যা তুমি চেয়েছো ও অন্যান্য কবিতা

|| যা তুমি চেয়েছো ||
যা তুমি চেয়েছো,
চির উদাসীন থাকি চতুষ্পার্শে
সুন্দরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, তবু
পৃথিবীর কোথাও নামেনি নীরবতা।
যা তুমি চেয়েছো,
বাতাসের সাথে কিংবা কল্পনাপ্রসূত শত্রুর বিরুদ্ধে যত
বিষোদ্গার তোমার, আমি তার
চিরস্থায়ী সমর্থক, তবু
পৃথিবীর কোথাও নামেনি নীরবতা।
যা তুমি চেয়েছো, বন্ধুহীন আড্ডাহীন
আনন্দবিহীন এক যাপন-মগ্নতা
করেছি সন্তের মতো, তবু
পৃথিবীর কোথাও নামেনি নীরবতা।
যা তুমি চেয়েছো তার খেসারত
দিতে দিতে জীবনের সব রস
ঝরে গেল। আর কতো অনর্থক
তোমার সুরেই যাব সুরটি মিলিয়ে!
জানি, পৃথিবীতে কোনো দিনই নামবে না নীরবতা।
|| ধান ||
শিশিরের একটা রূপালি ফোঁটা
বসে আছে ধানের শীষের ‘পরে
আর কৃষকের অশ্রু শুকিয়ে রয়েছে নেত্র-কোণে
আমাদের স্বপ্নগুলো প্রতিদিন একে একে
পিষে মারে কেউ কেউ উকুন যেমন
হায় ধান, গোলায় রয়েছে তবে উনুনে চড়েনি
|| অনিদ্রা ||
তোমার অনুপস্থিতি মানে এক বড়ি ডরমিকাম
অথবা বিনিদ্র রাত অন্তহীন ভাবনার
কেবল সুঘ্রাণটুকু পাশের বালিশ থেকে নেচে নেচে ওঠে
তোমার চুলের ঘ্রাণ, ঘাম ও পারফিউম
সব আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে
কেবল দু’চোখে আর কিছুতেই নিদ্রা নামে না…
|| বাজ ||
মাথায় পড়েছে ভেঙে বিধ্বস্ত আকাশ
পড়ে বাজ
কালো মেঘ গলে গলে পড়ে
আলকাতরার ঢল, তবু
কোথাও কোথাও ঝরে লাল,
কোথাও ভাঙছে বাড়ি
অথবা বিশ্বাস
বন্ধ হয়ে আসে শ্বাস
বন্ধ সব আলোর উচ্ছ্বাস
ইনহেলার
ভীষণ দরকার
|| পাহাড়ে একদিন ||
পাহাড়ের গা বেয়ে যে ঝরনা নেমেছে
এখন তা খটখটে শুকনো খাঁড়ি
আমরা ভাবতে থাকি এর জল
কোন্ পথে আসে তার হদিস খুঁজতে হবে,
আমরা এগিয়ে যাই পাহাড়ের খাঁড়ি ধরে
চড়াই উৎরাই বেয়ে ঘন অরণ্যের দিকে
পাহাড়ের অদেখা চূড়ার পথে।
ভেবেছি পাহাড়ে খুব উঁচু থেকে
দেখে নেবো নিজের নীচুতা যত
তারপর যেতে থাকি বহুদূর
খাড়া খাড়া পর্বতের ‘পর।
দেখি না নিচুতা কিংবা
উচ্চতার কোন ভেদ,
কেবল জঙ্গল দেখি—গাঢ় অন্ধকার
ঘিরে রাখে চারপাশের অনন্ত সবুজ…
|| হিমরাত্রি ||
কলাই রুটির সাথে হিম নেমে আসে
রাজহাঁসের মাংসের ঝোলের সুতীব্র ঝালে,
ভর্তার মলিন পুদিনায়;
অথবা পদ্মার পাড়ে জেলেদের জালে
কিংবা বড়শির বাঁকা ছিপে আটকানো মাছের ঝাপটায়।
সড়ক-বাতির ঘোলা আলোর তলায়
রাজশাহী শহরের রাস্তা জেগে থাকে,
আর থাকে ঘোরগ্রস্ত যুবার চিবুক,
শিক্ষালয়-ভাতঘর-পানশালা-বিড়ির দোকান,
কবিতাজীবীর শ্লথ হাঁটাহাঁটি,
উচ্চকন্ঠ বাদ্যযন্ত্র ম্রিয়মাণ কবির শ্রবণে।
অক্ষরেরা মাত্রাবৃত্তে ধীরলয়ে জেগে ওঠে
বুক থেকে বুকের গভীরে।
পদ্মার দুপারে ওড়ে নারীগন্ধ শীতার্ত পাতায়।
অন্ধকার, গাঢ় অন্ধকার,
তবু তার ভিন্ন রূপ—ভিন্ন ঘ্রাণ;
বহুদূর অলোকপুরীতে বুঝি টেনে নিয়ে যায়
তরুণ তরুণতর কবির উচ্ছ্বাস।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন