নাটিকা || মহানারীর সভা
নাটিকা || মহানারীর সভা
চরিত্র
দুর্গের সামনে রেন্ডম কিছু দর্শনার্থী। এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি। ক্রীড়া অথরিটি। সামরিক অথরিটি। স্বাস্থ্যসেবা অথরিটি। চানতারা অথরিটি। সূর্য অথরিটি। সাহিত্য অথরিটি। মহানারী।
|| প্রথম দৃশ্য ||
সভা। (মুখেই সভার এক প্রকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা সুবিধাজনক হবে বলে মনে করি। ছাইরঙা দুর্গের সিলিঙে পরাবৃত্ত সব ঝাড়বাতি টানানো। যদিও গোটা রাজ্যই নীরব, নিরাপদ আর মৃত্যু ঘূর্ণিতে পরা পিঁপড়ার দলের ন্যায় একেকটি মানব অন্যের পেছন পেছন হিপনোটিক আঁটা এঁটে আছে, তবুও দুর্গের তিনপাশে কেবল জল আর জল। একপাশে রক্ষীবাহিনীসহ ঘাস। মানুষ ওয়াকওয়ে বেয়ে উঠে এলে সেখানে দাঁড়িয়ে ডগমগিয়া ফটো তোলার সুযোগ পায়। তারপর মহানারীর দুর্গের প্রধান গেইটে মাথা ঠুকে চলে যায়।) সেই সভায় মহানারী একা একা শুয়ে আছেন।
এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি—আপনাকে সামনে দেখলেই পা কাঁপে আর শরীর ঘেমে যায়। পারফর্ম করতে পারি না।
মহানারী—(হেসে)—আজকে তোমাদের ফিল্ডের কারোর গায়ে হলুদ কী বিয়ে-টিয়ে নেই, না?
এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি—আজ্ঞে, শীতে তো রোজই একটা করে হয়। এসকল ঢং-তামাশা নতুন কিছু নয়। ক্ষমার চোখে দেখুন। ছাড়ুন এদেরকে মহানারী। বলছিলাম উত্তরের কাউন্টিখানির কথা। কত উর্বর ভূমি গতবারের ক্রীড়া অথরিটি ঊষর করে দিলেন। যেন বিরান প্রান্তরে কত না খেয়ে মরা প্রাণীদের হাড়গোর পড়ে আছে।
মহানারী—সোজা করে বলো। কেন্দ্রবিন্দুতে আসো।
(এদিকে সবসময় সোজা কেন্দ্রবিন্দুতে আসার আদেশ দিলেও কেশে কথা বললে মহানারী যে একে অশোভন রূঢ় আচরণ হিসেবে ধরে নেবেন, তা নিশ্চিত। ফলে ফলাফল দাঁড়াবে শূন্য। মহানারী হবেন ক্ষুণ্ণ।)
এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি—কাউন্টিখানা আমার হাতে দিলে..., ইসে, আপনার সামনে এমন ঘাম হয়... poor nerve...
মহানারী—তোমার ঘাম দিয়ে তো আর কাউন্টি চাষ হবে না। বাৎসরিক কত তোলা সম্ভব হবে? ভূমি বিরান হলো, নাকি অর্চার্ড বানালে, না কুঞ্জবন, আমি তো গিয়ে ঘুরে ঘুরে ফুল শুঁকে ফল খেয়ে আমোদ করবো না।
এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি—আমি আপনার সন্তানের ন্যায়। কিছু স্পর্ধা করে বলতে চাই না। কিন্তু বছর শেষে নিরাশ করবো না, এই অলিখিত অঙ্গীকার করতে পারি। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছি। এখন আপনি ছায়া দিলে একটু জিরাই। করুণাময়ীর হাতখানি মাথায় রাখেন।
মহানারী—এবার একটু যাও। একটু দুশ্চিন্তা করতে হবে।
তা ছাড়া, এতো খেয়ো না। তোমাদের একেক জনের বেঢপ শরীরের দিকে চাইতে পারি না। গদিতে বসে নড়তেই না পারলে ফসল-আসল তুলবেই কী আর আমার তহবিলেই দেবে কতটুকু তোমরা?
এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি—জ্বী, আজ্ঞা। কাল থেকেই এরোবিক্সে যাবো। সব ঠিক করা আছে।
|| দ্বিতীয় দৃশ্য ||
(হ্রদের পার। মহানারীর হাতে হুইল ছিপের বরশি। শকুনির ন্যায় ধ্যানমগ্ন হয়ে পারের ঘাসে বসে আছেন। পায়ে বিকালের জগিংয়ের ট্রেইনার জোড়া এখনো রয়ে গেছে। Ensuring a strong attachment to the surface is essential to reach the peak. সূর্য শেষ প্রান্তে হ্রদের তলায় অস্তমিত হয় হয়, এমন সময় ক্রীড়া অথরিটির প্রবেশ। পায়ে জগিংয়ের ট্রেইনার। মহানারী ধ্যান না ভেঙেই তাকাইলেন।)
ক্রীড়া অথরিটি—এখনো এমন প্রাণবন্ত মাননীয়া আপনি, দেখলে এই ভূমিতে অভাগার আরো শতবার জন্ম নিতে মন চায়, এই আপনারই তরে। আপনাকে দেখলেও আয়ু বৃদ্ধি হয়।
মহানারী—তোমরা বুঝলে, একা পেলেই স্তুতি কীর্তন করো। বিরক্তিকর। শত জন্ম এই ভূমিতে? তা বটে, উত্তরের কাউন্টিটা চুষে মরু করে নিজের কোষাগার ভর্তি করার সুযোগ পেলে কার না এখানে জন্মাতে মন চাইবে? আমার মুল্লুকে ধনী উল্লুকে রাজার হালে আছে, গরীব করিতকর্মা ব্যক্তি খেতে পায় না। ওঁদের দিকেও একটু তাকাও। ওইসব মস্তিষ্ক নেহাৎ অকেজো করে রেখেছি, নয়তো অন্য রাজ্যে পাঠাচ্ছি, সচল করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তোমরা কোনো হারামি টিকতে পারবে না। দা কোদাল দিয়ে তাড়িয়ে দেবে।
ক্রীড়া অথরিটি—আপনার কাছে কে কী কটু বাক্যে নালিশ করেছে, আমি জানি না, কিন্তু এইটুকু নিশ্চিন্তি দিতে পারি, আমার সেক্টরের মানবকূল সুষম খাবারই খেতে পাচ্ছে। দাওয়াই পাচ্ছে মাসে মাসে। এবার যদি বলেন, আরো সুস্থ করে তোলো, চন্দ্রাহতদের হাতে মসি দাও, হেঁটে বেড়ানো তরুণ মৃত লাশেদের জীবিত করো, তাহলে আপনারই ক্ষতি হবে। ওঁরা বাইরে দুর্নাম করার রাস্তা জানে। গেট, কাঁটাতার ওঁদের আটকাতে পারবে না।
মহানারী—দক্ষিণ কাউন্টি কার হাতে যেন?
ক্রীড়া অথরিটি—স্বাস্থ্যসেবা অথরিটির হাতে।
মহানারী—হ্যাঁ হ্যাঁ, ভালো চলছে। আমার তরে অনেক নিয়োজিত। ওঁরা শুধু মুখে বলে না। দিয়ে দেখায়।
ক্রীড়া অথরিটি—জ্বী।
(এই সময় মৃদু চালে হাঁটতে হাঁটতে সামরিক অথরিটির আর স্বাস্থ্যসেবা অথরিটির প্রবেশ। পায়ে জগিংয়ের ট্রেইনার। মহানারীর অবয়বে ঘটমান বর্তমান নিয়ে একটু সচেতনতামূলক পুলক দেখা দিল।)
মহানারী—বসো। গিলছে না আজ। (একটু চুপ থেকে) তোমারা কী বলো, তরুণ হবার মেশিনখানি মার্কিন থেকে আনিয়ে নিজের উপর পরখ করে দেখব?
সামরিক অথরিটি—শুনেছি এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে হিতে কত বিপরীত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে এই বস্তু দিয়ে। আজ জগিং করেছিলেন? যোগাসন? প্রোটিন?
স্বাস্থ্যসেবা অথরিটি—আপনি বললে আনানোর জোগাড়যন্ত্র করা যায়। আমাদের বাপজান রাজকুমারই পারবেন। বলেন না কেন?
মহানারী—দেখো তোমরা আলোচনা করে। তোমরাই আমায় দেখবে।
সামরিক অথরিটি—দেখলাম অর্চার্ডে পিচ ধরেছে ঝুইম্যা। একদিন শরবত খাওয়ান।
মহানারী—আজ আসো সন্ধ্যায়। এখন একটু গোসলঘরে যাবো। তোমরা কি হাতে নেবে?
(সামরিক অথরিটি হাতে বাড়িয়ে বড়শিটি হাতে নিলেন। ক্রীড়া অথরিটি বাদাম আর ছোলা বের করলেন।)
|| তৃতীয় দৃশ্য ||
(সন্ধ্যার পিচ শরবত পানের অধিবেশনের পর মহানারী আরাম কেদারায় বসেছিলেন। সামরিক অথরিটি নীরবে তাম্বাকুর গড়গড়া টানছিলেন। দুই পক্ষই দুশ্চিন্তিত-নিদ্রায় আচ্ছন্ন। চোখ মুদে আসছে এমন। ক্রীড়া অথরিটি আর এন্টারটেইনিং অথরিটি শতরঞ্চ খেলছিলেন। স্বাস্থ্য অথরিটি সামরিক অথরিটির পরবর্তী দিনের কার্যতালিকা যাচাই করে দেখছিলেন। চানতারা অথরিটি আসার কথাও আছে। আসুক। শরীর থেকে নিদ্রা ভাব কাটবে। অতঃপর দৃশ্যে চানতারা অথরিটির প্রবেশ ঘটলো। নিজস্ব কায়দায় কুর্নিশ করে কোনো একটি আসনে গিয়ে বসলেন।)
চানতারা অথরিটি—আমাদের খেজুর, আখরোট, কালোজিরা, পেশন ফ্রুটসহ সকল পথ্য আর ডায়েট চার্টের সঙ্গে, ঐতিহ্যের সঙ্গে আলিঙ্গন করে থাকার জন্য আপনাকে তাগড়া দেখাচ্ছে। আপনাকে কুর্নিশ Boss. আপনি আসীন না থাকলে রাজ্য ধ্বংস হয়ে যেত। এই সকল ঐতিহ্য পাশ্চাত্যের বৃথা অনুকরণে বিলীন হতো।
মহানারী—Moron, তোমরা সকলেই অলিখিতভাবে এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ডে যুক্ত হও না কেন? একেকজন একেক ধাপের নওটাঙ্কি। হাতটা দেখো তো আমার। তালুতে বেশ চুলকানি। কোনো নতুন ক্ষতি-বৃদ্ধির আভাস আছে?
চানতারা অথরিটি—(আতশ কাঁচে দেখে নিয়ে)—চুলে বাগানের মেহেন্দি বেটে লাগালে ভালো হয়। সাথে কালোজিরা, ত্রিফলা দিতে পারেন।
মহানারী—বসো, পিচের শরবত হয়েছে, পান করো। সভাগৃহ কেমন লাগছে? ডিজাইনে বদল এনেছি। সবই অদলবদল হলো, যা খালি বুড়া আমিই রয়ে গেলাম। আমার মৃত্যু হলো না। (এই বলে কতক খিলখিল করে উচ্চ স্কেল ধরে হেসে নিলেন মহানারী। পুরো এক মিনিট পর থামলেন।) কী বলো তোমরা, তারুণ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত হবে? ইয়ং হবার মার্কিন মেশিনারিজ আনা উচিত হবে? খবর করবো? ছেলেকে বললেই স্বাস্থ্য অথরিটির সঙ্গে মিলে একটা ব্যবস্থা করে দেয়। কী বলো, বেঁচে থাকবো আরো কয়েক দশক?
চানতারা অথরিটি—এই সকল পাশ্চাত্য এক্সপেরিমেন্টে একটু খতরা আছে নিশ্চয়ই জাঁহাপনা। আপনার প্রাণনাশের ভয় করি। এতগুলি অধম আমাদের কী হবে তখন?
মহানারী—হ্যাঁ তো বটেই, আরাম কি আর কম জুটছে অধমের? এই তোমরা সবকটায় এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ডে জয়েন করো না কেন?
(সূর্য অথরিটির প্রবেশ। চানতারা আসার খবর কানে পৌঁছালে সূর্য অথরিটিও আসেন। সমান অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সভার সবার দিকে একটু নজর দিয়ে নিরীক্ষা করল। বিশেষত চানতারা অথরিটির দিকে; পিচফলের জুস পান করছে।)
সূর্য অথরিটি—(খানিক মলিন মুখে)—দণ্ডবৎ!
মহানারী—আমড়া। বসো। পিচফলের জুস খাও।
সূর্য অথরিটি—খাচ্ছি। বলেছি, এনে দিচ্ছে। (একটু থেমে, চারদিকে তাকিয়ে) তা কী বলে যে ধন্যবাদ দিই! এইসব ইকুয়ালিটি-ফিকুয়ালিটি, সমতা সব নিজ নিজ হাজার বছরের পুরাতন ঐতিহ্যকে আঘাত করার ধান্ধায় করা বিপ্লব। আপনি যে পাত্তা দিলেন না, গরজ করলেন না, আমি অতি প্রীত হলাম। জোর না থাকলে মুলুকও নাই। নারী জাতি মায়ের জাতি, পুরুষ খাওয়াবে, সে খাবে, তার তো জমি-জায়গার দিকে মনযোগ প্রদানের দরকার দেখি না। পিতার জমি পুত্র পাবেন, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এই-ই শেখায়। এখানে সংস্কারের প্রশ্ন আনাও পাপ।
মহানারী—অ্যাঁ? আমার দিকেই যে আঙুল আসে! আমি আসনে না থাকলে মুখে ভাত উঠবে? নেট থাকবে ফোনে? নীল দেওয়া ধূতির গাঁটে মাল-কড়ি ঢুকবে?
ওই, তোমরা সকলে এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ডে জয়েন করো না কেন? আমি তামাশা দেখি বসে বসে।
(একটু থেমে)
সূর্য অথরিটি—আজ্ঞে, মাফ করেন না কেন? আপনি যে সাধারণ নারী নন, কর্ত্রী, আপনি মহানারী। মহামায়া। আগামী সার্বজনীন সংঘের মূর্তিতে আপনার মাতৃমুখ থাকবে। এটাই গতকালকে স্থির করে এলাম।
মহানারী—সে তো তোমরা ভিক্টোরিয়ারও দিয়েছিলে। তোমাদের আর লাজ কী লজ্জাইবা কী? এন্টারটেইনে জয়েন কর। (একটু অন্যমনস্ক হয়ে) ইশে, আমার হাতটা দেখ তো। কেন জানি এক দুশ্চিন্তা। কানের পাশ ঘেঁষে দুর্যোগের আভাস হয়।
সূর্য অথরিটি—(আতশ কাঁচে হাত দেখতে দেখতে) আপনি তুলসী বীজ জলে ভিজিয়ে সেবন করেন সকালে। এসব কিছুই নয়, আমরা থাকতে কোনো শয়তানি হাওয়া আপনাকে ছুঁতে পারবে না।
মহানারী—তোমার এলাকার মেয়েগুলোর দিকেও একটু তাকাও, একেকটি মায়ামুখ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে অকূলপাথারে। তোমরা অসভ্য বরাহ নন্দন আছো বলেই প্রটেক্টেড আছি। খুব যে খুশি সেটা নয়। এটা ঠিক যে, আমাকে তোমরাই বাঁচিয়ে রেখেছ। এটাও ঠিক, সকলকে বাঁচাতে চাইলে আমিই মরি। তবু দেশশুদ্ধ অসমতার কারণে মরে পচে গলে বিরানভূমি হয়ে গেলে রাজ্য আর রাজ্য থাকবে না। রাজ্য নাই তো রাজাও নাই। ভোক্তা নাই তো দাতাও নাই। সুতরাং মাঝেমধ্যে ওঁদেরকেও দিও। যখন দাও, সমান সমান করেই দিও।
সামরিক অথরিটি—(মৃদু কাশির শব্দে সভা সচেতন করে) দুর্যোগের সম্ভাবনা কেবলমাত্র তখনই আশা করা যায়, যখন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সবাইকে সমান করে দেখা শুরু হয়। এর কোনো নির্দিষ্ট উপশম নাই, টোটকাও নাই। রাজ্য পরিচালনায় সকল অথরিটি উপদেশ দেওয়ায় সমান যোগ্যতা রাখেন না। কার সাথে কতটুকু সময় কাটানো উচিত, তাঁর একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকা উচিত।
সূর্য অথরিটি—(একটু সতর্ক হয়ে, যেন থতমত খেলেন। ভঙ্গিতে পূর্বের খুচরা ভাবটা আর থাকলো না।) ইশে, তা তো বটেই। আমি ঐদিকে শতরঞ্জের কাছে যাচ্ছি। আপনি বসুন এখানে। এই আসনে। কোনো জরুরি দরকার হলে ডাকবেন।
মহানারী—তামুক নিভে গেছে দেখি তোমার, সাজিয়ে দিতে বলো।
(এমন মুহূর্তে সাহিত্য অথরিটির প্রবেশ। মহানারী টের পেয়ে মুখ বিকৃত করলেন। অবজ্ঞা করলেন। উপেক্ষা করলেন। ঊহ্য করলেন। আড়চোখে তাকালেন। একটু সচেতন হয়ে বসলেন। একটু অনিচ্ছা সত্ত্বেও গুরুত্ব দিলেন। এগুলো টিকটিকি। এগুলো কৈ মাছ। কিছু বুভুক্ষু মরে যাবে, কিছু পায়ের স্তুতি করে খাদ্য জুটিয়ে নেবে। দ্বিতীয় দলটি নির্লজ্জ। ওগুলো সব এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ডে যায় না কেন? আর প্রথম দলটি? ভয়ংকর একপাল কঙ্কাল। রাতে নিঃশব্দে হেঁটে বেড়ায়। আকাশে উড়ে বেড়ায়।)
সাহিত্য অথরিটি—পিচ ফল শরবতের আয়োজনের শুভ কামনা জানবেন। স্বর্গের ফোয়ারা থেকে নিঃসৃত তরলের মতো ঠেকছে।
মহানারী—তোমরা এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ডে জয়েন করো না কেন? সকলেই ড্রামা। ইসে, আগামী বইমেলায় একদিন যাওয়া উচিত। কবে যাওয়া যায়?
সাহিত্য অথরিটি—জ্বি, আপনি যেদিন বলেন, আগেরদিন সব ব্যবস্থা করে রাখি। তবে মেলার মধ্যম পর্যায়ে যাওয়া ভালো হবে বলে মনে করি।
মহানারী—উপদেশ পেশ করছ নাকি? উপদেশ দেবে না সাহিত্য অথরিটি। আমি দেখছি কী করা যায়।
তোমরা হলে কৈ মাছের প্রাণ। জীবনেও শীঘ্রই মরতে চাও না। একবার মনে আছে, অনেককাল আগের কথা, ফোনে একজন আমাকে কি বলেছিল? ‘পড়াশোনা করুন।’ তোমাদের ফিল্ডেরই ঘাড়ত্যাড়া মানব। তখন দুর্বল, নিঃশক্তি ছিলাম বিধায় হজম করতে হলো। তাঁর পরবর্তী হালত সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমরা অবগত আছ। মেপে পা ফেলো সাহিত্য অথরিটি, তোমাদেরকে আমি চাল ছিটিয়ে না বাঁচিয়ে রাখলে কবে নিঃশেষ হয়ে যেতে।
(এমন সময়) সামরিক অথরিটি—(একটু হেঁসে) বাঁচিয়ে রাখেন কেন তবে?
মহানারী—(ঐ দিকে তাকিয়ে এবং একটু হেঁসে) তুমি mischievous আছো; ওঁরা শোপিসের মতো কাজ করে। তাকিয়ে দেখো না অবয়ব, লাইব্রেরি ঘরের বই এঁরা। ইন্টেলেকচুয়াল শোপিস।
সাহিত্য অথরিটি—(একটু ইতস্তত হেসে) তা আর বলতে, আপনারা জানের মালিক নিশ্চয়ই। ইসে, আমার মেয়েটা আপনার ভক্ত। আপনি তাঁর আইডল।
মহানারী—আইডল? বড় হয়ে আমার মতো হতে চায়, নাকি? শোনো, ব্লাড হিস্ট্রি বলে একটা টার্ম আছে। ওইটা পেছনে টেনে ধরে। ভীরুর পেটে জন্মে মহানারী হওয়া যায় না। তবুও তাঁর জন্য শুভ কামনা। বেঁচে থাক। যদি পারে।
(ঘড়িতে আওয়াজ হচ্ছিল। ক্রীড়ারত, আলাপরত সকলেই এমতাবস্থায় মৃদুমন্দ হাইও তুলছিল। রাত্রি বেড়ে চলেছে। মহানারীর ভেতর মহল থেকে একবার বার্তা এলো যে, খেতে যাওয়া এবং ক্রমান্বয়ে শুতে যাওয়ার সময় বয়ে চলে যাচ্ছে। এমন অনিয়মে শরীর খারাপ করবে।)
মহানারী—আজকে উঠি, নাকি? কালকে আমার সাউথ কাউন্টিতে আউটডোর কলরেডি আছে।
সামরিক অথরিটি—হ্যাঁ, সকলের উঠে পড়াই উচিত হবে।
সকলে—হ্যাঁ, আমাদের সকলের নিশ্চয়ই উঠে পড়া উচিত হবে।
|| কার্টেইন ||
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন