নতুন মানুষের পুঁথি ও অন্যান্য কবিতা
ভাষা
বিদেশে অচেনা ভাষার কাছে
বোবা হয়ে বসে থাকতেছিলাম
তখন একটা কুকুর ডেকে উঠলেন
মনে হলো কুকুরটি পরিচিত, তার ভাষা আমি জানি
পাখি ডেকে উঠলেন
মনে হলো পাখিটি পরিচিত, তার ভাষা আমি জানি
দেশভেদে পাখির কুকুরের ভাষা এক
কারণ দেশগুলো তারা বানায়নি
মানুষের ভাষা অনেক
কারণ মানুষই জন্ম দিয়েছে দেশ
মানুষ এমন জীব যার মায়ের ভাষার সাথে সন্তানের
ভাষার মিল থাকে না, অমিল থাকে
ফলে মানুষ কেউ কাউকে চিনতে পারে না
ভাষার পোশাকের ভিতরে বসে তারা
একা একা মরে, পচে গলে যায়
কেউ তবু কাউকে বুঝতে পারে না
বুঝতে পারে না বলেই তারা রাষ্ট্র বানায়
রাষ্ট্র সেনাবাহিনী বানায়
সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ নেয় হত্যার
মানুষই একমাত্র প্রাণী এই মহাবিশ্বে
যারা নিজের জাতভাইকে খুন করে আনন্দ পায়
মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা নিজের জাতভাই নিঃস্ব করে, ক্ষুধার্ত রেখে
আনন্দে গান গায়
মানুষ গান গাইলে তাই পাখিরা
মানুষের দেশে আর বিদেশে বিষ্ঠা ফেলতে ফেলতে
উড়ে যায় গভীর আকাশে
নতুন মানুষের পুঁথি
মাটির খুব কাছে
মাটি দিয়ে গড়ে নিও সংসার।
আর পৃথিবীর সাথে
জোনাকির মতো করো ব্যবহার।
মাটিকে মাটির মতো রেখো উর্বর।
শস্যের কাছে যেয়ো আনত হয়ে
নগর রাষ্ট্র নয়, গ্রাম দিয়ে ভরে দিও
পৃথিবীর উদর।
সকলে সমান থেকো : কবর-পরিমাণ
হত্যা করো না ভ্রূণ, মানব সন্তান।
তোমারই এ আকাশ, চাঁদ, সূর্য, ছায়াপথ—
অন্তরে বুঝে নিও বিপুল সম্পদ।
নিজেরে ভেবো না গরিব, দরিদ্র দীনহীন
পৃথিবীর সৌন্দর্যে আরো কিছু সুন্দর মেশায়ে
শোধ করে যেয়ো এই জন্মের ঋণ।
পাখিরে উড়তে দিও, ফুলকে ফুটতে।
খাঁচা নয়, চিড়িয়াখানা নয়,
সবার থাকতে দিও ঘরে আপনার।
অস্ত্র নয়, শস্ত্র নয়, সকলের তরে
অন্তরে গড়ে নিও প্রেমের খামার।
.
মাটির পিরিচে খেয়ো, খেয়ো পাতার পিরিচে।
সকলে কৃষক হয়ো,
কৃষিকাজ শিখে নিও আপন গরজে।
স্নানের দরকারে নদীর শরণার্থী হয়ো
সৌরভ দরকার হলে যেয়ো ফুলবনে।
দুঃখ যদি আসে, কেঁদে ভিজিয়ে দিও দেহ তার
গান গেয়ে চিনে নিও নিজের প্রকার।
রচনা করে যেয়ো লিপি, অমৃত বচন।
সে বচনে জয় করিও সবার অন্তর
পৃথিবীরে ফুল ভেবে হয়ো মধুকর
আরো যত পশু, যত জীব-উদ্ভিদ
সবারে ভাবিও বন্ধু, ভাবিও সহোদর।
এই হেমন্তের অমাবস্যায়
‘মরে যাওয়া পাখিরে কেন
ভালোবাসা যাবে না?―এই জীবন-জিজ্ঞাসা নিয়ে
তুমি বেশিদূর যেতে পারবে না’—বলে মুচকি হেসে
গাড়িতে উঠে গিয়েছিলো যে-নবীন জবাফুলের গাছটি
আমি তারে নতুন জীবন-জিজ্ঞাসা হিসেবে
লিখে রাখার পরিবর্তে
বাতাস থেকে একটা শিশিরভেজা গান কুড়িয়ে
জোনাকিদের নিজস্ব গ্রামে ঢুকে পড়ি
গানটি নীল হয়ে হুবহু একটা জোনাকিপোকার
ছোটোবোন হয়ে গেলে
আমি তারে গাইবার পারমিশন চেয়ে
মানুষ হওয়ার অপরাধে
গাইতে না পারার
দুঃখে
‘মরে যাওয়া পাখিরে কেন ভালোবাসা যাবে না’—
এই জীবন-জিজ্ঞাসারে একটা নদীর মতো এঁকে নিয়ে
তার ভিতর আমার গোসল করার দৃশ্য
আঁকবো বলে
রঙ আনতে চলেছি
আকাশে
রঙধনু কোথায়
এই হেমন্তের অমাবস্যায়!
ভালো লাগলো
ওসমান গণি
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১৪:০৫
চমৎকার
জমাতুল ইসলাম পরাগ
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১৬:১৬
ভালো লাগলো
ওসমান গণি
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১৪:০৪