প্রেম ও অন্যান্য কবিতা
প্রেম
যেনো বোতলের পানির ভেতর হিম হয়ে বসে থাকি;
বিবিধ কাগজ, শিশি, রাবার-স্ট্যাম্প, কাচি,
পেন্সিল, কৌটো ভর্তি পিন, ওরা আমার
অতি-কাছের; এরকম অকৃত্রিম আত্মীয়তায়
কোনো ক্রুরতা নেই,নেই কোনো জবরদস্তি
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি কার পাশে কাকে ভালো
লাগে, একটা স্ট্যাপ্লারের পাশে তিনটা কলম,
কালো পেন-হোল্ডারের পাশে নীল পাঞ্চ-মেশিন
মাঝেমাঝে ওদের জায়গা বদল করে দেই:
টেলিফোন সেটের পাশে একটা কাপ রাখি;
সকালে এসে দেখি সবুজ কাচের বোতলের
সাথে সাদা প্লাস্টিকের ছিপি মুখে মুখ লাগিয়ে
আকণ্ঠ ডুবে আছে আর একসময় জংধরা তালার
সাথে চাবির রতি-বিনিময়ে খুলে যায় সব গেট
এক জড় বস্তুর সাথে আরেক জড় বস্তুর নির্বাক
ঘনিষ্ঠতা আর পাশেই আমাদের সম্পর্ক যখন
আছড়ে পড়া কাচের মতো বারবার ভেঙে যায়,
সামনে তাকিয়ে দেখি চেয়ারে উপবিষ্ট তুমি?
বৃষ্টি
আমার আত্মা যখন
শুকিয়ে গেলো
তুমি আসলে না কেনো
আকাশের কার্নিশ বেয়ে
দালানের ঠোঁট ছুঁয়ে
একবার পড়ো তো
এই বিশুষ্ক ললাটে
কলিজা তোলপাড়
করা সেই চুমুর কথা
মনে পড়বে আবার?
ও আমার আত্মা, জাগো,
জাগ্রত হও, পাতো কান,
শোনো বিন্দু বিন্দু,
গুঁড়ো গুঁড়ো মিহি ডাক
সে বেরিয়ে পড়েছে
এবার মেঘের নাভি থেকে
ঝরে পড়বে আমার
শুকিয়ে যাওয়া আত্মায়
যদি ডাকাত হয়ে যাস
তুই একটা কাদার মণ্ড
তোকে তুলে রাখবো
হাতের তালুতে আমার
একটা ব্যাঙাচি তুই;
কাদার পানি থেকে
মাথা তুলে দেখবি কি
এই অজানা পৃথিবীকে
কচুপাতার নরম বুকে
একলাফে উঠে আয়
একবিন্দু সবুজ ব্যাঙ;
ক্যামোফ্লাজ নিয়ে মিশে
থাক, সাবধান, গড়িয়ে
পড়িস না গনগনে
পৃথিবীর বেড়াজালে
তোর চোখ দুটো এতো
পিটপিটে, যেনো গ্রাসফ্রগ,
গুটিসুটি, সাবধানে হাঁটবো,
পাড়া দিবো না, যদি আবার
পিষে মরিস পায়ের তলায়
কমলা সূর্যটা তোর চোখ
থেকে জন্ম নিলো যখন
বাতাসের ডানায় চেপে
একপাক ঘুরে টুপ করে
বসে পড়লি ঘাসের ডগায়
একটা পাঁচকোনা পাতা
ভাসতে ভাসতে তোর মাথায়
মুকুট হয়ে বসে পড়লো আর
তখন পা ঠুকে সালাম দিলো
খুদে পিঁপড়েরা তোকে
তুই পিচ্চি হয়েই থাক
বড় হবি না কিন্তু, আর
যদি সবাইকে লম্বায়
ছাড়িয়ে যাস, মোচ গজিয়ে
ওঠে, তবুও তোকে নিবো
কোলে তুলে, তোর বউ এক
কোলে আর তুই আরেক
কোলে আর দু'জনকেই
সকালবেলা ব্রাশ দিয়ে
দাঁত মেজে দিবো,
তোদের দাঁত ইঁদুরের দাঁত
থেকেও তীক্ষ্ণ হবে, দেখিস
দরকার নেই পাকামো
ক'রে কথা বলার, তুই
তোতলাই থাক, কেউ না
বুঝলেও আমি তোকে বুঝি
একদিন পুরানো বাসায় নিয়ে
যাবো, তখন দালানের
চুন থেকে খুঁটে খুঁটে
খেয়ে নিস সব নোনতা স্বাদ
আর এতোকিছুর পরেও
সত্যিই যদি ডাকাত হয়ে যাস
তবে কখোনই ভুলিস না
ব্যাঙের ছাতার উপর বসা
ওই টিঙটিঙে মেয়েটাকে
বৃষ্টির আতর
[আব্বা আনোয়ারুল হক-কে]
এভাবে পুড়তে দিবো না আপনাকে
এবার বরফ হয়ে চলে আসবো
একটু ওয়েট করেন প্লিজ
যতটুকু সময় লাগে জমাট বাঁধতে
ফ্রিজে ঢুকে বসে থাকবো
হিম হয়ে আসবে শরীর
একদিন তো নিথর হয়েই যাবো
আগেভাগেই রেডি হচ্ছি
এতোদিনের হুতাশন নিভিয়ে দিতে
বদলে যাওয়া বরফের টুকরাকে
বসানো হবে আপনার উপর যেনো
শীতল হয়ে আসে সব দহন
পানি হয়েও আসতে পারি
শুনেছি আপনার শরীরের নিচে
এক জলাধার আছে
তাই কলের পানিকে বললাম
তার সাথে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে
যতদিন লাগুক পৌঁছবোই ওখানে
পানির ফোয়ারা হয়ে ছড়িয়ে
যাবো আপনার শুষ্ক ললাটে
কখনো বাষ্প হয়ে মেঘের উদরে
বড় হতে থাকবো
ভাসতে ভাসতে মেঘরূপী মা
থামবে সেই কপাটবিহীন
বাড়ির উপর আর যে গাছটা
ভাই আমার আপনার শিয়রে রোপন
করেছিলো তার থোকা থোকা
ফুলের উপর মেঘ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়বো
তখন পাপড়ির সাথে মিলেমিশে
সুগন্ধি হয়ে জন্ম নিবো
আর বৃষ্টির আতর হয়ে ঝরতে থাকবো
আপনার পবিত্র শরীরে
একটু ওয়েট করেন প্লিজ
বরফ হয়ে আসছি পানি হয়ে আসছি
এভাবে পুড়তে দিবো না আপনাকে আর
সবগুলো কবিতাই সুন্দর। দৃশ্যকল্প দারুণ। পড়তে পড়তে আবিষ্কার করতে করতে এগিয়ে যাওয়া।
আফসার বিপুল
সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৩ ২৩:০২