গণপ্রজাতন্ত্র ও অন্যান্য কবিতা
অরূপকথা
বৃদ্ধাশ্রমে থাকা একেকটা মানুষ যেন ভাঙা পরিত্যক্ত মন্দির
জল-জংলার সেই মন্দিরে আর সন্ধ্যাবাতি জ্বলে না,
দুয়ার নেই অক্ষমুণ্ডি নেই, জোটে না অশ্রুজবা কী নৈবেদ্য,
মহাকাল এসেও দাঁড়ান না ভিখারির বেশে
যদিও এককালে আলেখ্য ছিল, শিঞ্জিনী, তাৎপর্য ছিল
এখন সব স্টাফড, পিয়েতার প্যাথসের মতো দীর্ঘতম
মরুভূমির তবু কাঁটাঝোপ থাকে,
সংসারে বাড়তি মানুষকে বিষের ছায়াও ছেড়ে যায়
গণপ্রজাতন্ত্র
রাষ্ট্রকে আমার রাজা কিং লিয়ার মনে হয়
যে মূলত সীসাচিহ্নিত মানুষজনকে পছন্দ করে
তারা একেকজন যেন গলিত অলর্ক, নরকে মগ্ন ঘুঙুর
আর আমরা মাসপিপল করডেলিয়ার পুনর্জন্ম বয়ে চলেছি
আচাভো
টিনের খেলনা স্টিমার ছেড়ে দিয়েছি তোমার তলপেটে
সেখানি নাকি দু’জোড়া সাদা বাঘ, ছন্দোবদ্ধ প্রাচীন হিস্পানিক কবিতা
আর মোমবাতি ঘিরে ক্রন্দনরত লুসিফারের প্রেমীরা
তোমায় বাঁচাতে চাইছে,
মেগালিথিক এক হরিণপাথর হয়ে ওঠার আশংকা থেকে!
তোমার তলপেটে মূলত চাঁদের কবর খুঁড়ে চলেছি আমি
অথচ উৎকেন্দ্রিক বাঙালি কবিরা রটালেন,
ঠিক আমার মতো দেখতে এক আচাভো
তোমার সমস্ত শরীরে নিমফিয়ামের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠছে!
গরুড়
কুমিরভরা নদীতে একা নাইতে নেই
সন্ধ্যাতারা
সব ঘূর্ণি, বিভা নিয়েও জলে ভেসো না
সন্ধ্যাতারা
দুখের দেশে সবার মুখে মুখহীনতা,
নিহিত ফণী
সব স্মারক ছুঁয়ে আত্মহারা দূরের
গির্জাধ্বনি
এসো কুঠার ও কুহু নিয়ে যৌনবনে
ও রসাতলে
প্রাচীন কথা, দারুপ্রতীক কুড়িয়ে নিও
মশাল জ্বেলে
আমরা যাকে স্বপ্ন বলি—চিতাবাঘের
ঘুমানো চোখ
বাঘও কাঁদে, সে হ্রদে ওড়া নীলচিঠিরা
তোমার ঝোঁক
সাপের জিভ ছিঁড়ে গরুড় শানায় ব্যর্থ
রাষ্ট্রে কাঁচি
অপর করে দিও না মন, তুমি বাঁচলে
আমিও বাঁচি
শহীদ
ঝিনুকের স্তুপ যেন এক আশ্চর্য ফুরুশের গাছ!
মৌসুমি বায়ু ছাড়াই সে গাছে বালিয়াড়ি জাগে লবণ সেতু জাগে,
সেই বালিয়াড়ি জুড়ে অসংখ্য মৃত ঝিনুকের নাচমুদ্রা ছড়িয়ে থাকে...
যেন ভিন্ন মতাদর্শীর ফোঁটা ফোঁটা সাদা রক্ত এসব ঝিনুক
বজ্রজন্মের কাছাকাছি
মুহূর্তে ঘূর্ণিত ময়ূর হয়ে উঠতে পারে
বাহ! কবিতাগুলো বেশ ভালো লাগলো। বিশেষ করে 'অরূপকথা' কবিতাটি।
আবদুর রব
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ ১৩:৩৯