নাচোলের ইলা মিত্র ও অন্যান্য কবিতা
ধর্ষিত শরীর, শিকারী বিড়াল ও রোদের খেলা
মধ্য সকালের চতুর রোদের
তরঙ্গ, শিকারী বিড়ালের মতো
খেলছিলো আমাদের পায়ে পায়ে।
ক্রৌঞ্চীর সবল ব্যথাভারাতুর সেই
অলৌকিক চিৎকারে ফেটে গেছে
আত্রেয়ীর জলজ-শরীর!
পেশি-মানবের যৌথাচারে
নুইয়ে গেছে সু-কচি ধানের
অয়মা গতর।
চাঁড়ালের ঘাড়ে ভর দিয়ে অন্ধকার
নামে অমলদের সুজন গ্রামে।
মদের গম্বুজে হেমন্তের বন্যতার ফাঁকে
বাদুড়ের কালো পাখনার ঝাপটায়
ছিঁড়ে গেছে কদলি বৃক্ষের
সবুজ জরায়ু।
শুধু, মধ্যরাতে চাঁদখসা আকাশটা
বুলিয়ে দিয়েছে হাত ধর্ষিতার বুকে।
অতঃপর, ঘিনঘিনে গায়ে রাত
ফুরোতেই সকালের মিঠে রোদ—
আলো ঢালে ইচ্ছে মতো
বিস্রস্ত কোমল ধর্ষিতার গায়ে।
নাচোলের ইলা মিত্র
কার করস্পর্শে জেগে ওঠে ইলা মিত্র
স্মৃতির গহ্বর থেকে নাচোলের রানি,
চাবুকের ঝড় বয় ক্ষতাক্ত শরীরে
তেভাগা আন্দোলনের দৃপ্ত বিদ্রোহিণী।
জান্তব মিছিলে একা দেশপ্রেমী নারী
অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেয় মূর্তি পাথরের,
নাচোলের সাঁওতাল পরগনা কাঁপে
কৃষকের পিঠে ফেনা ওঠে জহরের।
ভয়ংকর নিপীড়নে স্থির উদ্যত মৃত্যুর
নিরক্ত শরীর তার সম্পূর্ণ উলঙ্গ,
পেরেক ফুটিয়ে পায়ে সিপাহি বর্বর
উল্লাসী লাঠিটা যেনো বিষাক্ত ভুজঙ্গ।
কমরেড দানেশের তেভাগা বিদ্রোহী
যৌনাঙ্গে ডিমের ভাপ গরম উত্তপে,
সিপাহি ধর্ষণেও প্রতিবাদী পুরোভাগে
ছিন্নমস্তাচণ্ডী যেনো জাগে বজ্ররূপে।
‘আধিয়ারী’ মরে ক্ষিপ্র অতীব গর্জনে
পাকি-হায়েনারা কাঁপে তীব্র আন্দোলনে,
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত শেষ যুগান্তরে
শস্যের সহস্র কণা জায়মান খুনে।
কলকাতা ডায়াস্পোরা নেত্রী ইলা মিত্র,
আটপৌরে ফ্ল্যাটে বন্দি তার স্মৃতিচিত্র।
সোহাগ দোবো
হঠাৎ যদি ধানের ক্ষেতে শুয়ে
ডাকো আমায় যাবো চরণ ধুয়ে,
দুলবে ডগা কালো সাপের মতো
মিহিন খরা জ্বলবে বুকের ক্ষত।
আমার ভেতর ন্যাংটো ইঁদুর নাচে
প্রবল জোরে ধাক্কা দিয়ে বাঁচে,
ডাহুক ডাকে বেতশ ফাঁকে বসে
কদম ডাঁটা যথারীতি খসে।
রাগলে তুমি কমলালেবুর খোসা
একটুখানি মদের ঘোরে চোষা,
দুলবে শিরা ঝিঁঝির ঘূর্ণি তালে
নুইয়ে যাবে শক্ত মাটি হালে।
পদ্মাবতী কামের ছাদে শুয়ে
রাজলক্ষ্মী দারুণ ফাঁকি দিয়ে,
সাদা সাদা রক্ত দোবো ঢেলে
তোমায় শুধু পেলে বাহুমূলে।
বিশ্বাস ভঙ্গের কাল
কোথাও বিশ্বাস নেই আজ।
হাঁসের কোমল পালকে যেমন
জলজ-বিন্দুরা শক্তপায়ে দাঁড়াতে পারে না,
তেমনি বিশ্বাস ঠিক ঢিমেতালে
গড়িয়ে ধমনী জলে ঢলে পড়ে
ডানে কিংবা বাঁয়ে।
বিশ্বাসে মিলায় প্রেম তর্কে তর্কে
কেটে যায় কাল,
কালের ধুলোর নিচে চাপা পড়ে
বিশ্বাসের মূল।
সাপের শাশ্বত প্রেম-শিখা
তবুও নিভৃতে জ্বলে একা একা,
নক্ষত্র-স্বপ্নের ভস্মস্তূপে।
বিশ্বাস ভঙ্গের এইকালে—
ধর্মের অসুখ বড়,
ধার্মিকেরা কালীমূর্তির ফসিলে
কাঁটার শিরোস্ত্রাণের কথা
বেমালুম ভুলে যায়!
আজ, ঊষসী ঊর্মিলাও ভুল করে
বিশ্বাস ভঙ্গের এইকালে?
আমাকে ডাকলে কেন?
আমাকে ডাকলে কেন ঘুমিয়ে পড়বে যদি।
চণ্ডালিনী যুবতী রাত্তিরে লোকজন—
ঘুমের ভেতর মৃত পড়ে থাকে।
আমার বালিশ হাঁটতে বেরোয় তিস্তা অভিমুখে
ফিরে আসে ভোরেরাতে শুকতারা হাতে!
ঘুমের ঔষধ খেয়ে উঠলাম চাঁদের সিঁড়িতে
ঘুমপাড়ানির মিষ্টি কুমারীত্বে হাত দিলে
আর্তনাদ করে ওঠে প্রসববেদনা।
আমাকে ডাকলে যদি ঘুমের ভেতর—
মৃত্যুকে বলেছি ভোর হতে দাও দ্বার খুলে দেবো।
খুব ভালো লাগলো কবি
সূরজ দাশ
জুলাই ০৮, ২০২৩ ১০:৪৮
আমার পরিচিতিসহ ৫টি সাম্প্রতিক কবিতা প্রকাশ করার জন্য অনেক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রতিধ্বনি এর সম্পাদক ও অন্যান্য সহযোগীদের।
এজাজ ইউসুফী
জুলাই ০৭, ২০২৩ ১১:১৪