আব্বার পাঞ্জাবি ও অন্যান্য কবিতা
আব্বার পাঞ্জাবি
আব্বার খুলে রাখা পাঞ্জাবি
তার নিঃসঙ্গতার মতো ঝুলে থাকত আলনায়
হয়তো আব্বা তখন দোকানে, শ্রীমঙ্গলে বা সিলেটে
আর আমি ঘুরেফিরে এসেই
মুখ মুছতাম সেই পাঞ্জাবিতে
আব্বার গন্ধ নিতাম
নিঃসঙ্গ মানুষের গন্ধ
ঋণী মানুষের গন্ধ
টাকাহীন মানুষের গন্ধ
তবু মায়া লাগত
আম্মা গন্ধ ধুয়ে ফেললে
আমি আব্বার গন্ধ-লাগা পাঞ্জাবির অপেক্ষায় থাকতাম
আব্বার গন্ধ নিই না কতকাল!
কতকাল আব্বা পাঞ্জাবি পরেন না
আব্বাকে একা রেখে তার সাদা, নীল ও বেগুনি
পাঞ্জাবিগুলি কোথায়?
আব্বাকে ভালোবেসে তারা
উড়ে চলেছে আরশে আজিমের দিকে
যেখানে তিনি হাজির হবেন
তার ধনাঢ্য আল্লার কাছে, খালি হাতে?
আব্বা কি গরিবের জীবনই বেছে নেবেন
বেহেশতে?
পরে নেবেন তার পুরাতন পাঞ্জাবিগুলো?
বেহেশেতে গরিবের জীবন দেখতে
কেমন লাগবে কে জানে
আমি তবু আব্বার শেষরাতের জিকির শুনতে
ঐ বেহেশতেই যাব আর
আব্বার খুলে রাখা পাঞ্জাবির ঘ্রাণ নেব
বেহেশতে আব্বার পাঞ্জাবিতে কি
নিঃসঙ্গ মানুষের গন্ধ থাকবে?
তুমি
কুকুর শুধুই কুকুর। শেয়াল শুধু শেয়ালই।
কিন্তু তুমি খালি মানুষ না। বরং একটু শেয়ালও।
তুমি কিছুটা বাঘসিংহও, কারণ, তুমি বেশ হিংস্র।
একটু হাতিও আছো, কেননা সংসার তোমার নিষ্ঠুর মাহুত।
তুমি শুধুই মানুষ না। একটু সাপ, আধটু গান গাওয়া পাখি।
কিছুটা মায়া হরিণ, সিংহের ক্ষুধার সামনে সামান্য জিরাফও তুমি।
প্রভুভক্ত কুকুর এবং বেঈমান বিড়ালও কম না!
মৌমাছি, সাথে মাকড়শাও।
তুমি মানুষ না কেবল, একটুখানি দুগ্ধবতী গাভি
সাথে শকুনও।
তুমি যতটা না ইলিশ, তার চেয়ে বেশি অক্টোপাস।
যতটা পিঁপড়া তার অনেক অধিক তিমি।
তোমার জেব্রা অংশের চেয়ে হায়েনা অংশ বেশ বড়।
তুমি যে পরিমাণ দোয়েল, তার অধিক বন্য শুয়োর।
বাজার
পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী
প্রজনন অঙ্গগুলো যারা টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়।
সম্মান
সবাই একটু-আধটু জাদুকর। আমিও।
টাকারে দিনার বানিয়ে
সবাইরে দেখাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছি
আমার হাতে দেখি, না দিনার, না টাকা
একরাশ বিলুপ্ত মুদ্রা।
সম্মানের বদলে সবাই আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে
সন্দেহ করছে
ভাবছে আমি প্রাগৈতিহাসিক কোনো জন্তু
মানুষের বেশে ঢুকে পড়েছি
এই অল্পায়ু কালের ভিতরে
২
নিঃসঙ্গতার জন্ম দেখতে দেখতে
পৃথিবীর সব মহাসমুদ্র পার হয়ে
বসেছি আমার কবরের কাছে
কথা বলছি
কবর এতটাই গভীর আর বড় যে,
একটা কথা বলতে তার লেগে যায়
বিরাশি কোটি বছর
আমি নিঃসঙ্গতার মূর্তি
আমার বিলুপ্ত প্রাণের কোঠরে বসে
ডিমের বেদনায় কাঁদতেছে পাখি
কামারশালা অথবা ইশকুল
আমি ছিলাম
সামান্য এক টুকোরা লোহা
কামারশালা বানিয়ে দিয়েছে আমাকে—
দা, কুন্তি, তলোয়ার, বল্লম, বর্শা
জীবন
জীবনের মৃত্যু নাই
জীবন অমর!
জীবনের দুঃখের শেষ নাই
জীবন ফুল!
জীবনের গানের শেষ নাই
জীবন বাউল!
জীবনের বুকভরা কবরের ঢেউ
জীবনের কেউ নাই
জীবন একাই
আকন্দ-ফুলের গন্ধে জীবন বিভোর
জীবনের চারপাশে
কারা শুধু গান গায়, মৃত্যুর, মধুর
আয়ু
পৃথিবীতে সে
পক্ষীবিশারদ হতে পারত
হয়েছে পাখি
তাকে তাড়া করছে খাঁচা এবং শিকারি
গোরখোদক হতে পারত। হয়েছে কবর
তাকে তাড়া করছে লাশ।
সেনাপ্রধান না-হয়ে
হয়েছে যুদ্ধের ভিতর দিশাহারা শিশু
চোর হতে পারেনি
তাই প্রতিদিন চুরি হচ্ছে তার ছোট আয়ু
খুব সুন্দর কবিতা। কবি, কাব্যভাষায় এখানে নামিয়ে রেখেছেন আমাদের জীবন ????????????
সরোজ মোস্তফা
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ ১৪:২৮
জাস্ট অসাধারণ!
ভূঁইয়া বুলবুল
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ ২৩:৪০
খুব সুন্দর কবিতা। কবি, কাব্যভাষায় এখানে নামিয়ে রেখেছেন আমাদের জীবন ????????????
সরোজ মোস্তফা
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ ১৪:২৭