নয়নতারায় নোনতা জল
সমুদ্রে অর্ধেক চাঁদ ডুবে থাকা রাতে
শুনসান নিস্তব্ধ নির্জন
আরতির ঘরে শঙ্খধ্বনি বাজে।
চাঁদ, সমুদ্রজল, জলপরি, মৎস্যজীবী,
তা থৈ জলের ঝিনুক, সমুদ্রতীরের ঝাউপাতা,
দেবদারু বনের জোনাকি,
বেলাভূমিতে হামাগুড়ি দেওয়া কাঁকড়া আর
দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ, এবং তারা, তুমি বা সে
কেউ-ই জানে না, কেন বাজে
শঙ্খ চৌচির করে নাথ নাথ প্রার্থনাধ্বনি।
যখন সমুদ্রের ডাক ওঠে শঙ্খের ভেতর,
কেন কুহুতানে ঢেউ খেলে নয়নতারায় নোনতা জল?
সন্ধ্যা নামার পথে উড়াল দেওয়া পাখি তা জানে না।
চঞ্চু থেকে তৃণ খসে গেলে, কেবল বুকের
একটি পালক ঝরে যায়
পাখি তার উড়ন্ত ডানায় মেঘের গায়ে লিখে না
তৃণের নিখোঁজ সংবাদ
তোমাদের পৃথিবীতে
বারংবার সবুজ হারিয়ে যায়, মরে যায়।
তোমাদের তানপুরায়
সবুজের মরে যাওয়া মিশে থাকে
বাউলের একতারায়
সবুজের সমস্ত বিসর্জন:
তবেই তো পাও সুরেলা যন্ত্র, আর মন্ত্র গাও উল্লাসে;
দৈবাৎ সবুজের বেদনায় কখনো কি সেতার কেঁদেছে?
প্রিয় ভ্যান গঘ, সূর্যমুখীফুল গাছেও সবুজ আছে,
তুমি রঙের সপ্তস্বর্গে হলুদের স্মারক হলে
হলুদ আমারও প্রিয় তুমি আরাধ্য বলে!
আছে জানা, সবুজ হারিয়ে হলুদ আসে পত্রপল্লবে
এখানেও সবুজের মরে যাওয়া আছে; [হেমন্তে!]
সূর্যমুখী-বনে তাই বুঝি, ভিনসেন্ট, দাঁড়কাক কাঁদে?
মালনীছড়ার পাদদেশ থেকে চূড়া
দুটি কুঁড়ি একটি পাতায় মোড়া
মধ্যদুপুরে নীল মেঘের, আকাশ ভাঙা রোদ
পাহাড়ের মখমলি সবুজ শরীর চেয়েছিল,
হিমালয় থেকে বয়ে আসা মেঘ গলে
গগন দাপানো বৃষ্টি হোক!
মেঘের ডাকে ময়ূর পেখম মেলে দেখাক তার
ময়ূরকণ্ঠী নীলে সবুজের মিশেল,
সবুজের ভাঁজ খুলে যাক
যখন প্রখর খড়ায় পোড়া মাটিতে
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে মেঘ
এসবের কিছুই হয়নি...
ঘূর্ণি ওঠা প্রবল ঝড়ে, হকচকিয়ে কোন পাহাড়ে
বাতাস মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে
এভাবেও হরদম সবুজ ম্লান হয়ে গেছে!
ম্লান হয়ে যায়, শুনসান হয়ে যায়
সবুজ অরণ্য ভূমি
তবুও জেনো বেদনার নির্দিষ্ট রং নেই
আত্মনিবেদনে আরাধনা থাকে
চমকপ্রদ সং নেই!
কেউ জানে না, কেন বাজে
শঙ্খ চৌচির করে নাথ নাথ প্রার্থনাধ্বনি
যখন সমুদ্রের ডাক ওঠে শঙ্খের ভেতর
কেন কুহুতানে ঢেউ খেলে নয়নতারায় নোনতা জল!
খুব মনে পড়ে
একবার সন্ধ্যার কাঁধে মাধবীলতা নেতিয়ে ছিল
ধাবিত রাতে সোডিয়াম আলোয়
ধূসর হওয়া চাঁদনি পসরে,
তারাগুলো জোনাকিপোকা স্বরূপ ছিল
আকাশ যেন সবুজ নয় নীলচে অরণ্য ভূমি
... সেদিনও সবুজ ভাঁজ খোলেনি!
সেইদিন
ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কুকুরের
বদলে যাওয়া রঙের গায়ের ’পরে নেতানো লতার
ছায়া প্রলম্বিত হওয়ার দৃশ্য,
ব্যালকনিতে নাইটকুইন ফুটতে থাকার মতো
সন্তর্পণে মধ্যযামে এখনো ফোটে
কেউ জানেনি, কেউ জানে না
কেন কুহুতানে প্রতিধ্বনিত হয় নাথ নাথ ধ্বনি
কেউ জানেনি যখন সারেঙ্গি বাজে গহীনের ঘর
কোন ময়ূর পেখম মেলে থাকে,
নয়নতারার নোনতাজলে অতল!
যখন নোনা জল ঢেউ খেলে নয়নতারার ভেতর
বসন্ত বাউরি তখনো যেন
পালক দোলায় অরণ্যের ঘর
উর্বশী রাতে হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়
পশমি ঘ্রাণ, অনুসৃত হয় নাসিকাবিবর
কেউ জানে না, কেন বাজে তখন
তৃণারণ্য চৌরির করে নাথ নাথ প্রার্থনাধ্বনি
যখন সমুদ্রের ডাক ওঠে শঙ্খের ভেতর,
কেন কুহুতানে ঢেউ খেলে নয়নতারায় নোনতা জল!
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন