কাঠফড়িঙের ঋতুদিন
‘‘আমাদের মধ্যে এই ধারণা জন্মাতে পারে যে, কবিতা হলো জারজদের শিল্পকলা।’’
—দিস ক্রাফট অব ভার্স: হোর্হে লুইস বোর্হেস
|| ৬ ||
তৃণশূন্য চুম্বন, তুষারগৌর বন্ধন আর ফাঁপা বিন্যাসে লুপ্তস্বর খোঁজে নান্দীপাঠ।
প্রকৃতিপন্থি দিন, ভালো ঋতুদের ভৈরবী—কবে ছিল? ঊষাকাল গেছে বিপরীতগামী স্রোতে।
বিদ্রুপ সংগ্রাহকেরা সেবা দিতে, নেভা মোম হাতে, মুখে মাকড়সা-হাসি, হাতে কুয়াশায় ধোয়া কাঁকড়, মাঝেমধ্যে ঈশ্বরের কথা নিয়ে দু’দণ্ড নিজেকে দেখায়, এসেছি মানুষ।
অসুখের ব্যবসাদিন আর নির্দেশপত্র নিয়ে কতিপয় মুখ পূর্ণিমারাতে বেড়ালের বিনয়ী স্বরে বলে, তুমি কি বোঝো বীজাঙ্কুর? তুমি কি দেখ না দানরীতি আর ভোরবেলার পূর্বগগন?
সুবেলায় বমি আসে কেন, বলিনি তাদের।
|| ৭ ||
যাপনে হিংসা, স্বপ্নে হিংসা—কেন সে ওড়ে মেঘেদের সাথে।
গগনমণ্ডল থেকে কখনো আসে না নেমে নিকুঞ্জকানন।
আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক মানুষ খাঁচায় পাখি পোষে আজও।
পাখিরা আকাশের অক্ষর পড়ে। নিজেদের গাছে ফিরে এসে কখনো খোলে না পাঠশালা। মানুষের শিক্ষারীতি খাঁচার বিদগ্ধসমাজ।
মূর্খ, পাত্রে ভিজিয়ে রাখি ছোলা, জল দিই, তৃষিত আমিও।
অনেক বিজয় হলো, জ্যোতিঃপথ সুদূরে ধাবিত।
|| ৮ ||
যারা কাপড় পড়ি, বলি, কোনো এক বনভূমি থেকে নগ্ন মানুষ এসেছিল।
কোথাও বসেছিল, নাকি বসেনি, সঙ্গে ক্লান্তি ছিল। হেতুতে হাসবার কথা, হেতুহীন হাসবার কথা। পাহাড়ের আড়াল থেকে নেমেছিল নদীতীরে, তৃষ্ণা পোড়াবে বলে।
হাতে তিরধনুক, বল্লম। হত্যার সভ্যতা শিখেছিল।
কী গল্প বলেছিল? দূরপথে যাওয়া আর পাথর চুষে মধু পাওয়া। ‘যৌনতা’ শব্দটা শেখেনি তখনো। স্বাভাবিক বাহুবন্ধন।
কতদূর গেলে, সূর্য ডোবা দেখে ঘুম আসে?
কোনো এক সভ্যতা থেকে গাছের বাকল পরা মানুষ আসে।
|| ৯ ||
এখানে কাঠফড়িং পাওয়া যায়। ওড়ার অভিজ্ঞতা পাহাড়ের শীর্ষদেশে মেঘের চলাচলসম। দেখেছে শূন্যতার খাদ, আর পূর্ণতায় চাঁদ কী করে। বৃষ্টির সেলাই সাময়িক।
কাঠের দেয়ালে নৈঃশব্দ্যের গহ্বরে বসে নিঃশব্দে দেখে, চোখ স্থির, মানুষ কোন্ পথে যেতে ভালোবাসে, বন্দুকের সংগ্রাহক। সারাদিন তৃষিত। নিজেকে শুয়োর বলে না শিকারী।
গত সপ্তাহ থেকে কোথাও কাঠফড়িং পাওয়া যাচ্ছে না। কোন্ বনে গেছে?
কাঠগুলি সৌন্দর্যের খোঁজে, আমাদের সবুজ আলো দেবে বলে নিজেদের পুড়িয়ে ফেলেছে।
|| ১০ ||
কিছু বর্ষা সুখসঞ্চারী, কিছু মুখর বর্ষণ মম উড়ালবিরোধী, জোনাকিরা নেই, আলো জ্বেলে তারা দেখে রাতের বয়স কত হলো। রাত্রির ভিতরে রাত্রি জেগে থাকে।
প্রতিরাতে, কণ্ঠে মরমী গান নিয়ে আমার ডানার নিচ দিয়ে, তখন আমি কাঠের বাড়িতে একা, একজন মানুষ টর্চ হাতে অদূরে এক সঙ্গ পেতে, পায়ের নিচে কখনো শুকনো পাতা, মর্মর শব্দ শুনি, কখনো ভেজা পাতা, নিজের সতর্কে হাঁটে।
কোলাহলের মৌসুমে নির্বোধ হওয়ার সফলতা নেই। পদান্তরে পায়ের নিচে পড়তে পারে খাদ। স্থিরতার ঐশর্য্যে তুমি কি?
ঋতুগুলি খচিত বিলাস দেখাতে পরাঙ্মুখ ইদানিং।
প্রতিদিন উড়ে যাই। ফিরে আসি। সময়ে উচ্চপদস্থ থাকি, কখনো নিম্ন জলকণা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন