নকল নায়ক ও অন্যান্য কবিতা
বারান্দা ও গোরস্তান
গোরস্তানের পাশে বাড়ি।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি
আর কবরগুলোতে বৃষ্টি পড়া দেখছি।
একটি কবরের গাছে
গোলাপি ৩টা ডালিম ঝুলছে,
২ টি বুলবুলি দোল খাচ্ছে
ভেজা ডালে বসে।
ভেজা ডালিমের নিচে
এপিটাফে লেখা—
‘রিয়া আক্তার
জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৬০
মৃত্যু ২ জানুয়ারি ১৯৯১
শুয়ে আছেন এখানে,
তিনি মরেননি, তিনি মরতে পারেন না
মৃতদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন।
চলমান মানুষ এ আড্ডায় যোগ দিন।’
আমি দ্রুত চা শেষ করে
ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়ি মৃতদের আড্ডার দিকে।
নকল নায়ক
অতি অতি খারাপ লিখেও
যারা একাধিক কালো কিংবা শাদা সাহিত্য পুরস্কার নিয়েছেন এদেশে
মাঝে মাঝে দেখা হয় তাদের সঙ্গে।
তারা কিন্তু দারুণ মানুষ, অনেকটাই সরকারি আকাশ!
দেখা হলে
একত্রে বসে চা খাই, সেলফি তুলি, দেশের ভবিষ্যৎ, যাবতীয় উচিৎ-অনুচিৎ,
সাহিত্যিকদের সিরিয়াসনেস, তেলবাজি আর ফেসবুক এডিকশান নিয়ে আলাপ করি।
এইসব পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের সঙ্গে কথা বললে কিন্তু বোঝা যায় না,
খারাপ লিখেও সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া সম্ভব। মনে হয় তারা
সাহিত্যকে দারুণ এগিয়ে নিচ্ছেন!
মাঝে মাঝে অবশ্য যারা ভালো লিখে সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন
কিংবা পাননি তাদের সঙ্গেও দেখা হয়। তাদের সঙ্গে আলাপ করে
ভালো লাগে, তবে তাদের বিষণ্নতা আমাকে ভাবায়।
আমি দেখতে পাই, আগাছার ছায়ায় শুয়ে আছে জবুথবু বটগাছ!
শাদা কাগজ
শাদা কাগজে পাখি আঁকি
পাখি উড়ে যায়
শাদা কাগজ থেকে যায় ফাঁকা
হয় না আমার পাখি আঁকা।
আদর দিয়ে মানুষ বানাই
মানুষ চলে যায়
কাদার মানুষ দুঃখ দিয়ে বাজায় সানাই।
আঁকি রেল, আঁকি লঞ্চ, আঁকি গাড়ি
শাদা কাগজ খালি করে লোকেরা ফেরে বাড়ি।
ফসলের মাঠ আঁকি
মহাজন এসে নেয় শস্য, কৃষক পায় না ন্যায্য দাম
বিপ্লবের মুখোশে এক দল চায় শুধু হতে শিরোনাম।
শাদা কাগজে জন্ম আঁকি,
শিশু চিৎকার করে কাঁদে।
শাদা কাগজে মৃত্যু আঁকি,
দেখি নিজের ঘুমন্ত মুখ মাটি দিয়ে ঢাকা
শাদা কাগজ শাদা থেকে যায়, আমার হয় না কিছু আঁকা।
সব চরিত্র কাল্পনিক
দুটি ছবি, দুজন মৃত চালাচ্ছে দেশ।
এখানে মৃতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হয়,
জীবিতের স্বপ্ন দেখা নিষেধ।
একজন মৃত জাহাজ আঁকে, আরেক মৃত গমক্ষেত
একজন মৃতের মেয়ে আছে, আরেক মৃতের বউ!
একজন মৃতের ছেলে আছে, আরেক মৃতের নাতি!
দুই মৃতের প্রতিনিধিই মানুষ নিয়ে ব্যবসা গড়ে,
তাদের চোখে মানুষ মানে আমজনতা,
মানুষ মানে ম্যাংগোপিপল!
মানুষ মানে মৃতের ছবির সামনে নতজানু!
হায়, মৃতের ছবির সামনে আর কতকাল থাকবে নতজানু?
তোমার চাই জ্যান্ত নেতা!
জ্যান্ত নেতা কি ভাই গাছে ধরে?
জ্যান্ত নেতা কি ভাই কিতাবে থাকে?
জ্যান্ত নেতা কি ভাই আকাশে ওড়ে?
জ্যান্ত নেতা কি ভাই বাতাসে ঘুমায়?
ম্যাংগোপিপল ম্যাংগো থেকো না, কামড় খাবে। কামড় খেতে খেতে কবরে যাবে!
বনের ভেতর শেলাইয়ের শব্দ
বনের ভেতর সেলাই মেশিন,
ঘুমের ভেতর জেগে থাকা।
অদৃশ্যমানব করছে সেলাই মশলাগাছের ঝরাপাতা।
আমার সামনে বলে কথা
শিংঅলা আজব বেড়াল আর শিংহীন দুষ্টু গরু,
বেড়াল খায় সবুজ ঘাস, গরু খায় মাংস!!
বন্ধু চাই নাকি বন্দুক— এমন প্রশ্নের উত্তরে
পাতার সবুজ জামা গায়ে দুরন্ত ময়না বলে:
‘বন্ধু যায় পাল্টানো, যায় না বদলানো প্রতিবেশী।’
আমি ঘুমের ভেতর দৌড়াতে দৌড়াতে আছড়ে পড়ি চাঁদের মাঠে,
চাঁদে ভূ-কম্পন হয়, ভাঙে পাঁজর স্বপ্নগ্রহের নরম মনের।
চার কিংবা এইট
খড় দিয়ে বাসা বানানোর কৌশল শিখতে বাবুইর কাছে গিয়েছিলাম, বাবুইরা
পালিয়েছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে বনের ভেতর হাঁটছি
একাকী, বন থেকে এক-একটি গাছ উড়ে যাচ্ছে। বন হয়ে উঠছে মরুভূমি।
মরুভূমিতে কারা যেন এসেছে শহর বানাতে। শহরে বানর বাস করবে। বানরেরা
গাড়ি-বাড়ি-অফিস বানাবে। বানরেরা পার্লামেন্ট বসাবে, মানুষেরা হয়ে যাবে
মেরুদণ্ডহীন। ‘হয়ে যাবে’ কথাটা সত্য নয়। ইতোমধ্যে মানুষেরাই মানুষদের বানিয়ে
ফেলেছে সরিসৃপ। শহরের আশপাশে কৃষিজমি বিক্রি হচ্ছে খুব; কৃষিজমি হয়ে যাচ্ছে
আবাসিক। পুকুরে কাছিম ভাসে। টিভিতে পিঁপড়া দেখায়। আমরা ভাবি ওগুলো
যুদ্ধজাহাজ। দাদু সন্দেশ বানায়, গলির খেজুরগাছ দৌড়ে যায়। আসামী গাড়ি চালায়,
পুলিশ মৃত্যুর দিকে ছোটে।
বানর মাখে লিপিস্টিক, বাদুর গাছে ওঠে,
পেত্নীরা করে তেল মালিশ তোমার পায়ের চোটে।
লাগে আগুন পাঁচ হাজার টাকার নোটে
আর পানি ঢোকে পাটবোঝাই বোটে।
হায়—ছিল ধানক্ষেত, হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়; ছিল কবর, হয়ে গেছে কাজী অফিস।
ছিল মাছ, হয়ে গেছে শাসক। ২টি মাছ অ্যাকুরিয়াম ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়
যমুনার ঢেউয়ে। যমুনায় সোনার লঞ্চ ভাসবে; হাজার বছর আগের সলিল সমাধি
হওয়া বরযাত্রী ভেসে উঠবে। তোমরা বুঝে যাবে অর্ধেক অ্যানালক, অর্ধেক
ডিজিটাল— এই আমাদের আসল পরিচয়; আমাদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠরা পুরোই
অ্যানালক আর অনুজেরা ডিজিটাল। অ্যানালকে যা ছিল বিস্ময়কর ডিজিটালে তা
অতি সাধারণ। ডিজিটালে কেবলই নিজের ছবি প্রকাশ্যে পাঠায় ব্যক্তিগণ, আমি ছবি
দিই আবার দিই না। বিড়াল বলতে বুঝি বাঘ, আর বাঘ বলতে কাঠবেড়ালি।
সন্ধ্যাতারা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। তোমার দূরবিনটা ছাদে বসে ঝিমোয়।
সন্ধ্যাতারার টুকরো কুড়াতে কুড়াতে পিচ ঢালা রাস্তাকে আয়না ভাবি। রাস্তায়
আমাদের সবার মুখ দেখা যায়। আমরা সকলে একবার জিপগাড়ি হয়ে, একবার
সাইকেল হয়ে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করি। প্রাচীন জাহাজ ভাসতে চাইলে পৃথিবীটা
ফুটো হয়ে যায়। সমুদ্রের পানি আর জাহাজ ভাসে মহাশূন্যের নীলে।
সুন্দর কবিতা ৷পাঠমুগ্ধ ৷
মামুন মাহবুব
মে ১৮, ২০২৩ ২২:১২
প্রথম দুটি কবিতা দারুণ!
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
মে ০১, ২০২৩ ২২:৪২