দুই পক্ষ ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

দুই পক্ষ

তোমার মাথার ভেতর পল্লীগীতির সুরের মতন হাহাকার
তোমার বুকের ভেতর স্বর্গের একাকী আদমের বিষণ্নতা।

তুমি বুনো ঘোটক, ক্ষেপা পবনের সাথে যার কেশরের সখ্য,
তুমি পৃথিবীর দূর কোণে সাগরতীরের বিদ্যুৎহীন এক গ্রাম
তোমার বালুতটে গাঢ় অন্ধকারে মিলিত হন মানুষ ও ঈশ্বর।

তোমার মন আর তুমি ধরো না বাজি হয়ে দুই পক্ষ;
তোমার মন স্বয়ং শিব, তারে তুমি বাঁধবে যদি
আগে বলো: ‘ওম নম: শিবায়’!

 

আত্মসমর্পন

সম্প্রীতির এই দিনে কেন আজ ডাক নাম খোঁজ?
যে কোনো একটি নাম ধরে ডাকো,
আমি কথা বলে উঠবো পাখির সুরে;
যে কোনো একটি শব্দ করে ডাকলে
সে কথা বলে উঠবে ফুলের ভাষায়;
কোনো বচন ছাড়াই অনুচ্চারে ডাকো
ওরা সব দুলে উঠবে সমন্বিত ঢেউ।

সম্প্রীতির এই দিনে আমার কোনো ডাক নাম নেই
ভুলে গেছি যেখানে ছিলো যত ক্ষত ও অসম্মান;
জেনে রাখো বন্ধু আমার, আমি ঘাস—শুয়ে আছি পথে
মনে মনে আমাকে ভেবে এই পথে কিছুটা হাঁটো
পায়ের স্পর্শ বলে দেবে তুমি ডাকতে এসেছো।

 

জাদুর বাক্সে লুকিয়ে থাকা গান

তোমারে কে দেবে শুশ্রুষা?
কপালে হাত রেখে কে তোমার মাপবে জ্বরের তাপ?
তুমি ছাড়া কার কাছে আর রাখবে জমা অভিমান, আহ্লাদ?

দারুণ কোমল শরৎ বাড়ির দাওয়ায়, ঘাসে
যেভাবে আসে একপেশে গরীব প্রেমিকের মতন নিশ্চুপে
সেইভাবে তুমি নিজেরই কপালে খেয়ো চুমু,
ঝকমকে উজ্জ্বল রোদেলা দিন দেখে
আহ্লাদী প্রণয়ীর মতন নিজেকে বলো,
চলো আজ অফিস কামাই করি
ঘুরতে যাই নদীর ধারে;
তারপর ফিরতি পথে নিজেকে দিও কিনে
এক তোড়া দোলনচাপা উপহার।

তোমার পায়ের পাতায় খাবে চুমু
কল্লোলবতী দারুণ সিন্ধুতট,
তোমারে পাঠাবে চিঠি মাঠের পরে নামতে থাকা রোদ,
তোমারে শোনাবে গান
বুকের ভেতর জাদুর বাক্সে লুকিয়ে থাকা
ভর সন্ধ্যার অকৃত্রিম গ্রাম।

তুমি নিজেরে রেখো নিজের কাছাকাছি
দিও তোমার কোমল পরশখানি নিজেরে আগে;
তুমি আর ব্রহ্মাণ্ড একই সুরে বাঁধা গান
তোমারে একলা করে, কোথায় আছে তেমন সংসার!

 

আশ্লেষ

তোমার সাথে খাবো নুন-ভাত,
বর্ষার দিনে জলছাদহীন ঘরে
দেয়াল চুঁইয়ে পড়া জলে
যখন ভেসে যাবে মেঝে,
ফ্লোরে পাতা তোষক-বিছানা
গোছাতে গোছাতে
দু'জনে করবো হাসাহাসি,
দেয়াল ঘেঁষে বসে থাকবো
আধ ভাঁজ করা বিছানায়,
হঠাৎ তোমার ঠোঁটের দিকে চেয়ে
আমার নেশা হবে খুব,
বৃষ্টির মধ্যে ভর সন্ধ্যায়
আমরা নামাবো তুমুল প্লাবন।

এর বেশি চাওয়া নেই,
ছিলো না কোনোদিন
তোমার সাথে খাবো নুন-ভাত
তুমি দেবে অমল চুমু
চোখের পাতায়,
তোমার শ্বাসের ঘ্রাণ নিতে নিতে
বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে যাবো,
প্রেমে, আলিঙ্গনে,
মৃত্যুর মত নিশ্চয়তায়।

 

তিয়াস

একটা আদর সিঁথির মুখে
একটা আদর গলায়

একটা আদর ঘাড়ে দিও
একটা চোখের পাতায়

পায়ের আঙুল তৃষিত খুব
আদর ঢেলে দিও

আম্রতরুর তৃষা ফুরায়
হয়ে মঞ্জরিত

হিয়ার তিয়াস আদর পেয়ে
আরো না হয় জাগুক

হাওয়ায় পাওয়া কিশলয়ে
ঝোড়ো কাঁপন লাগুক।