মাকিদ হায়দারের আলোচিত কবিতা

অ+ অ-

 

মাকিদ হায়দার

কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে, পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে। ষাটের দশকে তিনি কবিতা চর্চা শুরু করেন। তার উল্লেখযোগ্য বইরোদে ভিজে বাড়ি ফেরা, আপন আঁধারে একদিন, রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা, বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা, যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেনো আজ সুখে থাকে, কফিনের লোকটা, ও পার্থ ও প্রতিম, প্রিয় রোকানালী এবং মমুর সাথে সারা দুপুর। তিনি ২০১৯ সালে কবিতায় অবদানের জন্য পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন দেশের উল্লেখযোগ্য অনেক সাহিত্য পুরস্কার। মাকিদ হায়দার ১০ জুলাই ২০২৪ সালে ঢাকার মৃত্যুবরণ করেন।  

 

 

চন্দ্রাভিলাষী নারী

পূর্ণিমাতে পূর্ণ হলো
তোমার মনের সাধ
তুমি অথৈ জলে খুঁজেছিলে
পূর্ণিমারই চাঁদ

তুমি বাসতে ভাল জলের খেলা
ভয়াল নদী সাঁঝের বেলা
সেই জলের মাঝে খুঁজতে তুমি
দূর গগনের সাঁঝের তারা
মেঘের ছায়া
নীল সাগরে ভাসিয়ে দিতে
আমার অপরাধ
তুমি অথৈ জলে খুঁজেছিলে
পূর্ণিমারই চাঁদ

আজকে দেখ সবাই যেন
ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে
প্রাণের ভয়ে জলের দিকে
দাঁড়িয়ে আছে গাছের মত
গভীর শোকে স্তব্ধ পায়ে
নিঃস্ব জলের বুকের ভেতর
দাঁড়িয়ে আছে অষ্টপ্রহর

কিন্তু তবু দুঃখ আমার ভিন্নপ্রকার
মুষ্টিমেয় কয়টি লোকে
চালায় গাড়ি জ্বালায় বাতি
দিন দুপুরে ইচ্ছেমত ছিটিয়ে কাঁদা
শখের গাড়ি যাচ্ছে দেখো যাচ্ছে দেখো
রাজার মত নিজের বাড়ি
ছিটিয়ে থুথু
আমরা যারা দাঁড়িয়ে আছি
নিঃস্ব জলের বুকের ভেতর

চতুর্দিকে চোখের নিচে শবের খেলা
কলার পাতে নিজের ছেলে
শুইয়ে দিয়ে ভাবছি শুধু
এবার থেকে তোমার চোখে পড়িয়ে দেব
কোন সে মায়ার ফাঁদ
তুমি অথৈ জলে খুঁজেছিলে
পূর্ণিমারই চাঁদ

 

যে আমাকে প্রেম শেখালো

যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে

সে যেন আজ রানীর মত
ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে
পা ছড়িয়ে সবার কাছে
বসতে পারে
বলতে পারে মনের কথা
চোখের তারায়
হাত ইশারায়

ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে
ছিন্ন বাসে শীর্ণ দেহে
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর

কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ
দুঃসময়ে সেই তো ছিলো
বুকের কাছে হৃদয় মাঝে
আজকে তারে দেখলে শুধু
ইচ্ছে করে
চোখের পাতায় অধর রাখি

যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো
দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী
বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী
জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা
ভোরের বকুল শুভ্র মালা
নগর নাগর ভদ্র ইতর
রাজার বাড়ি
সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো

যাও গো চলে আমায় ছেড়ে

যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্নারাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে

নিজের দেহে আগুন জ্বেলে
ভেবেছিলাম
নিখাদ সোনা হবোই আমি
শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি
রাখবো ধরে সবার মত
হৃদয় বীণার মোহন তারে
ভুলেই গেলাম
যখন তুমি আমায় ডেকে
বললে শুধু
পথের এখন অনেক বাকি

যাও গো শোভন
যাও গো চলে বহুদুরে
কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা
যাও গো চলে আপন পথে

এই না বলেই
হাসলে শুধু করুণ ঠোঁটে
বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ
কাঁদলো আমার বুকের পাথর
কাঁদলো দূরে হাজার তারা
একলা থাকার গভীর রাতে
একলা জাগার তিন প্রহরে

তাইতো বলি সবার কাছে
যে আমাকে দুঃখ দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে
অনল দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে

সুখেই থাকে

 

জুতা বিষয়ক

বাবা হরিপদ,
চিঠি পাইবামাত্র জুতা কিনিবা,
আমি জানি তোমার পদযুগলে কোন জুতা নাই
জুতা ছাড়া ঢাকা শহরে তুমি চলাফেরা
করিতেও পারিবে না।

শুনিলাম জুতার দাম আগের মত নাই
আরো শুনিলাম ঢাকা শহরের
একদল লোক
সারা বছরই
রাস্তায়, খাল-খন্দক কাটিতে পছন্দ করে

তাই ভয় হয় তুমি যদি
সেই খানা-খন্দকে একবার পড়িয়া যাও
তোমাকে ডাঙ্গায় তুলিবার মতো লোকজন আজকাল
নাই বলিলেই চলে
তাই তোমাকে বলিতেছি তুমি দুই জোড়া জুতা কিনিবা।
একজোড়া তোমার জন্য
আরেক জোড়া মুক্তিযুদ্ধের নামে।

মুক্তিযুদ্ধ যেন সেই জুতা পায়ে দিয়া তোমার সাথেই
আমাদের দোহার পাড়ার বাড়িতে একবার আসিয়া
বেড়াইয়া যায়।
ইতি
তোমার মা।

 

তোমার পাশে

ডাকবে শুধু আমায় তুমি
থাকবে শুধু আমার পাশে
থাকবে তুমি।

কাঁদলে শুধু কাঁদবো আমি
বিজন রাতে একলা আমি
তোমার পাশে।

জোনাক আলো জ্বালবো আমি
যেথায় তুমি একলা থাকো
আমায় ছেড়ে।

ডাকবে লোকে হঠাৎ করে
সাতসকালে সাঁঝের বেলা
তখন তুমি বাসর ছেড়ে
একপা দু’পা তিনপা করে
বেড়িয়ে এলে দেখতে পাবে।

দাঁড়িয়ে আছি তোমার পাশে।

 

আমরা ক-ভাই

কর্তব্যপরায়ন হিসেবে এই মহল্লার সকলেই
সর্বাগ্রে উচ্চারণ করে
আমাদের নাম।

দেশ বিদেশে যে কেউ এসে জিজ্ঞেস করলেই
একবাক্যে সকলেই উচ্চারণ করেন
ছেলে গুলো ভালো।
কর্তব্য পরায়ন৷
নির্দেশ মতো সব কিছু করে। 

সমপ্রতি একদল লোক মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছেন
পর্যবেক্ষক হয়ে।
আমরা ঠিক মতো মাতৃপরায়ণ প্রতি
অবহেলা কতটুকু করি
সেই সাথে বিরোধিতা কতটুকু
বহুটুকু শুধু দেখবেন
পর্যবেক্ষক দল।

কর্তব্য পরায়নে এ মহল্লায় অদ্বিতীয় বলে
আশা করি আমরা ক-ভাই
অচিরেই পেয়ে যাবো।

হীরকের মালা।