মাহির

অ+ অ-

 

নকুগাঁও আর গোবরাকুড়া এই দুই স্থলবন্দরের মাঝে গজিয়ে উঠেছে যে বিস্তীর্ণ জঙ্গল, মায়াগাছি গ্রামটা সেখানেই। গ্রামের শেষ সীমায়, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে আর গারো পাহাড়কে ব্যাকভিউতে রেখে ভাদুন আর তার মায়ের কুঁড়ে। শেষ যেবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষ গুনল সরকারতখন এটাকে সাব্যস্ত করা হয়েছিল ঝুপড়ি ঘর হিসেবে। কবির ভাষায় বলতে গেলে পর্ণকুটির। তা যত কাব্য করেই ডাকো না কেন, একটু ঝড় উঠল কি ভোগাই নদীর দুকূল উপচে ঢল নামল তো গলাসমান পানিতে জবুথবু কুঁড়েটা নেড়ি কুকুরের মতো কুঁইকুঁই করে ডাকে। জমির পর্চায় যদিও মৌজা-নাম বলা হয়েছে শেরুয়ার ভিটা, কিন্তু এটা আদতে এখনও সরকারের খাস সম্পত্তি।

ভাদুনের নাম শুনে বোঝার উপায় নেই ছেলে কিবা মেয়ে। এমনকি দেখেও বোঝে কার সাধ্য। খ্যাংড়াকাঠির মতো গড়ন আর কুড়ুলের মত চেহারাছবি দেখে ভাবা দুষ্কর যে সে চৌদ্দ পার করেছে। বয়স ছয় ছাড়িয়ে গেলেও মুখ থেকে অবিরাম লালা গড়ানো যখন আর থামছিল না, তখন এলাকার কারও বুঝতে বাকি রইল না যে এ কোনও স্বাভাবিক মানুষের বাচ্চা নয়। ভাদ্রমাসে বিইয়েছিলতাই নাম ভাদুন। তা আরাসিং জোলা আর মাতি জোলার সন্তানের নাম এর চেয়ে ভালো আর কী-বা আশা করা যায়? বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুর নামের এত দেখনসই বা কীসের? নিজের নাম তো সে নিজেই উচ্চারণ করতে শেখেনি। জিজ্ঞেস করলে যে ভোঁতা বিদঘুটে শব্দ উচ্চারণ করে, তা থেকে মোটামুটিভাবে ভাডু ধ্বনিটাকে উদ্ধার করা হয়ত সম্ভব, কিন্তু ভাদুন কখনোই নয়। আর করবেই বা কি করে? ওর জিভ স্বাভাবিকের তুলনায় যেমন হ্রস্ব তেমন পুরু আর বিস্তর ফাটাফাটা। অন্তত স্পষ্ট কোনও ধ্বনি উচ্চারণ ওই জিভের দায়িত্ব নয়। শরীরে আরও কিছু ঘাটতিচিহ্ন দেখে তার প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করেছিল উপজেলা সমাজসেবার কর্মকর্তারাএকটা ভাতাকার্ড দেবে বলে। ভাদুনের বয়স তখন ওই নয় দশ হবে। চার বছর পেরিয়ে গেছেকিন্তু কার্ডের দেখা নেই।

তা ভাদুন কী আর সেই কার্ডের আশায় আছে নাকি? সারাদিন মাথা নাড়ে কি হাত নাড়ে, আর মাঝে মাঝে জঙ্গল পেরিয়ে, হালুয়াঘাট থেকে যে হাইওয়েটা হাতিপাগাড় বাজারে গিয়ে মিশেছেসেই রাস্তার ধারে বসে থাকে। লোকজন ওকে দেখে এখন আর ভিড় জমায় না। বরং মাঝে মাঝে চায়ের টং-দোকান থেকে ড্রাইকেক কিনে দুটো একটা ছুঁড়ে দেয়। ভাদুন এই একটা জিনিস খুবই মজা করে খায়। ওকে না ঘাঁটানোর বেশ কটি কারণের একটা হল, পেছনের গারো পাহাড়! রহস্যময় ওই পাহাড়ের খাদে একটা গোরস্তান ছিল একদা। খ্রিষ্টান সাহেবদের। যখন বি-৫২ বোমারু বিমান আকাশে ঘনচক্কর দিতো; জাপানিরা বোমা ফেলল খিদিরপুরে, মনে আছে? সাদাকালো যুগের সেই বিজাতীয় গোরস্তান এখন পরিত্যক্ত। বড় বড় শাল আর মান্দার গাছ এন্তার গজিয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু গা ছমছম করা একটা অপার্থিব আতঙ্ক এখনও মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ভাঙা ইটের দাঁত বের করা এবড়োখেবড়ো সমাধির জঞ্জালে আকীর্ণ ঘুটঘুটে জঙ্গলে সাপখোপ, ডান-বাসুকী এমনকি দু-একটা চিতা কিংবা বল্গা হরিণ বা কৃষ্ণসার কি লুকিয়ে নেই? ভেবে দেখো, সেই শশ্মানখোলা ঘেঁষে কারও যদি বাড়ি হয়, তো তুমি তাকে কতটাই বা গায়ে পড়ে ঘাঁটাতে যাবে? বরং ভাদুনকে মানুষজন একটু সমীহই করে কারণ, বলা তো যায় না, তেনারা কতো রকম চেহারাতেই তো লোকালয়ে চলে আসতে পারেন! মিসি সালজংয়ের কৃপায় তেনাদের সেই ক্ষমতা না থেকে পারে? তা যদি না হতো, এমন চৌকোনা ভিটাটা কি এদ্দিনে দখল হয়ে যেত না এলাকার বনখেকো মিনসেদের নজরে পড়ে? আরাসিং জোলা মরেছে মেলাদিন আগে। ভাদুনকে পেটে রেখে কিংবা না রেখে। তা সেসব পুরোনো কাসুন্দি এখন আর মানুষজন তেমন একটা ঘাঁটে না। মাতি জোলা জনকামলা দিত, আরাসিং গত হওয়ার পর। তা কামিনের যদি সোয়ামী-ছাড়া পেট হয় তো হোক, তোমার আমার অত কৈফিয়তের আছেই বা কী? বলা তো যায় না, তেনারা কার পেটে কখন কী পয়দা করে রাখেন! সরকারের চল্লিশ দিন, আশি দিন আর একশো দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির তালিকায় মৃত স্বামীর নামের ওপরই তার টিপছাপ নিতো লেবার সর্দার। ভোগাই নদীর অপুষ্ট বুকে জমা কালচে ভেদর-কাদা কোদালে কেটে সাজি ভরে তুলে আনো আর তিন মাস পরে সেটাই বর্ষায় ধুয়ে ফের সেই নদীকেই গাভিন করে দিক। নয়তো পরের বছর কেউ আর মাটিকাটার কাজ পাবে না, বুঝলে?

যে দিনটির কথা বলা হচ্ছে, সেদিন ছিল প্রথম চৈত্রের দমকা বাতাস। নিকেল করা ঠা ঠা রোদে ভিটি-বারান্দা সয়লাব। লোকজন জানালায় খিল তুলেও বাতাস ঠেকাতে পারে না। ধুলোভর্তি দমকা হাওয়া পাক খেতে খেতে একবার উঠে যায় মান্দারের মাথায় ফের ঘাড় ঘুরিয়ে ঢুকে যায় নিচু বাড়িগুলোর চালের মাক্তা ফাঁক করে। তা দুপুর কালে এহেন ভুরুন্ডিবাতাস মায়াগাছির মানুষজন কম দেখেনি আগে। তবু আজ যেন বড় বেশি বাতাস দিচ্ছে। এই বাতাসকে তারা বলে মাহির! দোজখের মন্দ-হাওয়া। তা বলুক, কিন্তু সুনসান সেই অসময়ে ভাদুন গিয়ে বসে ছিল হাইওয়ের পাশের জঙ্গলে। সেখানে সে পড়ে থাকতে দেখে ইয়া বড় ঠোঁটওয়ালা এক হাড়গিলে। কালো কুৎসিত পালকে ঢাকা আর বাহাত্তুরে বুড়োর মতো মেটেহলুদ পশমে আগোছালো পাখিটার একটা ডানা ভাঙা। দেখতে এমনিতেই বদখত, তার ওপর আহত- এই পাখির সাহচর্যে যেতে হলে রুচি আর সাহস দুটোই লাগে। হয়ত কোনও গাছের সাথে বেমক্কা বারি খেয়েছে কিংবা দ্রুতগামী কোনও বাইকের সামনে পড়ে গিয়েছিল। যে করেই হোক, হাড়গিলে বেচারার ডান পাখনাটা নড়াবার শক্তি নেই। চ্যাতলা দিয়ে মাটিতে পড়ে সে উড়তে চেষ্টা করার বদলে ঠোকর দিয়ে চারপাশে জমায়েত হওয়া ডেঁয়োপিঁপড়ে তাড়াচ্ছে। নাকি খাচ্ছে? ভাদুন ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কতক্ষণ সেটা দেখল। তারপর মাথা নাড়তে নাড়তে দুটো জংলীকচুর পাতা ছিঁড়ে তা দিয়ে চেপে ধরলো পাখিটার চোখ দুটো। আন্ধা হয়ে পাখিটা আর নড়ে না। ভাদুন রায়ট লতা দিয়ে ওর ভারী লম্বা ঠোঁট দুটো প্রথমে বেশ করে প্যাঁচালোকারণ গিঁট সে দিতে শেখেনি আজ অবধি, কিন্তু তীক্ষ্ণ ঠোঁটের এক গুতোয় যে ঘিলু বার হয়ে যেতে পারে এই বিবেচনা জ্ঞান মিসি সালজং দেবতা তাকে দিয়েছেন। পরিমাণে সেটা একদম কম নয় বলে এরপর কচুর ডাঁটার কষ বের করে বেআক্কেল পাখিটার ভাঙা ডানায় বেশ করে ঘষে দিলো। এভাবে সে বহুবার ক্ষতের ওপর ঘষতে দেখেছে তার মাকে। ওইটুকু শুশ্রূষাতেই পাখিটা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু ভয়ে কাঁপছে থরো-থরো যেন বা জ্বর এসেছে।

ভাদুন পিটপিট চোখে বিষয়টা দেখল। তার মা, মাতি জোলা বহুদিন অসুখ হলে তার গায়ে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে দিত। তাতে আরাম লাগুক না লাগুক, কাঁপুনিটা কমতো। কিন্তু এখানে সেসব কিছু নেই। তাই সে পাখিটাকে নিজের পরনের জামাটা খুলে বেশ করে পেঁচিয়ে তারপর মাথায় নিল। এই বয়সের মেয়েমানুষ কখনও বাড়ির বাইরে উদলা হয় না। কিন্তু ভাদুনের তো জ্বর থামাতে আর কোনও উপায়ও নেই। আধ-মানুষ সমান ধ্যাড়ধ্যাড়ে পাখিটাকে মাথায় করে এতটা পথ বয়ে আনতে তার মুখের লালা বেদম ঝরতে লাগল। তবু তো সে দাওয়ায় এসে মাথার বোঝা আলগা করতে পারলো। মাতি জোলা এই কাণ্ড দেখে খোনা গলায় গাল পাড়লো তাকে। ভয়ও পেলো, যতটা না হাড়গিলে দেখে, তারচেয়ে মেয়ের উদোম অপুষ্ট বুকে পুরুষের নখের আঁচড় দেখে। চুলের মুঠি ধরে পিঠে দুমাদুম কিল মারতে মারতে সে জানতে চাইল এই কাজ যে বেবুশ্যের ব্যাটা করেছে তার জান-পরিচয়। ভাদুন যা বলে সেটা কখনোই কেউ বোঝে না। কিন্তু আজ, এই এখন, সে এ বিষয়ে একটা কথাও বলতে গেল না। তার চোখ দিয়ে কেবল পানি ঝরতে লাগল। মায়ের হাতে দুই লাচা মার খাওয়ার পর তবে তার ফুরসত হল পাখিটার যত্নআত্তি করার। অবাক কাণ্ড, ঠোঁট খুলে দেবার পরও পাখিটা কোনও ঠোকর দেওয়ার চেষ্টা করল না, কেবল মুখ দিয়ে টরটর, টরে টরে, কড়-কড়াক্, কর-কড়াক্ ইত্যাদি শব্দ করতে লাগল। সেইসব ধ্বনি-সমষ্টি রাগ না অনুরাগ, সেটা বোঝা মুশকিল হলেও, ভাদুনের ভোঁতা আওয়াজ বুঝতে পাখিটার তেমন কষ্ট হল না। দুজনের এই দুর্বোধ্য ভাববিনিময় এক ব্যাখ্যাতীত সংযোগ সৃষ্টি করার ফলে দিব্যি তারা একে অন্যের পোষ মেনে গেল দুদিনেই। এরপর তাকে আর ঝাঁপি ঢেকে বা দড়ি বেঁধে রাখতে হল না। বরং ভাদুন যেখানে যায়, হাড়গিলাও তার ড্যাঙড্যাঙে পা জোড়া দিয়ে পাশে পাশে হাঁটে। অবশ্য বেড়াল আর হাঁস দেখলে ঠোকরাতে তেড়ে যায়। লাভের লাভ এই হল, সর্বভুক পাখিটা এলাকার মেটেইঁদুর সব খেয়ে শেষ করে ফেলল।

হারগিলার খাদ্যতালিকা বেশ দীর্ঘ, অসীমও বলা চলে। বাজখাঁই ঠোঁটের সুদক্ষ প্রয়োগে সে খেতে পারে মুড়ি, বিস্কুট থেকে শুরু করে ডাবের জল পর্যন্ত। এমনকি ভক্ষণীয় নয়এমন বস্তু, যেমনলাকড়ির কুডিও সে অনায়াসে গিলে ফেলতে পারে। আর পারবে নাইবা কেন? নাম যার হাড়গিলাহাড় গিলে ফেলাও তার কাছে দস্তুর। সারাদিন কাচাকঞ্চির মতো জোড়া ঠ্যাং আর বেঢপ ঠোঁট নিয়ে সে আশেপাশের ঝোপজঙ্গলে চক্কর কাটে, কিন্তু শেরুয়ার ভিটা ছেড়ে বাইরে কোথাও যায় না। কেউ ধরতে গিয়েছে কি, ওই জমজ ঠোঁটজোড়া কাঁচির মতো ফাঁক করে তেড়ে আসে। ওর ভয়ে এমনকি ভাদুনকেও কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। রোজ দুপুরের খাবারটা সে ভাদুনের সাথে এক থালাতেই সেরে নেয়। রাতে ঘুমায়ও এক বালিশেই। তবে তার চেয়েও তাজ্জব কাণ্ড, পাখিটা রক মিউজিকের সাথে নাচতে পারে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এলাকার লোকজন তাকে দেখতে ভিড় জমালে, কারো কারো মোবাইলে বাজানো গানের সাথে সে কোমর দুলিয়ে বেশ কিছুটা নেচে দেখায়। ওই সব নাচের ভিডিও টিকটক হতে হতে, ইতোমধ্যে মায়াগাছি গ্রামটা বিখ্যাত হয়ে গেছে। এলাকাবাসী সেই তান্নাস্থির করা চৈত্রের পাগলা বাতাসকে মনে রেখে পাখিটার নাম রেখেছে মাহির! টিকটকে এই নামে সার্চ দিলে শতখানেক রিলস্ আর ক্লিপ পাওয়া যাবে। গণমাধ্যম মাহিরকে নিয়ে ইতোমধ্যে নিউজ ফিচারও করেছে। তাকে দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে জনতারা এসে ভিড় জমায় কিন্তু নাচ দেখার সৌভাগ্য ইদানীং সবার হয় না। কারণ নাচ হল মুডের ব্যাপার, চাইলেই কেউ যখন তখন নাচতে পারে? নলকুড়া থেকে সেদিন এলো স্কুল মাদ্রাসার কিছু উৎসুক শিক্ষার্থীমাহিরের ওইদিন মুড ভাল ছিল। কিন্তু কাঁকড়াকান্দি বাজার সমিতির লোকেরা যেদিন এলো, মাহির সেদিন একদমই চুপচাপ। খালি টরটর্ টরেটরে শব্দ শুনেই তাদের সন্তুষ্ট হতে হল। দর্শকদের নজরানা হিসেবে তার খাদ্যতালিকাতে নতুন আইটেম হিসেবে যোগ হয়েছে গুলিশা ট্যাংরা আর ক্যাডবেরি ডেইরি মিল্ক চকলেট। প্রায় মাস দুয়েক লাগল তার ভাঙা ডানা জোড়া লাগতে। তারপর একদিন ভোররাতে পাখিটা তার প্রশস্ত ডানা মেলে, কাউকে না বলে কয়ে, নিমকহারামের মতো গারো পাহাড়ের দিকে সটান উড়াল দিল! ভাদুন তখন অলম্বুষের মত চিৎ হয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছিল।

গতরাতে তার বমি হয়েছে। পেট ফুলে বেশ খানিকটা উঁচু হয়ে গেছে এতদিনে। আর মাতি জোলার বাড়তি কাজ বেড়েছেসকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরুদ্দিষ্ট সেই বেবুশ্যের ব্যাটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে নাকিকান্না আর ঘ্যানঘ্যান করা। কে তার ভোলাভালা মেয়েটির এমন সর্বনাশ করল গো! এলাকাবাসী ইতোমধ্যে ওদের একঘরে করে ফেলেছে। কারণ উপর্যুপরি দু-দুটো অন্যায় তারা মেনে নিতে পারে না। আগেকার বৃদ্ধ-প্রজন্ম মাতি জোলাকে ক্ষমা করে দিলেও, এখনকার তরুণ প্রজন্ম কী করে ভাদুন জোলাকে ক্ষমা করবে?

শাবান মাসের শেষাশেষি, এক সন্ধ্যাকালে চেক-পাগড়ি পরা কিছু লোকযাদের এলাকাবাসী খুব একটা চেনেও নাতারা দলবেঁধে কাতারে কাতারে প্রথমে জড়ো হল নলকুড়া বাজারে। আসকিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের আট নং মায়াগাছি ওয়ার্ডের, মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়ানো লতিফ মেম্বার তাদেরকে গাইড করে নিয়ে এলো উদ্দিষ্ট স্থানে। তাদের কারও কারও হাতে আগুনের মশাল দাউদাউ জ্বললেও অধিকাংশের হাতে গজারির কচা আর রামদাও। উদ্দেশ্য খুবই মহৎ তাদেরএইসব অসামাজিক কাজকাম তারা এলাকায় আর বরদাস্ত করবে না; পুড়িয়ে দেবে। মশাল মিছিলটি জোশে ধ্বনি তুলে মাতি জোলার কুঁড়ে অবধি আসলো অনেকটা উড়ে আসার মতকেননা, লতিফ মেম্বারের ওই শেরুয়ার ভিটায় একটা লিল্লাহ বোডিং করার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্তু দলটি ঝুপড়ি ঘরের খুব বেশি কাছে ভিড়তে পারল না। থমকে দাঁড়ালো, কারণ মাতি জোলা আর ভাদুন জোলার বাড়ির সীমানা আগলে দাঁড়িয়ে আছে অন্তত তিনটা চিতাবাঘ, গোটা ছয়েক দাঁতাল শুয়োর, একজোড়া বল্গা হরিণ আর একপাল কৃষ্ণসার! অগ্নিসংযোগে উৎসাহীগণ দেখলো মান্দার গাছের ডালে ডালে ছেয়ে আছে অগুনতি হাড়গিলা, শকুন, শামকল আর রাজগোখরায়আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মাহির!