কবিতার বইয়ের নাম গরবাপাখি

অ+ অ-

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কবিতা লিখলেও এবার প্রথম প্রকাশিত হলো রাফসান গালিবের বই গরবাপাখি। ৪০টি কবিতা নিয়ে সাজানো বইটিতে উঠে এসেছে কবির অনুপম দুঃখ-আনন্দ ও জীবন সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়। তার কবিতায় শব্দের নিটোলতা ও সহজতার কারণে সুখপাঠ্য ও ভাষা আনন্দায়ক। কুটুম বা অতিথিপাখিকে চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় ডাকা হয় গরবাপাখি। ঘরের চালে বা গাছের ডালে এই হলুদ রঙের পাখিটি ডাকলে গৃহস্থ খুশি মনে দুটো চাল ছিটিয়ে দেন উঠোনে। আর অপেক্ষা করতে থাকেন অতিথি বা গরবার। অতিথিপরায়ণে সুনাম রয়েছে চট্টগ্রামবাসীর।

গরবাপাখির কবিতাগুলোতেও কখনো গৃহস্থ, কখনো অতিথির আনন্দ-বেদনার জীবনগাথার পরশ পাওয়া যায়। বইয়ের এমন নামকরণই বলে দেয়, নিজ শেকড়ের প্রতি কবির সচেতনতা। ঔপনিবেশিক চেতনাকে পাশ কাটিয়ে স্বতন্ত্র চিন্তার সাহসী উচ্চারণ রয়েছে গরবাপাখিতে। এই প্রসঙ্গে বইয়ের স্মৃতিঘনিষ্ঠ কবিতাটির দুলাইন উদাহরণ হিসেবে দেওয়া গেল—‘মা বলতেন, মাছেদের কান্না শোনার ধৈর্য যাদের নাই, পানিতে সাবানের ফেনা নিয়ে খেলা তাদের অভ্যাস। এছাড়া বইটির 'দুপুরের ছাদে', 'বায়োগ্রাফি', 'গরবাপাখি', 'নিঃসঙ্গতা', 'বয়সের গান', 'বিদায় পিতিবি', 'কূটনীতি' ও 'গোরস্থান' নামের কবিতাগুলো কবিতাপ্রেমীদের হৃদয়ে আলাদা করে জায়গা করে নিতে সক্ষম।

গালিব যেন ইচ্ছেকৃতভাবে কবিতায় নিরীক্ষা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। আপাত সাধারণ মনে হলেও নতুন চিন্তা উস্কে দেওয়ার শব্দসলতে রয়েছে তার কবিতায়। সেই ভঙ্গি আত্মনিরীক্ষার। তার কবিতা হৃদয় উৎসারিত; ছন্দশাসিত নয়। আত্মব্যাকুলতাময় এবং নিজস্ব ব্যথা-বিরহ তথা আত্মব্যথানন্দে ভরপুর। শব্দচয়নও চেনা গণ্ডির। তবে বইয়ে তার শুরু ও শেষের লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে ভাষা ও চিন্তার পার্থক্য চোখে পড়েছে। কোনটায় সামাজিক সাংস্কৃতিক আর কোনটায় রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। তিন ফর্মার বইটির গায়ের দাম ২০০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত।