একদিন জলে ভেসে ও অন্যান্য কবিতা
মধ্য দুপুর
আমি কি রাজার লোক, পারিনি তোমারও হতে
অতোটা সমর্পণের ভাষা, নতজানু শিখা হয়ে উজ্জ্বল সময়
সকলে কি চায়, তেমন বুঝি না কিছুই, আমার মৃত্যুর আগে
হয়তো আমি বহুবার মরে গিয়ে বাঁচি; এ জীবন
অনর্থক জেনেও অনেক পথের বাঁক অনেকেই পার হয়ে যায়
অনেকেই ঘাস হয়ে পড়ে থাকে—রাজার সৈন্যদল
কতোবার দলে-পিষে ছুটে গেছে, এমন আহত-হৃদয়
কে আর দেখে যে ফিরে, একদিন সিংহাসন ফেলে রেখে
রাজাকেও চলে যেতে হয়, বিপন্ন আলোর দেশে এরকমই কিনা
কখনওতো জেগে ওঠে ঘাস, আরেকটু আগালে নদী শান্ত, ধীর
তুমিও কি এরকম নদীর পাড়ে চেয়েছিলে মধ্য দুপুর।
আগুনে বাতাস
আমি সংঘের লোক নই, তবু সংসারেই থাকি
এত তাপদাহ সমস্ত সবুজে, পুড়ছে মানুষ, আমি কারো নাম
মুখে না নিয়েই চেয়েছি তোমাকে, শীতল জল
বৃষ্টি নামলে ঘাসে, পাতায়, দেখি মাটিতে
মাখামাখি কত ভালোবাসা, মাটি ভিজলেই নতুন তৃষ্ণা বীজে
আমাকে তুমি যত পর ভাবো, কে তবে কাছে কার
আগুনে বাতাস ফিরে যায় সে-ই বৃষ্টিতে বারবার।
রহস্যের কিছু নেই
সবার কি অবসর আছে, অবসর বলে কিছু কি ভেবেছি কখনও
আমার হয়তো সেরকম কিছুই ছিল না কোনোদিন, পাখিরাতো চুপচাপ
ডালেই ঘুমায়, একদিন চেয়ে দেখি দীর্ঘ পথ, পথেইতো ঘুরি
সাদাকালো ভাঙা মেঘ উড়ে গেছে, পাখিরা উড়েই যায় পার হয়ে
হিজলের বন, আমিই অচেনা, পড়ে আছি একা সমুদ্রের পাড়ে
এলোমেলো বাতাসেরা আসে, ফিরে যায়, পাল তোলা নৌকাগুলো
ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে গেছে, তখন কি কিছুটা অবসর ছিল ঘাটে
তাল-তমালের, জারুলের ছায়ার নিচে, জমিনে ঘাসের
এখন কি সবকিছু জলে-স্থলে বদলে যাওয়া বাতাসের মতো স্বাভাবিক
পর হয়ে আছে; রহস্যের কিছু নেই, অবসর চিনে না আমাকে।
ঘুঙুর
ঘুঙুর বেজেছিল জলে, শুনেছিলে—
এতটা সময় নেই, পাশেইতো হেঁটে গিয়েছো
পাখিরাও এরকম পাশ দিয়ে উড়ে
পারতো মুছে দাও পথ, ওদিকে
যাবে না কেউ, আশ্বস্ত হবার মতো কিছুইতো নেই
অনেক বছর গেছে, উজ্জ্বল আলোর নিচে
মানুষের মুখগুলো যেন টুকরো ম্লান চাঁদ, ওখানে
এত এত দিনলিপি লেখা আছে, কে আর
পড়তে চায়, জল সেই অনন্তেই গেছে
সুদূরের হাওয়া আসে, ওদিকেই
অনেকের চোখ, মাটির কাছেই ঘাস, তাকে আর
কতোজন চিনে, একদিন ফুলগুলো
বিলুপ্ত আনন্দ হয়ে
মিশে যায় মৌসুমের ঘ্রাণে
সবাই থাকে না কাছে, ঘাসফড়িং
তারও আছে পছন্দের ঝোপ, জলের ঘুঙুর
সে আছে জলে মেশা ঘোরে।
একদিন জলে ভেসে
আমি দূর বারান্দার পোড় খাওয়া লোক
বহু বেদনার সাথে চেনাজানা আছে, কিসব ম্লান-মন্থর
সন্ধ্যাগুলো সঙ্গী করে দেখেছি
কোথাও না কোথাও ফিরছে মানুষ।
আমাদের গ্রামে এখন ছোট-বড় বটগাছ খুব একটা নেই
খাল-নালা ভরে গিয়ে নগরের অসুখ এখন
গ্রামের ভেতর, কলার পাতার কাছে হেসে ওঠা
মুখটিও ক্লান্ত খুব, মেঘ হয়ে গেছে।
আবার যে ফিরে আসি, তেমন নদীর পথ
বহু আগে হারিয়ে গেছে, ফিরবো যে তোমার কাছে
নদীহারা এই আমি, সমুদ্রতো অনেক দূরের
চেনাজানা পথগুলো অনেক জটিল।
একদিন জলে ভেসে কোথাও যাবো না
দীঘিটির মিঠেজলে ডানাছাড়া হাঁসদের সাঁতার দেখে
চুপ করে কাটিয়ে দিব আরও এক
মেঘের বৈশাখ, ঝড়ের মৌসুম।
আমাকে ডেকেছে যে, তাকে আমি নিজ নামে
কোনোদিন চিনতে পারিনি, কতো অচেনার সাথে
দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়, পুরোনো মদের মতো ঘুম
জড়িয়ে থাকে পুরো রাতটাকে।
আমি হারাতে শিখেছি বলে ভয় নেই
কতোইতো হারিয়ে এসেছি, খেলার মাঠ, মেঘমাখা
সন্ধ্যাগুলো, ঘামের হিসাব, তাজা নিমফুল
চাইলে হাঁটতে পারো উল্টোদিকে, সেইখানে থাকি।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন