ভালোবাসা দেখাতেই চাই ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

ভাসা

প্রাণ কি বুদ্বুদ তবে, তেপান্তর থেকে একা ভূমি ও হাওয়ায়
গড়িয়ে এসেছে আজ এতো দূর? নাকি সাত সমুদ্রের জলে
আর তেরো নদীকূলে ভেসে উড়ে হেঁটে দৌড়ে সূর্যাস্ত পেরিয়ে
রমণীয় দিবালোকে রামধনুর রঙে জ্বলে আশ্চর্য ঝিলিকে?
শ্মশ্রুতে জোছনা ঠিকরে পড়লেই কে বলে কাছে বিয়োগের কাল?
দুই হাত তুলে বাহুমূলের অরণ্যে তীব্র দেখালে যৌবন
লজ্জা কি ঘৃণায় কারা এখনো তফাত রচে জানার আগেই
পুনরায় ভেসে উঠি, নিবিড় জরায়ুবাসী, মাতৃগর্ভজলে।
এই স্বপ্নীল ঘটনা শেষে পদক্ষেপ শুরু বর্ণিল ভুবনে।
মুগ্ধতায় কম্পমান মিলনযুদ্ধে পারঙ্গম আমি কার নই
বলতে না পারায়, দেখো, দেহাবসানেরও পরে কালের সাগরে
কীভাবে আরেক স্বপ্ন ভাসি আমি সদর্থক ও প্রেমী সকলে। 

 

ও বি হামিংবার্ড

ও বি হামিংবার্ড,
তুমি কি হাভানা থেকে আসো খুব উড়ে,
নিজের চারদিকে নাকি আমি মরি ঘুরে!
পরিযায়ী পাখি নও ভুলেও কখনো;
তথাপি উড়াল তোর ক্রমাগত ঘন।
ক্ষুদ্রতম পক্ষী ওহে,
মৌমাছি সমান প্রায় ঝাঁকে ঝাঁকে এসে
কী খোঁজো আমার চোখে, মুখে, বুকে বসে?
মিলনযুদ্ধোত্তর অঙ্গে নিবিষ্ট তারপর,
অপিচ আমারই মধ্যে চাও তরুবর?
হে বাস্তব বিহঙ্গমী,
তোরও চেয়ে ক্ষুদ্রতর পুরুষ তোমারও
কী পায় আমার দেহে, সঙ্গে আর কারও?
তোদের সবুজ, নীল বিভার অঞ্জন
চোখে মেখে শুনি ডানা কি অনুরণন।

রে জ্বালানি কি সাম্রাজ্যকামী,
কলম্বাস নই মোটে, না ভূগোল আঁকি;
কীভাবে এশিয়া ব’লে কিউবাকে ডাকি?
হাওয়ার সমান আয়ু শ্বাসের আমার;
প্রাণ আর পাখি সদা চাহে অংশীদার।

 

পানির ফুলশয্যা থেকে

আজ তবে তরুণ ও তরুণী হাঁসের বিয়ে? নইলে হলুদাভ
হংসের কাফেলা কেন ঝাঁপ দেয় তড়িঘড়ি জলের আয়নায়?
প্রত্যেকে শামুক মুখে বর ও কনেকে ঘিরে গোল শৃঙ্খলায়,
একে অপরের পিছে আর কেন্দ্রে চোখ রেখে সনিষ্ঠ সাঁতারে
ঘোরে। অদূরের পদ্ম, কচুরিপানার ফুল কি অভিবাদনে
আনত কিঞ্চিদধিক? শিকারে বিরতি টেনে দর্শক মাছরাঙা
দেখে নানা ফড়িঙের কি হেলিকপটার ওড়া শাদির টহলে?
টুনটুনি মহলে কিন্তু ফিরলে ভিন্ন কথা ছোট্ট পাখিরা লজ্জায়
কোথাও যায় না উড়ে। দূরের মন্দির ছেড়ে ভিক্ষু এক শুধু
প্রেয়সীর হাত ধরে দিগন্তের দিকে গেলে, কঠিন চীবর
তার গাত্র থেকে খসে পেছনে লুটায় ক্রমে অনন্ত অবধি।
পানির ফুলশয্যা থেকে হেলেদুলে কোথা যায় মিলনক্লান্ত হংসী?

 

ফুলশয্যার দ্বীপে 

পুরুষ নাভির নিচে পশু কি না মনেই থাকে না
যখন রবীন্দ্র গানে কিংবা সাতই মার্চের ভাষণে
নিজেকেই ফিরে পাই ধ্যানে ও চৈতন্যে শিহরিত।
তথাপি তোমার সঙ্গে এক টুকরো ঘাসের আশ্চর্য
সবুজে মিলিত হলে কোত্থেকে চারদিকে আসে স্রোত?
হঠাৎ চিৎকৃত তুমি: একি! ভাসে আমার বোনের
মরদেহ! নর কেহ মারে হিংস্র বলাৎকার শেষে!!  

ফুলশয্যার দ্বীপে ক্রমে আছড়ে পড়ে আরো মৃত নারী।

 

ভালোবাসা দেখাতেই চাই

এ দেশ সিনেমাটিক অবশেষে তবে? শুধু প্রেমের কবিতা
লিখলেও ভিলেন জোটে। তোমার সম্ভ্রম কিংবা প্রাণ নাশে সদা
তৎপর কারোরই নেই বিরাম অথবা ছেদ; ক্রমশ বর্ধিষ্ণু
হলে তারা নবতর খবরের নিচে হৃত একেক সংবাদ।
মানবীর গোর আর তথ্যের অনবরত বিস্মৃত কবর
চতুর্দিকে রেখে তোকে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ কিভাবে জানাই!

শার্ট খুলে ভালোবাসা দেখাতেই চাই তবু কার প্রহরায়?
বৃষ্টিহীন বহু দূরে দ্বাদশী চাঁদের নিচে ছাতার আড়ালে,
ম্লান বস্ত্রে হেঁটে যান কে? রবীন্দ্রনাথ? বঙ্গবন্ধু? দূরতর
নমঃশূদ্র বংশপিতা নাকি, নতশির, যিনি দেখেননি তাঁদের!