কেরানি শার্ট ও অন্যান্য কবিতা

অ+ অ-

 

|| জানকি ||

মাটিতে অংক। রামানুজ গণিতের রঙ খুঁজে বেড়াচ্ছে। 
পর্থিব শূন্যের ভেতর কোন অসীম সংখ্যা। অনিঃশেষ 
দেবদারুর দিকে বিছিয়ে দিচ্ছিল।

জানকি এ সবের কিছুই জানে না। 

 

|| স্কুলব্যাগ ||

ভিজে যাচ্ছে পাঠক্রম। রোদে শুকোতে দিয়ে পেন্সিলে 
আঁকছি বর্ষাকাল। মাথায় যোগচিহ্ন সমেত দাঁড়িয়ে 
আছে আমাদের মিশনারি স্কুল। স্কুল মানে বড় নীল 
পাথর। 

বাড়ি এসে মায়ের হাতে ধরা পড়ে যাই। মেঘভর্তি 
স্কুলব্যাগ। 

 

|| লেখা ঘুমায় ||

আচমকা ভিড় ঠেলে ছুটে আসতে চেয়েছিলাম
সম্ভব ছিল না জেনেও
লেটোর দলে ফিরে যেতে চেয়েছি
গান যেখানে বাকি থাকে

সুর বিতান মুছে যায় রংধনুর পাশে
হংসমিথুন হলে আকাশের সমান বুক নিয়ে
উড়ে যাই অনেক দূরে

পৃথিবীর ডাকবাক্সগুলো অযথা পড়ে আছে
লেখা ঘুমায়, থেমে যাওয়া শূন্যতার ভেতর।

 

|| পাহাড় ||

ঠেসে দেয়া অনুরূপ এক পাথর ডাকছিল—হাওয়াদের 
সাথে দেখা, উড়ে যাচ্ছিল মেঘ। কাঁটাতারের সীমানা।
পাহাড়ের কাছে যাওয়া হলো না। আমরা শুধু পাহাড়ের 
ছায়া দেখে ফিরে এলাম। ফিরে এসে বললাম: আমরা
পাহাড় দেখেছি।

 

|| বিশাখার ঠোঁট ||

অথচ এযাবৎ ঠোঁটেই দাঁড়িয়ে ছিল। কবি-বউ একটা 
ডট হারিয়ে ফেলে। নামের মোছাম্মৎ থেকে ডট কোথায় 
যে পড়ে গেল মাথা খারাপ অবস্থা। মিথ্যা প্রশ্রয়ে 
এতোদিন যে ডট ছিল সেই ডট খুঁজে না পাওয়ায় তার
স্কুলের বেতন বন্ধ। 

এদিকে বাচ্চাদের টিউশন ফি, বাসা ভাড়া, হাটবাজারের দেনায় জর্জর। 

একদিন কবি, ডট ভেবে বিশাখার ঠোঁট কামড়ে আনে। 

 

|| আছিয়া ||

ভোররাতে যখন দেখি সেইসব পৃথিবীর কথা নীরবে 
বলে যাচ্ছে, জাফরান রঙের পরী ভেসে ওঠে। দুয়ারে 
দু্য়ারে কদমফুল তখনো হাওয়ায় দুলছে। সাধুভাষায় 
তরঙ্গায়িত হলে যৎ-যাপনের আভা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে 
আছিয়া। 

কি এমন চাওয়ার ছিল, যেটুকু না হলে নয়—

গন্ডারের পিঠে একটা পাখি—

দুলতে দুলতে ভাবছে পৃথিবীতে গন্ডার বলতে কিছু নেই।

 

|| কেরানি শার্ট ||

বাচ্চাদের শখ হয় বাবাদের শার্ট পড়ে বাবা হওয়ার। 
আমার বাচ্চা বাবা হতে গিয়ে শার্টের ভেতর হারিয়ে 
যাচ্ছিল। আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না। ভিন পরিচয়ে 
যখন বেরিয়ে আসে—সে তখন একটা নীল গাধার 
পিঠে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি—আমার সন্তান বড় 
হয়ে গেছে। আমাকে কপি করছে।

লেজ গুটিয়ে থাকা চাকুরির ভেতর আমারই কেরানি 
শার্ট। 

 

|| মৈত্রী যাত্রা ||

এ কোন যৌনদৃশ্য নয়। সবাই সবার ভেতর। তবু এ 
এক অদ্ভুত বিভাজন তাড়িত সমাজ। রেখার ওপারে 
তোমরা আর এপারে আমরা। পাহাড়সম তরঙ্গায়িত 
ঢেউ এসে আমাদের ভাসিয়ে নিতে চেয়েছিল। আমরা 
যাইনি। ডানা খুলে ব-দ্বীপে ঘুমাতে যেতে চেয়েছিলাম। 
প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। 

অথচ দেখি আমাদের চারপাশে ডানাচোর জেগে আছে।