মুখলেছদের মরে যাওয়া মানুষ কেন মনে রাখে না
সেঁজুতি তখনো দেয়ালটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একটানা অপেক্ষা যে কত অসহ্য তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তীব্র দাবদাহে অস্থির শরীর আর মন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যে পরম বিরক্তির সেটাও অনুভূতির সবকয়টা প্রকোষ্ঠকে নাড়া দিচ্ছে। সেঁজুতি দাঁড়িয়ে আছে তার বাবার জন্য। তার বাবা পার্টি অফিসে বসে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামদলের ভূমিকা, বিশেষ করে ছোট বামদলগুলোর কী ভূমিকা হতে পারে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। এদিকে তাদের শুক্রাবাদের বাসায় যে খাবারের সামান্য ব্যবস্থাও নাই, সেদিকে তার খেয়াল নাই। সেঁজুতি অপেক্ষা করছে, তার বাবা বের হলে মায়ের শরীর খারাপ ও খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলবে।
সেঁজুতির বাবা, মুখলেছুর রহমান, বিআরডিবির একটা প্রকল্পে চাকরি করতো। ছোট চাকরি, সামান্য বেতনে তার স্ত্রীর সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হতো। তবুও মফস্বল শহরে কোনরকমে দিন গুজরান হতো। অভাব আর হা করা দারিদ্র্য তার খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষণ করা। কৃষক আর শ্রমিকদের কাছ থেকে দেখা, তাদের বিপন্ন সময়ের চিত্র অবলোকন করার ফলে, কোন ধরনের পাঠ না থাকার পরেও সমাজতান্ত্রিক চেতনার অস্ফুট বিকাশ হয়েছিল উনার মধ্যে। যেহেতু তাড়না আর পীড়ন ছিল, সেহেতু সমাজতান্ত্রিক মন মানসিকতার মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা খুব অবান্তর ছিল না। তেমনি করেই মিল্লাত ভাই, শামসুদ্দিন ভাই, তারা ভাই, শমশের ভাইদের সাথে পরিচয়। এর মধ্যে পরম সখ্যতা হয় তারা ভাইয়ের সাথে। সেই-ই প্রথম মার্কসবাদী দর্শন, নিপীড়িত মানুষের হাহাকার, এঙ্গেলসের দর্শন বোঝাতো।
বস্তুত তার ভেতরে থাকা দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য একটা সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নই তাড়িত হয়ে সমাজবাদী দলের সাথে জড়িয়ে পড়া। তারা ভাই যখন কথা বলতো তখন মুখলেছ সাহেব দিব্যি যেন তার সামনে একটা সমতার পৃথিবী দেখতো। সমস্যা হলো, মাও সেতুং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে যে গণচীন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন, সেই পথটি তার কাছে কন্টকময় লাগে। তারপর বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক তত্ত্ব পাঠের পরে, যখন জ্যাক লন্ডনের আয়রন হিল উপন্যাসটি একদমে পড়ে ফেলে, তখন তার ভেতর স্বয়ং জ্যাক লন্ডনই তাড়া দিতে থাকে একটা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার!
মুখলেছ সাহেব তখনো সাহেব কথাটি বর্জন করেননি, কেউ বললে প্রতিবাদ করতেন না। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ যখন ধীরে ধীরে হতে থাকলো, তখন নাম বলার সময় বিনয়ের সহিত মুখলেছুর রহমান বলতেন। কেউ সাহেব বললে মৃদু প্রতিবাদও করতেন। যেহেতু পদ পদবীতে বড় কেউ ছিলেন না, সেহেতু দোকানদারসহ বাকীরাও ভাই বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন।
এইভাবেই কৃষক-শ্রমিক-মজুর শ্রেণির মানুষের জন্য তার ভাবনা ক্রমশ থিতু হতে থাকে। এরমধ্যেই সরকারি চাটুকারদের কেউ কেউ এই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার খবরও পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে, ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে, আরও একটি প্রকল্প শুরু হলে মুখলেছ সাহেবকে আর বিবেচনা করা হয় না। তিনি চাকরি হারান। চাকরি হারানোর পর মুখলেছ সাহেবের সত্যিকার ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর প্রলেতারিয়েতের সাথে তীব্রতম পরিচয় ঘটে।
একদিন রেললাইনের পাশে থাকা ঘিঞ্জিমার্কা সমাজবাদী দলের অফিসে পৌঁছান। তার চেহারাও ঘরটির মতন বিধ্বস্ত হয়ে ওঠে। তখনো অফিসে কেউ আসেনি। তিনি মুলত তারা ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে তবে তারা ভাই আসে।
তারা ভাই এসেই জিজ্ঞাসা করে—
‘কী মুখলেছ ভাই, এমন বিপর্যস্ত লাগছে কেন?’
‘তারা ভাই, বড্ড ঝামেলায় পড়ে গেছি।’
‘কি ঝামেলা?’
‘আমার চাকরি চলে গেছে, অর্থাৎ নতুন প্রকল্পে আমাকে নেয় নাই।’
‘কী বলেন, এটা কি মগের মুল্লুক, সবাইকে প্রকল্পে নিবে আর আপনাকে নিবে না!’
‘তারা ভাই, বড্ড বিপদে পড়ে যাব, ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে, তাদের কিছু করবার সাধ্য নাই, তাদের পড়ালেখা না বন্ধ হয়ে যায়।’
তারা ভাই তাকে আশ্বস্ত করলেও মুখলেছের অস্বস্তি কাটে না। সেদিন বিমর্ষ মন নিয়ে বাড়ি ফিরে। বারবার তাকায় সেঁজুতি আর ফারহানের দিকে। তার সমস্ত চিন্তা তখন মার্কস-এঙ্গেলসের তত্ত্ব থেকে ছেলেমেয়েদের মুখে নিবদ্ধ হয়। কিছুই ঠিক করে ভাবতে পারে না। এপাশ-ওপাশ করে সারারাত কেটে যায়। ফজরের আযানের সাথে সাথেই উঠে পড়ে। মূলত সারারাতই নির্ঘুম কাটে তার। তবুও সকালে নিয়ম করে অফিসে যাবার সময় অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু সে অফিসে না গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে তারা ভাইয়ের কাছে যায়। তারা ভাই তার আদি-অন্ত জানে।
তারা ভাই মুখলেছকে সাথে নিয়ে বিআরডিবি অফিসে যান। উপ-পরিচালকের সাথে কথা বলেন। উপ-পরিচালক অত্যন্ত সজ্জন ভদ্রলোক। তিনি যথেষ্ট সুন্দর আচরণ করেন। তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পে মুখলেছ সাহেবের নামসহ সকলের নামই পাঠান। কিন্তু কী এক অজানা কারণে উনার নামটি প্রকল্প থেকে বাদ দেন, সেটা তার কাছেও রহস্য। উপ-পরিচালক তারা ভাইকে আস্বস্ত করেন, তিনি যেন এই প্রকল্পে কাজ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষার পরও মুখলেছ সেই চাকরি আর ফিরে পায় না।
মাস শেষ হতে না হতেই মুখলেছের স্ত্রী টের পান অশনি সংকেতের। তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করে তার এমন অবস্থা কেন? কিন্তু মুখলেছের কাছ থেকে যে উত্তর পায় তাতে তার মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা।
মুখলেছ কোনো উপায়ান্তর না দেখে তারা ভাইয়ের কাছে ছুটে যায়। তার দুরবস্থার কথা জানায়। সেঁজুতি সেবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেবার কথা, আর ছোট ছেলেটা নবম শ্রেণিতে পড়ে।
এমন বিপর্যস্ত সময়ে অর্থনৈতিক টানাপড়েন প্রকট হয়ে ওঠে। এর তার কাছ থেকে ধার-দেনা করতে থাকে। দারিদ্র্য এমন এক বিস্ময়কর পরিস্থিতি, যাতে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।
দোকানদার, স্কুলের বকেয়া, কলেজের ফরম ফিলাপের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়ে। সে সময় মুখলেছের সামনে অন্ধকার নেমে আসে। অন্ধকারের সামনে দিকবিদিকশূন্য অবস্থায় শুধুমাত্র তারা ভাই-ই ভরসার মুখ।
মুখলেছ তারা ভাইয়ের বাসায় ঘন ঘন যাতায়াতে তার পরিবারও বাঁকা চোখে দেখতে থাকে তাকে। তারা ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের তাকানোর ভঙ্গি তাকে অপ্রস্তুত করে তোলে। তবুও তারা ভাই ছাড়া আপন আর কাউকেই সে ভাবতে পারে না।
তারা ভাইকে বলে এমতাবস্থায় কী করার? তারা ভাই নিরুত্তর থাকে কিন্তু ভাবনায় মুখলেছের অসহায় পরিবার। অবশেষে মুখলেছকে কয়েকটি টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয়। এবং একটি আড়ৎ-এ হিসাবের কাজ দেয়। কিন্তু এতে সামান্য খাবারের ব্যবস্থা হলেও, ছেলেমেয়েদের স্কুল ও কলেজের বেতন, ফরমফিলাপের সুরাহা হয় না। মুখলেছ যখন রাস্তায় হাঁটতে থাকে তার বড় বড় বিল্ডিংগুলোর চাকচিক্য যেন পরিহাস করতে থাকে। ইচ্ছে করে সব গুড়িয়ে মিল্লাত ভাইদের কথার মত একটা সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলার।
এইভাবে কোনরকমে সেঁজুতি পরীক্ষা দেয়। এর মধ্যে আড়ৎ-এর কাজে মুখলেছের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই মুখলেছকে সমাজবাদী দলের প্রাথমিক সদস্য করে নেয়।
এইসকল আলোচনায় মুখলেছের এখন প্রবল মনোযোগ থাকে না। বিরস মুখে এদের আলোচনা শোনে। আগ্রহ উদ্দীপনা পায় না। সে এখন তারা ভাইয়ের সাথেই আলোচনা করতে চায়।
তারা ভাই তাকে জানান যে, সে কেন্দ্রীয় নেতা সুকমল বড়ুয়া, বান্না ভাই, কিসলু ভাইয়ের সাথে কথা বলেছেন। দেখা যাক কি হয়। মুখলেছ জানতে চায়, ওখানে অর্থাৎ ঢাকায় গিয়ে কি করবেন! তারা ভাই নিরুত্তর থাকে, তাই বলে চিন্তাহীন নয়।
এরমধ্যেই একদিন খবর আসে, বান্না ভাই, কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য, তারা ভাইকে খবর পাঠান। তারা ভাই খুশিতে টগবগিয়ে ওঠে। বান্না ভাই, মুখলেছকে ঢাকায় যেতে বলেন। মুখলেছ যখন এই খবরটা পায় তখন তার এতদিনের পরিচিত শিকড়ের টান অনুভব করেন, যার নাম অহেতুক মায়া। এই মায়ার জন্য এই মফস্বল শহর ছেড়ে ঢাকা শহরে যাওয়াটা খুব কষ্টের লাগে। কিন্তু পরিস্থিতি যখন প্রতিকুল হয়ে ওঠে তখন সেটায় আরও আরও প্রতিকূলতা দেখা দেয়। সেঁজুতির মায়ের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সামান্য ঔষধ খেলেও, রোগ মাঝে মাঝে তীব্র হয়ে ওঠে।
কোন এক ভোরে ফজরের নামাযের পর পরই সবার অলক্ষ্যেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর আগেই কথা হয়, বান্না ভাই পার্টির এক সমর্থক যিনি বিদেশ থাকেন তিনি মুখলেছ ও তার পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করেন, তার বিল্ডিংয়ের পাশে স্টোর রুম ও ড্রাইভারের রুম মিলিয়ে এদের থাকতে হবে। আর কাজ হিসেবে তোপখানা রোডের পার্টির অফিস দেখাশোনা এবং বাংলাবাজারের একটি প্রকাশনী মূলত গাইড বই বিক্রেতার দোকানে প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করা। দুটা মিলিয়ে কোনরকম চলা যায়, যেহেতু বাসা ভাড়া দিতে হয় না।
মুখলেছের পার্টি অফিসে থাকতে, বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক তত্ত্ব ও এর বহুবিধ বিশ্লেষণ, তর্ক, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি দরদমাখা বক্তব্য তার মফস্বল শহরে শোনা আলাপ থেকে উচ্চতর লাগে। বিশ্লেষণ ও গণমানুষের মুক্তির কথায় মুখলেছ একটা স্বপ্ন খুঁজে পায়। শ্রমিকের ধনীকশ্রেণির হাতে শোষণ ও বঞ্চনার বিষয়টি এমনভাবে পীড়িত করতো যে, তার সংসারের ঘোর অমানিশার কথা মনেই থাকতো না।
এমন একটি দিনেই সেঁজুতি তার বাবার জন্য অপেক্ষা করে। অবশেষে বিরক্তি আর উৎকণ্ঠা নিয়েই পার্টি অফিসে ঢুকে পড়ে। যেহেতু ছোট অফিসে, সেঁজুতির আগমনে প্রায় সবাই কিছুটা সচকিত হয়ে পড়ে। তার বাবা এগিয়ে আসলে বাবাকে মার অসুস্থতার কথা ও রাতের খাবারের কথা বললে তার বাবা লজ্জায় স্তিমিত হয়ে যায়। সেদিন সুকমল বড়ুয়া দাদাও অফিসে ছিলেন। বান্না ভাইকে অর্ডার দেন মুখলেছের বিষয়ে দেখভাল করতে। বান্না ভাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার সকল ব্যবস্থা করে দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উনার হার্টের সমস্যার প্রকটতা দেখা দেয়। কিছুদিন হাসপাতালে থাকলেও, প্রেসক্রিপশন ও ডিসভার্জের কাগজ নিয়ে বাসায় ফেরে।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। সেঁজুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে চান্স পান। মুখলেছ অত্যন্ত খুশি হন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও টাকা পয়সার দরকার হয়, সেই খবর তারা ভাই পেলে মুখলেছের স্ত্রীর অসুস্থতা ও সেঁজুতির ভর্তির জন্য কিছু টাকা পাঠান।
তারা ভাই সকল বিপদেই তার পাশে এসে দাঁড়ান। এটি মুখলেছের বড় ভরসার কারণ।
সেঁজুতি তার বাবার পার্টি অফিসে প্রায়ই যায়, সেখানে অনেক নেতাকর্মীদের সাথে দেখা পরিচয় হয়। কেউ কেউ সেঁজুতিকে পার্টির রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার কথাও বলে। সেঁজুতিরও এমন ইচ্ছা যে হয় না, তা না। তার ভেতরেও এক সাম্যবাদী সমাজের চিত্র তীব্রভাবে বাসা বাধে। মূলত মণীষা চক্রবর্তীর রাজনৈতিক দৃঢ়তা তাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে। তার রাজনৈতিক আইডল মণীষা চক্রবর্তী, কিন্তু পার্টির অন্যান্য নেতাদের সাথে মণীষার রাজনৈতিক দীপ্তি মেলাতে পারে না। এটাও তাকে ভাবিত করে।
একদিন তোপখানা রোডে একা একাই হেঁটে যাচ্ছিল সেঁজুতি। সেঁজুতির কাধের ব্যাগে যে মূল্যবান কিছুই ছিল না, তা তার জানা থাকলেও ছিনতাইকারীর জানা ছিল না। তাই ছো মেরে ছিনতাইকারী তার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়াতে থাকে। আর সেই পথের উল্টোদিকে আকাশ তা দেখতে পায়, সে ছিনতাইকারীর হাত থেকে ব্য্গটি উদ্ধার করে। আকাশকে সেঁজুতি পার্টি অফিসে দু’একবার দেখেছিল, তেমনভাবে কোন কথা হয়নি। আজই প্রথম কথা হলো। আজই জানতে পারলো বামজোট গঠন হচ্ছে এবং তার সমাজবাদী দল সেই জোটে যাচ্ছে। তাদের বড় নেতা সুকমল বড়ুয়া আজ দীর্ঘ বক্তব্য দিবেন। আজ পলিটব্যুরো সদস্যদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভার পর সুকমল বড়ুয়া বিস্তারিত সাধারণ সভায় উপস্থাপন করবেন।
যথারীতি পলিটব্যুরো সদস্যদের সাথে বৈঠক শেষে সুকমল বড়ুয়া সবিস্তারে বলেন, ‘আজ গণতন্ত্র হুমকির মুখে। সেই সাথে সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের ন্যুনতম বিকাশও আমাদের সমাজ বিদ্যমান থাকছে না। পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে সাথে মানুষের মনে প্রোথিত হয়েছে ভোগবাদ। এর ফলে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র দুর্নীতি। দুর্নীতি করা ক্ষমতাসীনদের জন্য লাইসেন্সের স্বীকৃতির নবায়ন। আমাদের বাম জোট লোকদেখানো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উন্নতি দেখা গেলে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
আকাশের পেছনে দাঁড়িয়ে এইসব কথা যখন শুনছিলো তখন সেখানে সেঁজুতির সাথে সাথে মুখলেছও ছিল। সে এইটুকু আশাবাদ মনের মধ্যে রাখে এখনো দরিদ্র, অসহায়, শ্রমজীবী মানুষের জন্য চিন্তা করার মানুষ এদেশে বিদ্যমান।
কিন্তু দু’একদিনের মধ্যেই হঠাৎ সমাজবাদী দল বামদলের জোট থেকে বেরিয়ে আসে এবং সরকারি জোটে গিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত মুখলেছের মনে বিরূপ ছায়া ফেলে।
রাজনৈতিক এইসব পরিস্থিতির মধ্যেই মুখলেছ নানা প্রশ্নের সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। মুখলেছের স্ত্রী আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নিতে হয়। অর্থনৈতিক সংকট প্রকটতর হয়। দিশেহারা অবস্থায় পড়ে মুখলেছ। হাসপাতাল, বাংলাবাজারে যেতে আসতেই সব সময় চলে যায়। পার্টি অফিসে যাওয়া হয় না বললেই চলে।
এরমধ্যে পৃথিবীর কোন খবরের দিকে তাকাবার অবস্থায় নাই। সে এক নিরন্তর বৃত্তে পাক খেতে থাকে। তারা ভাই নিয়মিত খবর নেয়, বান্না ভাইও খবর নেয়। বান্না ভাই সুকমল বড়ুয়াকে মুখলেছের দুর্দশার কথা জানায়। তার চেয়েও বড় কথা নিজের সুখের কথা তো মুখলেছ ভাবেনি, ভেবেছে শোষণমুক্ত সমাজের কথা।
এমনি করে কষ্টেসৃষ্টে দিনরাত যাচ্ছে। তার দল শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়েই থাকবে বলে যে বিশ্বাস ছিল, তার উপর গুড়েবালি দিয়ে তাদের সর্বোচ্চ নেতা প্রায় অন্যসকল নেতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেই বামজোট ছেড়ে আসে। সেই ফলাফল দেখা যায়, টেলিভিশনের পর্দায় সুকমল বড়ুয়ার মন্ত্রীসভায় ডাক পাওয়া। সেদিন মুখলেছের প্রচণ্ড মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অনবরত খারাপ খবর আসতে থাকে। যাই হোক হাসপাতাল ও পরিবারের জন্য ক্রমাগত চাপে ভেঙে গেলেও, একটা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার সর্বশেষ স্বপ্ন যখন ক্ষমতার ধাপে ধাপে খাপে খাপে পা রাখে, তখন মুখলেছের কষ্ট হয়। উপরন্তু বুর্জোয়া মন্ত্রীসভায় তাদের নেতা অংশগ্রহণ করায় মনের ভেতর একটা দ্রোহ নিয়ে পার্টি অফিসে যায় মুখলেছ।
মন্ত্রীর গাড়ির দিকে খুব দ্রুত এগিয়ে যায়, নিরাপত্তাকর্মীরা মুখলেছকে আটকে দেয়, এরপর সে মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে, ‘সারাজীবন বুর্জোয়া রাজনীতির বিরোধিতা করলেও, এখন সেই রাজনীতির ধ্বজাধারী হয়েছ, তল্পিবাহক হয়েছ?’ এইসব কথা মন্ত্রীর কানে পৌঁছালেও সে ভাবলেশহীন থাকে। শুধু প্রধান সিকিউরিটিকে বলে ‘ট্রিট হিম ওয়েল।’
এরপর খুব দ্রুত সিকিউরিটির লোকজন মুখলেছের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে মুখলেছকে দুস্কৃতিকারী হিসেবে বেধরক পেটাতে থাকে। যেহেতু বান্না ভাই ওখানে অনুপস্থিত ছিলো, মুখলেছকে বাচানোর মত কেউ ছিলো না।
কেউ একজন মুখলেছকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে এবং সেঁজুতিকে ফোন করে জানায়। সেঁজুতি আর ফারহান যখন হাসপাতালে পৌছে, তখন মুখলেছের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে। সেঁজুতি নিরুপায় হয়ে বান্না ভাইকে ফোন দেয়। বান্না ভাই হাসপাতালে পৌঁছে মুখলেছকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। বান্না ভাই মুখলেছের কাছে গেলে তিনি মুখলেছের ব্যথাতুর চোখে যেন সকল নিপীড়িত মানুষের হাহাকার দেখতে পায়। আইসিইউর সামনে সেঁজুতির সাথে অপেক্ষা করে ফারহান। অবশেষে রাত দু’টায় খবর আসে মুখলেছের মৃত্যুর।
সেঁজুতি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, পাশে ফারহান। রাত তিনটায় ছুটে আসে বান্না ভাই। বান্না ভাই সান্ত্বনার হাত সেঁজুতির মাথার উপর রাখলে, তখনি সে বুঝে তারা খুব অসহায় এবং তার বাবার মৃত্যু শুধুমাত্র একটা আচড়।
মুখলেছদের মরে যাওয়া কেন মানুষ মনে রাখে না এটি গল্পকার সাখাওয়াত বকুলের একটি সদ্য প্রকাশিত একটি গল্প। যা "প্রতিধ্বনি"-তে প্রকাশ হয়েছে। গল্পকার সাখাওয়াত বকুলের গল্পগুলো নিছক কোনো গল্প নয়। তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন সমাজের অসংগতি। পূর্ব-ইতিহাস,ঐতিহ্য ও রাজনীতি। অনেকেই গল্প মানেই মনে করে প্রেম,ভালোবাডা, বিরহ ইত্যাদি। রাজনীতি,দর্শন, এগুলোও যে গল্পের অংশ তা অনেকেই মনেই করে না। সাখাওয়াত বকুলের গল্পগুলো এ দিক থেকে ব্যতিক্রম। সাখাওয়াত বকুলের গল্পের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। "মুখলেছদের মরে যাওয়া কেন মানুষ মনে রাখে না" এটি এমনই একটি গল্প। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে মুখলেছ পার্টি অফিসে বসে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামদলের ভূমিকা, বিশেষ করে ছোট বামদলগুলোর কী ভূমিকা হতে পারে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এদিকে তার বাসায় যে খাবারের সামান্য ব্যবস্থাও নাই, সেদিকে তার খেয়াল নাই। মেয়ের লেখা পড়ার খরচ দিতে পারে না। স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ব্যবস্থা করতে না পারলেও তিনি রাজনীতিতে একজন চৌকস কর্মী হিসেবে নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতিতে নিজের জীবন,পরিবার উৎসর্গ করে মুখলেছরা পরিশেষে মন্ত্রী হয় ‘সারাজীবন বুর্জোয়া রাজনীতির বিরোধিতা করা লোকজন। পরিশেষে এসব মন্ত্রীর লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে মার খেয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় মুখলেছদের মতো ত্যাগী কর্মীরা। মুখলেছদের কেউ মনে রাখে না। সাখাওয়াত বকুলের এই গল্প যেন নীরবে আমাদেরকে অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে। ছোট গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটাই ছোট ছোট কথা দিয়ে বড় বড় অনেক বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
mujib rahman
মে ০৯, ২০২৪ ০৯:৪২
মা যেমন বাচ্চা পেটে আসা থেকে শুরু করে তার পয়দা হওয়ার পরে-ও অন্তহীন ভালোবাসায় তাকে লালন পালন করে বড় করে তুলে--- ঠিক তেমনি করেই গল্পকে শাখাওয়াত বকুল গল্পে আবির্ভাব ঘটায়। নিন্মশ্রেণী, উচ্চশ্রেণী,মধ্যবিত্ত সকলের জন্য ছোট বড় সকল পাঠক আনন্দ নিয়ে মজা করে ভালোবেসে শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ মনে করে বকুলের লেখা গল্প পড়ে। তাদের মধ্যে আমিও একজন
শেহেলী
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ১৫:০৪
মা যেমন বাচ্চা পেটে আসা থেকে শুরু করে তার পয়দা হওয়ার পরে-ও অন্তহীন ভালোবাসায় তাকে লালন পালন করে বড় করে তুলে--- ঠিক তেমনি করেই গল্পকে শাখাওয়াত বকুল গল্পে আবির্ভাব ঘটায়। নিন্মশ্রেণী, উচ্চশ্রেণী,মধ্যবিত্ত সকলের জন্য ছোট বড় সকল পাঠক আনন্দ নিয়ে মজা করে ভালোবেসে শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ মনে করে বকুলের লেখা গল্প পড়ে। তাদের মধ্যে আমিও একজন
শেহেলী
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ১৫:০৫
মা যেমন বাচ্চা পেটে আসা থেকে শুরু করে তার পয়দা হওয়ার পরে-ও অন্তহীন ভালোবাসায় তাকে লালন পালন করে বড় করে তুলে--- ঠিক তেমনি করেই গল্পকে শাখাওয়াত বকুল গল্পে আবির্ভাব ঘটায়। নিন্মশ্রেণী, উচ্চশ্রেণী,মধ্যবিত্ত সকলের জন্য ছোট বড় সকল পাঠক আনন্দ নিয়ে মজা করে ভালোবেসে শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ মনে করে বকুলের লেখা গল্প পড়ে। তাদের মধ্যে আমিও একজন
শেহেলী
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ১৫:০৭
প্রিয় স্যার আপনার প্রতিটি লেখায় খুব চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন।
মোবাস্বির হোসাইন
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২০:২৮
গল্পের বিষয়বস্তু যখন পরিপার্শ্বে বিরাজমান থাকে, রাষ্ট্রীয়/ সামাজিক নানা বাস্তবতার কারণে সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়না, হলেও তা প্রকাশে নানা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, গুণীলেখক মাত্রেই তা সাহিত্য রূপ দেন,যেমনটি ঘটেছে শাখাওয়াত বকুলের বেলায়
সুরঞ্জিত বাড়ই
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২১:১৬
গল্পের বিষয়বস্তু যখন পরিপার্শ্বে বিরাজমান থাকে, রাষ্ট্রীয়/ সামাজিক নানা বাস্তবতার কারণে সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়না, হলেও তা প্রকাশে নানা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, গুণীলেখক মাত্রেই তা সাহিত্য রূপ দেন,যেমনটি ঘটেছে শাখাওয়াত বকুলের বেলায়
সুরঞ্জিত বাড়ই
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২১:১৪
পুরো গল্প মনযোগ দিয়ে পড়লাম। আমরা চায়ের আড্ডায় সাহিত্যের আলোচনায় প্রায়শই বলি ওমুক একজন সাহসী লেখক, ওমুকের ওই লেখাটা মারাত্মক সাহসী লেখা। এখন গল্পকার শাখাওয়াত বকুলের এই লেখাটা পড়েও মনে হচ্ছে চায়ের আড্ডায় সাহিত্যের আলাপকালে বলা যেতেই পারে, শাখাওয়াত বকুলও সাহসী লেখক। এই গল্পে ওনি সেটার প্রমাণ রাখলেন। চমৎকার হয়েছে লেখা। গল্পে নিপুণভাবে সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে।
জীবন রবি
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২১:৪২
আপনি ভাই আরো অনেক ভাল গল্প লেখেন। সে তুলনায় এইটা একটু ম্লান। সাক্ষাতে আলাপ হবে। শুভেচ্ছা প্রিয়জন। সরকার আজিজ
সরকার আজিজ
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২২:৩২
আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে গল্পের মিল আছে। বাংলাদেশের বাম দলগুলোর ভণ্ডামির ইঙ্গিতবাহী এই গল্প। সসর্বগ্রাসী পুঁজিবাদ এবং অপরাজনীতির আগ্রাসনে আমরা সবাই আসলে মুখলেছুর রহমান, সবাই মূলত সেঁজুতি। গল্পকারকে ধন্যবাদ।
কাজী নাসির মামুন
এপ্রিল ২১, ২০২৪ ২৩:২৪
আরও আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা যেতো? তারপরও সুন্দর হয়েছে।
MD IMDADUL HAQUE
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ০০:৩০
গল্পের পটভূমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবন ব্যবস্থার এক অনন্য দলিল । মুখলেছরা মরে যায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের হাতে , অথচ ওরাই অমূল পরিবর্তন করতে চায় রাষ্ট্রের অবকাঠামো...... গল্পকার শাখাওয়াত বকুল বাংলাদেশে বাম রাজনৈতিক দলের ভেতর বাহির অবলোকন করেছেন গভীর ভাবে । সুবিধাবাদী রাজনৈতিক বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে গল্পের ভিতর।
সেলিম সাইফুল
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ০১:৫৮
অনেক কিছুই বাস্তবতা নিরীক্ষায় লেখা, চাকরি খোয়ানো, সুবিধা বাদীদের নীতি বিষর্জন দিয়ে সুবিধা গ্রহন, ট্রিট হিম ওয়েল এগুলোই মুখ্য উপস্থাপন, আমার মনে হয়েছ, অসাধারণ লেখা - সমাজকে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া.....
বাবুুলাল
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ০৭:২১
গল্পটা শুরুর পূর্বেই প্লট রেডি করা মনে হচ্ছে। কাফর্টম্যানশিপ ভালো। মুখলেস চরিত্রকে আরো ডিটেইলস করলে ভালো হতো। এন্টি মার্কিস্ট জনরায় ফেলবে অনেকে। তবে আমি বলবো এই গল্প লোকাল, আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতার গল্প।
সাঈদ ইসলাম
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ১৬:৪২
এটা তো গল্প না! বাস্তব সমাজের নির্মম কলম চিত্র। এভাবেই আদর্শের শব্দহীন বিয়োগ হয়, আর আমরা ক্ষনিকের জন্য হয়তবা স্তব্ধ হয়ে, পুনরায় ভোগবিলাসী জীবনের মোহাচ্ছন্নে আবিষ্ট হয়ে সময় পার করতে থাকি। সাধুবাদ গল্পকারকে, সময়ের সাহসী কথাগুলি গল্পচ্ছলে উচ্চারণে জন্য।
ড. নাজিম
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ২০:৩২
বাস্তবতা বড় কঠিন জিনিস যাহা গল্পের বাঁকে বাঁকে উঠে এসেছে,এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বড্ড কঠিন।
এস.কে সালাম
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ০০:০১
আমি আগেও বলতাম, আপনি এমন সব বিষয় লেখায় তুলে ধরেন বেশিরভাগ লেখক সেসব এড়িয়ে যেতে চায়। আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ইতিহাস হয়ে থাকবে লেখাটি।
মোঃ সিহাবুর রহমান
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ০৯:২২
গত কয়েকদিন ওয়াইফাই কানেক্ট ছিল না,তাই আগে পড়া হয়নি ভাই,. এখন একটানা পড়ে শেষ করলাম,চমৎকার চিন্তা থেকে লিখেছেন, এই সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে,লেখাটার গুরুত্ব আছে অনেক, ভালো লাগলো লিখাটা পড়তে পেরে,অনেক আগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, আত্মহত্যার অধিকার,পড়েছিলাম, সেই লিখাটাও মনে পরে গেলো,যদিও সেই লেখাটার সাথে, আপনার লেখাটার বেশিরভাগই মিল নেই,. আপনার জন্য শুভকামনা, আরো বেশি বেশি লিখে যান,আপনার কলম থেকে যেন, সত্য আর প্রতিবাদ বের হয়ে আসে,এটাই কামনা করি,..
জুনায়েদ হাসান
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ২২:২৩
লেখাটি পড়লাম । ভালো হয়েছে । তবে এখন কাজ হলো সেঁজুতিদের পাশে দাঁড়ানো...
কাঙাল শাহীন
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ২৩:৩৬
লেখায় ফুটে উঠেছে জীবনের কঠিন বাস্তবতায়ও নীতি আঁকড়ে ধরে থাকা, ন্যায়ের স্বপ্ন লালিত মানুষদেরকে পুঁজি করে আমাদের সমাজের লোভী-ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির মারপ্যাঁচে স্বপ্নগুলো ডুকরে কাঁদে। এইস্বপ্নগুলোর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, শুধু একত্রীকরণ।
আরেফিন
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ০৯:০৯
মুখলেছদের মরে যাওয়া কেন মানুষ মনে রাখে না এটি গল্পকার সাখাওয়াত বকুলের একটি সদ্য প্রকাশিত একটি গল্প। যা "প্রতিধ্বনি"-তে প্রকাশ হয়েছে। গল্পকার সাখাওয়াত বকুলের গল্পগুলো নিছক কোনো গল্প নয়। তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন সমাজের অসংগতি। পূর্ব-ইতিহাস,ঐতিহ্য ও রাজনীতি। অনেকেই গল্প মানেই মনে করে প্রেম,ভালোবাডা, বিরহ ইত্যাদি। রাজনীতি,দর্শন, এগুলোও যে গল্পের অংশ তা অনেকেই মনেই করে না। সাখাওয়াত বকুলের গল্পগুলো এ দিক থেকে ব্যতিক্রম। সাখাওয়াত বকুলের গল্পের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। "মুখলেছদের মরে যাওয়া কেন মানুষ মনে রাখে না" এটি এমনই একটি গল্প। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে মুখলেছ পার্টি অফিসে বসে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বামদলের ভূমিকা, বিশেষ করে ছোট বামদলগুলোর কী ভূমিকা হতে পারে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এদিকে তার বাসায় যে খাবারের সামান্য ব্যবস্থাও নাই, সেদিকে তার খেয়াল নাই। মেয়ের লেখা পড়ার খরচ দিতে পারে না। স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ব্যবস্থা করতে না পারলেও তিনি রাজনীতিতে একজন চৌকস কর্মী হিসেবে নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতিতে নিজের জীবন,পরিবার উৎসর্গ করে মুখলেছরা পরিশেষে মন্ত্রী হয় ‘সারাজীবন বুর্জোয়া রাজনীতির বিরোধিতা করা লোকজন। পরিশেষে এসব মন্ত্রীর লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে মার খেয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় মুখলেছদের মতো ত্যাগী কর্মীরা। মুখলেছদের কেউ মনে রাখে না। সাখাওয়াত বকুলের এই গল্প যেন নীরবে আমাদেরকে অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে। ছোট গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটাই ছোট ছোট কথা দিয়ে বড় বড় অনেক বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
মুজীব রাহমান
মে ০৯, ২০২৪ ০৯:৩৩