সার্কাস-কন্যা ও অন্যান্য কবিতা

|| সার্কাস-কন্যা ||
আয়োজন সুসম্পন্ন
মাহেন্দ্রক্ষণ আসা মাত্রই
ছিপছিপে সার্কাস কন্যার গায়ে
তরবারির ডগায়
খ্যাঁচখ্যাঁচ করে
লিখে দেয়া হবে মৃত্যু সনদ
আরেক জন্মের প্রত্যাশায়
দর্শক সারিতে ফরিয়াদি হাত
একজন অক্ষম প্রেমিকের।
|| এই হ্রদ ||
শহর কুড়িয়ে পেলেই নিতে নেই
শালিকের ডানা থেকে
উড়ে যাক ফুরসত
খরচ হয়ে যাক
নীল হোক
যতো সাদা ভাত
ইঞ্জিন নৌকা থেকে
ফুরিয়ে যাক তেলের গন্ধ
জল আর হ্রদ একান্তে কাটাক
অন্তর্গত আলাপে বিলাপে
বুনোহাঁস বুনোফুলে
ছেয়ে যাক সব
এই যে হ্রদ
এখানে সংসদ
বসে বিকেলের দিকে
প্লাস্টিক প্লাস্টিক চিৎকার ওঠে
তারপর থেমে যায় আলোড়ন
পর্যটকের পক্ষে বিপক্ষে
যতো কথা বলা হয়
সবই সাময়িক
দু’ দশ টাকার লোভ
বড়ো হয় খিদের কাছে
এই হ্রদ আর নীল জলরাশি
কাতরাতে কাতরাতে চুপ হয়ে যায়।
|| সন্তান ||
রাজহাঁসের বাড়ি থেকে
পালিয়ে এসেছি
এখন আমার নাম হরিদাসী নয়
বিবাহিত সন্তানের চলে যাওয়া
চোখে মেঘ ছাউনি তুলে দিলে
আঁতাত করি সূর্যের সাথে
বালিকা বিদ্যালয়ে নাম লেখাই
কানের দু'পাশে বিনুনির জালে
তুলে আনি কতো কতো বালক
তাদের কেউ মা ডাকতে চাইলে
খচ করে কেটে রাখি আলজিভ
বড় কষ্ট সয়ে জন্ম দিয়েছিলাম
কিশোরী বয়সে সন্তান
বুকে পা রেখে হাঁটতে শিখেছে
থাপুর থুপুর নিরালা দুপুর
তার আধো বোলে প্রতারণার সুর
ঘুমাতে দেয়নি রাতের পর রাত
সেসব রাতের কাছ থেকে সরে
এসেছি অতর্কিত আঘাত ভুলে
হিম হিম বাতাস গায়ে লাগিয়ে
উড়ে যাচ্ছি আখাউড়া স্টেশন।
|| দেখা না হলে ||
সাপের মন্ত্র গলায় নিয়ে
ছোবল খাবার আগ মুহূর্তে
আমিও ডেকে যাই প্রেমিকের নাম
বলি সোনার সংসার হোক তার
ফুলের অধিক ফুটফুটে ছেলে-মেয়ে
স্ত্রী অহংকারী হোক কিছুটা জেদি
বিষ ছড়িয়ে পড়া শরীরে
অপেক্ষার চারাগাছ ফুটে বেরুলে
একেকটি গাছ থেকে জন্ম নেবে
অযুত কোটি নিযুত লক্ষ গাছ
শাখা-প্রশাখায় পাতায় পাতায়
রব উঠবে একবারও দেখা হলো না
একবার দেখা হতে পারতো
প্রেমে দেখা না হওয়া মৃত্যু সমান।
|| চাঁদপুর ভ্রমণ ||
আপাতত সরু
মদের শিশির পাশে দাঁড়াও
তারা গেন্দা ফুলের সাথে কোন্দলে
জড়ানোর পূর্বে ভেবে নাও
জোসনায় চাঁদপুর ভ্রমণ মোহনীয়
না-কি একটা একটা শাড়ি ছিঁড়ে
গণতন্ত্রের চোখে পট্টি বাঁধার উৎসব
আয়োজনে অংশগ্রহণ
অল্প নেশায় ট্রিগার টেনে
বজরার ছাদে বসে সারারাত
মাগীবাড়ির খিস্তিখেউড় আউড়ে
শরীর গরম করে ঝাঁক ঝাঁক
ইলিশের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেই
তোমারও বেড়ে যাবে বাজারদর
ধনীর ব্যাগে উঁকি দেবে লেজ বাহার।
|| নিষ্পত্তি ||
বৃষ্টি থেমে গেছে
এখন এলে শুনতে পাবে
তুরাগের সত্য বয়ান
অনাগ্রহে বয়ে যেতে যেতে
কমে এসেছে ঢেউয়ের ধার
মরে যাবার সংকল্প নিয়ে
প্রতি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে
সকালে জেগে দেখে পুরাতন
রোদ এসে স্পর্শ করছে ঢেউ
বিরোধ কোথায়
কোন আয়তনে জমে আছে
ক্রোধ ঘৃণা অপমানের ছুরি
বুকে মুখ রেখে বলেছো
এ প্রেমে ভবিতব্য নেই
যতো দ্রুত সম্ভব মিমাংসা
করি নিজেদের জটিলতা
তোমার হৃদয় তোমার
আমার হৃদয় আমার
এরপর ভালোবাসি বলে
কেউ কারো মুখে তাকাবো না।
|| বৃহস্পতিবার ||
বৃহস্পতিবারের
বানান বিন্যাস অনেকটা
পিতার মৃত্যু পরে
সম্পত্তি বাটোয়ারার মতো
এক ডজন কমলা রঙের
কমলালেবুর পাশে
আরেক ডজন নিষ্কলুষ
সবুজাভ কমলালেবু
যুদ্ধাহত সৈনিকের মতো
সাময়িক বিরতিতে
শুশ্রূষার উপযুক্ত হাত
কমলা রঙের দস্তানায়
আবৃত হয়ে বানান করে
লিখছে বৃহস্পতিবার
শূন্য গ্লাস সব শরাবের
সুর নেই সুধাময়ী নেই
বেহাগ বাজিয়ে ভিক্ষা
করছে জনৈক মুসাফির
আজ বড়ো পূণ্য রজনী
কে আছো ফরিয়াদি
দান করো দু'হাত খুলে
শোনো আজ বৃহস্পতিবার।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন