বন্ধন ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

 

নদীটা মাঝরাতে

সন্ধ্যা নামে, ক্রমশ নদীর দৃশ্য মূছে যায়
সলতে পোড়া প্রদীপ জ্বলে না জেনেও
বারবার তোমার কাছেই আসি–
নদী এক বিস্তীর্ণ মাঠের মতো অন্ধকার;
উল্টানো ছৈ নৌকো চোখ–
তুমি ছুঁয়ে যাও বাতাসের মতো

প্রচণ্ড রোদের দিনে ফুল দেখি, শুনি পাখি 
দেখি নদী টলমল জল নিয়ে চেয়ে থাকে;
সন্ধ্যায় দেখি না ফুল, না শুনি পাখি,
সন্ধ্যা অলুক্ষুণে এক চোখ আন্ধার মতো

অনুভব করি, তুমি রাত হয়ে জড়িয়ে আছ,
অন্ধকার তোমার শাড়ির আঁচল
জোনাকি কানের দুল
বাদুড়ের পাখনা ঝাপ্টানো শব্দ তোমার হাঁটা...
তুমিও কি তবে অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে জেনে গেছ
নদীটা শুকিয়ে যায় মাঝরাতে নদের চানের নিঃশ্বাসে


সেলফি

একটা সেলফির দিকে তাকিয়ে
আগ্নেয়গিরি দেখছি,
ফুটন্ত লাভার আলো এসে
পড়েছে তোমার মুখে
সাগরে তখন তিমিদের প্রণয়কাল
প্রোতাশ্রয়ে ক্লান্ত জাহাজ
নাবিকের ছুটি,
হঠাৎ হোকুসাইর চিত্রকর্ম থেকে
আছড়ে পড়ল ঢেউ

তোমার হাসিতে বয়ে গেল সুনামি
ভেসে গেল প্রশান্তের উপকূল,
নোনাবনে আমি তখন
ভাসিয়েছি ভেলা– 
দূর কোনো পলিনেশীয় দ্বীপে
সূর্যাস্তের গান গেয়ে
রঙিন ডানার পাখি তখন ফিরল ডালে,
সাত রাজপূত্র ঘোড়া নিয়ে ছুটল
ইন্দোচীনের দুর্গম পথে–
হঠাৎ সেলফির ফ্লাশে
উড়ে গেল পাখি,
অজানায় হারাল সাতটি ঘোড়া, 
আমি ভেসে গেলাম প্রশান্তে


যুবতী নদী

ও যুবতী নদী, 
আমার সাঁতার জানা নাই,
তোমার শরীর ভরা কুমির
আমার মরার সাধ নাই!
    
ঢেউ তুলে বুকে
ডাকছো কেনো হায়!
পথ ভুলেছি বলে 
ভাবছো কি আমায়
মুখ দেবো জলে!
আমার জলের পিয়াস নাই।

ও যুবতী নদী, 
তোমার খেয়া মাঝি নাই,
আমার বাড়ি ওইপাড়ে 
আমি কেমনে বাড়ি যাই!
আমার বাড়ি বহুদূর,
আমার লাগি বসে আছে
ঘাটবাঁধা পুকুর–
তোমার ঘোলা জলে
মুখ দেখে লাভ নাই,
কমলে জোয়ার যাবো বাড়ি
তোমার কেনো ভাঁটা নাই!


বন্ধন

তার হাতগুলো নদী, অনায়াসে আঁকড়ে ধরে
টলোমলো জলের মতো আঙুলের স্পর্শ,
তার বাহুবন্ধন থেকে আলতো গতিতে হেঁটে যাই 
শরীরে শীতল অনুভূতি... নদী হবে বলেছিলে,
বালুচরে হেঁটে হেঁটে তুমি জল হতে চেয়েছিলে,

খুলে খুলে জলের গীট অনেকটা পথ চলে এসেছি
আমায় আঁকড়ে ধরে আছো তবু বাতাসের আঙুলে;
ভুলে গেছি একদিন তুমি বাতাসও হতে চেয়েছিলে