গৃহহীন হাওয়ার দিনে

অ+ অ-

 

|| ||

অতটা আগুন নও, যতটা ভেবেছে সবাই
বসন্ত দিনের গানেও চুপচাপ ছিলতো পাতা, গৃহহীন হাওয়ারা
এসেছিল জানালায়, এখানে শস্যদানার সুখ সকলের ঘরে আজও নেই
উড়ে একা শঙ্খচিল, নাড়ার ধূসর মাঠে পড়ে আছি সেই
তোমাকে ডাকবো কিনা এই ভেবে বহুকাল কিরকম
পার হয়ে গেছে, বহুকাল অসুখেই গেছে।

 

||  ||

অনেক হয়েছে দেনা, অনেক পাতার ঋণ ছায়া হয়েছিল
বৃষ্টিবতী মেঘেরা গিয়েছে চলে, হাওয়ারা নতুন রূপে ফিরছে এখন
শুরু হবে পাতা ঝরা দিন—এখনও অচেনা তুমি, একদিন 
সমস্ত প্রশংসা ছিল কাছে, ভুলে যাই দিন শেষে কোথাও
দাঁড়াতে হয়, তোমার আনন্দের পাশে কতোটা বছর গেছে চুপিচুপি
আমার অনেক ঋণ, যাকিছু ব্যর্থতা আছে, সেটুকুই সঙ্গে নিয়েছি।

 

|| ||

আমাকে পেছনে ফেলে আরও কোনো গভীর শীতে
উড়ে গেছে হাঁসদের দল, সেই কবে শুনেছিলাম যুদ্ধের শুরু
অনেক মিছিল গেছে, পথ সেই একইতো আছে, থামেনি মিছিল
পড়ে আছে পোড়া ঘাস, অনেক রঙিন ফুল ঝোপেঝাড়ে 
বিলুপ্ত হয়েছে, পুড়ছে পালক, ঝিলের পাড়ের হাওয়া 
চুপচাপ ছুঁয়ে যায় বাগানের ঘুম, কে তোমাকে 
ডাকবে আর, তোমাকে ডাকার কি শেষ আর নেই।

 

|| ||

আবারও শীতের হাওয়া এসেছে কার্তিকের দেশে
আরও একবার সোনার ফসল তোলা হবে কিনা, তাই নিয়ে 
অগ্রহায়ণে অনেকেরই কত আয়োজন, একবার-দুবার নয় এরকম 
কতো বর্ষা শেষে ফসলের মাঠ তোমাকে নিয়েছে ডেকে
তারপর ঘরে ঘরে শীত এসে গেছে, চৈত্র-ফাল্গুনে দেখি 
যতসব লাল ফুল, গাছে তার ভিন্ন পরিচয়, ঝরে পড়ে 
ম্লান শুকানো পাতা, অতোটা নিজের বিনাশ কে আর কবে চেয়েছিল
একদিন নতুন পাতারা এলেও সবকিছু কখনোই ফিরে না।

 

||  ||

আমাদের পথগুলো এতই দীর্ঘ কিনা, তবু মনে হয়
এইতো কাছেই, তারপর বহুকাল আমাদের দেখাশোনা নেই
একেকটি রঙিন ভোর কিরকম দূরতম পাখি হয়ে গেছে
যাদের কাছে ডাকি, তারা দেখি পাশ ফিরে শুয়ে আছে
চেনা মুখ ডুবে যায় মেঘের বরফে, নামে অন্ধকার
একেকটা ক্লান্ত রাত সঙ্গবিহীন পার হয়ে যায়
তবে যে অনেক রক্তের দাগ পড়েছিল পথে, এইসব 
কিসের চিহ্ন, যেইপথে হরিণীও গেছে—এক পথে 
কতোশত পায়ের দাগ ধুলাতেই ঢাকা পড়ে আছে।

 

||  ||

এত হাওয়াপ্রবাহ, এত মদ হাওয়ার ভেতর, এত ঘোর
অস্থির পাতারা কাঁপে, দাঁড়ানোর জায়গা এত ছোট হয়ে গেছে
ব্যক্তিগত দিন বলে আর কিছু নেই, তোমাকে চেনা এখন 
আরও কঠিন, মুর্খ হয়ে আছি—অনেকেই দূরে সরে গেছে 
সঙ্গে শুধু ঝরা পাতা, একসাথে পাতারাই আছে।

 

||  ||

কি করে সস্তায় এত প্রাণ শেষ হয়ে যায়, এত 
মৃত চোখ, আমাদের দিনলিপি কেউ কি পড়ে দেখে আর
দিন সেতো এমনিই গেছে, বহুদূর কোনো এক নগরে তখন 
আলো জ্বলে ওঠে, আরও দূরে চাঁদ—অপূর্ণ তৃষ্ণা নিয়ে 
অনেকেই দূরের মানুষ, আমাদের বোঝাপড়া এত কম
সমস্ত বছরই যায় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে; তবু যদি মনে থাকে নাম
না হলে নাই, একদিন অনেক দিনের শেষে 
বহুকিছু হারিয়ে গেলে ফিরতে পারে দিকহারা নদীর সুনাম।