আগুন-বাড়ি  ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

হত্যাবিদ্যা

তোফাজ্জল! যে ছেলেটিকে মানুষ যুগ যুগ ভালোবাসতে চায়, 
অথচ, যে জীবন থাকে অস্পৃশ্য 
মৃত্যু কেবল যাকে মানুষের কাছে এনে দেয়! 

তোফাজ্জল! যার চোখের হ্রদে মানুষ সাঁতার কাটতে চায়,
যার বুকের চাঁদে হেঁটে বেড়ানো প্রত্যেকেই এডুইন অলড্রিন…

সূর্যের মতোই মুখ, যার পেটে ক্ষুধা ছাড়া আর কোনো আপন কেউ থাকে না 
ঘাতকের অবিশ্বাসী টানাটানিতে ছিঁড়ে যায় সরল দেহ 
গোঙানি শোনে না রক্তের মেঝে, 
মুণ্ডু থেতলে যবনিকা উৎসব
বধির বেটোফেন ফজলুল হক হল!

করতলে আলোর চাবি রেখে হট-ডগ প্রতিযোগীতা!
আহ! দুটি গোঁড়ালিতে কত পথের হিসেব!
খুলে পড়ে কিমার মতো ঝুরো মাংস! 
বিনা ব্যয়ে জুটেছে নতুন রেসিপি,
আলো হরকরাদের জয়োল্লাস! 

দিনে দিনে বিদ্যাপীঠে ছড়িয়ে গেছে বিপুল অন্ধকার,
ও আলো, কবে অন্ধকারের জানালায় এসে টোকা দেবে?

 

কোলবালিশ 

জুলাই মাসটা ঘুমহীন!
লাশের ওপর দিয়ে যেতে যেতে সেপ্টেম্বর দরজার কাছে, 
অন্ধকার রক্তের স্রোতে দেশ ভাসছে!

৫ সেপ্টেম্বর! রাতের ঘড়ি ৬ সেপ্টেম্বরের নামতা লেখে, 
খসখস আওয়াজ করে ঘরের নেংটি ইঁদুর, অন্ধকারেও এসব আওয়াজ বুকে এসে লাগে!  

হে আমার বিছানাসঙ্গী! 
তুমি কি এই কন্যারাশির দুঃখী মেয়েটিকে একবার ঘুম পাড়িয়ে দেবে? 
হে রাতের আশ্রয়দাতা, জড়িয়ে নেবে কি নরম বুকে, 
একটু কি প্রশ্রয় দেবে?

ঘুমহীন জোয়ান রাত পরপুরুষের লোভ নিয়ে মাথার কাছে এসে দাঁড়ায় 
নিজেকে আর রাখতে পারি না,
কতরাত আলিঙ্গনহীন বেঁচে আছি! 
নির্জীবতার দ্বিধা ঝেড়ে তুমি একবার মানুষ হয়ে ওঠো…

 

ভণিতা 

কোথায় থাকে সে, কোন শহরে 
বহু দূরের পথ, বহুতল ভবনের কামরায় 
সযতনে লালিত হওয়া স্বৈরাচার রাজার পুত্র  

আমাকে বহুবার ডেকেছে বিছানায় 
আমাকে বহুবার চেয়েছে বুকে, বালিশে 
ভুলেও কখনো ছুঁইনি তার অধর
বাড়ায়নি শৌর্যের মায়া! 

চেয়েছি, দূরেই থাকুক রাজার দুলাল
কাছে টেনে ভুলের প্রাসাদ রঙিন করতে চাই না 

আমাকে একরোখা অধম বললেও তাকে আমি গ্রহণে অক্ষম… 

 

আগুন-বাড়ি

পুড়তে অভ্যস্ত তাই বৃষ্টি হলেও ছুটে যাই আগুনের পুকুরে 
আগুনের যৌবন থেকে তুলে নিই দীর্ঘশ্বাস 
মূর্খ, নগ্ন, অসহায় কুকুরের মতো অক্ষম অপ্রকাশ হয়ে বসে থাকি! 

পায়ের তলায় দয়া মাড়িয়ে চলে যায় প্রেম
উগরে দেওয়া ঘৃণা, আক্রোশ মুখের উপর সৌধ গড়ে
উল্টো পায়ের ভূত হয়ে সব সরিয়ে সামনে এগোয়, 
প্রেম যদি একবার নাম ধরে ডাকে 

আগুনই আমার একমাত্র আলো  
পুরনো বাড়ি যেভাবে মায়া ফেলে,

চাবিহীন একটি বাড়ি সে আমার 
মমতার দড়িতে পেঁচিয়ে রাখে!