হলুদ-নীল গান
|| ১ ||
কোনো কোনো গান আমাদের শোনায় নিঃসঙ্গ আকাশের দিকে যাত্রার কথা। কোনো কোনো গান শুনতে শুনতে মনে হবে, কেউ আপনার ভেতর তৈরি করছে হাজার বছরের কবর। ছাই রঙা আকাশের এশ ফেলে আপনি কোনো একদিন চলে যাবেন সেই কবরের দিকে। মাটিতে নিজেকে মিশিয়ে দিতে দিতে গেয়ে উঠবেন—
‘Shut the eyes of the dead
Not to embarrass anyone
But farewell, Angelina
The sky is embarrassed
And I must be gone’
গাইতে গাইতে আপনি বুঝবেন, হাতে আসলে বেশি সময় নেই। আকাশ ক্রমশ পেছনের দিকে হাঁটছে। সন্ধ্যার আগেই পেরোতে হবে ওই হলুদ-নীল কার্নিভাল। আর অদ্ভুত একটা আকাশের নীচে জমা হচ্ছে আমাদের সব হেরে যাওয়া। জোয়ান, তুমি বরং হাত বাড়িয়ে দাও। আমি হাঁটতে চাই মহাপ্লাবনের দিন পর্যন্ত।
|| ২ ||
‘Cause I'm leaving' on a jet plane
Don't know when I'll be back again
Oh babe, I hate to go’
—John Denver
ডেনভার বাজছে। আর আমরা আকাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকি। সারি সারি নদী আমাদের স্বপ্নে আসে। তার পাশে শুয়ে আছে ধানক্ষেত অথবা পাইনবন। কনক বললো, পাইনবন শুনতে ভালো, এইটা রাখ। আমি কিছু বলি না। শুধু বলি, হু! তারপর হু হু বিষণ্নতা আর বেথেলহেম চার্চ। চার্চের বিকেলগুলো বড্ড এলোমেলো। সেখানে কেউ একা একা ভায়োলিন বাজায়। আর তখন জামালখান নামের একটি শহরে অভিশপ্ত সন্ধ্যা নামে।
তুমি বললেই হবে। ‘তুমি’টা কে? কেউ জানে না। তুমি মানে নাকি সেল্ফ। প্রতিটা তুমিই মূলত আলাদা আলাদা ‘আমি’। ব্রাদার ফ্ল্যাবিয়ান হয়তো সেই ‘তুমি’র সন্ধানে পথে নেমেছিলো। আর কুড়িয়ে পেয়েছিলো একগাছি সোনালি চুল। হায়! সেই চুলের প্রেমে ফ্ল্যাবিয়ানের ঠাঁই হয়েছিলো অ্যাসাইলামে। এখনো সেখানে প্রতি রোববারে সিস্টাররা গিটার নিয়ে বসে। ‘ফেয়ারওয়েল এঞ্জেলিনা’ অথবা ‘হ্যোয়ার ডু ইউ গো মাই লাভলি’ বাজে। আর আমরা ডাকবাক্স খুলে বের করে আনি গোলাপি খামের অনেকগুলো চিঠি। নাহ চিঠিতে কোন নাম নেই। শুধু হু হু শূন্যতা।
একদিন পৃথিবীর সব প্রেমিকা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। একা একা নখের গায়ে ফুটাতাম শাদা ফুল। বেড়িবাঁধের ধারে বসে ভাবতাম কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা। কেমন হয় সেসব বরফ ঢাকা পাহাড়। যার চিবুকের নিচে জমে থাকে কোনো পুরাতন কবরখানা। পাশেই উত্তাল বঙ্গোপসাগর। আরও কাছে পুরাতন নেভাল একাডেমি। রানওয়ে ছেড়ে ধীরে ধীরে উড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বশেষ জেট প্লেন।
|| ৩ ||
পৃথিবীর পেট উজাড় করে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এখন শীতকাল। এই ঋতু বড্ড আগ্রাসী। হৃতপিণ্ড এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। এমন শীত থামানোর কোনো উপায়ই আমার জানা নেই। এইসব শীত আমাকে আরও বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। আমি শুষ্ক ত্বকের নিচে আড়াল করে ফেলি সব বিষণ্নতা। কারণ, পৃথিবীতে ভালো থাকা কিংবা না থাকা মানুষেরা একেবারেই আলাদা। ভালো থাকতে হলে আপনার প্রয়োজন এক খণ্ড পাথর, যেটা আপনি যখন তখন যাকে তাকে ছুড়ে মারতে পারবেন। পৃথিবীতে যারা সঠিক নিশানায পাথর ছুড়ে মারতে পারে, তারাই কেবল ভালো থাকতে পারে। আর একদল আছে যারা খারাপ থাকার ভান করে। তাদের দখলে কান্না। পৃথিবীর যে কোন কান্নায় তাই ভ্রম ও অস্পষ্ট। তার ঝরে যাওয়া আমাকে আক্রান্ত করে। কিন্তু আমি তাদের ঘৃণা করি। পৃথিবীর যে কোন কান্নারত মানুষকে আমার পাথর ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করে। যেহেতু আমি সুখী মানুষ নই, আমার তাই কোন পাথরও নেই। আমি বসে বসে দেখি—পৃথিবীর যাবতীয় সুখী এবং অসুখী মানুষদের।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন