ব্ল্যাককফির চিহ্ন ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

নিখিল অসুখ 

রক্তলিখন থেকে বসন্ত ঝরে যায় 
মসৃণ মায়াজাল উড়ছে ভোরে 
ভোরবেলা পথঘাট দু’হাতে ডাকে
আর আমি প্রতিদিন গণিকা বেশে 
পথের ধারে এসে দাঁড়িয়ে থাকি 
মন্ত্রের ঊর্ধ্বশ্বাস দামামা বাজায় 
পথিকের  চোখে চোখ রেখে 
শাসন করতে চাই নিখিল অসুখ

সৌরবিন্দু থেকে সরে যাওয়া মুখ
মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়, তবু দূর 
করতালি বাজিয়ে জানিয়ে যায়
অ্যাংলো অ্যাপোলোরা খুঁজে ফেরে  
আদিবাসী নারী ও নগ্নতার ছবি 
যেখানে অন্ধরাত্রি এসে বাজায় বসে 
অতল সাক্সোফোন এই গণিকা দেহে  


পিয়ানো ক্যাফে-বার  

পিয়ানো ক্যাফে-বারে কেটে যায় বেলা
এবার পান্থশালায় রাত্রি যাপন হবে
মেহগনি তক্তপোশে নির্জন আলিঙ্গনে 
কাটাব সারারাত নেশা ও পিয়ানো-ঘোরে 

প্রজ্ঞা ও প্রতিভা জড়িয়ে আসে ঝিমঝিম স্বরে 
সরাইখানার দরজা খুলে কেউ দাঁড়ায় কুয়াশা ভোরে
আবছা লাগছে সব, চিনে নেবার নেই প্রয়োজন 
অথচ সে কিনা
ভালো আছো তো তুমি—বলেই বাড়াল দু’হাত
মাথা তুলে তাকাবার সামান্যই অবকাশ 
টলছি সৌর-সুরে নিমগ্ন অন্ত-ঘোরে
আমার কি ভুল হলো শুনতে বা চিনে নেবার!


উন্মাদ সহবাস 

প্রেম, কোনো এক জ্যোৎস্না-বিদ্ধ তরণি
চলো তা থেকে চট জলদি নেমে পড়ি
যাই দূর কোনো নাক্ষত্রিক আকাশের নিচে
দুহাত উপরে তুলে দুলে দুলে খুব নাচি 

প্রেম, জন্ম চুমুর আদি-অন্তে বৃষ্টিকালের ফণা 
তর্জনী তোলা ক্ষত-বিক্ষত প্রাচীন উত্তরীয়
জড়িয়ে নিচ্ছি, উড়িয়ে দিচ্ছি প্রকম্পিত নেশা
মহাবিশ্বের নাম ধরে কেউ ডাকছে বারবার 

প্রেম, কোনো এক জ্যোৎস্না-বিদ্ধ তরণি
চলো তা থেকে চট জলদি নেমে পড়ি
তৈরি করি নিঃসীম রঙিন নিশ্বাস কিংবা 
বিশ্বমাত্রা মদির কাফেলা, উন্মাদ সহবাস!


ব্ল্যাককফির চিহ্ন

একটি গরম ব্ল্যাককফি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছি, ধোঁয়া উড়ছে
প্রতিটি চুমুক মনে করিয়ে দিচ্ছে সেইসব মৃদঙ্গ মাখা দিন ও
চারপাশে রাতগুলো, ভুল ছিল
চকচকে ক্যাফেইন মোড়ানো নিখুঁত চুমু টলটলে কফির ভিতর
দুলে দুলে গান গাইছে, তাতে চুমুক দিতে দিতে নির্জন চোখে 
গভীর কিছু খুঁজেছি, ভুল ছিল
ত্রিমাত্রিক জীবনের হুলুস্থুল সিঁড়ি পেরুনোর আগেই ফুরিয়ে যায়
তোমার চিবুকের ভাঁজে ব্ল্যাককফি দিয়ে একটি চিহ্ন এঁকেছিলাম 
যেন হারিয়ে না-যাও, ভুল ছিল!


তারপরও জড়িয়ে থাকা

বহুবার সমুদ্রে গেছি, সমুদ্র যায়নি কোথাও
একটা জেদিচোখ আগুন ঢেলে বলে, এ-কেমন কথা
তিনি কি একবারও আসবেন না, শুধু তুমিই যাবে 
কী তার অহংকার এত!
মাথা ঝাঁকাই, বলি, তাইতো তাইতো

আজকাল
তার সাথে বনিবনা হয় না, তবুও তাকেই চাই কাছে
পাতাল থেকে একরাশ শব্দ একঝাঁক পায়রা হয়ে ওড়ে
তার সাথে বনিবনা হয় না, তবু তারই কাছে যাই
দিনমান একা একা আগুনের গোলক বানাই
ছুঁড়ে দেবো কিনা তার দিকে—ভাবতে থাকি 
সেসময় প্রগাঢ় বেশে সন্ন্যাসী এসে
থামিয়ে দিয়ে যায় মুহূর্তের অস্থির রণন
তারপর
শিলাবৃষ্টি, টুকিটাকি, আড়মোড়া ভাঙা 
তারপর জড়িয়ে থাকা, টানা 
বারবার সমুদ্রে যাই
সে কিন্তু আসে না!