানো জঙ্গলে

জঙ্গলে যাওয়ার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি—
পাখিদের অনুসরণ করে এতদূর এসে দেখি
এখানে সব দালান, মানুষে ভরা।

আমি সেই দালানের একটিতে উঠলাম
ছাদে এসে দাঁড়ালাম, আকাশ বলে যে
দৃশ্যটি দেখি, সেখানে ঝিঁঝিদের কান্না।

কোথাও একটি পাহাড় নেই, সবই রিসোর্ট
কোথাও একটি নদী নেই, সবই সুইমিংপুল
এ কোন দেশে এলাম, চারদিকে ধোঁয়া।

সেই ধোঁয়ার মাঝে একটি মাছ হেঁটে গেল
শরীরে হরিণের শিং, বাঘের ডোরাকাটা
ভাবলাম জঙ্গল, লোকে বলে—যাতনা।

 

পাতা ঝরার কালে

পাতা ঝরার কালে—
তোমাকে দেখেছি কোকিল, ডালে
সেই দৃশ্যতে আটকে পড়ে আছি।

যেন এক কোটি কাল।

এমন বসন্ত যায়, যার কাছে যাই
একটু শান্ত হওয়ার লোভে
আগুন হাতে আমাকে সে শাসায়।

বলে, ‘কুঁড়ে ও বদলোক’।

অথচ, আমার চোখ পুড়ে যায়
বুড়ো পাতা ঝরার দিনে
সেই দৃশ্য এক বর্ণাতীত ফাঁদ।

আঁতকে উঠি ভাষার অভাবে।


বন মানুষের দেশে

বন মানুষের দেশে এসেছি
বাঘের মাংস দিয়ে ডিনার 
সেরে বসলাম আগুনের পাশে
হাতে মদিরা, চোখে নেশা।

এখানে এই নিয়ম—
খাওয়ার আগে নাচ আর 
খাওয়ার পরে গলা খোলা গান
নারী ও পুরুষে ভেদাভেদ নেই।

বিভেদ অবশ্য আছে, কোথায় নেই!
বাঘ নাকি সিংহ—কে বেশি সুস্বাদু
এ নিয়ে লাগে প্রায়
সভা বসে, গোত্রপ্রধান সমাধান দেন—
সব নষ্টের মূলে দায়ী মূলত হরিণ।

এখানে জীবন নিয়ে খুব মাথাব্যথা নেই
শিকার না পেলে সবাই গাছের পাতা খায়
স্কুল নেই, এনজিও-শূন্য, কিস্তি দিতে হয় না
সভ্যতা বলতে—পাথর ঘষা আগুন।

সেই আগুনের পাশে বসে আছি—
মানুষের দুনিয়া থেকে অনেক দূরের
আমরা কয়েকজন বন মানুষ।


দৃশ্য

সব দৃশ্যই মুহূর্তের—
রেলক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল
তেমন একটি মুখ
যেন গত শতাব্দীর।

অনেকদিন কথা না হলে প্রতিটি
দৃশ্য এমনকি স্মৃতিকেও মনে হয়
কাল্পনিক, মুহূর্তের এবং, এবং 
ভাষাহীন এক কুয়ো
ডাক দিলে প্রতিধ্বনি ছাড়া 
আর কিছুই ফিরিয়ে দেয় না।

তবু মুহূর্তের কিছু দৃশ্যতেই
সবাই আটকে থাকে
বোতাম যেমন শার্টে
পাতার গায়ে যেমন বাতাস
আর রিকশার দিকে চোখ।