ইরাকি কবি কাদেম খানজার কবিতা
ভূমিকা
ইরাকি কবি ও অভিনয়শিল্পী কাদেম খানজার ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সময় লেখালেখি শুরু করেন। কিছু বন্ধুদের সাথে তিনি ‘দ্য কালচার মিলিশিয়া’ নামে একটি দল গঠন করেছিলেন। দলটি ধ্বংস ও মৃত্যুর জায়গায় কবিতা পরিবেশন করে, যার মধ্যে উড়িয়ে দেওয়া গাড়ি, মাইনফিল্ড, বোমা বিস্ফোরিত ঘর, অ্যাম্বুলেন্স, আইএসআইএস খাঁচা এবং গণকবর রয়েছে। তার কাব্যগ্রন্থের নাম Picnic with an Explosive Belt [২০১৬] এবং Blood Dealer-এর ফরাসি সংস্করণ Marchand de Sang [২০১৭] নামে প্রকাশিত হয়। সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে যোগসূত্র তাকে পশ্চিমে একজন দেশ প্রেমিক আকর্ষণীয় কাব্য-ব্যক্তিত্ব হিসেবে পারিচিত করে তোলে। আরব কবি হিসেবে তিনি যুদ্ধ ও ইতিহাসের সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী। তার লেখার মৌলিক শক্তি হলো হল রাজনৈতিক চিত্রকল্প ও রূপকের শক্তিশালী ব্যবহার। প্রতিধ্বনির জন্য কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন আশরাফুল মোসাদ্দেক।
ব্রেকিং নিউজ: কাছাকাছি আবিষ্কার হয়েছে গণকবর
ফরেনসিকে গিয়েছিলাম গতকাল। তারা আমার ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা চেয়েছে। বলেছে যে তারা কিছু হাড় খুঁজে পেয়েছে, এখনও অজ্ঞাত। কমলার মতো আমি ঘুরি আশার ছুরির ওপর।
এখন বাড়িতে আছি ভাই, তোমার ছবির চারপাশের কৃত্রিম ফুলের ধুলো মুছে চোখের জল ঢালি।
***
মেডিকেল প্রতিবেদনে বলেছে আজ আমি যে হাড়ের থলের জন্য স্বাক্ষর করেছি তার নাম ‘তুমি’। কিন্তু তা সামান্য। আমি তাকে তাদের সামনে টেবিলে শুইয়ে দেই। আমরা আবার গণনা করি: ছয়টি ছিদ্রসহ একটি মাথার খুলি, একটি কণ্ঠাস্থি, তিনটি গ্রীবাস্থি, একটি ছিন্নভিন্ন ঊর্বস্থি, কব্জির হাড়ের স্তুপ এবং কয়েকটি কশেরুকা।
এটা কি সম্ভব যে এই ছোট্টগুলো ভাই?
মেডিক্যাল প্রতিবেদনে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাড়গুলো আবার ব্যাগে রাখি। আমার হাত দিয়ে পৃথিবী বুরুশ করি, তারপর টেবিল থেকে বাকিটা উড়িয়ে দেই, তোমাকে আমার পিঠে রেখে চলে আসি।
***
বাসে থলেটি আমার পাশে বসাই। দুটি আসনের জন্য অর্থ প্রদান করি আমি (এবার আমিই অর্থ প্রদান করি)। আমি আজ বড় হয়েছি, তোমাকে পিঠে বহন করার ও তোমার বাস ভাড়া দিতে যথেষ্ট।
***
কাউকে বলিনি এই সামান্যগুলো পেয়েছি আমি। আমি তোমাকে যে সোফায় রাখি তার পাশে তোমার স্ত্রী এবং তোমার সন্তানদের বুরুশ করতে দেখি। আমি তাদের একজনের জন্য থলে খুলতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম তারা তোমাকে শেষবারের মতো দেখুক। কিন্তু তুমি ছিলে হাড়ের মত অনমনীয়। পরে তারা সোফায় কান্নার দাগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল।
***
ঘন্টাখানেক ধরে আমি কফিনের তলায় এই স্যাঁতসেঁতে হাড়গুলো সাজিয়ে রাখি, তোমাকে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করি। শুধু দুই পাশের নখই জানে এটা কত কম।
আমরা ইরাকি
হেলিকপ্টারে থেকে আমেরিকান সৈন্যরা আমাদের ছাদে
ঘুমন্ত মহিলাদের ওপর উল্কি আঁকা হাতে লিফলেট নিক্ষেপ করে
আমরা ইরাকি
প্রতিদিন সকালের নাস্তায় আমাদের মায়েরা সাম্প্রদায়িকতা পরিবেশন করে
আমরা তা চুষি আর যতক্ষণ না চিবিয়ে খাই
আমরা ইরাকি
আমাদের বাড়ির জন্য লৌহ দরজা তৈরি করি
যাতে তার পিছনে আমরা মরিচা হয়ে থাকি
আমরা ইরাকি
আমাদের একজন মারা গেলে গুলি চালাই
যতক্ষণ না আমরা অন্যকে হত্যা করি
আমরা ইরাকি
আমরা মোরগের সাথে যুদ্ধ করে
আমাদের রক্ত মুছে ফেলি
আমরা ইরাকি
চেকপোস্টে সামরিক কুকুর
আমাদের দৃষ্টির বিপরীতে নাক ঘষে
আমরা ইরাকি
আমরা বাড়ির সামনে
কবর রোপণ করি
আমরা ইরাকি
আমরা খাদ্য-সাহায্যের ট্রাকের চারপাশে গড়াগড়ি করি
যেন ঘুম থেকে জাগে প্রার্থনার মালা
আমরা ইরাকি
ছোট্ট কফিন
আমাদের স্কন্ধ একত্রিত করে
আমরা ইরাকি
একই আঙ্গুল যা আমরা ছোটবেলায় সংগ্রহ করেছি
গুলির আবরণ এখন তা মৃত গণনা করে
আমরা ইরাকি
আমরা পার্কের রেলিং থেকে
শুকনো মাথা নামাই না
আমরা ইরাকি
একই সাবান দিয়ে আমরা খেতে হাত ধুই এবং
ঐ সাবান দিয়েই রক্তাক্ত হাতও ধুয়ে ফেলি
আমরা ইরাকি
আমরা প্রতিদিন পচা বছরগুলোকে উপড়ে ফেলি
সারিবদ্ধভাবে স্তুপীকৃত গণকবর থেকে
আমরা ইরাকি
গ্রীষ্মে আমরা বাসের জন্য অপেক্ষা করি
ঢালাইকৃত কংক্রিটের নিচে ধোয়া জুতার মত
আমরা ইরাকি
আমরা অস্ত্রকে বালিশ এবং
সেমটেক্সকে কম্বল হিসাবে ব্যবহার করি
আমরা ইরাকি
পৃথিবীর আপেলের মধ্যে
এক ঘুমন্ত কীট
ভালো লাগলো। পাশাপাশি মন খারাপও হলো।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
মার্চ ২৯, ২০২৩ ১৩:৪৩
ধন্যবাদ জানাই দুলাল ভাই।
আশরাফুল মোসাদ্দেক
মে ০৪, ২০২৪ ০৭:৩৫