ব্ল্যাকআউট ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-


ব্ল্যাকআউট

ঘুমের ভেতর জেগে ছিলাম এক স্বপ্নের করিডোরে
আমাকে কেন জাগালে বন্ধু অসংলগ্ন ভোরে
পরাবাস্তব জাহাজের ডেকে জানি না কী ছিল ভুল 
নিয়েছিল ডেকে নেশায় মাতাল উত্তুঙ্গ মাস্তুল 
পরাজিত এক জীবনের সাথে ভীষণরকম আড়ি
প্রাণপণে তাই থেকে যেতে চাই অবচেতনের বাড়ি

 

প্রশ্নচিহ্ন

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রশ্ন করি—
                               কেমন আছ, অতনু তিয়াস?
সেও আমাকে জিজ্ঞেস করে—কেমন আছ, অতনু তিয়াস? 
উত্তর দিতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই। 
আমাকে নিরীক্ষণ করি—

অজস্র প্রশ্নচিহ্নের আঘাতে আঘাতে
আয়নাটা ভেঙে চুরমার! 

 

অবস্তুচেতনা

শূন্যের আধারে বস্তুগত যা কিছু, নশ্বর
পঞ্চভূতে প্রাণায়াম, কৃপার আবাহন 
চিরস্থায়ী অন্ধকারে মুহূর্তের আলোর উদ্ভাসন 
কত স্বপ্ন কত সাধ বুকের ভেতর জমা
ভুলে যাওয়া দিকচিহ্ন যত দাঁড়ি কমা
‘আমি’ ও ‘আমার’ করে বৃথা উল্লম্ফন
এক বিন্দু পৃথিবীতে ক্ষণিক জীবন
অবস্তুচেতনায় নিরাকারে বিরাজে ঈশ্বর

 

সভ্যতা যাপন

কতদিন ‘নক্ষত্রের রুপালি আগুনভরা’ রাতের আকাশ দেখি না
আয়নমণ্ডল ছেয়ে আছে ধোঁয়ায় সিসায়
রাতের স্তব্ধতা চিরে ভেসে আসে করাতকলের শব্দ
                         ইঞ্জিনের ধস ধস আওয়াজ
                         কারখানার সাইরেন
অসুস্থ শিশুর হৃদয় বিদীর্ণ করে গর্জে ওঠে আতশবাজির বোম

নির্মল শৈশব-কৈশোর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে ভিডিও গেমস
রক্তচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে ফ্রি ফায়ার 
পাখিদের গতিপথে অবাধে ওড়ে বেড়ায় ড্রোন
প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে হাঁসফাঁস করে মরে অ্যাজমার রোগী

কতটা উন্নতি হলো নদীকে হত্যা করে
কতটা স্থাপনা হলো উজাড় করে বন
প্রকৃতি ধ্বংস করে এ কেমন আত্মঘাতী সভ্যতা যাপন!

 

দায়

ভালোবাসতে জানি 
               প্রকাশ জানি না
ভালোবেসে পাখিটার কাছে গেলে
উড়ে উড়ে দূরে সরে যায়
ভালোবেসে ছুঁতে গেলে
ফুল তার পাপড়ি লুকায়

তবু মন ভালোবাসতে চায়
তবুও ভালোবাসি
ভালোবাসা হৃদয়ের দায়।

 

এবংবিধ দৃশ্যচয়

লেগুনাটি থামতেই একজন সুগন্ধি নারী এসে বসলেন
একজন আতরমাখা পুরুষের পাশে
পুরুষটি ভ্রূ কুঁচকে জায়গা করে দিলেন তাকে
মাঝখানে রাখলেন ক্রোশখানেক দূরত্ব
যেন তার পাশে বসে আছে আস্ত একটা জাহান্নাম!

উঠতি বয়সের ছোকড়া চালক স্টিয়ারিং ধরতেই
ভাঙা রাস্তায় উড়ে চলল হাওয়াই গাড়ি!
আচমকা একজোড়া কুকুর-কুকুরী 
খেলতে খেলতে লেগুনার সামনে এসে পড়ে
মুহূর্তেই কড়া ব্রেক।

সুগন্ধি নারী হুড়মুড়িয়ে পড়লেন 
আতরমাখা পুরুষের গায়ের ওপর!
সলাজ নারীর অনভিপ্রেত স্পর্শে
দেহে তার বিদ্যুৎ খেলে গেলেও
পুরুষের কুঞ্চিত ভ্রূ আরো কুঞ্চিত হলো!
এই দৃশ্যে হাসতে হাসতে রাস্তায় গড়াগড়ি খেল
দুষ্ট রসিক কুকুর-কুকুরী!