দীর্ঘ কবিতা || তমসাতীর্থে

অ+ অ-

 

মাসিয়াত, তাহমিদ কী কী বলতে চায়
তাহমিদ, মাসিয়াত যা যা শুনতে চায়
বলাবলি, শোনাশুনি করো তা দু’জনে—
পরীবাগে পরী না থাকুক, হাত ধরে
হেঁটে যাও আজিজের দিকে, আলাপের
সাথে বাদামের খোসা, সংশয়, স্বৈরতা
নির্দ্বিধায় ফেলে দাও, কর্পোরেশনের
নোংরা হাত তোমাদের দিকে এগোবে না,
সীমিত বৃষ্টিতে ভিজে যেতে যেতে রিক্সা
ডেকে উঠে পড়ো আর চুমু খাও আজ—
এদেশে বিপ্লব হবে না, মিছিলে দেখা
চেহারাগুলোকে জালিমের মুখে হাসতে
দেখাটা স্বাভাবিকতা, যদি না বোঝো এ
নগরের লাম্পট্য-ই পবিত্রতা, প্রাণ
আর প্রাত্যহিক জীবনের কারাভান,
তাহলে অ্যাংজাইটির খিদা মিটায়ে
পিরিতির দোরে পারবা না হেসে দাঁড়াতে—
দেখো, রাজুদের চোখ মুড়িয়ে দিয়েছে
আঁধারের রঙে, মেঘমল্লারের চোখে
ছুরির নিখুঁত পোচ দেখো—রক্তরেখা
ধরে বাঁচা যে কালের ধ্যান, সে সময়ে
প্রেম দিতে পারে সিদ্ধার্থের মগ্ন ধ্যান—

রোবায়েত, রুম্মানাকে বলে রেখো শুধু
কবিতা লেখার জন্যে গলা কেটে নিতে
পারে ঘাতকের ছুরি, ছদ্মবিড়ালেরা
ক্রুর পিশাচের ঢঙে শব্দ-মিসাইল
ছুঁড়ে দিতে দ্বিধা করে না, কাঁচাবাজারে
ব্যাগ হাতে ঘুরতে ঘুরতে কাঁচামরিচের
সবুজে, মাছের মৃত চোখে তুমি তবু
নতুন উপমা আবিষ্কারের পুলকে
ডাল কিনতে ভুলে যাবে, যেভাবে
আমরা ভুলে গেছি ভোট, প্রিডাটরের হা—
বিহারিপট্টিতে বিরিয়ানির ঘ্রাণের সাথেই
ড্রেনে গু ভাসে তো আজো, গোস্তের দোকানে
গিয়ে দর-দাম ক’রে ফিরে আসতে হয়,
সন্ধ্যায় মুস্তাকিমের চাপের দোকানে
কুকুর-কুক্কুরী হাড্ডি খেতে গিয়ে তাড়া
খেয়ে ধানমণ্ডি এসে এস্থেটিক মাংস
আড়ং আর্ট-ফিল্ম ক্ষমতার গন্ধ পায়—
গরিবি ধারণা ওরা ফেলে আসতে পারে
নির্দ্বিধায়—অনাহূত মাহুতের মতো।
রুম্মানা, তোমার কবিকে দিও পার্বন,
বছিলা পেরিয়ে, পাখিদের কনসার্ট
হয় যে গ্রামের চরে, অই কলরব
থেকে তুলে এনো কবিতার মন্দ্র স্বর—
এত গ্যাঞ্জামের ভীড়ে তোমার ভাষার
চেয়ে শান্ত নদী আর তো দেখি না আমি,
সে নদীর তীর ধরে গেলে পৌঁছে যাওয়া
যায় প্রণয়ীর দেশে, কাবোলের বেশে—
ছাতিমের ঋতু এলে সংসদ ভবন
এলাকায় ঘুরে আগারগাঁও কলোনিতে
নয়নতারারা ক্যানো অভিমানী, জেনো।
সব নরকেই কিছু অপাপী মানুষ
অযথাই পোড়ে, নিদারুণ অনাচার
সয়ে ওরা বোবাবেশে কাটায় জীবন—
তাহাদের ভিটামাটি থেকে কিছু কান্না
তুলে নিও তোমাদের কবিতা-কথায়।

কমল, তুমি কি জানো নাই এ নগরে
প্রণয়ের চেয়ে বেশি দাম ডটেডের?
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের মতো এসে
আবার হারিয়ে যায় প্রেম ও প্রেমিকা—
এ প্রান্তরে পড়ে থাকা কুয়াশার লাশ,
শাহবাগে, চে গেভারাদের শিপ্রালাপ,
পিজির কিনারে কুকুরের ঘেউ ঘেউ
সকল কিছুই জাদুঘরে রাখা যাক—
সিনেমা ও পুস্তকের দিন-ও ফুরালে
ভাবো, কত সহজেই মরে গিয়ে বেঁচে
আছে আশেপাশে থাকা মানুষের দল,
কিরকম আপোষের দম দ্বিধাহীন
ঘরে ফেরে বউ আর স্বামীর মুখোশে—
মন খারাপের দিনে তুমি তো যেতেই
পারো মমিসিং নয় রাজীবের কাছে—
এ নরক ছেড়ে গিয়ে নিজস্ব সাকিনে,
মা, স্ত্রী, স্বজনের মফস্বল, হাওয়া, ভাতে
ফিরে যাওয়া যায়, দত্ত কি দেখায় নাই
এ সত্য মারীর কালে, ভয়াল নিদানে?
বিবিধ মাজেদাগণ যদিও বুয়াদের
দলে মিশে যায় ক্ষুদ্রঋণের চক্করে
অথবা রমিজ ওর হৃদপিণ্ডে শোনে
হাপরের ধ্বনি, অস্থিমজ্জাগুলি জ্বলে।
আর্টের, কবিতার কাঁটা তুলে কতভাবে
আর খুন-খারাপির খিল আঁটা যায়!
রাজীব, মিমের দুনিয়ায় আর্ট যদি
কেবল কৌতুকে নেয় রূপ—আমাদের
মৃত্যুগুলো ‘হা-হা’ হয়ে যাবে একদিন!

হামেদী, মর্মকে শিখিও গানের লিপি,
জানিও, অসুরে ভরা পৃথিবীতে আজ
সুর খুব প্রয়োজন—ফসলের ক্ষেতে
পানি ও রোদের জরুরতের মতোই—
মানুষের চেহারায় দানবেরা ঘোরে,
দানবের চেহারায় ঘোরে মানুষেরা,
রূপকথা থেকে দৈত্যদল বহু আগে
লোকালয়ে মিশে গেছে নানা চেহারায়—
পৃথিবীটা আজো বিবি হাওয়াদের নয়,
নয় আদমের—প্ররোচক ডাকিনীরা,
নার্সিসাস রাক্ষসের দল বিজ্ঞাপনে,
শাসন-দর্শনে, ক্ষমতার প্রতিনিধি।
রুমু, প্রজ্ঞা, জুননু—দুহিতার মাতাপিতা—
রুশাই, নভেরা, রূপ যেন চিনে নেয়
রাক্ষস-ডাকিনীদের চেহারা ও স্পর্শ,
মানুষের ছায়া থেকে আসা অযাচিত
অশনিসংকেতগুলি, চোখের আগুনে
ওরা ছাই ক'রে দিতে শিখুক অসুর—
এসো হে পরম,
এসো প্রাজ্ঞমাতা,
                      আমাদের মেয়েদের
                      অকুণ্ঠ পরমা গতি।

তুলি, শেফালির জ্বর এখনো সারেনি,
শোয়েব বিস্কুট কিনতে গিয়ে যেন গুম
না হয়ে যায়, এ নিশ্চয়তা কেউ দেবে?
টোস্টের বদলে শেফালিকে লেবুর চা
দিয়ে পতেঙ্গার গল্পে নৌকাডুবি কিংবা
কোনো বীর কাপ্তানের চরিত্রে ফিরিয়ে
নেয়া যেতে পারে সহোদর হারানোর
ব্যথাগুলি—কনকের মোরগ একাকি
কাঁদে ক্যানো জেলেপাড়া ঘুরে অগোচরে!
শোয়েব, কিয়ারোস্তামি বহু চেরি রেখে
হারিয়ে গেছেন অলিভের ছায়াপথে,
সেসব চেরির স্বাদ অমৃতসন্ধানী
প্রাণেদের বিষণ্ণতাষেধক ওষুধ—
বেঁচে থেকে আমরা কি জানিনি বহুবার?
আলুর ডাইলপুরি খেয়ে কবেই অভ্যস্ত
হয়েছি—‘হৃদয় খুঁড়ে’ ভালোবাসে যারা,
তাদেরে দিয়াছি অবিরাম অবহেলা—
বরং বর্ষায় মেট্রোরেলে উত্তরায়
যেতে যেতে কাজীপাড়ায় নৌকার পাল
দেখে উন্নয়ন বিষয়ক গল্প করা
যেতে পারে মারমেড শুক্র-শনিবারে!

জুবেল, আমার ভাই, মেরাতুন্নেসাকে
ভালোবাসি, তবু দেখি দুধের পুকুরে
কফিনের সমারোহ—দেখি, আত্মহত্যা
করেছে প্রাণের গন্ধরাজ সব শাদা
বিলিয়ে জুয়ার পটে, কোনো আঙুলই
সেথা মিথ্যা নয় জেনে ভাতের ভূগোল
জুড়ে আজ হাহাকার, হোয়াই দ্য ফাক
ডেডবডিগুলি এত সুন্দর সংসদে!
মেরাতুন্নেসাকে ভালোবেসে আমি গ্রামে
ফিরে যাবো একদিন, গাইবো তাঁর গান
‘বুকের বল না ক’রে ছল’ ভিটামাটি
ছেনে ছেনে, শিখে নেবো দুই যোগ দুই
কত হয় জন্মসুতা বেঁধে মাতৃদোরে।
আমি জয়, আপাতত এই দোজখের
নবজাত মেঘ হয়ে কাঁদি কিছুকাল—
ঝরে গেলে মুক্তি জানা, তবু আমি চাই
আগুনের পাখি, তীব্র দহনের সুখ।