শাহ মজিরউদ্দিন আহমদের তত্ত্বগ্রন্থ ‘ভেদ জহুর’
তত্ত্বজ্ঞানী ফকির মজিরউদ্দিনের গ্রন্থ ছয়টি—প্রেম মালা, গোলরুখ, প্রেম রতন, ভেদ জহুর, শাহাদতে বোজুরগান এবং জারী জঙ্গনামা। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী ফকির শাহ মজিরউদ্দিন আহমদের নাগরী লিপিতে রচিত তত্ত্বগ্রন্থ ভেদ জহুর। সাধক মজিরউদ্দিনের ফকিরি লোকতত্ত্ব বিষয়ক বই ভেদ জহুর প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশনী। বইটি নাগরী থেকে লিপ্যন্তর করেছেন মকদ্দস আলম উদাসী। আর বইটির শব্দার্থ, টীকা ও সম্পাদনা করেছেন কবি ও লোক গবেষক মোস্তাক আহমাদ দীন।
ফকির শাহ মজিরউদ্দিন আহমদের নাগরী লিপিতে রচিত তত্ত্বগ্রন্থ ভেদ জহুর-এর তেরোটি পয়ারের কোনো কোনোটিতে অন্যত্র-পাওয়া-যায় এমন কিছু সাধারণ তথ্য থাকলেও কিছু পয়ারে রয়েছে এমন ভেদকথা যা সাধারণত মুর্শিদ তাঁর বালক বা শিষ্যকে গোপনে ‘কানে কানে’ বলে থাকেন এবং এ কারণে যে-কথাগুলো এখনো মুর্শিদ-মুরিদ সিলসিলায় জারি রয়েছে। ভেদ জহুর-এর নাগরীলিপিতে লিখিত এই গ্রন্থ ফকির মজিরউদ্দিন আহমদের প্রপৌত্র সৈয়দ মুমিন আহমদ মবনুর কাছ থেকে সংগৃহীত। তিনি এটি লোক গবেষক ও সংগ্রাহক মুহম্মদ আসাদ্দর আলীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন যার আকার ২২/১৫ সেন্টিমিটার।পয়ার ছাড়াও বইটিতে রয়েছে শায়েরের মোনাজাতসহ আরও ৭০টি গান।
ভেদ জহুর-এর পয়ারগুলোকে ‘তত্ত্ব’ হিসেবে ধরে নিলে এর অধিকাংশ গানকে ‘প্রয়োগ’ বলে চিহ্নিত করা যায়। তবে এই সূত্রে এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে, তাহলে পয়ার আর গানের মধ্যে কোনটা আসল, ফকিরদের কাছে কোনটার গুরুত্ব বেশি। এ-অঞ্চলের আদি ফকির সৈয়দ শাহনূরের বাণীতে ‘পয়ার’ রেখে রাগ/গান ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে-নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা পড়ে একসময় বোঝা কঠিন ছিল এর কারণ কী। তত্ত্ব-পরিমণ্ডলের বাইরে থেকে চিন্তা করলে আজও মনে হয়, পয়ারে ফকিরি তত্ত্বের যে-বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকে, গানের রূপক-প্রতীকের মধ্য দিয়ে সেই বিষয়গুলো তো আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তব হয়ে উঠতে পারে।
স্পষ্ট বোঝা যায়, পয়ার এখানে রাগের/গানের প্রবেশকমাত্র, তা আত্মস্থ না করে কেউ গানের প্রতীক-রূপকায়ত লীলাময় বাস্তবতা আস্বাদন করতে চাইলে তা যথার্থ/যথাযথ উপলব্ধিতে পৌঁছতে সমস্যা হবে ভেবেই এই সাবধানতা। পরবর্তীকালের এবং একালের কিছু বাউল/ফকির-ভাবের গানগুলোর বিষয় বিবেচনায় আনলে ওই সাবধানবাণীর যথার্থ ভালোভাবে বোঝা যাবে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৫৫০ টাকা।
'নভির মধ্যে দমের কুঞ্জি উঠিছে লহর চাকি কুণ্ডলীর মাঝে গহিন সাগর' - ফকির শাহ মজির তিনি আরো বলেন, মৃদঙ্গে উঠিছে ধ্বনি/ শুনো তার পদ ধ্বনি/ সেই ধ্বনির কম্পন আমি হিয়াতে শুনিলাম/ আমার মন মনরে খেনে বা তারে চিনিলাম। দীর্ঘ দিন পর এই মরমী কবি শাহ মজির উদ্দীনের ভ্কেথা জনসমুখে নিয়ে আসলেন কবি মোস্তাক আহমাদ দীন। তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। প্রতিধ্বনিকেও এর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
Ahmed Moyez
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪ ০০:৫৩