সোনালী টিউলিপ ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-


|| প্রান্তিক ||

ছোট লাল ব্যাগে
বাচ্চাটা নিয়ে ঘুরি।
সাদা ডায়পার, খালি গা, ফর্সা শরীর, কালো চুল।
ঠিক আছে তো?

সিকিউরিটি গেট ক্রস করেই ব্যাগ খুলে দেখি
পাশ ফেরা শরীরটা নিথর, ঠান্ডা, 
একটি শিরশিরে অনুভূতি বয়ে গেলো মেরুদণ্ডের ঠিক মাঝ বরাবর। 
হাতের তালুতে তুলে নিলাম তাকে, ঝাঁকি দিতেই চোখ নাড়ালো, 
গোলাপি জিভ ছুঁলো গোলাপি ঠোঁট।

ভাবতে অবাক লাগে আমার।
সেগুলো সবই ছিলো ঘৃনা! কত কষ্টেই না সে ছুঁয়েছিলো আমায়!

 

|| প্রাক্তন ||

জানি না কী বলতে চেয়েছিলে—
নভেম্বরের মাঝামাঝি এক শেষ বিকেলে
বাদামী চোখে ছিল কষ্ট। 
মুখের ডান পাশ রক্তাক্ত, সবুজাভ লাল
দুপায়ের মাঝখানে বৃত্তাকার লৌহপাতে আটকানো 
দুটি টাইটেনিয়াম ল্যাগ-স্ক্রু। 
কশেরুকা ঘিরে কাল ওয়্যারে থকথকে ফ্লুইড

ভেবেছিলাম মরে গেছ। 
কিন্তু সারাটা পথ দেখিয়ে নিয়ে এলে।
কমলা বাদামী।—শুষ্ক ম্যাপল পাতা।

নীল ময়ুর থেকে সকালের রোদ্দুর পর্যন্ত
এলগোরিদমের ফোটোনিক প্রসেসরে

কি অসাধারণ প্রাণশক্তি! 
নাচতে নাচতে। কখনও উইন্ডশিল্ড, কখনও ড্যাশবোর্ড, 
কখনও কাল পিচের রাস্তার বিপরীতে সাহসী সবুজ। 
হলুদ সূর্যের মুখোমুখি।

এক্সিট ফিফটি থেকে ফাইভ
হাইওয়ে-ব্যারিয়ারের সর্পিল প্রান্তে
জানালা খুলে দিলাম 
যেন কাছাকাছি থাকতে পারি—
যেন হাত বাড়ালে আমার হাতে
রাখতে পারো তোমার হাত।

ইভানের ঘোড়ার মত ছুটছিলে। 
সোনালি কেশর উড়িয়ে 
কাল ফুলকি দেয়া প্রজাপতির মত। 
আস্ফাল্ট ছুঁয়ে ছুঁয়ে

অথচ আমি ভেবেছিলাম তুমি মরেই গেছ!
তুমি মৃত ম্যাপলের পাতা—

 

|| ভায়োলেট ||

জানালায় তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা 
বই এর পাতায় তোমার চুল
তোমার প্রথম চাকরির বেতন
তোমার প্রথম মুগ্ধতা
তোমার কাপড় 
তোমার টি-শার্ট
তোমার গায়ের গন্ধ

ডেড লিভস 
একটি প্রচলিত ধারনা:
ভালবাসা

 

|| বার্সেলোনা ||

অন্ধ তোমার বার্সেলোনা প্রেম
জ্যাকারান্ডার ডালিম দানার ভোরে
আকাশ উজাড়, উড়াল দিয়েছে পাখি

একই মানুষ একই আলিঙ্গনে
ফুল ঝরেছে ভেঁজা চুলে কবেই
সবই এখন শুভঙ্করের ফাঁকি

এইভাবে এই একলা আষাঢ় মাস
অলন্কারের অহংবোধে একা
মন ভেঙেছে মনের মনস্তাপে
এইভাবে তাই একলা বসে থাকা

 

|| সোনালী টিউলিপ ||

আমি আমার পালক তুলে ফেলেছি
আর সব ভাল মেয়েদের মত
এখন আমি অনেক বেশি শান্ত

মেরুন ছায়া গাছের ক্যাথেড্রালে
সবুজ বোতল নোনা জলে ভরি
নিকোটিনের হলুদ ডানার দামে
তুমিও কি ক্লান্ত—

তীরের পারে শহরটা আর নেই
পায়ের পাতায় সাদা বালির স্তুপ,
খোদাই করা পথের শেষে
পপি ফুলের ঘ্রাণ—

জলের পরে মুখটা আমার নয়
জ্যাকারান্ডায় আকাশ যেমন প্লাম


|| জ্যাকারান্ডা ||

সেরুলিয়ান আকাশে উড়ন্ত রাজহাঁস! 
বৃষ্টির তীরে খসে পড়েছে পালক! 
পা নামিয়ে আলতো দাঁড়ায় অর্ধনমিত মুখ।
জেনশিয়ান বেগুনী প্রতিবিম্বে জ্যাকারান্ডা।

শুয়ে আছি ঘাসের সমান্তরাল।
বিশাল মাঠে সবুজ! আদিগন্ত সবুজ!
কেন্দ্রের বৃত্তে অভিকেন্দ্রিক লাল পিয়ানো। 
দূর আকাশে, চাঁদকে ঘিরে অশরীরি নক্ষত্রের
গোপন কথা—

বেজে চলেছে সোনাটা! অস্থির সোনাটা।
চন্দ্রালোকের সোনাটা!
একাকার ঘোরের 
একাই নিজের সাথে—

তাই ভাবি, ভাবতে ভালো লাগে। 
বিশাল মাঠ! আদিগন্ত সবুজ ঘাস!
শুয়ে আছি ঘাসের সমান্তরাল। 

উর্ধমুখি নাক বরাবর 
আকাশে শূন্য পাখি!

নোট: লায়লা ফারজানার কবিতাগুলো নেওয়া হয়েছে প্রকাশিতব্য বই নীল ইগুয়ানা থেকে। বইটির প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স।